২৬ জুন: মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ধর্মীয় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠিগুলোর জন্য এবারের বর্ষা এসেছে ভয়ানক সহিংসতা ও নিরাশ্রয়ের কাল হয়ে। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে সীমান্তবর্তী আরাকান প্রদেশে রাষ্ট্রীয় সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়প্রার্থী মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ও বার্মিজ মুসলমানদের নৌকার বহর যখন সাগরে ঠেলে দিচ্ছে ঢাকা, তখন দেশটির পূর্বাঞ্চলের খ্রিস্টান ধর্মালম্বী জাতিগত কাচিন শরণার্থীদের সহিংসতা আক্রান্ত এলাকায় ঠেলে দেবার (পুশব্যাক) অভিযোগ উঠেছে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে।
চীনের বিরুদ্ধে এমন অমানবিক আচরণের অভিযোগ এনে মঙ্গলবার মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কাচিন স্বাধীনতা সেনা ও বার্মিজ সরকারি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধে উদ্বাস্তু হয়ে চীনের সীমান্ত অঞ্চলে আশ্রয় প্রার্থী সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের আবারো যুদ্ধক্ষেত্রে ঠেলে দিচ্ছে সীমান্তরক্ষীরা।
অঞ্চলটিতে ১৭ বছর ধরে চালু যুদ্ধবিরতি গত বছর শেষ হবার পরে চলতি জুন মাসের শুরুতে বার্মিজ বাহিনী ও কাচিন স্বাধীনতা সেনা’র (কেআইএ) মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার হিসাবে ষাট হাজারের বেশি লোক উদ্বাস্তু হয়েছে।
বৌদ্ধ ধর্মপ্রধান দেশটিতে কাচিনরা প্রধানত ব্যাপ্টিস্ট ও ক্যাথলিক খ্রিস্টান এবং সরকারি হিসাবে মোট জনসংখ্যার শতকরা সাত ভাগ। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো আদমশুমারি বিগত চার দশকে মিয়ানমারে হয়নি।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, যুদ্ধ এড়াতে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আশ্রয়প্রার্থী এই কাচিন উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে দিচ্ছে চীনা কর্তৃপক্ষ। প্রবল বর্ষা মৌসুমে জীবনধারনের ন্যূনতম উপকরণ ছাড়া অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে শরণার্থীরা।
সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, উদ্বাস্তুদের মধ্যে প্রায় দশহাজার লোক চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় আশ্রয়লাভের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, এই উদ্বাস্তুদের পানি, পয়নিষ্কাশন, আশ্রয় বা স্বাস্থ্যসেবার কোনো সুযোগ নেই।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আশ্রয়লাভের চেষ্টা করায় এদের অনেককেই গ্রেফতার করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ এবং মিয়ানমারে যুদ্ধ আক্রান্ত এলাকায় ঠেলে দিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাটির চীন শাখার পরিচালক সোফি রিচার্ডসন বলেন, ‘‘চীনা সরকার সাধারণত ইউনান প্রদেশে কাচিন শরণার্থীদের উপস্থিতি সহ্য করে আসছিল। কিন্তু এখনকার প্রয়োজন হল শরণার্থীদের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো এবং তাদের ফেরত না পাঠানোর ক্ষেত্রে দেশটির আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধ্যকতা পূর্ণ করা।’’
সোফি বলেন, ‘‘কোনো ধরণের আশ্রয় ও খাদ্য ছাড়া তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পেছনে চীনের কাছে কোণো ন্যায্য যুক্তি নেই।’’
এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রশ্নের জবাব দেয়নি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
তবে ইউনান প্রদেশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, উদ্বাস্তুদের মানবিক সাহায্য দিয়ে এবং কাচিন বিদ্রোহী ও বার্মিজ সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে চীন ভূমিকা রাখছে।
তবে সোফি রিচার্ডসন জোর দিয়ে বললেন, ‘‘কাচিন অঞ্চল যতদিন না উদ্বাস্তুদের ফেরার জন্য নিরাপদ হচ্ছে, ততদিন শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও ভাল থাকার ব্যবস্থা করা চীন সরকারের দায়িত্ব।’’
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সরকার কর্তৃক ওই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার কার্যত নিষিদ্ধ হলেও গত ১৫ জুন আল-জাজিরা’র সংবাদকর্মীরা কাচিন অঞ্চলের দুর্ভোগের ভিডিও দৃশ্য ধারণে সক্ষম হন। টিভি নেটওয়ার্কটির প্রচারিত ভিডিও সংবাদে দেখা যায়, সরকারি বার্মিজ বাহিনীর আক্রমণের মুখে কাচিন স্বাধীনতা সেনা’রা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে প্রাণান্তকর যুদ্ধে লিপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৪৩