somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আহমাদ মাগফুর
আমি আহমাদ মাগফুর। ৯৪ এ ময়মনসিংহে আমার জন্ম। স্কুল, কওমি আর আলিয়া -- সবার অবদান প্রাপ্ত হয়ে আপাতত আমি ‘মূর্খ কবি’ হিসেবে জীবনযাপন করছি। তাই আমার অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করে। জানতে ইচ্ছে করে, মানুষ কেন খুন করে! জানতে ইচ্ছে করে, মানুষ কেন ভালবাসে!

শহরে প্রথম ঈদ

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৫:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন আব্বার ঈদবোনাস কত ছিলো? পাঁচ থেকে ছয়হাজারের মধ্যেই হবে হয়তো। নিরানব্বইয়ের ঢাকায় আমরা তখন নতুন এসেছি। বড়ো বড়ো দুই রুমের একটি বাসা ভাড়া করা হয়েছে। এর আগে আমরা ছিলাম নানাবাড়ি ময়মনসিংহে। নানা ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেলের অফিসার। সবুজ মাঠের পাশেই ছিলো ধবধবে সাদা কোয়াটার বাড়ি। মামাখালা ছিলো পাঁচজন। তখনো কারো বিয়ে হয়নি। সবাই পড়ছে। কেউ স্কুলে, কেউ কলেজে। ঘরটা সবসময় ভরেই থাকতো। হাসি আনন্দে কেটে যেতো সময়। এসব ছেড়েই ঢাকা এলাম। আরো আগেই বাবা আমাদের ঢাকা আনতে চেয়েছিলো। নানাই নিষেধ করেছে। আমাদের দুই ভাইবোনকে দেখিয়ে আব্বাকে বলেছে; ওরা আরেকটু বেড়ে উঠুক আর তুমিও ইকটু প্রস্তুতি নাও। আব্বা তখন থেকেই ঢাকায়। বেশ কিছুদিন ঢাকায় একাই ছিলেন।এরপর আমরাও এলাম।

আশপাশের মানুষগুলোকে তখনো চিনে উঠতে পারিনি। কিন্তু মজার ব্যপার হলো, আমাদেরকে প্রায় সবাই চেনে। বাসা থেকে বেরিয়ে কারো সাথে দেখা হলেই নাম জিঙ্গেস করে। মুরুব্বিরা মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়। কেউবা আবার চিপস চকলেটও কিনে দেয়, সমোবয়েসী ছেলেগুলি বিকেলে মাঠে তাদের সাথে খেলতেও বলে। এভাবে অল্পকদিনেই শহরের বাতাসটাকে কেমন জানি চেনাজানা মনে হলো। এসব উপরি পাওনার বড়ো কারন হলো; আব্বা বেশ কয়েক বছরধরে অত্র এলাকার ইমাম। এলাকার নাম র্পূবরামপুরা। টিভি ভবনটা কাছেই। সকালে কখনো সখনো আব্বা-আম্মা সবাই মিলে ওদিকে হাটতে যাই। টিভিভবনের পেছনের দিকে তখন বালু ফেলা হচ্ছে। পরিকল্পিত নগর নাকি বানাবে (এখনকার বনশ্রী) । সেখানে বালুর উপর হাটি। আর অবাক হয়ে টিভি ভবনের বিশাল টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকি। ভাবি; নানাবাড়ি বসে যত মিনা কার্টুন, আলিফ লায়লা, রবিনহুড দেখতাম; সবকিছু নাকি এখান থেকেই ছাড়া হয়! কিভাবে সম্ভব!। তারপরের দিনগুলিতে আমি টাওয়ারের শক্তির কথা ভাবি। ফেলে আসা নানাবাড়ির কথা ভাবি। লিপি আন্টির কথা ভাবি। আলম মামার কথা ভাবি। বন্ধু রিয়েলের কথা, সায়মার কথা ভাবি।

এমন শত ভাবনার মাঝেই একদিন রমজান চলে আসে। রমজান মানে রোজা, আর রোজার পরেই ঈদ। আপাতত সব বাদ দিয়ে আমাদের মাথায় তখন ঈদ ঢুকে যায়। ঈদ মানে ঈদের শপিং। নতুন জামা, নতুন জুতা। এর আগে কখনোই আমরা শপিংমলে গিয়ে শপিং করিনি। বড়োরা মাপমত কিনে এনেছে, আমারা পড়েছি, ব্যাস। এখন আমরাও কিছুটা বড়ো হয়েছি। শহরে এসেছি। মার্কেটে যাবার পূর্ণ আশ্বাসও পেয়েছি। এখন শুধু আব্বার ঈদবোনাসের অপেক্ষা। কেবল বেতনের দিকে তাকানোটা তখন সহজ ছিলো না। অই টাকাটাতো দৈনন্দিন বাজার-সদাই আর বাসাভাড়াতেই সমান সমান। তবু আমরা খুশিকে টেনে ধরি। আম্মার কাছে আব্বার ঈদবোনাসের পরিমাণ জানতে চাই। আম্মা অস্পষ্টকরে কিছু বলে। আমরাও পাঁচ/ছয় একটা পরিমাণ ধরে নেই। অংক খাতায় সেই টাকাটা সবার জন্য ভাগকরি। একটা ভাগ ঈদবাজারের জন্য রাখি। তারপর যে যত পেলাম তাই দিয়ে লিস্ট লেখা শুরু করে দেই। রোজার একেকটি দিন যায় আর আমাদের লিস্ট প্রতিনিয়ত সম্পাদনা হতে থাকে। ছোট হয়, বড়ো হয়। যোগ হয়, বিয়োগ হয়। একদিন দেখি; শখগুলো আমার বাজেট ছাড়িয়ে গেছে। সেদিন আমি আমার লিস্ট থেকে রঙিন চশমা আর হাতঘড়িটা কেটে দিলাম।

আব্বার চোখের আড়ালে এভাবেই আমাদের অঙ্কের খাতাটা যখন লিস্টের ভারে প্রায় ফুরিয়ে আসছিলো; তখনই একদিন, উত্তেজনার সন্ধ্যা আসে। চাঁদ উঠতেও পারে নাও উঠতে পারে। চাঁদ উঠলেই কাল ঈদ। বাসার পাশের মাঠে তখন ছোটবড়ো সকলের ভীড় জমেছে। বড়োরা কয়েকজনকরে ছোটছোট আড্ডার মত জমিয়ে আকাশে চাঁদ খুঁজছে। আর মাঠের এপাশ থেকে ওপাশে চলছে ছোটদের অবিরাম গোল্লাছুট। আমরাও ছোট। কিন্তু ওসব কিছুতেই মিশতে পারছি না। হাসতে পারছি না। কারন আমাদের ঈদের কেনাকাটা কিছুই হয়নি এখনো। চোখেমুখে কালো ছাপ। অথচ সন্ধ্যার ছাইরঙা আকাশে এতোক্ষণে ভেসে উঠেছে নতুন চাঁদের হাসি। অস্থিরতায় যখন দমবন্ধ হবার উপক্রম, তখন বাবা আসলো। আমাদের রেডি হতে বল্লো। রেডিই ছিলাম। সাথেই সাথেই বেরিয়ে গেলাম। সাথে মুবারক আঙ্কেলও। মৌচাক আর মালিবাগ মার্কেট ঘুরে জামাজুতো সব কিনে বোনের ফ্রক কেনার জন্য যখন আলামিন সুপার মার্কেটে ঢুকি; তখন কেউ যেনো পাশের একটা দোকান থেকে ডাকলো। ফিরে দেখি; আবু আঙ্কেল। আমাদের মহল্লারই। তাঁর ছেলে, আমরা, একসাথেই খেলাধুলা করি।আমাদেরকে চেয়ার বেরকরে তিনি বসালেন। বড়োরা চা খেলো আর আমাদের জুস দেয়া হলো। কথা শেষে যখন উঠবো তখন তিনি বল্লেন; তোমরা ঈদে কি উপহার চাও বলো!। আমরাতো চুপ। তখন তিনি উঠতে উঠতে বল্লেন; দেখি,আমার দোকানেই তোমাদের কিছু আছে কি না!। দোকানটা ঘড়ি আর চশমার। এতোক্ষণ হা করে ভেতরের একটা দেয়াল ঘড়ির দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। কী সুন্দর ঘড়িটা। ঘন্টা বাজার চেইনে দুইটা সবুজ টিয়াপাখি পাশাপাশি ঝুলে আছে। এবার আঙ্কেল আমাদের কাছে ডেকে অবাক করে দিয়ে দুইটা রঙিন চশমা দুজনের চোখে পড়িয়ে এবং দুইটা ঘড়ি দুজনের হাতে বেঁধে দিয়ে বল্লো; কি? পছন্দ হয়েছে?। আমিতো খুশিতে নির্বাক। কিছুই বলতে পারলাম না। কেবল ভাবছিলাম; আমাদের লিস্টের কাটাকুটি কি তিনি কোনভাবে জেনেছেন!। নাহ, এটাতো সম্ভব না। তবে?

হ্যাঁ, তবে’র উত্তরও আমি দিলাম অবশেষে। উত্তরটা হলো; আমাদের মনে লুকিয়ে থাকা সখের কথা, সারা রমজানজুড়ে অঙ্কখাতার গুপন লিস্টি-সম্পাদনার কথা বাবা বা আঙ্কেল না জানলেও অর্ন্তজামী আল্লাহ ঠিকই জেনেছেন। সর্বদ্রষ্টা মালিক সবই দেখেছেন। অতঃপর তিনিই এইসব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন। ঘঠনাপ্রবাহ সবটাই এর বাহানা ছিলো মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৫:৩৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×