অতীতের অসংখ্য গাঢ়তর বিষয়কেও বর্তমানে এসে অনেকের কাছে হালকা লাগতে পারে। তবে সত্য হল, আজকের এই হালকা বিষয়টাই অতীতের সেই উপস্থিত সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তাই অতীত আমার কাছে বরাবরই উৎসাহের বিষয়। দিনের পর দিন যায়, তবুও এই উৎসাহ আমার কমে না। বর্তমানের চেয়েও আড়ম্বরপূর্ণ এক অনন্য আবহে, ভেতরে আমার বেঁচে থাকে শুধু অতীত, অতীতের সব ছবি।
উন্মেষ আমার জীবনে তেমনই এক দারুণ অতীত। ভাবতেই অবাক লাগে সেই সময়টার কথা। চার পাঁচটা তরুণ। যারা সদ্য মাত্র কৈশর পেরিয়েছে। তারা একটি সাহিত্যের লিটলম্যাগ বের করছে। প্রথমটা হাতে লিখে বেরিয়েছে। দ্বিতীয়টা কম্পোজ আর ফটোস্ট্যাট। তৃতীয়টাই প্রেসের ঝকঝকে ছাপায়। পত্রিকাটাই যে শুধু তরতর করে এগিয়ে গেছে তাই নয়। এগিয়ে গেছে রাতজাগা অসংখ্য আলাপ, আড্ডা, গল্প, কবিতা আরও কত কত স্বপ্ন!
সব রাত্রিই সকাল হয়। সব গল্পই ফুরায়। সব স্বপ্নও তাই ভেঙে যায়। যেতে হয়। এই নিয়ম মেনেই বোধকরি উন্মেষ একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত এক মহাবিরতির স্টেশানে ঘুমিয়ে পড়ে। সবাই এই ঘুমকে মৃত্যু বলতে চাইলেও আমি মনেমনে মানতে পারিনি। তাই উন্মেষ'র এই ঘুম ভাঙাতে আমি আমার সবটুকু সুর দিয়ে ঘুমভাঙানির গান গাইতে চেয়েছি। উন্মেষকে জাগাতে চেয়েছি। ঘুম যখন ভাঙলই না, তখন মনকে বলেছি; থাক, ঘুমিয়েছে ঘুমোক, ছেড়ে দিলাম। তাকে মহা বিরতি দিলাম। তবুও মৃত বলতে রাজি হলাম না।
উন্মেষ'কে নিয়ে যখন একা হয়ে পড়েছিলাম, তখনকার সময়ের ছোট্ট একটা গল্প। নিজাম ভাইয়ের গল্প। খিদের গল্প।
আল কাউসারে ছিল আমাদের মাসিক ছুটি। দুইদিন। এই ছোট্ট ছুটিতেই পত্রিকার সবটুকু কাজ করতে হত। তেমনি এক মাসিক ছুটির দুপুরবেলা কাজে বেরোতে যাবো। তখনই একজন শিক্ষক ডেকে নিয়ে তাঁর ব্যাঙ্কের কিছু কাজ দিয়ে দিলেন। সেই কাজ শেষ করতে করতে আমার সারাটা দুপুর চলে গেল। খিদায় পেট লেগে যাচ্ছে। এদিকে পত্রিকার কাজও কিছু হয়নি। কোন কাজটা করবো! বিজ্ঞাপন নাকি মেকআপ! নাকি প্রুফ? নাকি বাসায় চলে যাব, কিছুই বুঝে আসছে না।
এমনই যখন অবস্থা। তখন কী মনে করে যেন হাঁটা দিলাম নিজাম ভাইয়ের অফিসের দিকে। যেতে যেতে ভাবলাম; তিনি যদি পত্রিকার কোন একটা কাজে সহযোগিতা করতে পারেন, বিজ্ঞাপন/লেখা/ছাপাখানার খোঁজ, যেকোনো একটা হলেই হল।
নিজাম ভাইয়ের সাথে দেখা হতেই বল্লাম; আজ তো বৃহস্পতিবার না, বিপরীত'র আড্ডাও নাই, তবুও চলে আসলাম। নিজাম ভাই অভিযোগের স্বরে বললেন, আরে, তোমার সাথে কি আমার আড্ডার সম্পর্ক নাকি, তুমি যেকোনো দিন, যখন ইচ্ছা আসবা। সাথে সাথেই জানতে চাইলেন, দুপুরে খেয়েছি কি না। আমি হালকা করে মাথা নেড়ে প্রসঙ্গ পালটাতে গিয়ে বললাম, নিজাম ভাই, পত্রিকার কাজের বিষয়ে আসছিলাম। তিনি নরম করে ধমক দিয়ে বললেন, চলো চলো, আগে খাবা। কাজ টাজ কী আছে সব পরে হবে।
অসম্ভব খিদে ছিলো। ক্যান্টিনে বসে তারপর আমি রুই মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছি। নিজাম ভাই বসে আছেন আমার মুখোমুখি। তিনি দুপুরের খাবার অনেক আগেই সেরেছেন। এখন বসে আছেন আমাকে সঙ্গ দিতে। আমি যেন অস্বস্তিতে না পড়ি তাই তিনি নিজের জন্য চা'য়ের অর্ডার করেছেন। চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর আমার সঙ্গে টুকটাক গল্প করছেন। তার দিকে চোখ তুলতেই তিনি জানতে চাইলেন, আর কিছু লাগবে কি না। আমি বললাম, না। কিন্তু মনেমনে বললাম, লাগবে। অবশ্যই লাগবে। শুধু প্রিয়জন নয়, প্রিয়জনের খিদে অনুভব করার মত জগতে আপনার মত অসংখ্য আফসার নিজাম লাগবে।
আজ বিশ'ই ফেব্রুয়ারি। আফসার নিজাম ভাইয়ের জন্মদিন। সারাদিন অসংখ্য মানুষ তাকে নানান শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এখন এই শেষবেলা এসে আমি সেসব পড়ছি। আর ভাবছি; শুভেচ্ছা আর কী জানাবো, কৃতজ্ঞতাই তো কত জানানোর বাকি। দুয়া করি, নিজাম ভাই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন। তার পরবর্তী প্রজন্মও ভালোবাসা আর আদর্শিকতায় তাকে ছাড়িয়ে যাক। তার মত আরও অসংখ্য 'নিজাম' এর হাত ধরে পৃথিবীটা ভালবাসার পথে এগিয়ে যাক!
পুনশ্চ :
খাবার শেষ করেই নিজাম ভাই সেদিন আমাকে ছেড়ে দেন নি। পত্রিকার জন্য তিনি আমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছেন। প্রুফ, মেকাপ, কভার থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন। এমন কি রাত জেগে উন্মেষের বর্তমান অসাধারণ লোগোটিও তিনি আমাদের জন্য করে দিয়েছিলেন।
ছবি :
দুই বছর ধরে বইমেলায় যাই না। পনের'র বই মেলায় নিজাম ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে গিয়ে তিনি বললেন, বন্ধুর (নজরুলের) গলায় হাত রেখে দাঁড়াও তো, দুজনের একটা ছবি তুলে দিই!অতীতের অসংখ্য গাঢ়তর বিষয়কেও বর্তমানে এসে অনেকের কাছে হালকা লাগতে পারে। তবে সত্য হল, আজকের এই হালকা বিষয়টাই অতীতের সেই উপস্থিত সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তাই অতীত আমার কাছে বরাবরই উৎসাহের বিষয়। দিনের পর দিন যায়, তবুও এই উৎসাহ আমার কমে না। বর্তমানের চেয়েও আড়ম্বরপূর্ণ এক অনন্য আবহে, ভেতরে আমার বেঁচে থাকে শুধু অতীত, অতীতের সব ছবি।
উন্মেষ আমার জীবনে তেমনই এক দারুণ অতীত। ভাবতেই অবাক লাগে সেই সময়টার কথা। চার পাঁচটা তরুণ। যারা সদ্য মাত্র কৈশর পেরিয়েছে। তারা একটি সাহিত্যের লিটলম্যাগ বের করছে। প্রথমটা হাতে লিখে বেরিয়েছে। দ্বিতীয়টা কম্পোজ আর ফটোস্ট্যাট। তৃতীয়টাই প্রেসের ঝকঝকে ছাপায়। পত্রিকাটাই যে শুধু তরতর করে এগিয়ে গেছে তাই নয়। এগিয়ে গেছে রাতজাগা অসংখ্য আলাপ, আড্ডা, গল্প, কবিতা আরও কত কত স্বপ্ন!
সব রাত্রিই সকাল হয়। সব গল্পই ফুরায়। সব স্বপ্নও তাই ভেঙে যায়। যেতে হয়। এই নিয়ম মেনেই বোধকরি উন্মেষ একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত এক মহাবিরতির স্টেশানে ঘুমিয়ে পড়ে। সবাই এই ঘুমকে মৃত্যু বলতে চাইলেও আমি মনেমনে মানতে পারিনি। তাই উন্মেষ'র এই ঘুম ভাঙাতে আমি আমার সবটুকু সুর দিয়ে ঘুমভাঙানির গান গাইতে চেয়েছি। উন্মেষকে জাগাতে চেয়েছি। ঘুম যখন ভাঙলই না, তখন মনকে বলেছি; থাক, ঘুমিয়েছে ঘুমোক, ছেড়ে দিলাম। তাকে মহা বিরতি দিলাম। তবুও মৃত বলতে রাজি হলাম না।
উন্মেষ'কে নিয়ে যখন একা হয়ে পড়েছিলাম, তখনকার সময়ের ছোট্ট একটা গল্প। নিজাম ভাইয়ের গল্প। খিদের গল্প।
আল কাউসারে ছিল আমাদের মাসিক ছুটি। দুইদিন। এই ছোট্ট ছুটিতেই পত্রিকার সবটুকু কাজ করতে হত। তেমনি এক মাসিক ছুটির দুপুরবেলা কাজে বেরোতে যাবো। তখনই একজন শিক্ষক ডেকে নিয়ে তাঁর ব্যাঙ্কের কিছু কাজ দিয়ে দিলেন। সেই কাজ শেষ করতে করতে আমার সারাটা দুপুর চলে গেল। খিদায় পেট লেগে যাচ্ছে। এদিকে পত্রিকার কাজও কিছু হয়নি। কোন কাজটা করবো! বিজ্ঞাপন নাকি মেকআপ! নাকি প্রুফ? নাকি বাসায় চলে যাব, কিছুই বুঝে আসছে না।
এমনই যখন অবস্থা। তখন কী মনে করে যেন হাঁটা দিলাম নিজাম ভাইয়ের অফিসের দিকে। যেতে যেতে ভাবলাম; তিনি যদি পত্রিকার কোন একটা কাজে সহযোগিতা করতে পারেন, বিজ্ঞাপন/লেখা/ছাপাখানার খোঁজ, যেকোনো একটা হলেই হল।
নিজাম ভাইয়ের সাথে দেখা হতেই বল্লাম; আজ তো বৃহস্পতিবার না, বিপরীত'র আড্ডাও নাই, তবুও চলে আসলাম। নিজাম ভাই অভিযোগের স্বরে বললেন, আরে, তোমার সাথে কি আমার আড্ডার সম্পর্ক নাকি, তুমি যেকোনো দিন, যখন ইচ্ছা আসবা। সাথে সাথেই জানতে চাইলেন, দুপুরে খেয়েছি কি না। আমি হালকা করে মাথা নেড়ে প্রসঙ্গ পালটাতে গিয়ে বললাম, নিজাম ভাই, পত্রিকার কাজের বিষয়ে আসছিলাম। তিনি নরম করে ধমক দিয়ে বললেন, চলো চলো, আগে খাবা। কাজ টাজ কী আছে সব পরে হবে।
অসম্ভব খিদে ছিলো। ক্যান্টিনে বসে তারপর আমি রুই মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছি। নিজাম ভাই বসে আছেন আমার মুখোমুখি। তিনি দুপুরের খাবার অনেক আগেই সেরেছেন। এখন বসে আছেন আমাকে সঙ্গ দিতে। আমি যেন অস্বস্তিতে না পড়ি তাই তিনি নিজের জন্য চা'য়ের অর্ডার করেছেন। চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর আমার সঙ্গে টুকটাক গল্প করছেন। তার দিকে চোখ তুলতেই তিনি জানতে চাইলেন, আর কিছু লাগবে কি না। আমি বললাম, না। কিন্তু মনেমনে বললাম, লাগবে। অবশ্যই লাগবে। শুধু প্রিয়জন নয়, প্রিয়জনের খিদে অনুভব করার মত জগতে আপনার মত অসংখ্য আফসার নিজাম লাগবে।
আজ বিশ'ই ফেব্রুয়ারি। আফসার নিজাম ভাইয়ের জন্মদিন। সারাদিন অসংখ্য মানুষ তাকে নানান শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এখন এই শেষবেলা এসে আমি সেসব পড়ছি। আর ভাবছি; শুভেচ্ছা আর কী জানাবো, কৃতজ্ঞতাই তো কত জানানোর বাকি। দুয়া করি, নিজাম ভাই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন। তার পরবর্তী প্রজন্মও ভালোবাসা আর আদর্শিকতায় তাকে ছাড়িয়ে যাক। তার মত আরও অসংখ্য 'নিজাম' এর হাত ধরে পৃথিবীটা ভালবাসার পথে এগিয়ে যাক!
পুনশ্চ :
খাবার শেষ করেই নিজাম ভাই সেদিন আমাকে ছেড়ে দেন নি। পত্রিকার জন্য তিনি আমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছেন। প্রুফ, মেকাপ, কভার থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন। এমন কি রাত জেগে উন্মেষের বর্তমান অসাধারণ লোগোটিও তিনি আমাদের জন্য করে দিয়েছিলেন।
ছবি :
দুই বছর ধরে বইমেলায় যাই না। পনের'র বই মেলায় নিজাম ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে গিয়ে তিনি বললেন, বন্ধুর (নজরুলের) গলায় হাত রেখে দাঁড়াও তো, দুজনের একটা ছবি তুলে দিই!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:০৮