চরমপত্র।
“চরমপত্র” কি বই এর নাম?
যদি বলি হাঁ এটা বই, তাহলে মুশকিলে পড়বো।
যাদের বয়স ৬০ বা তার বেশী তারা টুটি চেপে ধরবেন।
কারণ চরমপত্র তাঁদের কাছে কোনো পুস্তকের নাম নয়।
চরমপত্র তাদের কাছে অন্য কিছু। যার সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস।
আরো আরো অনেক কিছু।
২৫ মে ১৯৭১।
এদিন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরূল ইসলামের জন্মবার্ষিকী।
আর এদিন চরমপত্রের জন্ম।
জন্ম নিয়েই এই শিশুটি কথা বলা শুরু করেছে।
থেমেছে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ।
কথা বলতো অন্চলিক ভাষায়।
দেশের প্রায় সব অন্চলের ভাষা সে বলত, বেশী বলত পুরাণ ঢাকার ভাষা।
খোলাসা করি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র” থেকে প্রতিদিন যুদ্ধের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণাদায়ক যে ’রচনামূলক-শ্রুত্য’ অনুষ্ঠান প্রচারিত হত তা “চরমপত্র” নামে খ্যাত।
এর চরয়িতা, কন্ঠদাতা এবং পরিচালকের নাম এম. আর. আখতার মুকুল (১৯৩০-২০০৪) ।
২৫ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বর কমবেশী ২০০ দিন।
১১৭ দিন চরমপত্র রচনা এবং পাঠ করেণ তিনি।
এ কাজ করতে তার ভাষায়-অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়েছে।
২০০০ সালে এই অসামান্য রচনাটি পুস্তক আকারে বের হয়েছে।
পড়ার পরে আমারও মনে হয়েছে- তাইতো কিভাবে সম্ভব !!! কি অমানুষিক পরিশ্রমইনা করেছেন !!!
ভোর ৪ টায় প্রতিদিন ঘুম থেকে জাগতেন।
চরমপত্র লিখতে বসতেন, লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার স্ত্রী সকালের খাবার দিতেননা।
স্ত্রীর এক কথা - রনাঙ্গনে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা বসে আছে তোমার কন্ঠ শোনার জন্য।
চরমপত্র শুনে মুক্তিযোদ্ধারা নবোদ্যমে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তেন।
গৃহবন্দি সাধারণ মানুষ রেডিওটা ঘিরে গোল হয়ে বসত চরমপত্রের আশার বানী শোনার জন্যে।
আখতার মুকুল চরমপত্র অনুষ্ঠান মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়েছেন দু-চারদিনের জন্যে।
এসময় তিনি সরেজমিনে গিয়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে।
মুক্তিযোদ্ধা আর সাধারণ মানুষের ভালবাসা তাকে পাগল করে দিয়েছে।
পাগল না হলে এমন কাজ করা যায়না !!
Youtube এ অডিওগুলি শুনলে আমার কথা বাহুল্য মনে হবেনা।
যারা ১৯৭১ এ ট্রানজিস্টারে শুনেছেন তারা আবার হারিয়ে যাবেন ৪৬ বছর দূরের কোনো এক মাতাল দিনে।
আর আমাদের জেনারেশন জানবেন- আমাদের পূর্বপুরুষদের মহিমাময় সোনালী স্মৃতিগুলি।
সর্বশেষ পর্ব অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর দিনের পর্বটা ছবি তুলে দিচ্ছি।
এবং youtube এর লিংক youtube
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৫৩