somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উসমানের হত্যাকারী কারা?

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাজম খান রাফেদী,ভারত



সালামুন আলাইকুম।

আল্লাহুম্মাহ সাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া লানা‘আলা আদিহিম।


বিইসমে রব্বিল মুহাম্মাদ।


মুসলিমদের ৩য় খলিফা উসমানের হত্যা নিয়ে বিভিন্ন গুজব শোনা যায়। হিস্টোরি কে স্টোরি হিসাবে উপস্থাপনার মাধ্যমে আসল হত্যাকারিদের আড়াল করার চেস্টা করা হয়। আলেমদের জিগ্যেস করলে নানা ধরনের কথা বলে যেমন বলে মিসর থেকে কিছু লোক এসে উসমানকে হত্যা করে চলেযায়। আবারও বলে যে এটা ইবনে সাবার কাজ ইত্যাদি। আর বেশি জিগ্যেস করলে এড়িয়ে যায়।

এখানে এই প্রবন্ধে ইসলামের জগতে প্রসিদ্ধ ইতিহাস থেকে তুলেধরা হবে উসমানের প্রকৃত হত্যাকারী কারা। জড়িতদের একে একে তাদের নাম প্রকাশ করাহবে।


প্রথমত বলে রাখি এরা সেই যুগে যা কিছু হয়েছে তা যত দোষ নন্দঘোষ ইবনে সাবার উপরে চাপিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে যায়।

ইবনে সাবা নিয়ে যা কিছু বলা হয় তার জবাব সংক্ষেপে দিয়ে আসল হত্যা কারীদের সামনে আনা হবে।


ইবনে সাবা এর কাহানি এক কল্প কাহানী এটার জন্য আপনারা আল্লামা মুরতাদা আস্কারি এর বই পড়তে পারেন।

কিন্তু আসল যে কথাটা সেটা হল উসমান হত্যা নিয়ে ইবনে সাবার জড়িত বর্ণনা করেছে সাইফ বিন উমার আত তামিমি (মৃঃ ১৮০ হিঃ)। ইবনে সাবা নাকি ঘুরে ঘুরে উসমানের বিরুদ্ধে আন্দলন শুরু করেছিল যার ফলস্ত্রুত উসমান কতল হয়।বিভিন্ন সাহাবা যেমন আম্মার রাঃ আবু জর গিফারি রাঃ এর ইবনে সাবার শিষ্য ছিল।মিসর থেকে সাবাইরা এসে মদিনা ঘিরে ফেলে ও উসমান কে হত্যা করে। ইত্যাদি।

এই সাইফ বিন উমার দুটি বই লিখছিল। যেখান থেকে তাবারি কিছু কিছু কপি করেছে তার ইতিহাসে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় এটা যে এই ঘটনা অনেক ওতিহাসিক ( তাবারি এর আগের যুগের) বর্ণনা করেছে তাদের বিস্তৃত বর্ণনা থেকে সাইফ বিন উমারের বর্ণনা একেবারে আলাদা!

এখন দেখা যাক আহলে সুন্নার আলেম ও রেজাল শাস্ত্রের অভিজ্ঞ আলেমগন এই সাইফকে কি বলেছেন।


১) আল বানী তার সিলসিলাতুস সাহিহাতে ( খণ্ড ৩ পাতা ১৮৪) এসাইফকে মিথ্যাবাদী বলেছেন।

২) ইমাম ইবনে আবি হাতিম তার জারাহ ওয়া তাদিল এ ( খণ্ড ৪পাতা ২৭৮) এ মতরুক (যে হাদিস বানায় -Fabricator) বলেছেন।

৩) ইমাম হাইসামি তার মাজমা আজ যাওয়াদ ও শোয়াইবআরনাউত ( সিয়ার আন নাবুলার হাসিয়াতে) সাইফকে মাতরুক বলেছেন।

৪)ইবনে হাজার আস্কালানি, ইয়া ইয়া ইবনে মুইন, ইমাম নাসাঈসাইফকে জাইফ বলেছেন।

5) ইবনে হিব্বান বলেছেন সে (সাইফ) রেওয়াত বানাত।

6) আবু দাউদ ও আবু নাইম ইসবাহানি বলেছে সাইফ তুচ্ছ।

৭) ইবনে জাওজি বলেছেন যে এর বিরুদ্ধে হাদিস বানানোর অভিযোগআছে।

৮) আল্লামাহ আল ইজমি বলেছেন সে হাদিস বানাত।

৯) ইমাম হাকিম বলেছেন তার বর্ণনা পরিত্যক্ত।

১০) যাহাবি তার আল মুগ্নিতে লিখেছেন যে ‘সাইফ বিন উমার দুটিবই লিখেছে, যেগুলি ওলামারা রিজেক্ট করে দিয়েছে।


এই হল সাইফ বিন উমার আত তামিমি এর চেহারা আহলে সুন্নার নিজেদের নজরে। অথচ আহলে সুন্নার আলেমগন যখন ইতিহাসে গজামিল দিতে চায় তখন এই সাইফের থেকে কিছু বর্ণনা করে সত্যকে ঢাকার চেষ্টা করে!।

সুতারং পাঠকগন বুঝতেই পারছেন যে ইবনে সাবা নিয়ে সাইফ এরউসমান হত্যার কাহানী এর মান কতটুকু।

বরং মিত্যায় ভরপুর। যাইহোক এখন আসা যাক উসমানের কাতিলদেরকএ সুন্নি ইতিহাসের আলোকে সামনে আনা।


১) উসমানের হত্যায় মদিনাবাসী ও সাহাবাগনঃ

আহলে সুন্না উসমান হত্যায় মদিনাবাসীদের যোগকে আহলে সুন্নারা এড়িয়ে যাওয়ার চেস্টা করে। অথচ এরা এটাও ভাবে না যে মাদিনা যেটা ইসলামের ক্যাপিট্যাল ছিল সেখানে বাইরে থেকে লোক এসে উসমানকে ঘেরাও করে রাখলো আর মদিনাবাসীরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল! এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।



ক) মিশরের সুন্নি হিস্টোরিয়ান ত্বহা হুসাইন তার “আল ফিতনা আল কুবরা” এর পাতা ২5৯ ঃ

“ঐতিহাসিকগন ৩৪ হিজরি ঘটনা বর্ণনা করেছেন .............................................মদিনার সাহাবারা বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা সাহাবাদের লেখে যে ‘মদিনায় আসো এবং দেখ খিলাফত কিভাবে ধ্বংস হচ্ছে। তোমরা নিজেদের বাড়ি থেকে বার হয়েছো জিহাদে অংশগ্রহন করার জন্য কিন্তু জিহাদ তোমাদের পিছনে। মদিনায় ফিরে আসো সুরক্ষা ও দ্বিন রক্ষাকরার জন্য। ক্ষমতা দ্বীনের বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে”।


খ) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে ইবনে কাসির ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল এর থেকে বর্ণনা করেছেন। ( খণ্ড ৭ পাতা ২০২)


قال الإمام أحمد حدثنا إسحاق بن سليمان سمعت معاوية بن سلم أنسلمة يذكر عن مطرف عن نافع عن ابن عمر أن عثمان أشرف على أصحابه وهو محصور فقالعلى م تقتلونني؟ فإني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لا يحل دم امرئ إلابإحدى ثلاث رجل زنى بعد احصانه فعليه الرجم أو قتل عمدا فعليه القود أو ارتد بعداسلامه فعليه القتل فوالله ما زنيت في جاهلية ولا اسلام ولا قتلت أحداً فأقيد نفسيمنه ولا ارتددت منذ أسلمت إني أشهد أن لا إله إلا الله وأن محمداً عبده ورسوله . ورواهالنسائي عن أحمد بن الأزهر عن إسحاق بن سليمان به


“... উসমানের অবরোধের দিনগুলিতে তার সাহাবীদের প্রতিউঁকি মেরে বলেন কি কারণে আমাকে হত্যা করতে উদ্ধত হয়েছো? আমি রাসুল সাঃ কেবলতে শুনেছি যে তিনটি কারণ ছাড়া কোন মুসল্মানের রক্ত হালালনয়................................................”।


ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল সহিহ সনদ সহ উল্লেখ করেছেনঃ (খণ্ড ১পাতা 59)

“ উসমানের অবরোধের কালে তিনি তার মহল থেকে উঁকি মেরে বলল‘আল্লাহের নামে আমি তাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যারা হেরার দিনে যারা রসুল সাঃকে দেখেছে, যখন পাহাড় কেপে উঠল আর রসুল সাঃ পা দিয়ে আঘাত করে..................”।


উপরে উসমানের উক্তি গুলির মধ্যে দিয়ে এটা প্রকাশ পায় যেযারা তার বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল তাদেরকে উসমান আপিল করছে। আর তারা কে সেটাও বোঝাযাচ্ছে রাসুল সাঃ এর সাহাবিগন।


গ) আর এই জন্যই ইবনে হাজর আস্কালানিকে লিখতে হল যে ঃ

وجاء من طرق كثيرة شهيرة صحيحة عنعثمان لما أن أحصروه أنتشد الصحابة في أشياء


“বিভিন্ন সহিহ ও বিখ্যাত সনদ সহ বর্ণিত হয়েছে যে যখন উসমানকে ঘেরাও করা হয়েছিল, তিনি সাহাবীদেরকে কাছে বিভিন্ন বিষয় মিনতি করেন”। ( আল ঈসাবা,খণ্ড ৪ পাতা ৩৭৮)


ঘ) কাঞ্জুল আম্মাল, আল মুত্তাকী আল হিন্দি , খণ্ড ১৩ পাতা৮২ ঃ

“যখন মিশরেরসেনা জাহাফাতে এল এবং উসমানের সম্বন্ধে বাজে কথা বলতে শুরু করল, তিনি এটা জানতে পারলেন এবং মিম্বারে উঠে বললেন “হে রাসুলের সাঃ সাহাবা আল্লাহর লানত তোমাদের উপর আমার নামেবাজে কথা বলার জন্য। তোমরা আমার ত্রুটি গুলো প্রচার করো আর আমার গুনাবলি লুকিয়ে রাখো।তোমারা জনগণকে আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেছো”।


উপরে কিছু কিছু উল্লেখ করা হল যেখান থেকে এটা পরিষ্কার হয়যে মদিনা বাসীরা ও সাহাবীরা উসমানের বিরুদ্ধে অন্যান্য সাহাবিদেরকে চিঠি লিখেছিল ও লোকজনদের উত্তেজিত করেছিল। আর উসমানকে মাসের ও বেশি সময় ধরে অবরোধ করে রেখেছিল।

এটা মদিনা ও সাহাবীদের যুক্ত হওয়ার একটা ব্রড ছবি দেওয়া হল।এর মানে এই নয় সব মদিনাবাসী ও সব সাহাবা যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু ইতিসাহ পড়লে ওঅবরোধের প্রকার দেখালে বোঝা যায় পুরো মদিনা প্রায় সিজ হয়েছিল।


২) আয়শার প্রধান ভুমিকা উসমানহত্যায়ঃ

আহলে সুন্নার কেতাব সমূহে ভরপুর লেখা হয়েছে যে আয়শা উসমানকে নাসাল বলে উল্লেখ করে ও হত্যা করতে হবে বলে ফতোয়া দেয়।

এই বিষয় নিচে উল্লেখিত বই সমূহ কে দেখা যেতে পারেঃ

১। আন নিহায়া। খণ্ড 5 পাতা ৮০।

২। আল কুমুস পাতা 500, ‘লুগাত নাসাল’ , ফিরোজাবাদি।

৩। লিসান আল আরব, খণ্ড ১১ পাতা 670।

৪। শারাহ নাহজুল বালাগাহ, ইবনে আবিল হাদিদ। খণ্ড ২ পাতা১২২।

৫। আল ইমামাহ আস সিয়াসা, ইবনে কুতাইবা, খণ্ড ১ পাতা ৫২।

৬। তারিখ মুখতাসার, ইবনে আল এব্রাই, খণ্ড ১ পাতা ৫৫।

৭। আল মাসহুল, ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী, খণ্ড ৪ পাতা ৩৪৩।

৮। তারাজিব আল উমাম, খণ্ড ১ পাতা ৪১৯।


আরও অনেকে ইতিহাসে।


ইবনে কুতাইবা তার ‘আল ইমামাহ ওয়াস সিয়াসা এ লিখেছেনঃ

“...উবাইদ তাকে (আয়শাকে) বললেনঃ ‘তুমিই প্রথম জন যে তার (উসমানের) বিরুদ্ধে লোকদেরকে উত্তেজিত করেছিল, আর তুমি বলতে নাসালকে হত্যা করো কেননা সে ফাসিক হিয়ে গিয়েছে”।


ইবনে আসির তার আন নিহায়াতেঃ

حديث “اقتلوا نعثلا قتل الله نعثلا” تعني عثمان . وهذا كان منها لما غاضبته وذهبتإلى مكة

“ হাদিসে যেখানে বলা হয়েছে ‘নাসালকে হত্যা করো’, এটাউসমানের প্রতি। এটা হয়েছে ঐ সময় যখন তিনি (আয়শা) রাগান্বিত হয়েছিল ও মক্কাতে চলে গিয়েছিল”।


আহলে সুন্নার বিখ্যাত আলেম ইবনে অসিরকে উম্মুল মোমেনিন আয়শার এর সাফাই গাইতে হয় যে তিনি রেগে গিয়েছিলেন।


ইমামফকরুদ্দুন আর রাজী তার মসহুলের খণ্ড ৪ পাতা ৩৪৩ এ উল্লেখ করেছেনঃ

فكانت عائشة رضي الله عنها تحرضعليه جهدها وطاقتها وتقول أيها الناس هذا قميص رسول الله صلى الله عليه وسلم لميبل وقد بليت سنته اقتلوا نعثلا قتل الله نعثلا

“আয়শা আল্লাহ তার উপর রাজী হোক, উসমানের বিরুদ্ধে জনগণকে উত্তেজিত করেতে সবরকম করেছিলেন, তিনি বলতেন ‘ হে জনগণ এটা রাসুল সাঃ এ জামা এখনো পুরানো হয় নি, কিন্তু তার সুন্নাহ পুরানো হয়ে গিয়েছে, নাসালকে হত্যা করো, আল্লাহ তাকে হত্যা করুক’”।


আবুলফারাজ ইবনে আল এবরি তার বিখ্যাত বই ‘তারিখ আল মুখতাসার আলদুওয়াল’ খণ্ড ১ পাতা ৫৫এ এক সাহাবি হজরত আয়শাকে কি বলছেন সেটা তুলে ধরেছেন

ولقد كنت تقولين: اقتلوا نعثلا فقد كفر


“তুমি এটা বলতে ‘নাসালকে হত্যা করো, সে কাফেরহয়ে গিয়েছে”।


অনলাইন লিঙ্ক (তারিখ এ মুখতাসার 55)


আহলে সুন্নার স্বনাম ধন্য ঐতিহাসিক ও দার্শনিক আহমাদ বিন ইয়াকুব মাস্কুয়াহ ( মৃঃ ৪২১ হি) তাজারেব আল উমাম খণ্ড ১ পাতা ৪১৯ এলিখেছেনঃ

و كانت من قبل تشنّع على عثمان، وتحضّ عليه، و تخرج راكبة بغلة رسول الله- صلى الله عليه- و معها قميصه و تقول: – «هذا قميص رسول الله، صلى الله عليه، ما بلى و قد بلى دينه، اقتلوانعثلا، قتل الله نعثلا.»


“তিনি উসমানের বদনাম করত আর তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করত, তিনি আল্লাহের নবির সাঃ গাধার পিঠে চড়েএকটা কাপড় নিয়ে বলতেন ‘এটাআল্লাহের নবীর সাঃ এর জামা পুরানো হয় নি। কিন্তু তার দ্বীন পুরানো হয়ে গিয়েছে,নাসালকে হত্যা করো, আল্লাহ তাঁকে হত্যা করুক”।


উসমানের বিরুদ্ধে আয়শার তাকফির এত পপুলার যে পরবর্তীতে যখন উসমানকে কতল করা হয় তখন অনেকসাহাবা তাঁকে মনে করিয়ে দেয় যে এটা আপনিই যিনি উসমানকে কতল করার জন্য দ্বায়ই।


কিছু নাসিবিদেরকে দেখা গিয়েছে তার হজরত আয়শার ভুমিকাকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে, এবংআয়শার কিছু বক্তব্য তুলে ধরে যেগুলিতে বর্ণিত হয়েছে যে আয়শা নিজে তার ভুমিকাকে অস্বীকার করছে।


এখানে নাসিবিরা আনপড় তস্য নাসিবিদেরকে কৌশলে ধোঁকা দিতে চায়। যেটাকে এখানে পরিস্কার করার প্রয়োজন মনে করছি।

আয়শা উসমানের বিরুদ্ধে তাকফিরি ও তাঁকে হত্যা করার ক্যাম্পেন বহুল বর্ণিত এবং তার কিছু উল্লেখ করেছি। আর এই সব কিছু করেছিল উসমান হত্যার আগে। আয়শা চাইত যে উসমানের পরেতার আত্বীয় তালহাকে খলিফা করা হবে।


আয়শা উসমানের বিরুদ্ধে হত্যার ফতোয়া জারি করে ও লোকদেরকে উত্তেজিত করে হজ্জের সময় আয়শা মক্কায় চলে যায়। এবং মক্কা থেকে ফেরার পথে শোনে যে উসমানের কতল হয়েছে। তখন জিগ্যেসকরে কে খলিফা হয়েছে? যেই শোনে যে আলি আঃ খলিফা হয়েছে হজরত আয়শা বলে মক্কায় ফিরে চলো মক্কায় ফিরে চলো। উসমানকে মজলুম ভাবে কতল করা হয়েছে।


এখানে বোঝাযাচ্ছে যে আয়শা তার ক্যাম্পেন এ সফল হতে পারে নি, তালহাকে খলিফা করতে পারেনি বরং আয়শা যাকে ঘৃনা করত সেই আলি আঃ এরকাছে লোকেরা জড় হয়ে বায়াত করেছে এই কথা বোঝার পরেই আয়শা মক্কায় ফিরে যেতে চায় এবংনিজের রূপ বদল করে বলে যে উসমানে মজলুম ভাবে কতল করা হয়েছে।


একথা যখনই বলতে থাকে বিভিন্ন সাহাবারা তাঁকে বলে এটা আপনিই যে উসমানের হত্যার করারা জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। এটা উসমানের জন্য তার কোন মায়া ছিল না বরংঝানু রাজনিতিক এর পট ও পরিস্থিতি বদলের সাথে সাথে নিজে ইউ (U) টার্ন নিয়ে নেয়। এই বিষয় আরও বিশদ বলা হবে কিছুটা পরে।

এখানে আয়শা এক শাস্তির ভয়ে মদিনায় যাওয়ার পথ থেকে ফিরে মক্কায় যায়। এবং উসমানের বিরুদ্ধে যে ভাবে শুরু করেছিলএবং তাতে জনগণের যে সাড়া পেয়েচিল সেটাকে চিন্তা করে আবারও হাঙ্গামা শুরু করলো এবংইমাম আলি আঃ খালিফায় রাসেদ নাফসে রাসুল সাঃ,রাসুল সাঃ যাকে বলেছেন যে তার সাথে যুদ্ধে করা আমার সাথে যুদ্ধ করা।সেই আলি আঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে এবং মক্কা থেকে ১০০০ মাইল দূরে বসরা আক্রমণ করে এবং লুটপাট করে। এর মাঝে তালহা ও যুবাইরকে ডেকে নেয়। এবার আয়শার অজুহাতছিল উসমানের কাতিলদের সাজা দিতে হবে!! আসল উদেশ্য ছিল ইমামআলি আঃ কে পরাস্ত করা এবং তাঁকে খেলাফত থেকে চ্যুত করা। পরের ইতিহাস জানতে চাইলে উৎসাহী পাঠকদের কে ইতিহাস পড়ার আহ্বান করছি। আমি এখন সেদিকে যাচ্ছি না।


আমরা এখানে আয়শার উসমান হত্যার আগেরকিছু ক্যাম্পেন এর কথা উল্লেখ করেছি আরও কিছু উল্লেখ করা হচ্ছেঃ

আনসাবআল আশারাফ এ বালাজুরি লিখেছেনঃ খণ্ড ৬ পাতা ১৯২,১৯৩

“যখন পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে পড়ল, উসমান মারোয়ান বিন হাকামকে আর আব্দুর রহমান বিন আত্তাবকে আদেশ দিল আয়শাকে বোঝাতে (মানাতে), যে সে যেন তার বিরুদ্ধে প্রচার করা বন্ধ করে।তারা তার কাছে গেল তখন মক্কায় হজে যাওয়ার জন্য আয়শা বন্দব্যাবস্থা করছিল। তারাতাকে বলল ‘আমারা প্রার্থনা করি যে আপনি মদিনাতেই থাকুন, আর আল্লাহ এই মানুষটাকে(উসমানকে) রক্ষা করুক আপনার মাধ্যমে”। আয়শা উত্তর দিল ‘আমি যাতায়াতের সব ব্যাবস্থাকরেছি আর হজ্জ করার প্রতিজ্ঞা করেছি, অয়াল্লাহ আমি তোমাদের কথা রাখবোনা............... আমি ইচ্ছা করি যে সে (উসমান)আমার একটা ঝোলার মধ্যে থাকতো আর যাতে অমি ওকে বহন করতাম। আর তারপর তাকে সমুদ্রে ছুঁড়ে দিতাম”।


এটা পরিষ্কার যে উসমান তার বিরুদ্ধে লোকদেরকে উত্তেজিত করার প্রধান ব্যাক্তিত্ব আয়শাকেই মানত তাই আয়শার কাছে আপিল করতে মারওয়ান ও অন্য একজনকে পাঠায়। অথচ আয়শা তাকে সমুদ্রে ছুড়ে ফেলার বাসনা প্রকাশ করলেন।


আগেই বলেছি উম্মুল মোমিনিন আয়শা চাইছিল যে উসমানকে কতল করে তালাহাকে খলিফা করা এই বিষয় বিখ্যাত ইতিহাসের বই ‘তারিখ আত তাবারি’ থেকে উধৃতি দেও হল।উম্মুল মোমেনিন আয়শা হজরত ইবনে আব্বাসকে ডেকে বলে।

“ইবনে আব্বাস, আমি তোমার নিকট অনুরোধ করছি যে এই লোকটাকেত্যাগ করো, জনগণের মধ্যে তার ব্যাপারে সন্ধেয়ের বীজ বপন করো, কেননা তোমাকে তীক্ষ্ণজিহব্বা দেওয়া হয়েছে। তাদের সমাধান করার ক্ষমতা তাদের কাছে পরিষ্কার করে দেওয়াহয়েছে, আলোর রশ্মি প্রস্ফুটিত হয়েছে তাদের হেদায়াত(লক্ষ্য পাওয়ার) করার জন্য.............................., আমি তালহাকে দেখেছি তালহা বিন উবাইদুল্লাহবায়তুল মাল আর গুদামের চাবি নিয়েছে। সে যদি খলিফা হয় তবে সে তার চাচাত ভাই আবুবকের অনুসরণ করবে’।

(ইবনে আব্বাস)বললেন “ ও উম্মুল মোমেনিন, যদি উসমানের উপর যদি খারাব কিছু নেমে আসে, জনগণ আমাদের সাথি (আলি) এর কাছে আশ্রয় নেবে’।

তিনি (আয়শা)উত্তর দিল ‘চুপ থাকো, তোমার সাথে ঝগড়া করার কোন ইচ্ছা আমার নেই”।

(তারিখ এ তাবারি খণ্ড ১৫ পাতা ২৮৯,২৩৯)


বালাজুরি তার আনসাব আল আশরাফ এ এর খন্ড ৬ পাতা ২১২ উল্লেখ করেছেনঃ

وكانت عائشة تؤلب على عثمان، فلما بلغهاأمره، وهي بمكة، أمرت بقبتها فضربت في المسجد الحرام وقالت: إني أرى عثمان سيشومقومه كما شأم أبو سفيان قومه يوم بدرٍ.



“আয়শা লোকদেরকে উসমানের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করছিল,যখন তাকে উসমানের কতলের খবর দেওয়া হয় তখন সে মসজিদুলে হারামে ছিল এবংবলল ‘আমি বিশ্বাস করি উসমান তার লোকেদের জন্য অশুভ ভাগ্য বয়ে আনবে যেমন ভাবে আবু সুফিয়ান বদরের দিন তার লকেদের জন্য অশুভ ভাগ্য বয়ে এনেছিল’”।



সুতারং উসমানের হত্যার আগে আয়শা এর কর্মকাণ্ড এই রকমঃ

১) আয়শা উসমানকে নাসাল ও কাফির বলে ফতোয়া দেয় এবং হত্যাকরার জন্য বলে।

২) উসমান যখন ঘেরাও হল তখন তিনি মক্কায় হজ্জ করতে গেলেন এবংউসমানের জান বাঁচানোর জন্য আবেদনের কোন রকম সাড়া দিলেন না।

৩)ইবনে আব্বাসকে উসমানের বিরুদ্ধে সরব হতে বললেন এবংতালহাকে খালিফার ক্যান্ডিডেট হিসাবে তুলে ধরলেন।

৪)উসমানের কতলের সংবাদ পেয়ে আয়শা আবু সুফিয়ান বদরের দিনে যেমন উমাইয়াদের জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছিল তার সাথে উসমানকে তুলনা করলেন।


পাঠকদের কাছে পরিস্কার যে উসমানের জীবিত কালে আয়শা তার বিরুদ্ধে চরম অবস্থান নিয়েছিল। এমনকি উসমানের মৃত্যুর সংবাদ শুনে ও তিনি বদরের দিনের উমাইয়াদের সাথে তুলোনা করলেন।


কিন্তু একটু পরেই পাঠকগন জানতে পারবে যে যেই আয়শা সংবাদ পেলযে আলি আঃ খলিফা হয়েছে তখন আয়শা তার পঠ পরিবর্তন করলেন।

সাহাবা আর তাবেঈনগণ আয়শার এই রাজনৈতিক ভোল বদলকে নিজেরাই উল্লেখ করেছেন।


বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে আসির তার ‘তারিখ আল কামিল’ এ উল্লেখ করেছেন। (খণ্ড ৩ পাতা ১০০)


“উসাইদ ইবনে আবি সালমা যে আয়শার মায়ের দিক থেকে আত্বীয় ছিল, আয়শার সাথে দেখা করল যখন আয়শা মাদিনায় ফিরছিল। উসাইদ বলল ‘উসমানকে কতল করা হয়েছে এবং লোকেরা ৮ দিন ধরে কোন ইমাম ছাড়া ছিল’, এতে আয়শা বলল ‘তারা এর পর কি করলো’?উসাইদবলল ‘জনগণ আলি এর কাছে গিয়েছে এবং তার বায়াত করেছে’। আয়শা তখন বলল ‘আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে চলো, আমাকে মক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে চলো”। সে মক্কার দিকে মুখ করে বলল ‘উসমানকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছে, অয়া আল্লাহ, আমি তার রক্তের প্রতিশোধ নেব’। তখন উসাইদ বলল ‘এখন তুমি বলছো উসমান নির্দোষ, কিন্তু এটা তুমিই বলেছিলে ‘এই ইহুদি নাসালকে হত্যা করো’”


এমনকি ইমাম আলি আঃ জামালের যুদ্ধের আগে আয়শাকে চিঠি লেখে যেখানে আলি আঃ প্রকাশ্যে আয়শার জড়িত থাকার কথা বলেছেনঃ

আয়শা উটে চড়ে মক্কা থেকে পাড়ি দিয়ে বসরায় যায় যুদ্ধ করতে যার সমালোচনা করে ইমাম আলি আঃ লেখেনঃ


“তুমি আল্লাহ ও তার রসুলের বিরুদ্ধে কাজ করেছো ঘর থেকে বারহয়ে, তুমি যে জিনিষের দাবী করছো সে দাবী করার হক্ক তোমার নেই। তুমি উম্মাহকে পুনর্গঠনকরতে চাও বলে দাবী করছো। আমাকে বলো মহিলাদের কি ভুমিকা আছে উম্মাহকে পুনর্গঠন করার আর যুদ্ধে অংশগ্রহন করার? তুমি দাবী করছ উসমানের হত্যার শোধ নেবে অথচ সে বানুউমাইয়ার গোত্রের লোক আর তুমি বানু তামিম এর মহিলা। যদি আমরা ঘটনাক্রমের দিকে দেখিএটা মাত্র গতদিনের কথা তুমিই বলেছিলে ‘নাসালকে হত্যা করো, আল্লাহ নাসালকে হত্যা করুক কারন সে কাফির হয়ে গিয়েছে”।


সীরাত এ হালাবিয়া খণ্ড ২ দ্বিতীয় ভাগ, পাতা ৪৩৭। দেওবান্দি আলেম মুহাম্মাদ আসলাম কাসমির উর্দু অনুবাদ।



ইকদ আল ফারিদ খণ্ড ২ পাতা ৯১



خرجت عائشة باكيةَ تقول: قُتل عثمان مظلوماً! فقال لها عمار: أنتِ بالأمس تُحرضين عليه،واليومَ تَبْكِين عليه



“আয়শা কাঁদতে কাঁদতে বাইরে গেল আর বলল‘উসমান অত্যাচারিত হয়ে কতল হয়েছে’। আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ উত্তর দিলেন ‘গতকাল তুমি লোকদেরকে তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করছিলে আর আজ তার জন্য কাঁদছ”!



ইকদ আল ফরিদ খন্ড ২ পাতা ৯২

فقال مَرْوان: فقلت لها: هذا عَملك، كتبتِ إلى الناستأمرينهم بالخروج عليه



“ মারোয়ান আয়শার কাছে গিয়ে বলল ‘তোমার জন্য সে (উসমান) কতল হয়েছে, তুমি জনগণকে চিঠি লিখেছিলে আর তার বিরুদ্ধে জনগণকে উত্তেজিত করেছিলে’”।



উসমানের হত্যার পরে আয়শার অস্বীকার তারকোন কাজে আসবে না। যে সাহাবী ও তাবেঈকেই আয়শা কিছু সাফাই বলতে গিয়েছে সবাই উল্টেতাকেই অভিযুক্ত করেছে।



ইকদ আল ফরিদ খণ্ড ২ পাতা ৯৩ (সৌদি লাইব্রেরী এর লিংক)

دخل المُغيرة بن شُعبة على عائشةفقالت: يا أبا عبد الله، لو رأيتني يومَالجمل وقد نفذتْ النِّصالُ هَوْدجي حتى وصل بعضُها إلى جِلْدي. قال لها المغيرة: وددتُ والله أن بَعضها كان قتلك. قالت: يرحمك الله، ولم تقول هذا؟ قال: لعلَها تكون كَفّارة في سَعْيكعلى عُثمان



“মুগিরা ইবনে শুবা আয়শার কাছে গেলে আয়শাতাকে বলল যে ‘জামালের (যুদ্ধের) দিনে কিছু তীর ছোড়া হয়েছিল যেগুলি আমার চামড়াছুঁয়ে গিয়েছিল’। মুগিরা উত্তর দিল ‘যদি একটা তীর তোমাকে মেরে ফেলত’, আয়শা বলল‘তুমি একথা বলতে পারলে’? মুগিরা বলল ‘সেটাই তোমার প্রায়শ্চিত্ত হত, কেননা তুমি জনগণকে উসমানকে হত্যা করার জন্য উত্তেজিত করতে’”।



নাসিবিরা যারা বলে বলার চেস্টা করে যে উসমান ওআয়শার মধে মুহাব্বাতের সম্পর্ক ছিল তাদের জন্য বোমা আয়শা নিজেই ফাটিয়েছেন, নিচে রেফারেন্স দেওয়া হলো আয়শার স্বীকার উক্তি।



“ইবনে জরির তাবারি-যিয়াদ ইবনে আইউব-মুসাইব ইবনে সুলাইমান- মুহাম্মাদ –আসিম বিন কুলাইব- তার পিতা থেকেঃ

উসমানের জামানায় আমি স্বপ্ন দেখে ছিলাম, আমি দেখেছিলাম, একজন অসুস্ত বিছানায় শয্যা অবস্থায় শাসন করছে, আর একজন মহিলা তার মাথার কাছে ছিল। জনগণ তার তাকে খুঁজছিল আর দিকে ছুটছিল যদি সেই মহিলা বারণ করত তারা ক্ষান্তহত। কিন্তু তিনি তা করেননি, সুতারং তারা তাকে ধরলো এবং কতল করলো। আমি আমার এইস্বপ্ন সবার সাথে বলতাম (গ্রামের) বাসিন্দা বা রাখাল সাবাইকে, তারা অবাক হয়ে যেত কিন্তু এর মানে জানতো না।

তারপর যখন উসমানের কতল হল আমাদের কাছে খবর এল যখন আমরা একটা যুদ্ধ থেকে ফিরছিলাম, আমার সাথী বলল ‘কুলাইব তোমার স্বপ্ন’! যখন আমরা বসরায় পৌঁছলাম এবং অবস্থান করছিলাম একজন বলল‘তালহা আর যুবাইর আসছে এবং সাথে উম্মুল মোমেনিন আছে’। এতে জনগণের মধ্যে চাঞ্চল্য এসে গেল এবং তারা আশ্চারয্য হয়ে গেল, কিন্তু তারা জনগনের কাছে দাবি করছিল যে তারা উসমানের ব্যাপারে রাগান্বিত হয়ে বার হয়েছে এবং প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য কারণ লোকজন তাকে (উসমানকে) রক্ষা করেনি।

উম্মুল মোমেনিন বল্লেল ‘আমরা তোমাদের হয়ে উসমানের ব্যাপারে রাগান্বিত হয়েছিলাম তিনটি কারণে যেগুলিসে করেছিলঃ অল্প বয়েস্কদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া, জনগনের সম্পত্তি ( বাইতুল মাল)লুটপাট করা আর লাঠি ও বেত দিয়ে লোকদেরকে মারধোর করা”।


শুধু এই নয় আয়শা উসমানের প্রতি বিরোধিতার কারণে মিশরীয়দের মজলুম বলত আর পরে উসমান হত্যা যাওয়ার পরে ইমাম আলি আঃ এর বিরোধিতা ও ঘৃনায় মিশরীয়দের অত্যাচারী আখ্যা দেয়!


এখানে দেখা যাবে যে মিশরীয় যারা উসমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল তাদেরকে উসমান হত্যা করেছে বলে একজন হজতর আয়শাকে মক্ষায় খবর দেয় আর দেখুন আয়শার কি রিএক্সান!


জরির ইবনে তাবারি তার ইতিহাসের খন্ড ১৬ পাতা ৩৯ এ লিখেছেনঃ

“আয়শা যখন মদিনা ছেড়েছিল তখন উসমান ঘেরাও অবস্থায় ছিল। আখদার নামে একজন (যে মদিনা থেকে এইমাত্র) মক্কায় এসেছিল এবং তার (আয়শার) সাথে দেখা করলে সে তাকে জিগ্যেস করে

‘লোকজন কি করছে?’

- ‘উসমান মিশরের লোকদেরকে হত্যা করেছে’। সে উত্তর দিল।

- ‘ইন্না লিল্লাহেঅইন্না ইলাহে রজেউন’! আয়শা বিস্মিত হয়ে বলল ‘সে লোকদেরকে হত্যা করল যারা বিচারচাইতে এসেছিল অন্যাইয়ের বিরুদ্ধে? আল্লাহের কসম আমরা এইধরনের কাজকে অনুমতি দেইনা’।

তখনই অন্য একজনএল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করল ‘লোকজন কি করছে’?

‘উমানকে হত্যাকরেছে মিশরিয়রা’ সেই লোক উত্তর দিল।

আখদার মজা পেল।তিনি (আয়শা) বলল ‘এনি (আখদার) অভিযোগ করলো যে যাকে হত্যা করা হয়েছে সে হত্যাকারী’।


উপরে সমস্ত আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে আয়শা নিজেই উসমান কে কতলের ফতোয়া দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে লোকজনকে লিখেছে, উত্তেজিত করেছে। এবং ইবনে আব্বাসকেও দলে টানার চেস্টাকরেছে আর তালহাকে পরবর্তী খলিফা হিসাবে প্রজেক্ট করেছে। অতঃপর উসমানের সাহায্যেরআবেদনকে অস্বীকার করে মক্কায় হজ্জ করতে গিয়েছে এবং উসমান কতল হলেও স্বাভাবিকরিএক্সশন করেছে। কিন্তু যেই শুনেছে আলি আঃ খলিফা হয়েছে তখনই সে তার পলিসি পরিবর্তনকরেছে এবং উসমান মজলুম হয়ে মরেছে বলে প্রচার করতে লাগল ও আলি আঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধকরতে বসরায় গিয়ে গনহত্যা শুরু করে।


৩) তালহার ভুমিকা উসমান হত্যায়ঃ

উসমান হত্যায়পুরুষদের মধ্যে বিখ্যাত সাহাবা তালহা ইবনে উয়াবাইদুল্লাহ এর হাত সব থেকে বেশী।তালহাই সমস্ত ঘটনা পরিচালনা করে, ঘেরাও থেকে শুরু করে পানি বন্ধ করে দেওয়া। আর এইসব কারনেই উসমান নিজেই তালাহার কাছে আবেদন করে যেন তালহা ইসলামে উসমানের অবদানকেমনে রাখে।


তালহার পক্ষেসাফাই গাইতে গিয়ে নাসিবীরা প্রায় এইটা উল্লেখ করে যেঃ

উসমান মসজিদে প্রবেশ করে তালহাকে ডেকে বলে যে আমি নিজে একটুকরো জমি কিনে এই মসজিদে যোগ করেছি নবীর আবেদনে। আমি আল এসরাহ এর সেনাদের সাহায্য করেছি।

এর উত্তরে তাখাবলে হা হা। আমি জানি উসমান নির্দোষ।


নাসিবীরা এটা উল্লেখ করে বোঝাতে চায় যে তালহা নির্দোষ ছিল উসমানের হত্যায়। কিন্তু ঘটনা সেটা নয়,এই কথাব কথন দ্বারা আসল ঘটানার কোন কিছুই বোঝা যায় না।

ইনশাআল্লাহ আমারা এখানে তালহার জড়িত থাকার প্রচুর পরিমাণ প্রমান উল্লেখ করবো।


সে কি বলছে।

মুহামামদ ইবনেসাদ তার ‘তাবাকাত আল কুবরা’ এর খন্ড ৫ পাতা ৩৮ এ উল্লেখ করেছেনঃ


“যখন উসমানের হত্যা হয়ে গিয়েছিল, তালহা, যুরাইর আর আয়শা বসরায় গিয়েছিল উসমানের রক্তের প্রতিশোধ নেবার জন্য, এই সময় মারোয়ান ও এসেছিল তাদের সাথে সাথে। যখন সাবাই যুদ্ধ ক্ষেত্রথেকে পালাতে শুরু করল ( যখন আয়শার দল যুদ্ধে হেরে গেল) মারোয়ান তালহাকে দেখে বলল ‘আল্লাহের কসম সে উসমানের হত্যার জন্য দায়ী, সেই উসমানের সাথে খারাব আচরন করেছে।আমি যখনসবচক্ষে দেখেছি আমার কোন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই’। সে একটা তীর নিয়ে তালহার দিকে ছুড়েদিল যেটা তাকে হত্যা করল”।



আহলে সুন্নারইমাম হাফিজ ইবনে হজর আস্কালানী তার ‘ইসাবা’ খণ্ড ৩ পাতা ৪৩২


وأخرجهأبو القاسم البغوي بسند صحيح عن الجارود بن أبي سبرة قال : لما كان يوم الجمل نظر مروان إلىطلحة ، فقال : لا أطلب ثأري بعد اليوم، فنزع له بسهم فقتله



“আবুল কাশিম আল বাগভি সহিহ সনদ সহ জারুদ বিন আবি সাবরা থেকে বর্ণনা করেছেন যে সে বলেছে‘জামালের যুদ্ধে মারোয়ান তালহার দিকে দেখে বলল ‘ আমি আজকের পরে আর প্রতিশোধ তলব করব না’। সে একটা তীর ছুড়ে তাকে (তালহাকে) হত্যা করল’।



ইমামহাকিম ও তার ‘মুসতাদরাক’ এ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।



আহলেসুন্নার ইমামা যাহাবি তার ‘সিয়ার আলাম আন নুবালা’ এর খণ্ড ১ পাতা ৩৬ এ উল্লেখকরেছেনঃ

جويريةبن أسماء عن يحيى بن سعيد عن عمه أن مروان رمى طلحة بسهم فقتله ، ثم التفت إلىأبان فقال قد كفيناك بعض قتلة أبيك



“মারোয়ান তালহাকে তীর ছুড়ে হত্যা করে, তারপরে সে আবানের ( উসমানের ছেলে) দিকে ফিরে বলে ‘আমি তোমার আব্বার হত্যাকারীদের একজনের থেকে তোমাকে মুক্ত করলাম”।

(অন লাইন লিংক)



এখানেএকটা বিষয় উল্লেখ করা জরুরী যে মারোয়ান যে জামালের যুদ্ধে আলি আঃ এর বিপক্ষে আয়শা তালহা যুবাইরের হয়ে এসেছিল সে জানত উসমানের কাতিল কারা তার পরেও ঘোলা জলে মাছ ধরার জন্য ইমাম আলি আঃ এর বিপক্ষে জমা হয়েছিল। জামালের যুদ্ধের আগে সাহাবী সাইদ বিন আসের সাথে মারোয়ানের দেখা হয় তখন সাইদ বিন আস যা বলে সেটাও খুবই উল্লেখ যোগ্য।



“সাইদ বিন আল আস মারোয়ান ও তার লোকদেরকে দেখে বলল ‘কোথায় যাচ্ছো? যাদের থেকে তুমি প্রতিশোধ নিতে চাও তার উঠের উপরে। তাদের হত্যা করো এবং বাড়ি ফিরে যাও’।(তাবারি ,খন্ড ১৬ পাতা ৪৪)



সুতারংতালহকে হত্যা ও তার উটের দলবলকে উসমান হত্যার দায়ে হত্যা করার জন্য বলা হচ্ছে এবং মারোয়ান সুযোগ পেয়ে তালহাকে মেরে সেটাই করল।



এমনকি তালহার নিজের পুত্র স্বীকার করছে উসমানের হত্যায় তার বাবার হাত।



ইবনেকুতাইবা তার ‘আল ইমামহ ওয়াস সিয়াসা’এর পাতা৬০ এ লিখেছেঃ

“কেউএকজন মুহাম্মাদ বিন তালহাকে জিগ্যেস করল কারা উসমানকে হত্যা করল? সে উত্তর দিল যে‘তিন ভাগের একভাগ আয়শার প্রতি বলা হয় আর তিন ভাগের একভাগ আমার আব্বা তালহার জন্য”।



নাসিবীরাযতোই বৃথা চেস্টা করুক না কেন এটা বোঝাতে যে তালহা আর উসমানের মধ্যে মধুর সম্পর্কছিল কিন্তু ঐতিহাসিক ঘটনা সমূহ উল্টো কথা বলছে। একেবারে প্রথম যুগের আহলে সুন্নার ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে শিরিনের বক্তব্য তুলে ধরেছে ‘ইকদ আল ফারিদ’ এর খন্ড ২ পাতা ৯৫এ



عن إبن سيرين: لم يكن من أصحاب النبي صلى اللهعليه وسلم أشد على عثمان من طلحة۔

“ইবনেশিরিন বলেছেনঃ ‘নবি সাঃ এর সাহাবীদের মধ্যে উসমানের প্রতি তালহার থেকে বেশি আর কেউকঠোর ছিল না”।



‘তারিখআল মদিনা’ এর খণ্ড ৪ পাতা ১১৬৯ এ আমরা একজন তাবেঈ আউফ বিন আবি জামিলা এর সাক্ষ্যীতুলে ধরেছেঃ



حدثنا محمد بن منصور قال، حدثناجعفر بن سليمان الضبعي، عن عَوف قال: كان أشد الصحابة على عثمان طلحة بن عبيد الله، وإنما أفسدَ عثمانرضي الله عنه بطانة استَبْطَنَها من الطلقاء

“মুহাম্মাদ বিন মন্সুর>জাফার বিন সুলাইমান>আউফ বলেছেনঃ ‘সাহাবীদের মধ্যেতালহা উসমানের বিরুদ্ধে সবথেকে আক্রমণাত্মক ছিল......”।



এইগুলি প্রমান করে যে অন্যান্য সাহাবী সহ তালহা উসমানের বিরুদ্ধে ছিল আরতালহা তাদের হর্তাকর্তা ছিল। এর পরেও নাসিবীদের মুখে চপেটাঘাত করে নিচে রেফারেন্সদেওয়া হল উসমানের নিজের অভিযোগ।


হাফিয ইবনে শাবাহ আল নুমাইরি (মৃঃ ২৬২ হিঃ) তার ‘তারিখ আল মাদিনা’র খণ্ড ৪পাতা ১১৯৭/১১৯৮ এ উল্লেখ করেছেনঃ

فلما كان يوم العيد صلى علي رضيالله عنه بالناس ، فمال الناس إليه وتركوا طلحة ، فجاء طلحة إلى عثمان رضي اللهعنه يعتذر ، فقال عثمان : الآن يا إبن الحضرمية ألبت الناس علي حتى إذا غلبك علي على الأمر ،وفاتك ما أردت جئت تعتذر ، لا قبل الله منك

“আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর বর্ণনা করেছে ‘ঈদের দিন আলি রাঃ জনগণকে নামাযপড়লেন, ফলে জনগণ তার (আলির) কাছে গেল তালহাকে ত্যাগ করে। তখন তালহা উসমানের রাঃকাছে গেল ক্ষমা চাইতে, উসমান বলল ‘ ও হাদরামিয়ার ছেলে! তুমি লোকদেরকে আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেছো, আর যখন আলি জিতেছে তোমার বিরুদ্ধে এবং তুমি যেটা পেতেচাইছিলে সেটা হারিয়েছ, তুমি তখন ক্ষমা চাইতে এসেছো, আল্লাহ তোমার থেকে কবুল না করুক”।

(অনলাইন লিংক) (অনলাইন লিংক)


পাঠকগনে আগেই বলা হয়েছে যে তালাহা উসমানকে হত্যা করে কি হাসিল করতে চাইছিল। উপরে উসমানের নিজের মতামত দেওয়ায় হয়েছে এখানে আরওএকটা রেফারেন্স দেওয়া হল যেখানে পাঠকগন দেখতে পাবেন উসমান কাকে দায়ী করছে। দ্বিতীয় চপেটাঘাত নাসিবীদের গালে।

তাবারি তার তারিখে লিখেছেনঃ (খণ্ড ১৫ পাতা১৯৯/২০০) (লিংক)


“আব্দুল্লাহ ইবনে আইয়াস থেকে বর্ণিত ‘আমি উসমানের কাছে গেলাম (ঘেরাও এর সময়) এবং তারসাথে এক ঘন্টার মত ব্যাকালাপ করলাম। সে বলল ‘এসো ইবনে আইয়াস’ এবং সে মারা হাত ধরেনিয়ে গেল দরজার পাশে লোকেরা কি বলছে শোনাতে। আমরা কিছু লোকদেরকে বলতে শুনলাম‘অপেক্ষা কিসের জন্য’? অন্যরা বলল ‘অপেক্ষা করো হতে পারে সে তাওবা করবে’। যখন আমরা দুজন ঐখানে দাঁড়িয়েছিলাম (দরজারপাশে থেকে শুনছিল) তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ গেল আর বলল ‘ইবনে উদাইস কোথায়’? তাকে জানানো হয় “ঐ সেইখানে’। ইবনে উদাইস এলো এবং( তালহার) কিছু ফিসফিস করলো, তারপরে লোকদের কাছে গিয়ে বলল ‘কাউকে এর ভিতরে (উসমানের বাড়ির ভিতরে) ঢুকে এই লোকেরসাথে দেখা করতে দেবে না আর কাউকে এই বাড়ি থেকে বার হতে দেবে না’।

উসমান আমাকে বলল ‘এইগুলি তালহার হুকুম’। আরওবলল ‘ও আল্লাহ ! আমাকে তালহার থেকে রক্ষা করো, সে এই সব লোকদেরকে আমার বিরুদ্ধেউত্তেজিত করেছে। আল্লাহের সাক্ষী, এর থেকে কিছুই লাভ হবে না, বরং তার নিজের রক্তবইবে। তালহা আমাকে অন্যায় ভাবে আপমান করেছে। .....................’।


ইবনে আইয়াস আরও বলেন ‘ আমি বাড়ি থেকে বার হতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তারা রুকে দেয় যতক্ষন না আবু বকরের পুত্র মুহাম্মাদ সেখান দিয়ে যাচ্ছিল তাদেরকে আমাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধকরল, ফলে তারা আমাকে যেতে দিল’।



পাঠকদের এখানে (আব্দুর রহমান) ইবনে উদাইসকে নোট করে রাখার অনুরোধ করা হচ্ছে। কে এই ইবনে উদাইস ছিলেন তার কথা ও লেখা হবেইনশাআল্লাহ।


উসমানের এই কথাগুলি যথেষ্ট নাসিবীদের জন্য তালহার জড়িত থাকার বিষয়। তবে এর পরে ও যদি কোন তস্য নাসিবী ছটফট করে তবে তাকে আরওএকটা চপেটাঘাত করা হল। তালহার নিজের উক্তি তুলে ধরা হল।


ইমাম আলি আঃ এর সাথে জামাল যুদ্ধের আগে আগেতালহা কথা বার্তা।

আলকামাহ বর্ণনা করেছেনঃ “যখন তালহা,যুবাইর আর আয়শা বার হল।আমি লক্ষ্য করলাম একাকি থাকা পছন্দ করছে আর বুকের উপর দাঁড়ি ঝাড়ছে থাকছে। সুতারংআমি তাকে বললাম ‘আবু মুহাম্মাদ! আমি দেখছি তুমি একাকি থাকতে পছন্দকরছো আর বুকের উপর দাঁড়ি ঝাড়তে থাকছো। যদি তুমি কিছু অপছন্দ করো , তবে বসো ( কথা বলি)’। ‘আলকামা বিন ওয়াক্কাস’ সে আমাকে উত্তর দিল ‘ আমরা সবাই সংঘবদ্ধ ছিলাম অন্যদের বিরুদ্ধে,কিন্তু আজ আমারা একে অপরকে খতম করতে দুটি পাহাড়ের মত হয়ে দাঁড়িয়েছি।অবশ্যইআমি উসমানের বিরোধিতা করে কিছু করেছিলাম আর আমার প্রায়শ্চিত্ত এর থেকে কম হতে পারেনা যে আমার বক্ত বইবে উসমানের রক্তের প্রতিশোধ নিতে”।

(তাবারি,খণ্ড ১৬ পাতা ৭৯)


পাঠকগন লক্ষ্য করুণ তালহা নিজেই স্বীকার করেছে যে তারা সংঘবদ্ধ ভাবে অন্যদের (উমাইয়াদের) বিরুধ্যে ছিল আর সে কিছু করেছিল উসমানের বিরুদ্ধে কিন্তু যখন নিজে খলিফা হতে পারল না বরং ইমাম আলি আঃ খলিফা হয়ে গেল তখন সে মুসলিমদের খলিফায় রাসেদ ইমাম এ হক্ক ইমাম আলো আঃ এর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দিল আর বলতে লাগল যে তার রক্ত প্রবাহ তার জন্য প্রায়শ্চিত্ত!


নাসিবীরা আরও বলার চেস্টা করে যে উসমানেরহ ত্যায় তালহা ও যুবাইর দুঃখে জর্জরিত হয়ে গিয়েছিল।

নিচে দেখানো হল নাসিবীদের দুঃখে জর্জরিত হওয়ার মানে কেমনঃ


আনসাব আল আশরাফ খণ্ড ৬ পাতা ১৯২ (লিংক)

“মাজমা বিন জারিয়া আল আনসারি তালহার সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, সে (তালহা) বলল ‘ ও মাজমা তোমার বন্ধু (উসমান) কেমন আছে’? সে উত্তর দিল ‘আমি ভাবছিল তুমি তাকে হত্যাকরবে’। তালহা বলল ‘যদি তাই হত্যা করা হয়, সে কোন ফেরেশতা বা নবি নয়”।



তালহা উসমানের মহল ঘেরাও এর তদারকি করত।

উপরে প্রচুর পরিমাণ রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে যে তালহার জড়িত থাকার প্রমান। এখানে তালহা যে উসমানের মহল ঘেরাও এর নায়ক ছিল সেটা আরও পরিস্কার ভাবে দেখানো হবে।

তাবারী খণ্ড ১৫ পাতা ২৩৫ঃ

“আলি তালহাকে বলল ‘আমি তোমাকে বলছি আল্লহের ওয়াস্তে লোকদেরকে দূরে পাঠিয়ে দাও উসমানের থেকে’। তালহা বলল ‘ না, আল্লহের কসমযতক্ষন না উমাইয়ারা নিজ ইচ্ছায় আত্বসমর্পন সেটা ঠিক তার প্রতি”।



ইবনে আসাকির তার তারিখ এ দামিস্ক এ উল্লেখকরেছেনঃ

“কায়েসবিন আবি হাযিম বর্ণনা করেছেঘেরাওয়ের দিন একজন তালহার কাছে গেল এবং উসমানের হত্যার থেকে (লোকদের)বিরত করার জন্য অনুরোধ করল। তালহা জবাব দিল ‘না, আল্লাহের কসম,যতক্ষণ না বনু উমাইয়ারা নিজে থেকে যেটা হক্ক তার প্রতি সমর্পণ করবে”।

(ইবন আসাকির খণ্ড ৩৯ পাতা ৪০৩)(লিংক)


ইমাম ইবনে আবি শায়বা তার হাদিসের কিতাব আলমুসান্নাফ খন্ড ৮ পাতা ৬৮৫ এ উল্লেখ করেছেনঃ

يعلى بن عبيد عن إسماعيل بن أبيخالد عن حكيم بن جابر قال : لما حصر عثمان أتى على طلحة وهو مستند إلى وسائد في بيته فقال : أنشدك الله ! ما رددت الناس عن أمير المؤمنينفإنه مقتول ، فقال طلحة : لا والله حتى تعطي بنو أمية الحق من أنفسها

“উসমানের ঘেরাও এর সময়, আলি উসমানের কাছে গেল যখন সে বাড়িতে বালিশের উপর হেলান দিয়েছিল, (আলি)বলল ‘আমি বলছি আল্লাহের ওয়াস্তেলোকদেরকে আমিরুল মোমিনিনের(উসমান) (আক্রমণ করা)থেকে দূরে সরিয়ে দাও কেননা সে প্রায়মৃত অবস্থায়’। তালহা জবাব দিল ‘না, আল্লাহের কসম যতক্ষন না উমায়ারা স্বইচ্ছায় যেটাসত্য তার প্রতি প্রতি সমর্পণ করবে”।


সুতারং দেখাযাচ্ছে মিশর থেকে আসা বিভিন্ন বদরী ও বাইয়াতে রেযোয়ান এর সাহাবী ( যাদের কথা যথাসময়ে উল্লেখ করা হবে) যেমন ইবনে উসাইস যারা উসমানের মহলকে ঘেরাও করে রেখছিল তাদেরকে পরিচালনা করছিল তালহা। এমনকি আলি আঃ তার কছে গিয়ে আবেদন করলেও রিজেক্ট করে দেয়।


তালহা উসমানকে পানি দেওয়া বন্দ করে দেয়।

তালহা শুধু ঘেরাও করে ক্ষান্ত হয় নি বরং উসমানকেপানি দেওয়া বন্ধ করে দেয়।


বালাজুরি তারআনসাব আল আশরাফ এ খণ্ড ২ পাতা ২৯২/২৯৩ তে উল্লেখ করেছেঃ

وحدثنيأحمد بن إبراهيم الدورقي حدثنا وهب بن جرير بن حازم حدثنا أبي عن يونس بن يزيدالأيلي عن الزهري قال:۔۔۔وكان الزبير وطلحة قد استوليا على الأمر، ومنع طلحة عثمان من أن يدخل عليه الماءالعذب

“যুহুরিবর্ণনা করেছেনঃ যখন যুবাইর ও তালহা অবস্থার উপর নিয়ন্ত্রন পায়, উসমানের জন্য জলেরপরিশেবায় বাঁধা দান করে তালহা”।


তারিখআত তাবারি খন্ড ১৫ পাতা ১৮০/১৮১

“আব্দুর রাহমান বিন আল আসোয়াদ বর্ণনা করেছেন‘আমি সর্বদা লক্ষ্য করেছি যে আলি উসমানকে এড়িয়ে চলছে আগের যেরকম করছিলেন (উপদেশ দিচ্ছিল) তেমন আর করছেন না। কিন্তু আমি জানি যখন উসমানের গৃহবন্দীর সময় আলি তালহারসাথে কথা বলে পানির মশক যেন তার (উসমানের) কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

আলী এব্যাপারে রাগান্বিত ছিল (তালহার উপর)যতক্ষণ পর্যন্ত না মশক উসমানের কাছে পাঠানো হল”।



এখানেনাসিবীদের কাছে প্রস্নঃ

· ইমামআলি আঃ কেনই বা তালহার কাছে গেলেন পানি দেওয়ার জন্য? মিশরের লোকজনদের কাছে গেলেননা?

· ইমামআলি আঃ তালহার উপরে রাগান্বিত ছিলেন কেন যদি তালহা মাসুম হয়?


আসলে সাবাই বুঝতে পারছে যে তালহাই ঘেরাও করার নায়ক ছিল আর তালহার নির্দেশেই পানি বন্ধকরা সহ উসমানের ঘরে লোকজনদের ঢোকা বন্ধ হয়।


৪) যুবাইরের ভুমিকা উসমান হত্যায়।

উসমানের হত্যায় যুবাইরের ভুমিকাকে লুকানোর জন্য নাসিবীরা নানা ফন্দী আঁটে,বলে যে যুবাইর নাকি তার ছেলেকে পাঠিয়েছিল উসমানকে রক্ষাকরার জন্য!

অথচআমারা দেখি উসমান হত্যার চাক্ষুস সাক্ষী তার স্ত্রী নায়লা এর সাক্ষ্য অন্য রকম।মুয়াবিয়ার কাছে নায়লার চিঠিঃ

وكان في كتابها: مِن نائلة بنت الفُرافصة إلىمعاوية بن أبي سفيان، أما بعد:…… وإني أقُص عليكم خَبره، إني شاهدةٌ أمرَه كُلَّه: إنّ أهل المدينة حَصروه في دارهوحَرسوه ليلَهم ونهارَهم، قياماً على أبوابه بالسِّلاحِ، يَمنعونه من كل شيءقَدروا عليه، حتى مَنعوه الماء، فمكث هو ومَن معه خمسين ليلةً؛ وأهلُ مصر قدأسندوا أمرَهم إلى عليّ ومحمد بن أبي بكر وعمّار بن ياسر وطلحة والزُبير، فأمروهمبقتله

“নায়লাবিনতে ফুরাফাসার থেকে মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান এর প্রতি।

উসমানের হত্যার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম আর আমি তোমাকে এই ঘটানার বর্ণনা করব। মদিনার জনগণ(উসমানের ) ঘরকে ঘিরে রেখেছিল আর তার দরজায় পাহারা দিতে লাগল তাদের অস্ত্র নিয়ে।পঞ্চাশ রাত ধরে তারা বাড়িতে কিছুই ঢোকাতে দেয় নি এমনকি পানিও না। আবু বকরের ছেলে,আম্মার বিন ইয়াসির, তালহা ও যুবাইর মিশরের লোকদেরকে (উসমানকে) হত্যার জন্য আদেশদেয়”।

(ইকদআল ফারিদ খণ্ড ২ পাতা ৯৫ )


সুতারংউসমানের হত্যায় যুবাইরের জড়িত থাকার প্রমান ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে।

সুতারংযুবাইরের ছেলেকে যুবাইর পাঠিয়েছিল উসমানের রক্ষায় এই গল্প সহজেই ধরা যায়। আর ইবনে যুবাইর (যুবাইরের ছেলে) যে আয়শার বোন আসমার ছেলে ছিল সে আয়শাকে জামালের যুদ্ধে বারহওয়ার জন্য উত্তেজিত করে।


‘গরিবআল হাদিস’ ইব্রাহীম হারবি খন্দ৪ পাতা ২৪, হাদিস নং ১১১৪ (লিংক)

حدثناعبد الرحمن بن صالح ، حدثنا أبو بكر ، عن مغيرة ، عن إبراهيم ، عن علقمة ، قالالأشتر : « كان الذي أز أمالمؤمنين على الخروج ابن الزبير

“আলকামাবর্ণনা করেছেঃ ‘আল আশতার বলেছেন যে যে আয়শাকে (যুদ্ধের জন্য) বার হতে উত্তেজিতকরেছে সে ইবনে যুবাইর”।


যুবাইরেরজড়িত থাকার কথা ইমাম আলি সালাওতুল্লাহ আলাই প্রকাশ করেছেন।


আল ইসতিয়াব,ইবনে আবদুল বার। খণ্ড ১ পাতা পাতা ১৪৮ ও ২৩২ (লিংক)

“যখন আলি জমাল যুদ্ধের জন্য বার হল। আলি রাঃ মিম্বার থেকে বলল ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ জেহাদের প্রয়োজন দিয়েছে আর এটাকে দ্বীনের একটা সাহায্যকারী হিসাবে রেখেছেন................................................।

....................................................................................। তারা(তালহা, যুবাইর আর আয়শা) যে অধিকার চাইছে সেটা তারা নিজেরাই পরিত্যাগ করেছে। তারা রক্তের প্রতিশোধ নেবে বলছে যেটা তারা নিজেরাই বইয়েছে।তারা উসমানের হত্যার জন্যদায়ী ছিল, যাতে আমি যুক্ত ছিলাম না, কিন্তু এখন তারা অস্বীকার করছে। আর উসমানের হত্যার জন্য যে দলকে ভুগতে হবে সেটা শুধুমাত্র এই বাগী দল। তারা তাদের বায়াত আমার প্রতি করেছে আর তারপর ভঙ্গ করেছে, আর আমি আল্লাহের হুজ্জাকে তাদের উপর গ্রহন করি”।



ইমাম আলি আঃএর উপরের বক্তব্য থেকে পরিস্কার যে তালহা, যুবাইর আর আয়শা উসমানের হত্যায় জড়িত।


শেখকামালুদ্দিন মুহাম্মাদ ইবনে তালহা আস শাফেয়ী তার ‘মতালিব আল সেউল’ এর ১১৭ পাতায় জিকরে জামাল এ লিখেছেনঃ

“আলি যুবাইরকে জিগ্যেস করলেন কি কারণ তাকে আলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে টেনেছে। এতে যুবাইরবলল ‘আমি উসমানের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাই’। আলি উত্তর দিল ‘যদি তোমার হ্রদয়য়ে বিচারবুদ্ধি থাকে, তুমি বুঝতে পারতে এটা তুমি আর তোমার বন্ধুরা উসমানকে হত্যা করেছো”।



আহলে সুন্নার হাদিসের ইমামদের ইমাম মহান ইমাম যুহুরি ও একই ধরনের বক্তব্য লিখেছে, জামালযুদ্ধের আগের ঘটনা থেকে। এটা তালহা আর যুবাইরকে রক্ষা করারা যে নাসিবীদের অপচেষ্টাএকে বারে গুড়িয়ে দেবে।


“যুহুরি>বসরায় আল আবদি সহ ৭০ জনকে হত্যা করা হয়েছে এই খবর আলির কাছে পৌছাল,ফলে আলি ১২০০০ লোকনিয়ে বার হল এবং বসরায় পৌঁছালো।...........................।যখন উভয় দল একে অপরেরবিরুদ্ধে দাঁড়াল, আলি তার ঘোড়ায় উঠে বার হল আর যুবাইরকে হাক দিল আর উভয় মুখোমুখিহলো.....................। আলি যুবাইরকে বলল “তুমি উসমানের রক্তের বদলা আমার থেকে চাইছো? অথচ এটা তুমিই যে তাকে হত্যা করেছে। আমি আল্লাহকে ডাকছি তাঁর শক্তির সাহায্যে এখনি তিনি কঠিন শাস্তি দিক আমাদের মধ্যে যে উসমানের বিরোধিতায় অধিক কঠোর ছিল’। আলি তালহাকে বলল ‘তুমি আল্লাহের রাসুল সাঃ এর স্ত্রীকে বাইরে এনেছো তাকে যুদ্ধ করারা জন্য নিজের বউকে ঘরে লুকিয়ে রেখে এসেছো’।


ইমামআলি আঃ আগেই এটা বলে দিয়েছিলেন যে যুবাইর/তালহা এই ধরনের কথা বলবে। অর্থাৎ উসমানেকে মেরে উসমানের রক্তের প্রতিশোধ নেবে বলে নাটক শুরু করবে।


তাবারিখন্ড ১৬ পাতা ২৩

“ইবনেআব্বাস বর্ণনা করেছেন ‘ উসমানের হত্যার পাঁচদিন পরে আমি মদিনায় এলাম মক্কা থেকে।আমি আলি এক কাছে গেলাম কিন্তু বলা হল যে মুগিরা ইবনে শুবা ভিতরে তাঁর সংগে আছে।সুতারং আমি ঢোকার মুখে অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন মুগিরা বাইরে এল আমাকে সালাম জানলো আর বলল ‘তুমি এখানে কতক্ষণ আছো’? আমি বললাম ‘এই ঘণ্টা খানেক’। আমি আলি এরসাথে দেখা করতে গেলাম এবং সালাম দিলাম। তিনি জিগ্যেস করলেন ‘যুবাইর আর তালহার সাথে তোমার দেখা হয়েছে’?

‘নাওাসিফএ তাদের সাথে দেখা হয়েছে’।

‘কে তাদের সাথে আছে’? আলি জিগ্যেস করল।

‘আবু সাইদ বিন হারিস বিন হিসাম আর কুরাইশি দল’। আমি বললাম।

আলি বলল ‘আমি নিশ্চিত যে তারা এটা বলতে নিজেদেরকে বিরত রাখবে না যে ‘ আমারা উসমানের রক্তের প্রতিশোধ নিতে চাই’। আল্লাহের কসম আমরা জানি যে তারাই উসমানকে কতল করেছে’।



এইরেফারেন্স গুলি থেকে পরিস্কার যে আলি আঃ যুবাইরকে উসমান হত্যার দায়ী মনে করতো।

এখনআহলে সুন্নার বড় মাপের তাবে’ঈ হাসান বসরি এর কথা শুনুনঃ


فحدثنا أبو بكر بن إسحاق الفقيه و علي بن حمشاد قالا : ثنا بشر بن موسى ثناالحميدي ثنا سفيان ثنا أبو موسى يعني إسرائيل بن موسى قال : سمعت الحسن يقول : جاءطلحة و الزبير فقال لهم الناس ما جاءكم قالوا نطلب دم عثمان قال الحسن أيا سبحانالله أفما كان للقوم عقولفيقولون و الله ما قتل عثمان غيركم قال : فلما جاءعلي الكوفة و ما كان للقوم عقولفيقولون أيها الرجل إنا و الله ما ضمناك


“ইস্রাইল বিন মুসা বর্ণনা করেছে আমি হাসাঙ্কে বলতেশুনেছি ‘তালহা আর যুবাইর বসরায় এলে লোকেরা জিগ্যেস করল ‘তোমরা এখানে কেন এসেছো’?তারা উত্তর দিল ‘আমারা এখানে এসেছি উসমানের জন্য প্রতিশোধ নিতে’। হাসান বলল ‘সুবহান আল্লাহ তাদের কলবে কোন আকল নেই এটা বলল, অল্লাহ তোমরা (তালহা ও যুবাইর)ছাড়া কেউ উসমানকে কতল করেনি’।



এখনদেখা যাক আরও এক তাবে’ঈ মুতরিফ বিন আব্দুল্লাহ বিন শাখির এর মন্তব্যঃ

قلت : ورد فيه ما أخرجه أحمد والبزار منطريق مطرف بن عبد الله بن الشخير قال : ” قلنا للزبير – يعني في قصة الجمل – يا أبا عبد الله ما جاء بكم ؟ ضيعتم الخليفة الذي قتل – يعني عثمان – بالمدينة ثم جئتم تطالبون بدمه – يعني بالبصرة – فقال الزبير : إنا قرأنا على عهد رسول الله صلىالله عليه وسلم واتقوا فتنة لا تصيبن الذين ظلموا منكم خاصة ، لم نكن نحسب أناأهلها حتى وقعت منا حيث وقعت “۔


“মুতারিফ বিন আব্দুল্লাহ বিন শাখির বলেছেঃ ‘আমারা যামালের যুদ্ধের সময় যুবাইরকে বললাম ‘ ও আবা আব্দুল্লাহ! কি জন্য এখানেএসেছো? তুমি খলিফাকে পরিত্যাগ করেছিলে যে হত্যা হয়েছে ( মানে উসমান) মদিনায়, আর বসরায় এসেছো তার রক্তের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ’? যুযাইর বলল ‘ আমারা রাসুল সাঃ এরজামানায় এইটা (আয়াত) পড়তাম

{ আর তোমরা এমন ফেতনা থেকে বেঁচে থাক যা বিশেষতঃ শুধু তাদের উপর পতিত হবে না যারা তোমাদের মধ্যে জালেম এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর।}(আনফাল ২৫)

আমরা বুজতে পারেনি যে আমারা এই লোকজন যতক্ষণ না পর্যন্ত এটা ঘটেছে, যেটা ঘটেছিল”।




উপরোক্ত বর্ণনা এই সমস্ত কিতাবে পাওয়া যায়”

১। ফাতহুল বারী শারাহ সহিহ আল বুখারি খণ্ড ১৩পাতা ৩

২। তাফসীর ইবনে কাসির খণ্ড ২ পারা ৩১১

৩। সিয়ার আলাম এ নাবুলা, যাহাবি। খণ্ড ১ পাতা৫৭

৪। তারিখ দামিস্ক। খণ্ড ১৮ পাতা ৪০৫

৫। ফাতহুল কাদীর, খণ্ড ২ পাতা ৩০০০

৬। মাজ’মা আল জাওয়াদ, খণ্ড ৭ পাতা ২৭, হাদিস নং১১০২৭ ( হাইসামি বলেছেন বর্ণনাকারীগন সহিহ )


এছাড়া এটা সামান্য শব্দের পার্থক্যে আরও বহু তাফসীর আর হাদিসের কিতাবে এসেছে।


উপরের উক্তি থেকে বোঝা যায় যে যুবাইর উসমানকে পরিত্যাগ করেছিল ঘেরাওয়ের সময় এখন যারা যুবাইরকে বাঁচানোর জন্য দুর্বল গল্পো ফাঁদেযে যুবাইর তাঁর ছেলেকে পাঠিয়েছিল উসামাঙ্কে রক্ষা করারা জন্য তাদের পর্দা ফাঁস হয়েগেল।

আর দ্বিতীয়ত যুবাইর নিজে স্বীকার করছে যে এই ফেতনার লোক তারাই যাদেরকে কুরআনে বলা হয়েছে। সুতারং যুবাইর এখন সংগ্রাম করে এর হাত থেকে বাঁচতে চাইছে।

(আসলে আরও জড়িয়ে পড়ছে ইমাম হক্ক খলিফায় রাসেদ আলি আঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে!)


আয়শা তালহা আর সাহাবারা চিঠি লিখেছিল লোকদেরকে উসমানের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার জন্য।

উপরে আয়শা, তালহা আর যুবাইরের জড়িত থাকার প্রমান দেখানো হয়েছে এই পর্যায় সম্মিলিত ভাবে তারা লোকদেরকে চিঠি লিখত সেটার প্রমানদেওয়া হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে নাসিবীরা বলে যে ইবনে সাবা চিঠি লিখেছিল আর তাই লোকজন উসমানে বিরুদ্ধে ক্ষেপে যায়।

আসলে এরা সাহাবী সহ তাবে’ইদের কে মহা গাধাভাবে। নাম গন্ধহীন এক লোক চিঠি লিখেছে আর সবাই উসমানকে মারতে দোউড়াচ্ছে! কেউ এসেআর যারা চিঠি লিখেছিল তাদের থেকে ভেরিফাই করে নি! তারা মদিনায় ছিল আর আর ওরাও মদিনায় এসেছিল।

পাঠকগন এখুনি অবগত হবেন যে কে বা বারা চিঠি লিখেছিলঃ

‘আল ইমামহ ওয়াস সিয়াসা’ ইবনে কুতাইবা পাতা ৬৪

যখন তালহা আর আয়শা বসরায় এসেছিল মারপিট করতে তখণ এক ব্যাক্তি তালহার কাছে বলে।

“‘ও তালহা তুমি কি এই চিঠিগুলি চিনতে পারছো’?তালহা উত্তর দিল ‘হা’ আর তাতে ঐ ব্যাক্তি বলল ‘তুমি কি লজ্জিত নও যে এই কদিন আগেইতুমি চিঠি লিখে আমাদেরকে উসমানের হত্যার জন্য উত্তেজিত করেছিলে আর এখন তুমি তাররক্তের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বলছ’”?


বালাজুরি তার আনসাব আল আশরাফ এর খন্ড ১ পাতা৩০৮ এ একই ধরণের কথা উল্লেখ করেছেনঃ


وحدثني أبو خيثمة زهير بن حرب،حدثنا وهب بن جرير، عن أبيه، عن النعمان بن راشد: عن الزهري قال: لما قدم طلحة والزبير البصرة، أتاهما عبد الله بن حكيم التميميبكتب كتبها طلحة إليهم يؤلبهم فيها على عثمان، فقال له حكيم: أتعرف هذه الكتب ؟ قال: نعم. قال: فما حملك على التأليب عليه أمسوالطلب بدمه اليوم ؟ فقال: لم أجد في أمر عثمان شيئاً إلا التوبة والطلب بدمه

“জুহারি বর্ণনা করেছেন ‘ যখন তালহা আর যুবাইরবসরায় এল আব্দুল্লাহ বিন হাকীম আত তামিমি তাদের কাছে কিছু চিঠি নিয়ে এল যে গুলি তালহা তাদেরকে লিখেছিল উসমানের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে। ফলে হাকিম তালহাকে জিগ্যেস করল ‘এইচিঠিগুলিকে তুমি চিনতে পারছো’? সে বলল ‘হা’ । ফলে সে(হাকিম) বলল ‘ তবে কেন কাল আমাদেরকে তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে আজ তার রক্তের প্রতিশোধ চাইছো’? তালহা বলল‘আমি উসমানের ব্যাপারে তেমন কিছু পাইনি, ফলে আমি তওবা করেছি আর তার রক্তের প্রতিশোধ চাইছি’”।


এই হল তালহা যে চিঠি লিখে উসমানকে মারতে বলেছিল সে যখন দেখলো যে আলি আঃ খলিফা হয়ে গিয়েছে ভোল পালটে আলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে দৌড়ালো।


মারওয়ান যে উসমানের জামাই ছিল সে তালাহকে কিবলছে দেখুন “উসমান হত্যা হয়েছে তোমার চিঠির দোউলাতে”। (ঈকদ আল ফরিদ খণ্ড ৬পাতা ২১৮)


শুধু তালহা আর আয়শা নয় মদিনার অবস্থিতসাহাবারা চিঠি লিখেছিলঃ

তাবারি খন্ড ১৫ পাতা ১৮৪

“যখন লোকজন দেখল উসমান যেগুলি করছিল, মদিনায় অবস্থিত রাসুল সাঃ এর সাহাবিগন অন্যান্য সাহাবিদেরকে চিঠি লেখে যারা বিভিন্ন প্রদেশেসম্মুখ (সমর) এ অবস্থান করছিল ‘তোমরা আগিয়ে গিয়েছো আল্লাহের পথে জিহাদের জন্য মুহাম্মাদের সাঃ ধর্মের জন্য।তোমাদের অনুপুস্থিতিতে মুহাম্মাদের সাঃ ধর্মকে পরিত্যাগ ও বিকৃত করা হয়েছে। সুতারংফিরে এসো আর পুনরায় মুহাম্মাদের সাঃ ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করো’। সুতারং তারা সমস্তদিক থেকে আসতে থাকল যতক্ষন না তারা খলিফাকে (উসমানকে) হত্যা করে”।


সুতারং সাহাবিরাই মদিনা থেকে চিঠি লিখেছিল।


তাবারি, তার ইতিহাসে আহলে সুন্নার মহান ইমাম যুহুরির থেকে উল্লেখ করেছেন যেটা নাসিবীদের কফিনে শেষ পেরেক।

“যখন তালহা আর যুবাইর জানতে পারলো যে আলিযুওকার এ তাবু গেড়েছে, তারা বসরার উদেশ্যে রওনা দিল আর আল মুনকাদির এর রাস্তা বেছেনিল। আয়শা শুনলো কুকুররা (তার প্রতি)ডাকছে ফলে জিগ্যেস করলো ‘এই জলাশয়টা কি’? তারাজবাব দিল ‘ আল হাওয়াব’।

‘ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহে রাজেউন’ আউশাচিৎকার করলো। ‘আমিই সে! আমি রাসুল সাঃ কে স্ত্রীদের উপস্থিতিতে বলতে শুনেছি‘তোমাদের মধ্যে কার প্রতি হাওয়াবের কুত্তা ডাকবে’!

আর সে ফিরতে চাইলো। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরতার কাছে এসে বলল যে ‘যারা এটাকে বলেছে যে হাওয়াব তার মিথ্যা কথা বলেছে’। আর তারপর যাওয়ার জন্য পিড়াপিড়ি করতে লাগলো যতক্ষণ না আয়শা রাজী হল। তারা বসরায় হাজির হলযেখানে উসমান বিন হুনাইফ গভর্নর ছিল তাদেরকে জিগ্যেস করল ‘কি বিষয় তোমারা আমাদের সাহাবী (আলি) এর প্রতি ক্রুদ্ধ’?

‘আমরা তাকে আমাদের থেকে বেশি যোগ্য কলে মনেকরি না, এটার পরে সে যা করেছে’। তারা উত্তর দিল।

‘সে (আলি) আমাকে গভর্নর বানিয়েছে। আমি তাকে চিঠি লিখছি এবং জানাচ্ছি তোমরা কেন এসেছো’।উসমা্ল।(বিন হুনাইফ) বলল। ‘একটা শরতে আমি নামাযে ইমামতি করব যতক্ষণ না তার উত্তর আসে’।

সুতারং তারা ফিরে গেল আর সেও উঠে পড়লো।

কিন্তু তারা মাত্র দুদিন অপেক্ষা করল আর উসমান ( বিন হুনাইফ) কে আক্রমণ করল এবং যুদ্ধ করল যাবুকাহ এর কাছে। তারা বিজয়ই হলও উসমানকে গ্রেফতার করল। তারা তাকে হত্যা করতে যাচ্ছিল কিন্তু (মদিনায়) আনসারদের ভয় পেল*।সুতারং তারা তার দাঁড়ি আর চুল তুলে নিল।

তালহা আর যুবাইর তার পর উঠলো আর বক্তৃতা দিল ‘হেবসরার জনগণ। তওবা হচ্ছে গোনাহার জন্য। আমরা আমিরুল মুমিনিনকে (উসমান) চাইছিলাম যেসে যেন আমাদের দাবী মেনে নেয়। আমরা তাকে হত্যা করতে চাইছিলাম না, কিন্তু বুদ্ধুরা চালাক লোকের উপর প্রতিষ্ঠিত হল এবং তাকে হত্যা করল’।

‘কিন্তু আবু মুহাম্মাদ’ জনগণ তালহাকে বলল ‘ তুমিযে চিঠিগুলি পাঠিয়েছিলে সেগুলি অন্য কথা বলছে’।

(তালহা উত্তর দিতে না পারলে যুবাইর এগিয়ে আসে)।

‘তোমরা কি আমার থেকেও চিঠি পেয়েছো যে সে(উসমান) কি করছে সে ব্যাপারে’? যুবাইর বলল।

এবং উসমানের কতল নিয়ে বলতে লাগলো কেন আলি এর প্রতি দোষ দেওয়া হচ্ছে।

এই সময় আবদ আল কাইস থেকে একজন উঠে দাড়ালো এবংতাদের দিকে ফিরে বলল ‘চুপ করো, এবং এবং শোন যাতে আমরা বলতে পারি’।

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর চিৎকার করল ‘তুমি কেহে যে বলবে’?

আব্দি বলল ‘ মুহাজিরদের দল, তোমরা আলালহের রাসুলের ডাকে প্রথম সাড়া দিয়েছো আর এটার মাধ্যমে লাভবান হয়েছো।তার পরে সবাই ইসলামেদাখিল হয়েছে তোমাদের উদাহরন দেখে।আর যখন আল্লাহের রাসুল সাঃ মারা জান তোমারাতোমাদের একজনকে বায়াত করছিলে আমাদের সাথে কোনরূপ আলোচনা না করে।আমরা কোনভাবে সেটামেনে নিয়েছিলাম ও তোমাদের সাথ দিয়েছিলাম............................................................তার পরে যখন এই খলিফা মারা গেল সে ছয়জনের হাতে সিদ্ধান্তের ক্ষমতা দিল এবং তোমরা উসমানে সিলেক্টকরলে এবং বায়াত করলে আমাদের সাথে আলোচনা না করে। তার পরে তোমরা তার মধ্যেকিছু দোষ দেখেলে আর তোমরা তাকে কতল করলে আমাদের সাথে আলোচনা না করেই। তারপরে তোমরা আলির হাতে বায়াত করলে আমাদের সাথে আলোচনা না করেই। সুতারং ঠিক কোনব্যাপারে তোমরা তার উপর ক্ষিপ্ত যে সেই ব্যাপারে আমাদেরকে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেহবে?সে কি গনিমতে হেরফের করেছে না কোন অন্যায় করেছে? সে কি এমন কিছু করেছে যে আমরা তোমাদের সাথ দেব তার বিরুদ্ধে। যদি না হয় তবে এটা কি হচ্ছে’?

তালহা ও যাবাইর তাকে হত্যা করতে উদ্দত হলকিন্তু তাদের গোত্র ঊঠে দাঁড়াল তাদের পথে। কিন্তু পরের দিন সকালে তারা তার ও তারলোকেদের উপর আক্রমণ করলো এবং ৭০ জনকে হত্যা করল”।

(তাবারি, খন্ড ১৬ পাতা ৬৮/৬৯)

*উসমান বিন উনাইফ রাঃ যাকে ইমাম আলি আঃ বসরারগভর্নর ছিল তার ভাই সোহেল বিন হুনাইফ রাঃ কে ইমাম আলি আঃ মদিনার গভর্নর করে। তালহা, যুবাইর এদের বাড়ির লোকজন আরসম্পত্তি সব মদিনায় ছিল যদি উসমান বিন হুনাইফকে হত্যা করা হয় মদিনায় সোহাইল বিনহুনাইফ প্রতিশোধ নিতে পারে সেই ভয়ে তাকে হত্যা না করে দাঁড়ি উপড়িয়ে ছেড়ে দেয়।



৫) সাহাবী আমর বিন আল আস এর ভুমিকা

আহলে সুন্নার কাছে এই মস্ত বড় সাহাবী ও জড়িত ছিল আর এই সাহাবী প্রচন্ড রকমনাসেবী ছিল।

যাহাবি তার ইতিহাস এর বই ‘তারিখ আল ইসলামের৪থ খণ্ডের ৯৪ পাতায় লিখেছে ইবনে আব্বাস , মুয়বিয়া আর আমর বিন আসকে যা বলেছেন তাউল্লেখ করেছে।

وإن أحق الناس أن لايتكلم في أمر عثمان لأنتما ، أما أنت يا معاوية فزينت له ما كان يصنع حتى إذا طلبمنك نصرك أبطأت عنه وأحببت قتله ، وأما أنت يا عمرو فأضرمت المدينة عليه

“ইবনে আব্বাস বলেছেনঃ ‘.........উসমানেরব্যাপারে যাদের কথা বলার অধিকার নেই তাদের মধ্যে তোমরা দু’জন প্রধান, তুমিমুয়াবিয়া, তুমি তার (উসমানের) কাজ গুলি তার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছিলে আর যখন সেতোমার কাছে সাহায্য চাইলো তুমি তাকে পরিত্যাগ করলে, এবং সে হত্যা হোক চাইলে। আর তুমি আমর, তুমি লোকদেরকে তার বিরুদ্ধেউত্তেজিত করে তুলে ছিলে”।



ইবনে আব্দুল বার উসমান আর আমর ইবনে আসেরমধ্যে তিক্ত সম্পর্কের কারন উল্লেখ করেছেনঃ

খন্ড ১ পাতা ৩৬৮ (অন লাইন লিংক)


“২৫ হিজরিতে মিশরের লাগোয়া এলাকায় বিদ্রোহহয়েছিল, ফলে আমর বিন আস ঐ এলাকা দখল করে আর এওই এলাকার লোকদেরকে দাস বানায়।

উসমান ঐ সমস্ত দাস/দাসিদের ফিরত দিতে নির্দেশ দেয় যেসব গ্রামের লোকেরা যুদ্ধে যোগদেয় নি। তার পর আমর বিন আসকে মিশরের গভর্নর পদ থেকে আপসারণ করে আর আব্দুল্লাহ ইবনেসারাহকে গভর্নর করে। এটা ছিল উসমান আর আমর বিন আসের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত”।


ইবনে আসির তার বিখ্যাত ইতিহাসের বই ‘ আলকামিল ফিত তারিখ’ এর খন্ড ৩ পাতা ১৬৩ এ উল্লেখ করেছেনঃ

وخرج عمرو بن العاص إلىمنزله بفلسطين وكان يقول : والله إني كنت لألقى الراعي فأحرضه على عثمان ، وأتىعليا وطلحة والزبير فحرضهم على عثمان … ثم مر راكب آخر فسأله قال : قتل عثمان فقالعمرو : أنا أبو عبد الله إذا حككت قرحة نكأتها

“আমর বিন আস ফিলিস্তিনে তার বাড়িতে গেল এবংবলল “ওল্লাহ আমি রাখালদের কাছে যেতাম আর উসমানের বিরুদ্ধে তাদেরকে উত্তেজিত করতাম,আমি আলি, তালহা আর যুবাইরের কাছে যেতাম আর তাদেকে উসমানের বিরুদ্ধে উত্তেজিতকরতাম’............একজন পথচারী জিগ্যেস করল ‘উসমান কি কতল হয়েছে’? আমর বলল ‘আমিআবু আব্দুল্লাহ, আমি কোন ঘা চুলকাই না যতক্ষন না সেটাকে উপড়ে ফেলি”।


৬) সাহাবী আমর বিন বাদিল আল খুজাই রাঃ এরভুমিকা উসমান হত্যায়।

ইমাম ইবনে হজর আস্কালানি তার ‘আল ইসাবা’ এরখন্ড ৪ পাতা ৬০৬ এ হাদিস নং ৫৭৮১

عمرو بن بديل بن ورقاء الخزاعي قال الطبراني لهصحبة وهو أحد من جاء مصر في أثر عثمان واستدركه بن فتحون

“তাবারানি বলেছেন ‘সে একজন সাহাবী, আর সেতাদের একজন ছিল যে উসমানের বিরুদ্ধে মিশর থেকে অগ্রসর হয়েছিল”।



তারিখ এ মাদিনা খন্ড ৪ পাতা ১৩০৩ঃ


حدثنا عفان قال : حدثنا أبو محصن قال : حدثنا حصين بن عبد الرحمنقال : حدثني جهيم قال : أنا شاهد ، دخل عليه عمرو بن بديل الخزاعي , والتجيبييطعنه أحدهما بمشقص في أوداجه , وعلاه الآخر بالسيف فقتلوه


“ আমি দেখছিযে আমর বিন বাদিল আল খুজাই আর আল তেজিবি তার (উসমানের) কাছে দাখিল হল, আর তাদেরমধ্যে একজন একটা ছুরি দিয়ে আঘাত করল আরঅন্যজন তরবারি দিয়ে এবং তাকে মেরে ফেল্লো”।



এসব বর্ণনায় সবাই শিকা রাবি।

৭) সাহাবী আব্দুর রহমান বিন উদাইস রাঃ এরভুমিকা উসমানের হত্যায়।



ইবনেউদাইস একজন বড়মাপের সাহাবী ছিলেন তিনি বায়াতে রিযোয়ান এর সাহাবী ছিলেন অর্থাৎগাছের নিচে যে বায়াত অনুষ্ঠান হয়। এর আগে ও দেখানো হয়েছে যে ইবনে উদাইস ,তালহারথেকে নির্দেশ নিয়ে উসমানকে পানি বন্ধ করে দিচ্ছেন। এখানে আরও কিছু প্রমান দেওয়াহল।


ইবনে আসির তার ‘উসুদ আল গাবা’ এর খণ্ড ৩ পাতা৩০৯ এ এই সাহাবী জীবনীতে উল্লেখ করেছেন।

“আব্দুর রহমান ইবনে উদাইস ইবনে আমর ইবনে উবাইদ ইবনে কালাব ইবনে দাহমান ইবনেঘানাম ইবনে হামিম ইবনে দুহাল ইবনে হানী ইবনে বালি। এটা তার বংশপরিচয়, সে বালাভি,সে সাহাবী ছিল, বায়াতে রেযোয়ানে উপস্থিত ছিল।সে সেই সময় বায়াতও করেছিল, আর সে ঐসেনা দলের কামান্ডার ছিল যারা মিশর থেকে এসে উসমানকে ঘেরাও করেছিল তার হত্যারসময়”।


ইমাম ইবনে সাদ তার ‘তাবাকাত আল কুবরাতে’ খণ্ড৭ পাতা ৫০৯

عبد الرحمن بن عديس البلوي من صحب النبي صلى الله عليه وسلم وسمعمنه وكان فيمن رحل إلى عثمان حين حصر حتى قتل وكان رأسا فيهم


“আব্দুর রহমান ইবনে উদাইস আল বালাভি তাদেরমধ্যে ছিল যারা রাসুল সাঃ এর সাথ দিয়েছিল এবং তাঁর সাঃ থেকে (বচন)শুনেছিল এবং সেতাদের মধ্যে একজন ছিল যারা উসমানকে ঘেরাও করার জন্য কুচ করেছিল তার (উসমানের)কতলপর্যন্ত, সে তাদের কমান্ডার ছিল”।


ইবনে সাদ তার ‘তাবাকাত আল কুবরা’ এর খণ্ড ৩পাতা ৭১ এ আরও লিখেছেনঃ


كان المصريون الذين حصروا عثمان ستمائة رأسهم عبد الرحمن بن عديسالبلوي وكنانة بن بشر بن عتاب الكندي وعمروبن الحمق الخزاعي

“মিশরীয় যারা উসমানকে আক্রমণ করে ৬০০ জন ছিলআর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আব্দুর রাহমান ইবনে উদাইস ও আমর বিন হামাক্ক আল খুজাই”।



ইবনে আব্দুল বার তার ইস্তিয়াব এর খন্ড ২ পাতা৪১১ এ উল্লেখ করেছেন


عبد الرحمن بن عديس البلوي مصري شهد الحديبية ۔۔۔ ممن بايع تحتالشجرة رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: أبو عمر هو كان الأمير على الجيشالقادمين من مصر إلى المدينة الذين حصروا عثمان وقتلوه


“আব্দুর রহমান ইবনে উদাইস আল বালাভিহুদাইবিয়ার দেখেছে আর তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন যারা গাছের নিচে বায়াত করেছিল। আবুউমার বলেছেন ‘সে সেই সেনা দলের প্রধান ছিল যারা উসমানকে আক্রমণ করে এবং তাকে হত্যাকরে”।


ইবনে হাজর আস্কালানি তার ‘আল ইসাবা’ এর খণ্ড৪ পাতা ২৮১ এ জীবনী নং ৫১৬৭ এ উল্লেখ করেছেঃ

وقال بن البرقي والبغوي وغيرهما كان ممن بايع تحت الشجرة ۔۔۔ وقالبن يونس بايع تحت الشجرة ۔۔۔ وقال بن يونس بايع تحت الشجرة وشهد فتح مصر واختط بهاوكان من الفرسان ثم كان رئيس الخيل التي سارت من مصر إلى عثمان في الفتنة

“ইবনে বারকি, আল বাগাভি এবং অন্যান্যরাবলেছেন যে সে গাছের নিচে বায়াতে অংশ গ্রহন করেছিলেন.........। ইবনে ইউনুস বলেছেনগাছের নিচে বায়েত ছিলেন, মিশরের বিজয়ে অংশ গ্রহন করেছিলেন এবং বীর যোদ্ধা ছিলেন আরসে উসমানকে আক্রমণ করা সেনা দলের প্রধান ছিল”।


অনুরূপ ভাবে ইবনে হাজর আস্কালানি তার ‘তাজিলআল মানফা’ এর ৪৭১ পাতায় উল্লেখ করেছেন তিনি সাহাবী ছিল এবং অন্য সাহাবী তার থেকেবর্ণনা করেছেন।


ইবনে কাসির তার ‘আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া’ এরখণ্ড ৭ পাতা ১৭৯ এ উল্লেখ করেছেনঃ


“উসমানের হত্যার পরে তার কাতিলরা তার মাথা কেটেনিতে চেস্টা করছিল, মেয়েরা চিৎকার করতে শুরু করল আর মুখে চপেটাঘাত করতে লাগল (মাতম), উসমানের দুটো স্ত্রী নাইলা আর উম্মুল বানিন আর তার কন্যারা এর মধ্যে ছিল।ইবনে উদাইস বলল ‘উসমানকে ছেড়ে দাও’। ফলে তারা তাকে ছেড়ে দিল আর ঘরে যাকিছু ছিললুটে নিল”।



ইবনে আসাকির তার ‘তারিখ এ দামিস্ক’ এ রেওয়াতকরেছেন। ( খন্ড ২ পাতা ৪৭২)ঃ


له صحبة وهو ممن بايع تحتالشجرة

“সে সাহাবী, এবং সে গাছের নিচে বায়াত কারীদেরমধ্যে ছিল”।


এখানে উল্লেখ্য যে আহলে সুন্না ও নাসিবী রাসাহাবাদের মহান মর্যাদা দেখাবার জন্য গাছের নিচে বায়াত করা তথা বায়াতে রেজোয়ান এরকথা উল্লেখ করে এবং কুরআনের আয়াত পড়ে। যেবায়াত এ রেজোয়ান এর সাহাবীরা কিভাবে উসমানকে হত্যা করছে!

এখন নাসিবীরা কি করবে?


৮) সাহাবী আমর বিন হামক আল খুজাই এর ভুমিকাউসমান হত্যায়।



ইবনেহাজর আস্কালানি তার ‘তাকরীব আত তাহজিব’ পাতা ৪২০ এ এন্ট্রি নং ৫০১৭

“আমরবিন হামক, ইবনে কাহিল আর তাকে ইবনে কাহিন, ইবনে হাবীব আল খজাই ও বলা হয়।

সাহাবী যে কুফায় থাকত তারপর মিশরে, সেমুয়াবিয়ার খেলাফাত এ মারা যায়”।



ইবনে সাদ তার ‘তাবাকাত’ এ উল্লেখ করেছেন। “মিশরীয়যারা উসমানকে আক্রমণ করে ৬০০ জন ছিল আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আব্দুর রাহমান ইবনেউদাইস ও আমর বিন হামাক্ক আল খুজাই”। (খণ্ড ৩ পাতা ৭১)



ইবনে সা’দ তার তাবাকাত এ আরও উল্লকেহকরেছেনঃ( খণ্ড ৩ পাতা ৬৫)

“যখন মিশরের লোকেরা উসমানের কাছে এল, তারা দিখাসাবা তে ঘাটী গাড়লো। উসমান,মুহামামদ বিন সালামাহকে ডেকে বলল ‘যাও আর তাদেরকে আমার কাছে আসতে বিরত করো, তারাযাতে খুশি হয় সেই সব দাও, বলো যে আমি তাদের দাবী অউঞ্জাই কাজ করবো আর সমস্যা নিয়েআলোচনা করবো’।

মুহাম্মাদ ইবনে সালামাহ তাদের কাছেদিখাসাবাতে গেল। জাবির বলে ‘উসমান আনসারদের মধ্যে থেকে পঞ্চাশ জন যোদ্ধা কেপাঠিয়েছিল আমি তার মধ্যে ছিলাম, আর তাদের (মিশরের থেকে আসা লোকেদের) চারজন নেতাছিল আব্দুর রহমান বিন উদাইস আল বালাভি, সাউদান বিন হিমরান, ইবনে বায়া আর আমরবিন হামক আল খুজাই”।


নাসিবীদের প্রিয় আলেম ইবনে কাসির তার ‘বেদায়াআর নেহায়া’ তে উল্লেখ করেছেনঃ


وفيها: كانت وفاةعمرو بن الحمق بن الكاهن الخزاعي، أسلم قبل الفتح وهاجر. وقيل: إنه إنما أسلمعام حجة الوداع. وورد في حديث أن رسول الله دعا له أن يمتعه الله بشبابه، فبقيثمانين سنة لا يُرى في لحيته شعرة بيضاء. ومع هذا كان أحد الأربعة الذين دخلواعلى عثمان

“আমর বিন হামাক বিন কাহিন আল খুজাই এরমৃত্যুঃ সে ইসলামের মক্কা বিজয়ের আগে দাখিল হয়েছিল এবং হিজরত করেছিল। কেউ কেউ বলেসে বিদায় হজের সময় ইসলাম গ্রহন করেছিল। আর হাদিসে এটা এসেছে যে রাসুল সাঃ তার জন্যদোয়া করেছিল যে ‘আল্লাহ তোমাকে যুবক হিসাবে রাখুক’। ফলে সে ৮০ বছর বেঁচেছিল কিন্তুতার একটাও ছুল পাকে নি। সে ঐ চারজন লোকের মধ্যে একজজ ছিল যে উসমানের ঘরে প্রবেশকরেছিল”। (খণ্ড ৮পাতা ৪৮)


ইবনে কাসীর আরও উল্লেখ করেছেনঃ

“ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন আউন ইবনে কানানাথেকে যে কানানা বিন বাশার লোহাত রড দিয়ে উসমানের কপালে আর মাথায় আঘাত করে ফলে যেপড়ে যায় আর তখন সাউদান বিন হিমরান তরবারীর দ্বারা আঘাত করে এবং হত্যা করে। আমর বিনহামক তার বুকের উপর চেপে বসে আর এই সময় উসমান শেষ নিশ্বাস নিচ্ছিল, সে নবারবর্শাদিয়ে আঘাত করলো। বর্ণনা কারী বলেন যে তার মধ্যে তিনটে ফস্কিয়ে যায় আর ছ’টাতাকে আঘাত করে আর এই সময় সে মৃত আমার সামনে পড়ে ছিল”।

(খণ্ড ৭ পাতা ২০৮)


আহলে সুন্নার রেজাল ও হাদিস শাস্ত্রের ইমামইবনে হিব্বান তার ‘শিকাত’ ( বিশস্ত) এ উল্লখে করেছেনঃ

“৭০০ লোক মিশর থেকে এলো যাদের নেতা ছিলআব্দুর রাহমান ইবনে উদাইস, আমর বিন হামক আল খুজাই, কানান বিন বাশার, সাউদান বিনহিমরান আল মুরাদি’। ( খণ্ড ২ পাতা ২৫৬)


সুতারং নাসিবীদের এখন কি হবে? তারা সাহাবীনক্ষত্র এর স্লোগান দিয়ে জোল ঘোলা করতেচায়। আর বায়াতে রেযোয়ান এর হাওয়া তুলে শিয়াদের বিরুদ্ধে গালি দেয়। অথচ মহানসাহাবীরাই জড়িত।

এরপরের পার্টএ আরও কিছু সাহাবীদের উল্লেখ করা হবে যারা সরাসরি উসমান হত্যায় যুক্তছিল। এবং আরও কিছু মুল্যবান তথ্য তুলে ধরা হবে ও নাসিবীদের আরও কিছু সমস্যারচিকিৎসা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

এখন এই প্রবন্ধ শেষ করছি গত বছর মিশরের একটাঘটানা দিয়ে।

মিশরের এক প্রখ্যাত সালাফি আলেম যাকে টিভিতেও দেখা যায় জ্বালাময়ি বক্তব্য রাখতে। আর তিনি মসজিদের ইমাম ও বটে। এক শুক্রবারমসজিদে খুতবা দিতে উঠে উসমানের হত্যা নিয়ে বললেন আর আমর বিন হামক আল খুজাই এরপ্রতি গালি পাড়লেন, যিন্দিকুন, সাবাই, মাজুসি যে উসমানকে হত্যা করেছে যচ্চাতাই বলেখোদবা দিলেন।

পরেতার ছাত্ররা তার কাছে গিয়ে বললে উস্তাদ কিন্তু আমর বিন হামক তো সাহাবী আপনি তাকেগালি দিলেন আর মাজুসি জিন্দিক বললেন! ফলে সেই আলেম একটু পড়াশনা করে দেখলেন তাইত!

তার পরের শুক্রবার আবার মসজিদে উঠে বললেন যেগতবারে যেটা বলেছিলাম সেটা হচ্ছে আমর বিন হামক সাহাবী রাদিয়াল্লাহ উসমানরাদিয়াল্লাহকে হত্যা করেছে। আমর বিন হামক রাদি আল্লাহ আল্লাহ তার উপর রাজী হোকউসমানকে কতল করেছে আল্লাহ তার উপর রাজী হোক।


এই হচ্ছে আহলে সুন্নার অবস্থা! রাদি আল্লাহরাদি আল্লাহ লড়াই ও হত্যা এক রাদি আল্লাহকে মজলুম বলে আর এক রাদি আল্লাহকে জালিমবলে আবার সবাই জান্নাতে যাবে। সেখানে গিয়ে কি করবে কে জানে!


(Article version 1.0. without revision and spell check)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×