somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্ণ পিশাচিনী! পর্বঃ তিন (ক)

২৮ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্বের লিংকঃ
কর্ণ পিশাচিনী! পর্বঃ এক (ক)
কর্ণ পিশাচিনী! পর্বঃ এক (খ)
কর্ণ পিশাচিনী! পর্বঃ দুই (ক)
কর্ণ পিশাচিনী! পর্বঃ দুই (খ)

পর্বঃ তিন (ক)

হেডম্যান, কারবারী আর অংসুথাই এর আকুতি মাখা কন্ঠ উপেক্ষা করে জুলকারনাইন আর ঢাকা ফেরত যেতে পারে নাই। গাড়ি ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়ে সে থেকে গিয়েছে পাহাড়ি খুনের রহস্য সমাধানে। গত রাতে, জেলা প্রশাসন হতে পর্যটন মোটেল এর একটা টুইন বেড ভিআইপি কক্ষে যুলকারনাইন এর থাকবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যদিও এসব আভিজাত্য আর চাকচিক্যময় জীবনে যুলকারনাইন কখনোই খুব একটা আরাম বোধ করে না কখনোই। পর্যটন মোটেলটা অবশ্য বেশ সুন্দর! পাশেই রাঙ্গামাটির ঐতিহ্যবাহী ঝুলন্ত ব্রিজ, ব্রিজের নিচে কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ-নীল জলরাশি আর উপরে পাহাড় একেবারে চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। লেকের পানিতে সারি বেঁধে নোঙ্গর ফেলে রয়েছে রঙ-বেরঙের অসংখ্য ডিঙ্গি নৌকা, চাইলেই সামান্য কিছু অর্থ খরচ করে এসব নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানো যায় কাপ্তাই লেক। ডিসি সাহেব অবশ্য বলছিলেন, "আপনি চাইলে পর্যটনে থেকেই আপনার তদন্ত কাজ পরিচালনা করতে পারেন যুলকারনাইন সাহেব।" বিষয়টা যে কোন ভাবেই তদন্ত কাজ নয় বরং আরও গভীরের কিছু সেই তর্কে না গিয়ে, পর্যটনে থেকে কাজ করবার আমন্ত্রণটিকে ছোট্ট করে না করে দিয়ে কমিউনিটিতেই তার থাকবার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিল যুলকারনাইন এবং একই সাথে তার পরিচয়, কি উদ্দেশ্যে তার কমিউনিটিতে যাওয়া এসব বিষয় গোপন রাখবার পাশাপাশি যে কারও নিকট হতে কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়া সহ তার সাথে শুধুমাত্র জরুরী ক্ষেত্রে সীমিত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছাড়া অন্য সকল সরাসরি যোগাযোগও কঠোর ভাবে বন্ধের অনুরোধ করে সে।

যুলকারনাইনের এমন শর্তে ডিসি সাহেব হাঁসতে হাঁসতে বলেছিলেন, "যুলকারনাইন সাহেব আমি জানি আপনি বড়ই স্বাধীনচেতা একজন মানুষ, কাজ করেন নিজ মর্জি-মাফিক। আপনি যে, কেইসটি হাতে নিতে রাজী হয়েছেন আমরা এতেই খুশি। আজকের পর হতে কাজ না শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা আপনাকে কেউ চিনি না, জানিওনা। আপনি আপনার মত কাজ করুন, যদি একান্ত কোন কিছুর প্রয়োজন হয়েই পড়ে, তবে আমাকে ফোনে জানাবেন। আমি ব্যবস্থা করে দেবো, তাও সেটা গোপনে।" যেহেতু ডিসি সাহেব গতদিন যুলকারনাইনকে চিনতেন এবং সে তার মেহমান ছিল তাই মেহমানদারির কোন কমতি তিনি রাখেন নাই। সাদা-মাটা জীবনে অভ্যস্ত যুলকারনাইনের নিকট ডিসি সাহেবের সেই জৌলুসপূর্ন মেহমানদারি যেমন তাকে ঋনী করে তুলছিল আবার একই সাথে ছিল ব্যার্থ হয়ে যাবার ভয়। ডিসি, এসপি সহ কমিউনিটির মানুষজন হয়তোবা শেষ আশা নিয়েই তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, এই রহস্য উন্মোচনে ব্যার্থ হলে এখানে শুধু সে-ই ব্যার্থ হবে না বরং ব্যার্থ হয়ে যাবে প্রতিটা ঘটনার পেছনের যৌক্তিক ঘটনার অনুসন্ধান পদ্ধতি, ব্যার্থ হয়ে যাবে বিজ্ঞান।

যুলকারনাইন জানে এই রহস্যে তার সফল হবার চান্স এখন পর্যন্ত খুব একটা বেশী নেই যার প্রধান কারন হল পাহাড়ি সমাজ-সংস্কৃতি স¤পর্কে তার বিশদ জ্ঞান না থাকা। এর আগে যে রহস্যগুলোর সমাধান সে করেছে সেগুলো ছিল তার নিজ সমাজে! নিজ সমাজের অনেক কিছু জানা তার। এমন জানা-শোনা সমাজে শুধুমাত্র আন্দাজে ঢিল ছুড়লেও অনেক কিছু হাতে চলে আসে। বার কতক তো এমন অনেক রহস্যের সমাধান সে ঘটনাস্থলে না গিয়ে শুধু ঘরে বসেই করে ফেলেছে। কিন্তু পাহাড়ি এই জনপদে সেটা সম্ভব নয়। পাহাড় বড়ই জটিল, অদ্ভুত আর সুন্দর জায়গা।

পাহাড়ে যুলকারনাইন আগেও অনেকবার এসেছে কিন্তু পাহাড়িদের সাথে সেভাবে মেশা হয় নাই তার, বিধায় এদের সমাজ ব্যবস্থা, আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি ইত্যাদি নানান বিষয়ে তার মাঝে সম্যক জ্ঞান অনুপস্থিত। এসব জানা জরুরী! তাদেরকে জানতে না পারলে কোনভাবেই এই সিরিয়াল কিলিং এর রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবেনা। শুরুতেই ভাষা একটা প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, ভাষা শিখে উঠবার আগে পর্যন্ত কিছুদিনের জন্য একজন ট্রান্সলেটর তার দরকার, এবং ট্রান্সলেটরকে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত হওয়া বাঞ্চনীয়। এনজিওর একজন গবেষনাকর্মী পরিচয়ে সে কমিউনিটিতে সে ঢুকতে পারে। এনজিও বেশ তে লম্বা একটা সময় কাজ করবার সুবাদে যুলকারনাইন এটা জানে যে বহিরাগত হিসেবে যে কোন অঞ্চলে একজন এনজিও কর্মী আর দশজনের চেয়ে খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারে, এদের আর এখন কেউ সেভাবে ঘাটায় না, সন্দেহের চোখেও দেখে না।

জেলা প্রশাসনে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আর বইয়ের যে লম্বা ফর্দ যুলকারনাইন ধরিয়ে দিয়ে এসেছিল তা চলে এসেছে অনেক আগেই। বেলা চারটা নাগাদ ওয়াজ্ঞা মৌজার হেডম্যান এবং ছিংমং গ্রামের কারবারী সাহেবের আসবার কথা তাকে কমিউনিটিতে নিয়ে যাবার জন্য। এখন চারটা বেজে সতেরো মিনিট! কিন্তু তারা এসে পৌছান নাই যেটা যুলকারনাইনের নিকট যথেষ্ঠ বিরক্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ভেতরে ভেতরে টেনশন কাজ করলেও, ব্যাক্তিবর্গের এই কালক্ষেপন এখন তার বেশ বিরক্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে।

'হেডম্যান' আর 'কারবারী' টার্ম দুটোকে বুঝতে হলে মারমা সমাজ ব্যবস্থাকে বুঝতে হবে, বুঝতে হবে তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে। ঐহিত্যগত ভাবে মারমা সমাজ ব্যবস্থাপনাকে গ্রাম, মৌজা ও সার্কেল এই তিন পর্যায়ে ভাগ করে পরিচালনা করা হয়। গ্রাম পরিচালনায় প্রধান হচ্ছেন "কারবারী"। মৌজা পর্যায়ে "হেডম্যান" এবং সার্কেল প্রধান হচ্ছে রাজা । ১৮৮৪ সনের আঞ্চলিক সার্কেল বিধির আওতায় তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাকে (১) রাজা হরিশ্চন্দ্রের সার্কেল (২) মং রাজার সার্কেল (৩) বোমাং সার্কেল (৪) সদর সাব ডিভিশনাল খাসমহাল (৫) সাঙ্গু সাব ডিভিশনাল খাসমহাল ইত্যাদি মোট ৫টি সার্কেলে ভাগ করা হয়। উল্লিখিত আঞ্চলিক সার্কেল বিধি দ্বারা তিন রাজার তিনটি সার্কেলের (রাজা হরিশ্চন্দ্রের সার্কেল, মং রাজার সার্কেল, বোমাং সার্কেল) সীমানা নির্ধারণ করে দেয় বৃটিশ সরকার।

পরবর্তীতে ১৮৮৪ সনের আঞ্চলিক সার্কেল বিধি সংশোধন ও পরিবর্তন করে ১৮৯২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার পূর্বের তিনজন চীফের (রাজা) তিনটি সার্কেল (রাজ্য) বহাল রেখে সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলহসমূহ নামে আরও একটি সার্কেল গঠন করে মোট ৪টি সার্কেলে ভাগ করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাকে এবং একই সাথে জেলার শাসন কাজ পরিচালনার জন্য বৃটিশ সরকার মোট ১৭টি বিধি সম্বলিত "Rules for the Administration of the Chittagong Hill Tracts" নামে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করে। উক্ত বিধিমালার ৩নং বিধি দ্বারা সমগ্র জেলাকে মোট ৩৩টি ব্লক বা তালুকে বিভক্ত করা হয় এবং ১.৫ বর্গমাইল থেকে ২০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে এক একটি মৌজা গঠন করার ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেক তালুকে একজন দেওয়ান নিয়োগ ও তালুকসমূহকে মৌজায় বিভক্ত করে মৌজা হেডম্যান নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়, একই সাথে তালুক দেওয়ান ও মৌজা হেডম্যানগণের প্রশাসনিক ক্ষমতাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ১৯০০ সালে সরকার Rules for the Administration of the Chittagong Hill Tracts সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন (Regulation 1 of 1900) নামের একটি আইন জারী করেন, যা স্থানীয়ভাবে Hill Tracts Manual নামে পরিচিত যেখানে ‘দেওয়ান’ পদটি বিলুপ্ত করা হয় এবং সার্কেল চীফ ও মৌজা হেডম্যানকে আদিবাসীদের সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তির কিছু বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়।

উপরে উল্লেখিত সার্কেলে, মারমাদের দুটি সার্কেল বিদ্যমান। একটি মং সার্কেল ও অন্যটি বোমাং সার্কেল। মং সার্কেলটি পুরো খাগড়াছড়ি জুড়ে বিস্তৃত হলেও, বোমাং সার্কেল বান্দরবান জেলার ৯৫টি মৌজা এবং রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ৯টি ও কাপ্তাই উপজেলার ৫টি মৌজাসহ মোট ১০৯টি মৌজা নিয়ে গঠিত। সার্কেল গুলোর রাজা গন তাদের প্রজাদের কাছে রাজা নামে পরিচিত হলেও কাগজে কলমে সরকারী ভাবে এখন পর্যন্ত সার্কেল চিফ নামেই পরিচিত। চাকমা ও মং সার্কেল চীফ (রাজা) পদের ক্ষেত্রে রাজার জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজা হবেন এবং রাজার একাধিক স্ত্রীর বেলায় প্রথম স্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজপদ লাভ করেন। রাজার ঔরসজাত কোনো পুত্র সন্তান না থাকলে, সেক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ কন্যার পুত্র রাজা হবেন। তবে মং সার্কেল চীফের বেলায় ঔরসজাত পুত্র-কন্যার অবর্তমানে দত্তক পুত্রের বা কন্যার বেলায় রাজপদ উত্তরাধিকারযোগ্য নয়। সেক্ষেত্রে মং সার্কেল চীফের ঔরসজাত পুত্র-কন্যার অবর্তমানে তাঁর স্ত্রী (রাণী) অতঃপর পিতৃ/মাতৃকুলের রক্ত সম্পর্কীয় কোনো যোগ্য ব্যক্তি প্রচলিত রীতি ও সমাজ স্বীকৃত প্রথা অনুসারে মং সার্কেল চীফ পদে অধিষ্ঠিত হবেন।
বোমাং সার্কেলের প্রচলিত রীতি ও সমাজ স্বীকৃত প্রথা অনুযায়ী বোমাং রাজ পরিবারের পিতৃ/মাতৃকুলে যিনি সর্ব বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি তিনি বোমাং সার্কেল চীফ হবেন। যদি সর্ব বয়োজ্যেষ্ঠ সেই ব্যক্তি বোমাং সার্কেলের চীফ পদ গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন না করেন, সেক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বোমাং সার্কেলের মারমা সমাজে প্রচলিত নীতি ও সমাজ স্বীকৃত সার্কেল চীফ নিয়োগ পদ্ধতি অনুযায়ী তাঁকে সার্কেল চীফ পদে নিয়োগ দান করবেন।

এই রাজাদের শাসন ব্যবস্থা যতটা না বাস্তবিক, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতীকী। প্রতীকী এই অর্থে যে, রাজা হলেও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির আওতায় (যেটি কিনা বর্তমান পর্যন্ত কার্যকর) একজন রাজার সেভাবে প্রশাসনিক কোন ক্ষমতা নেই, শুধু নামের রাজা। স্থানীয় অধিবাসীদের কাছ থেকে সরকারের পক্ষে ট্যাক্স আদায় করা আর পাহাড়ী জনগোষ্ঠীগুলোর সামাজিক বিচার-শালিস করার দায়িত্ব তাদের। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই রাজতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা যেন ফিকে হয়ে এসেছে। প্রতিটি মৌজায় একজন করে সার্কেল চিফের তথা রাজার প্রতিনিধি আছেন যিনি প্রশাসনিকভাবে হেডম্যান হিসেবে পরিচিত। সার্কেল প্রধানের (রাজা) সাথে পরামর্শ করে জেলা প্রশাসক হেডম্যানদের নিয়োগ দেন। পাড়া (গ্রাম) গুলোতে থাকেন একজন করে কারবারী যারা ট্যাক্স আদায় এবং সামাজিক বিচার-শালিসে হেডম্যানকে সহায়তা করেন। কোনো বিচার বা শালিসের বিষয়ে হেডম্যান সমাধান দিতে অপারগ হলে সার্কেল চিফ তার সমাধান দিয়ে থাকেন।

সার্কেল চিফের তথা রাজার বাৎসরিক খাজনা আদায় উৎসব হল রাজপূন্যাহ, স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় 'প্যইজ্ঞারা'। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৫ম বোমাং রাজা 'সাক হ্ন ঞো' প্রথম রাজপুণ্যাহর আয়োজন করেন। পাহাড়ে জুম উঠে যাওয়ার পর সাধারনত জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে জুমচাষীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করা হয়। এ সময় রাজার পক্ষ হতে রাজপূন্যাহর আয়োজন করা হয়ে থাকে। রাজা এক ধরনের মেলার/উৎসবের আয়োজন করেন যেখানে প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্য থাকে যাত্রা, সার্কাস, বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবন-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট নাচ-গান-নাটক, ঐতিহ্যবাহী পণ্যসামগ্রীর মেলাসহ নানা রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা। এ উৎসবকে ঘিরে রাজবাড়ীতে সাজ-সাজ রব শুরু হয়। কয়েকদিন ধরে চলে এই অনুষ্ঠান। রাজকীয় সাজসজ্জা আর বিউগলের সুরে মুখরিত থাকে রাজপুণ্যাহর দিনগুলো। রাজা রাজ পোশাক পরে এবং গার্ড অব অর্নার গ্রহনের মাধ্যমে রাজবাড়ী থেকে সৈন্য-সেনা সহ মঞ্চে আসেন। বিভিন্ন মৌজার হেডম্যান-কারবারীগণ রাজপুণ্যাহ তে অংশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ট্যাক্স রাজার হাতে তুলে দেন। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি অনুযায়ী প্রতিটি জুমিয়া পরিবারকে জুম ট্যাক্স হিসেবে এক বছরের জন্য ৬ টাকা করে প্রদান করতে হয়। এই ৬ টাকা হতে বোমাং রাজা ২.৫০ টাকা গ্রহন করেন, হেডম্যান গ্রহন করে ২.২৫ টাকা এবং বাকী টাকা চলে যায় সরকারী রাজস্বে।

আধুনিক যুগে ফিকে হয়ে আসা এই রাজতন্ত্রের রাজাদের মূলত ট্যাক্স আদায় আর বিচার-শালিস ছাড়া তাদের রাজত্বে তেমন কোন ভূমিকা নেই। ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি অনুযায়ী এই রাজাকে 'সার্কেল চিফ' হিসেবে জেলার ডেপুটি কমিশনারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন তথা সাব-কালেক্টর বা সরকারের খাজনা আদায়কারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খাজনা আদায় ও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ অপরাধ দমনে মৌজা হেডম্যানদের প্রতি আদেশ- নির্দেশ ও পরামর্শ প্রদান, আদায়কৃত খাজনা সরকারী কোষাগারে জমাদান নিশ্চিত করন, এলাকার জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার ও স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার, নিজ সার্কেলের অধীন মৌজাসমূহে ডেপুটি কমিশনারের আদেশ নির্দেশ কার্যকরীকরণ ইত্যাদি কর্মকান্ড তাকে পালন করতে হয়।

(চলবে)


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×