somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘মুন্ডা’ জনগোষ্ঠীঃ শোষন-বঞ্চনা, 'অ-সংস্কার' আর লড়াই-সংগ্রামের কাহিনী (একসাথে পুরো সিরিজ)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘মুন্ডা’ জনগোষ্ঠী মূলত ভারত তথা উপমহাদেশের সর্ব বৃহত জাতি গোষ্ঠী গুলোর মধ্যে অন্যতম। ‘মুন্ডা’ শব্দটি দিয়ে মূলত একটি গ্রামের গ্রাম প্রধানকে বোঝানো হলেও মুন্ডারী ভাষায় মুন্ডা অর্থ হল মানুষ এবং মনুষ্য জাতি। জাতি হিসেবে মুন্ডারা নিজেদের কোলারিয়ান, আর্য পূর্ব, দ্রাবিড় পূর্ব, প্রোটো-অস্টলয়েড ইত্যাদি দাবী করলেও তাদের উদ্ভব, উৎপত্তি নিয়ে সঠিক কোন ইতিহাস সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ‘মুন্ডা’ নামটি যে তাদের নিকটতম প্রতিবেশী তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের চাপিয়ে দেয়া একটা নাম তার বিস্তর বিস্তর প্রমান মেলে কিন্তু মুন্ডা নাম ধারনপূর্ব অবস্থায় তারা আসলে কি নামে পরিচিত হতেন সেটা সম্পর্কে বিশদ জানা যায় না। ধারনা করা হয় যে মুন্ডা’রা মূলত অস্ট্রো-অস্ট্রিক পরিবার ভূক্ত যাদের অরিজিন লুকিয়ে রয়েছে দক্ষিন চীনে। দক্ষিন চীন হতে ইন্ডিয়াতে মুন্ডাদের অভিবাসন নিয়ে অনেক পন্ডিত ভিন্ন ভিন্ন মত প্রদান করেছেন যার উল্লেখযোগ্য এবং গ্রহনযোগ্য হল Stephen Fuchs নামক জনৈক অভিবাসন তাত্ত্বিকের মতটি। তার মতে, মুন্ডারা মূলত দক্ষিন চীন হতে হিমালয়ের উপর হয়ে উত্তরে যাত্রা করেছিল যেটি তাদেরকে হিমাচল প্রদেশ এবং নেপাল অতিক্রম করিয়ে মূল ভারত ভূ-খন্ডে নিয়ে আসে। ভাষা সংক্রান্ত গবেষনাগুলো হিমাচল প্রদেশ এবং নেপালের ভাষায় মুন্ডা ভাষার ব্যাকরনের বিস্তর বিস্তর উপস্থিতি ‘মুন্ডা’দের অভিবাসন সংক্রান্ত এই তত্ত্বকে চরম বৈধতা দিয়ে দেয়। ‘মুন্ডা’দের ভারত ভূখন্ডে প্রবেশের সময়কাল হিসেবে ধরা হয় আর্য্য ভাষা-ভাষীদেরও অনেক আগে খ্রিস্টপূর্ব ছয় শতকের দিকে। ভারর ভূ-খন্ডে প্রবেশের শুরুর দিকে তারা এদিক সেদিক কিছুদিন ঘোরাঘুরি করলেও পরবর্তীতে পূর্ব ভারতের ছোট নাগপুরের মালভূমিতে থিতু হতে শুরু করে এবং স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে, পরবর্তীতে জীবন জীবিকার তাগিতে পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা এবং বিহারে ছড়িয়ে পড়ে।
‘মুন্ডা’রা মূলত অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবারের ‘মুন্ডারী’ এবং ‘সাদরী’ এই দুই ভাষাতে কথা বলে। আবার অনেককে ‘মুন্ডারী’ এবং ‘সাদরী’ ছাড়াও আম্বা, বালুন এবং গোন্দলি ভাষাতেও কথা বলতে দেখা যায় যেগুলোকেও মুন্ডাদের নিজস্ব ভাষা হিসেবে গন্য করা হয়। এগুলো ছাড়াও মুন্ডাদের হিন্দি, বাংলা সহ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাতেও বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। তবে নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানে তারা মূলত তাদের নিজস্ব মুন্ডা ভাষার প্রয়োগ-ই বেশি করে। মুন্ডাদের কালো চেহারার পেটানো শরীর এবং কোকড়ানো চুল একটা আদর্শ ভারতীয় আদিবাসী শ্রেনীকে নির্দেশ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে নানা বিবর্তন, সংমিশ্রনের মধ্য দিয়ে তাদের কিছু কিছু ‘মুন্ডা’দের মধ্যে ভারতীয় বাঙ্গালী বৈশিষ্ঠ্য প্রতিয়মান হয়।
‘সরনা’ হল 'মুন্ডা'দের নিজস্ব ধর্ম যেখানে তারা প্রকৃতি পূজা করেন এবং ঈশ্বরেরা কয়েক শ্রেনীতে বিভক্ত। সুপ্রীম ঈশ্বর হিসেবে রয়েছেন ‘সিং-বোঙ্গা’ তথা সূর্য্য দেবতা। ‘সিং-বোঙ্গা’ ঈশ্বর হিসেবে সুপ্রীম অবস্থানে থাকলেও অন্যান্য শ্রেনীর দেব-দেবীর মধ্যে রয়েছেন গ্রাম দেবতা, গোত্র দেবতা, কিছু ক্রোধী দেবতা এবং তাদের পূর্ব-পুরুষগন। ‘সিং-বোঙ্গা’র জন্য নির্দিষ্ট কোণ পুজা-অর্চনা নেই তবে তারা খাবার আগে এবং চরম দূর্যোগের মুহুর্তে ‘সিং-বোঙ্গা’কেই স্মরন করেন। মুন্ডাদের মতে ‘সিং-বোঙ্গা’ কোন ক্রোধী ঈশ্বর নন (যেখানে তারা চরম ক্ষ্যাপা কিছু দেবতার/প্রকৃতি পুজা করেন)। তাকে স্মরন করলে তিনি যে কোন ইচ্ছা পূরন করেন, বহিঃশত্রুদের থেকে রক্ষা এবং মানব জীবনের সংকট দূর করেন। আবার একই সাথে গোত্রের কেউ নিজস্ব গোত্রে বিবাহ করে আইন ভঙ্গ করলে তাকে শাস্তিও প্রদান করেন।
গ্রাম দেবতা হিসেবে দেসাউলি বঙ্গা, জাহের বুড়ি এবং চান্দি বঙ্গা নামক এই তিন গ্রাম দেবতা রয়েছে দ্বিতীয় ঈশ্বরের অবস্থানে। এই দেবতাগন ‘মুন্ডা’কে তাদের শিকার এবং কৃষিতে সাহাজ্য করার পাশাপাশি জীবনের প্রতিটা মোরে সাহাজ্য করেন।‘হাতু বঙ্গাকু’ নামক পুজায় পাহান তথা একজন যাযকের মাধ্যমে পবিত্র ছোট গাছের পুজার মধ্য দিয়ে তাদের অর্চনা করা হয়। এই অর্চনায় মুন্ডা গ্রামের নিরাপত্তা, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শিকার প্রাপ্তির পরিমান বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
তৃতীয় শ্রেনীর ঈশ্বর হিসেবে ‘মুন্ডা’গন তাদের পূর্ব পুরুষদের গৃহ দেবতা হিসেবে পুজা করে থাকেন। প্রতিটি মুন্ডা পরিবারের প্রধানেরা তাদের পূর্ব পুরুষের পূন্যাত্মার পুজা দিয়ে থাকেন এই ভেবে যাতে করে পূর্ব পুরুষের আশির্বাদ যেন তাদের গৃহে সর্বদাই থাকে। তারা বিশ্বাস করেন পূর্ব পুরুষের আশির্বাদ ছাড়া তাদের ঘর-সংসার কখনোই ভাল থাকতে পারবে না।
ক্রোধী দেবতা তথা চতুর্থ শ্রেনীর দেবতা হিসেবে ‘মুন্ডা’রা বিভিন্ন প্রকৃতির পুজা করে থাকে যাদেরকে কখনোই ঈশ্বর রুপে দেখেন না কিন্তু বিশ্বাস করেন যে প্রকৃতির সঞ্চালক হিসেবে তারা নিয়োজিত রয়েছেন। বুরু বঙ্গা, ইকির বঙ্গা, বাগে ইরা এদের মধ্যে অন্যতম। তাদের পুজা করা হয় মূলত তাদের তুষ্ট রাখার উদ্দেশ্যে যাতে করে তারা রুষ্ট হয়ে তাদের জীবনে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না চাপিয়ে দেন মুন্ডাদের জীবনে।
‘মুন্ডা’রা বিশ্বাস করেন যে সৃষ্টির শুরুর দিকে পুরো পৃথিবী পানি দ্বারা নিমজ্জিত ছিল। ‘সিং-বোঙ্গা’ তথা সূর্য্য দেবতা সেই পানির উপরে প্রথম প্রান হিসেবে কাছুয়া (কচ্ছপ), কারাকম (কাঁকড়া) এবং জোঁকের প্রান সৃষ্টি করলেন এবং তাদেরকে আদেশ করলেন সমুদ্রের তলদেশ থেকে একদলা কাদা নিয়ে আসতে। কচ্ছপ এবং কাঁকড়া ক্রমান্বয়ে চেষ্টা করে ব্যার্থ হবার পর অধ্যাবসায়ী জোক সমুদ্রের গভীর তলদেশ থেকে কাদা নিয়ে আসতে সক্ষম হল। এবং এই কাদার সাহাজ্যে ‘সিং-বোঙ্গা’ এই সুন্দর পৃথিবী নির্মান করে ফেললেন। এরপর ‘সিং-বোঙ্গা’ পৃথিবীতে গাছের চাড়া এবং পরবর্তীতে পাখি ও বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ার সৃষ্টি করলেন। হুর নামক এক পাখির ডিম পাড়ার মধ্য দিয়ে এবং সেই ডিম ফুটে একটা ছেলে শিশু ও একটা মেয়ে শিশু তথা পৃথিবীর প্রথম মানব জুটি ‘টট হারাম’ এবং ‘তোরা বুড়ি’র জন্ম হয়। সবকিছু নিয়ম মাফিক চলছিল কিন্তু মানব জুটি তাদের যৌনতা সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞাত ছিলেন। ‘সিং-বোঙ্গা’ তাদের কিছু সবজীর মূল হতে কিভাবে ইলি (পানীয়) তৈরি করতে হয় তা শেখালেন। তারা ইলি তৈরি করলেন এবং পুরোটা খেলেন। সুস্বাদু এবং মাতাল করে দেয়া ইলি তাদের ভাবাবেগ এবং কামভাব অনেকাংশে বাড়িয়ে দিল। তারা মিলিত হলেন। এবং মুনকা, নানকা এবং রোরা নামক একের পর এক- তিন পুত্রের জন্ম দিলেন।



‘মুন্ডা’ জনগোষ্ঠী ‘পাতার’, ‘মাহালী’, ‘কাম্পাত মুন্ডা’ নামক বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত। তারা মূলত দলবদ্ধ হয়ে নিজস্ব গ্রামে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ‘মুন্ডা’ গ্রামগুলো বেশির ভাগ সময় গড়ে ওঠে চা-বাগানের পাশে খোলা জমিতে। চা বাগান মালিকেরা মূলত চা-বাগানের শ্রমিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য চা-বাগানের পাশে ‘মুন্ডা’দের থাকবার জায়গা প্রদান করেন এই ভেবে যে, যে কোন সময় বাগানের জন্য শ্রমিক দরকার হলে ‘মুন্ডা’রা সাথে সাথে শ্রম প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। সাধারনত ৫০-১০০ ঘর নিয়ে গড়ে ওঠে একেকটা ‘মুন্ডা’ গ্রাম। গ্রামের ঘর গুলোকে তারা বলেন ‘ওরাহ’। ‘ওরাহ’ মূলত তাদের কৃষি ক্ষেতগুলো অথবা চা বাগানের ধারে কাছেই হয় কারন তীব্র কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে তারা যেন ক্ষেত হতে খুব দ্রুত বাড়িতে পৌছুতে পারেন তাই এই নিকট ব্যাবস্থা গ্রহন। সাধারনত কাঠ, বাঁশ, পাথর আর মাটি দিয়ে তৈরি হয় এই ‘ওরাহ’র দেয়াল এবং ছাদগুলোতে ব্যবহার করা হয় তালপাতা কিংবা অন্যান্য সহজলভ্য কোন বস্তু যেটা তাদের বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করতে পারে। প্রতিটি গ্রামেই একটা কমন পূজাঘর এবং একটা ‘গীতি ওরাহ’ (আস্তানা) ও একটি ‘গতিওরা’ থাকে। পুজা ঘরে গ্রামের লোকজন তাদের চরম সংকটময় মুহুর্তে পূজা-অর্চনা করেন এবং ‘গীতি ওরাহ’তে গ্রামের যুবক, যুবতীরা শুয়ে-বসে, আড্ডা দিয়ে দিন কাটাতে পারে আর ‘গতিওরা’ থেকে মুন্ডা যুবক/যুবতীদের ঐতিহ্যবাহী মুন্ডা সংস্কৃতির শিক্ষাও প্রদান করা হয়ে থাকে। গ্রামের মধ্যেখানে ‘আখড়া’ বলে একটা খোলা জায়গা থাকে যেখানে ডাল-পালা প্রশস্ত পুরোনো একটা গাছের চারদিক পাথর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। বিভিন্ন মিটিং, বিচার-শালিস, নাচ-গানের অনুষ্ঠানগুলো এই আখড়াতেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।
মুন্ডা পরিবারগুলো মূলত পিতৃতান্ত্রিক এবং যৌথ পরিবার যেখানে পিতা শুধু একজন খানা প্রধানই নন একই সাথে তিনি পূজারীও এবং সর্ব সিদ্ধান্ত গ্রহনের অধিকারী। ‘মুন্ডা’রা মূলত এক বিবাহে বিশ্বাসী। মুন্ডাদের ভাষায়ঃ
‘মিড ওরা তানি রাজা
বারোরা তানি, এটা মিয়া সেটা’

(অনুবাদঃ এক স্ত্রীর স্বামী, তার কাছে রাজা আর দুই স্ত্রীর স্বামী হল পাগলা কুকুর)


ঐতিহ্যই আসলে তাদের জীবনের সকল সামাজিক বিষয়গুলো পরিচালনা করে চলে। আর তাই তারা কখনোই তাদের ঐতিহ্যের বাইরে গিয়ে বহুগামিতা অর্জন করে উঠতে পারেনি। ‘মুন্ডা’ সম্প্রদায়ের সকল গোত্র গুলোর মধ্যে বিয়ের ইতিবাচক নিয়ম-কানুন বিদ্যমান। তারা বিশ্বাস করে এক বিবাহ হল তাদের মহা-ঈশ্বর ‘সিঙ্গা-বোঙ্গা’র ইচ্ছা। এর বাইরে যাওয়া ঘোর পাপ। তারা মূলত অন্তর্বিবাহে বিশ্বাসী। কেউ গোত্রের বাইরে বিবাহ করলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয় এবং গোত্র থেকে বের করে দেয়া হয়। ‘মুন্ডা’ তরুন এবং তরুনীটি যখন বয়সপ্রাপ্ত হয় এবং পরিবার জীবনের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয় এবং দুজনে বিবাহের সিদ্ধান্ত নেয় তখন তারা বিষয়টা গোত্রের বড়দের কাছে প্রকাশ করে, বড়রা রাজী হলে তারা তাদের বিয়ের ঘোষনা দেয় এবং তাদের বিয়ে করিয়ে দেয়া হয়। যৌতুক নামক কোন ব্যবস্থা এই সমাজে অনুপস্থিত এবং একই সাথে বিধবা বিবাহ প্রচলিত তবে তালাককে সাধারন প্র্যাকটিস হিসেবে বিবেচনা করা হয় না এখানে কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে সেটি পঞ্চায়েত রাজের উপর নির্ভরশীল । পঞ্চায়েত তখনই তালাককে অনুমোদন দেয় যখন-
১। কোন যুবতী স্ত্রী তার স্বামীর সাথে ঘর করতে অনিচ্ছা পোষন করে।
২। স্বামী-স্ত্রী কিংবা তাদের পরিবারের দ্বন্দ্ব গুলো যদি চরম আকার ধারন করে।
৩। স্ত্রী বন্ধ্যা/অকর্মন্য/অলস হলে
৪। স্বামী অথবা স্ত্রী পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসী না হলে এবং ব্যাভিচারী কর্মে প্রশ্রয় দিলে।
তালাক ও ‘মুন্ডা’ সমাজে হয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাকে বলা হয় ‘সাকাম চারী’। একটা সারজম অথবা শাল গাছের পাতা বাঁশের উপরিভাগের অংশের তৈরি ধারালো বস্তুর মাধ্যমে মাঝ বরাবর ছিড়ে ফেলা হয় এবং একটি লোটা উভয়ের দ্বারা লাথি মেরে ছুড়ে ফেলে বোঝানো হয় যে আজ হতে সকল বন্ধন ছিন্ন হল।

গ্রামকে তারা একটা পলিটিক্যাল ইউনিট মনে করে যার একজন মাথা বা গ্রাম প্রধান রয়েছে যাকে তারা ‘মুন্ডা’ নামে সম্বোধন করেন এবং ‘মুন্ডা’কে সাহাজ্য করার জন্য থাকেন গ্রামের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তি যিনি ‘মাহাতো’ নামে পরিচিত হন। ‘মাহাতো’র দায়িত্ব আসলে একজন পাহাড়াদারের মত যিনি গ্রামবাসীদের নাগরিক এবং ক্রিমিনাল আচরন সম্পর্কে মুন্ডাকে অবহিত করেন। মুন্ডা অবহিত হন। প্রয়োজনে বিচার শালিস ডাকেন এবং বিদ্যমান সংস্কৃতির আলোকে শাস্তি প্রদান করেন অথবা সমস্যা সমাধান করেন। গ্রামের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্য আরেকজন সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তি রয়েছে যাকে গ্রামবাসী ‘পাহান’ বলে সম্বোধন করেন। তিনি বন্য জন্তুর হাত হতে গ্রাম রক্ষা, সন্তোষজনক ফসল উৎপাদন এবং সফল শিকারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পূজা অর্চনা করেন এবং দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পশু বলি দেন। ‘মুন্ডা’, ‘মাহাতো’ এবং ‘পাহান’ গ্রামের এই তিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মূলত তিন গোত্র থেকে নির্বাচিত হয়ে থাকে।
‘মুন্ডা’রা সামাজিক ভাবে বিভিন্ন গোত্র এবং অবস্থায় বিভক্ত এবং প্রতিটি গোত্র তথা ১০/১২ টি গ্রাম একজন সর্দারের নেতৃত্বে সুসংগঠিত হয়ে একটি ‘পারহা’ গঠন করে। ‘পারহা’র প্রধানকে তারা ‘মানকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। ‘মানকি’ যিনি মূলত ‘মুন্ডা’দের রাজনৈতিক সংগঠক। ভূমি এবং অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত বিরোধ মিমাংসা, গ্রামগুলোর মধ্যে শান্তি সৌহার্দ্য বজায় রাখা এবং গ্রাম হতে রাজার পক্ষ হতে চাঁদা সংগ্রহ করাই মূলত ‘মানাকি’র কাজ। ‘মানকি’কে সাহাজ্য করবার জন্য, সেই গোত্র থেকে তার রয়েছে নিজস্ব কিছু সভাসদ। তিনি বিদ্যমান সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের আলোকে সকল সামাজিক সমস্যার বিধান দেন। ৮ থেকে ২০ টি ‘পারহা’র দায়িত্বে আবার একজন প্রধান থাকেন যাকে ‘মুন্ডা’রা মহারাজা হিসেবে অভিহিত করেন। ‘পারহা’ সংগঠনটির মাধ্যমে প্রতিটি মুন্ডা গোত্র আন্তঃযুক্ত এবং সম সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন। যেখানে বিবাদ, বিরোধ, হানাহানি কোন ভাবেই কাম্য নয়। যেটি কিনা তাদের মুন্ডারী ভাষার গানে স্পষ্টঃ
এলোরে মারকি কোরা, এলোরেম মাপা গা
এলোরে সুরিন কোরা, এলোরেম তুপুইং গা

গানটির মাধ্যমে গায়ক ‘মুন্ডা’ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোত্রের তরুনদের উদ্দেশ্যে একে অপরের প্রান হরন না করবার এবং একে অপরের প্রতি তীর না ছোড়বার আহবান জানিয়েছেন।

ভাত হল ‘মুন্ডা’দের প্রধান খাবার। ভাতের সাথে তারা সিদ্ধ সবজী, ডাল এবং মাংস খায় (গরু, ছাগল, শুকর, মহিশ ও অন্যান্য মাংস)। প্রতি খাবারের পূর্বে তারা কিছু ভাত তাদের পূর্ব পুরুষদের উতস্বর্গ স্বরুপ মাটিতে ফেলে দিয়ে খাবার শুরু করে। পানীয়ের মধ্যে ‘মুন্ডা’দের প্রিয় পানীয় হল ‘ইলি’ যেটি কিনা ভাত এবং বিভিন্ন সবজীর মূল হতে প্রস্তুত করা হয়। প্রতিটি পরিবারেই ‘ইলি’ তৈরি হয় এবং তারা বিশ্বাস করেন যে এই ‘ইলি’ হল একমাত্র পবিত্র পানীয় যা তৈরিতে মানব সম্প্রদায়কে স্বয়ং সুপ্রীম ঈশ্বর ‘সিং-বোঙ্গা’ শিক্ষা দিয়েছেন এবং পান করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। প্রথমে ভাত এবং সবজী সিদ্ধ করে মাটির এক পাত্রে ভরে মুখ এটে তা সংরক্ষন করা হয় এবং মোটামুটি ৫ দিনের মধ্যে ‘ইলি’ তৈরি হয়ে যায়।

যেমনটা পূর্বে বলা হয়েছে, ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে ‘মুন্ডা’দের জীবনের সকল আর্থ- সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য বিষয়গুলো পরিচালিত হত তেমনি তাদের জমির মালিকানাও পরিচালিত হত সেই ঐতিহ্য অনুসারেই। ‘মুন্ডা’ সম্প্রদায়ের মানুষেরা মূলত জঙ্গল কেটে জমি তৈরিতে পারদর্শী ছিল আর এই জমিই তাদের কাছে ছিল একমাত্র সম্পদ। তারা নিজেদেরকে তাদের মালিকানায় থাকা জমির ‘প্রাকৃতিক মালিক’ হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং ‘শিফটিং কালটিভেশনের’ (একটা জমিতে একবার চাষ করেই আবার অন্য জমিতে চলে যাওয়া) উপর নির্ভরশীল ছিল । ভূমি মালিকানার ক্ষেত্রে তারা মূলত পুরো বংশের (গ্রামের) সকলেই একইসাথে একই জমির যৌথ ভাবে মালিকানা লাভ করত যেটিকে তারা ‘খুন্তকাট্টি’ হিসেবে অভিহিত করত যেখানে গ্রামের সকল পুরুষেরা পরিচিত হত ‘খুন্তকাট্টিদার’ (বংশগত ভাবে প্রাপ্ত ভূমির যৌথ মালিক) হিসেবে এবং সেখানে ‘পাহান’ হলেন সর্ব বয়োজষ্ট্য এবং সর্বোত্তম সদস্যজন।
১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ সরকার যখন ‘পরম ব্যাক্তিগত সম্পত্তি’ ধারনায়নে ভূমি হতে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে ‘জমিদারী’ এবং ‘রায়তী’ প্রথা চালু করল তখন যৌথ মালিকানা তথা ‘খুন্তকাট্টি’ নামক প্রথাগত মালিকানা স্বত্ত্বটির পাকাপাকি উচ্ছেদ হল (যদিও মুন্ডাদের জমি হারানোর এই প্রক্রিয়া ব্রিটিশদের আগমনের অনেক পূর্বেই সামান্য ভাবে শুরু শুরু হয়ে গিয়েছিল)। কৃষিতে আদিম প্রযুক্তি ব্যবহারের কারনে মুন্ডারা খুব বেশি উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদন করতে পারতনা বিধায় তাদের খাজনা কম প্রদান করতে হত এটাই আসলে ‘খুন্তকাট্টি’ উচ্ছেদের মূল কারন। ‘খুন্তকাট্টি’ উচ্ছেদ করে ব্রিটিশ সরকার ‘আদিবাসী’দের জমি গুলো ঠিকাদারী হিসেবে জায়গীরদারদের হাতে প্রদান করল। জায়গীরদার এবং মহাজনদের উচ্চ সুদের হার (৫০%-৫০০%), বলপূর্বক শ্রম বা ‘বেথ বেগারি’, বিবেকহীন ঠিকাদারদের দ্বারা চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক সংগ্রহ, ‘আদিবাসী’ এলাকায় ‘অ-আদিবাসী’ গমনা-গমন বৃদ্ধি, ‘আদিবাসী’ নারীদের যৌন হয়রানী ও নিপীড়ন ইত্যাদি ‘মুন্ডা’ সহ বিভিন্ন ‘আদিবাসী’দের মনে ক্ষোভের সূত্রপাত ঘটায়। একই সাথে ১৮৬৭ সালের পর থেকে ‘আদিবাসী’ অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের কঠোর থেকে কঠোরতর নিয়ম-কানুন প্রনয়ন করা শুরু করে। ‘মুন্ডা’রা স্ব-ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয় এবং অভাবের তাড়নায় ভূমির মালিক থেকে পরিনত হয় সেই ভূমির কৃষি শ্রমিকে। জমি হারনোর দরুন ‘মুন্ডা’দের কৃষি-অর্থনীতিতে আমূল একটা পরিবর্তন আসে যা তাদের পুরো সংস্কৃতি, আচার, প্রথা সবকিছুকেই নাড়িয়ে দিয়ে চলে যায়।
অত্যাচার আর নিপীড়নের আগুন ছড়িয়ে পরে মোটামুটি সকল ‘আদিবাসী’দের মধ্যে যার ফলাফল ছিল, ১৮৫৫-৫৭ পর্যন্ত সাওতাল বিদ্রোহ। শুরুর দিকটায় ‘মুন্ডা’রা কোন ধরনের আন্দোলন সংগ্রামের ধারে কাছে না গেলেও ভেতরে ভেতরে তারা ও ফুঁসছিল আর তাদের এই আগুনে ঘি হিসেবে যুক্ত হয় ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত লুথারীয়, অ্যাংলিকান্ ও ক্যাথলিক মিশনগুলির আগমন এবং ধর্মান্তকরন চেষ্টা সংক্রান্ত অপততপরতা গুলো।
মিশনারি কর্মকান্ডের সঙ্গে সঙ্গে ‘আদিবাসী’দের শিক্ষার বিস্তার ঘটে এবং এর ফলে আদিবাসীরা অনেক বেশি সংগঠিত ও অধিকার সচেতন হয়ে ওঠে একথা অনস্বীকার্য তবে এর সঙ্গে বৃদ্ধি পায় খ্রিস্টান ও অ-খ্রিস্টান মুন্ডাদের মধ্যকার সামাজিক বিভেদ। ফলে জাতিগত ঐক্যবোধ হ্রাস পায়। ভূমিবিষয়ক অসন্তোষ ও খ্রিস্টান ধর্মের আগমন মুন্ডাদের মধ্যে বিক্ষোভ-আন্দোলন জোরদার করে তোলে। ১৮৯৯-১৯০০ সালে মুন্ডা রাজ ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাচির দক্ষিণাঞ্চলে সংগঠিত হয় ‘উলগুলান’-তথা ‘প্রবল বিক্ষোভ’। আর এই ‘উলগুলান’ পরিচালিত হতে থাকে ‘বিরসা মুন্ডা’র নেতৃত্বে (যদিও এই আন্দোলন ‘বিরসা মুন্ডা’র নেতৃত্বের অনেক আগে থেকেই সরদার আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল এবং মুখ থুবড়েও পরেছিল কয়েকবার)।


‘বীরসা মুন্ডা’ যিনি কিনা ‘ধর্তী আবা’ (বিশ্ব পিতা) অথবা ‘বীরসা ভগবান’ নামে ‘মুন্ডা’ সম্প্রদায়ের কাছে চির পূজনীয় তিনি ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর ভারতের তৎকালীন জেলা ‘রাচী’র উলিহাটু গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা ছিলেন একজন বর্গাচাষী। আর দশজন ‘মুন্ডা’ বালকের মত ‘বীরসা মুন্ডা’র ও শৈশব কাটে ভেড়ার পালে কিংবা ধুলোয় খেলাধুলা করে। অভাবের তাড়নায় ‘বীরসা মুন্ডা’র লেখাপড়া করা হয়ে উঠছিলনা তবে বাঁশি বাজানোর পারদর্শিতার কারনে সে দীর্ঘদিন গ্রাম্য নাট্যদল ‘আখড়া’তে সময় কাটায়। পরবর্তীতে ‘বীরসা মুন্ডা’কে তার মামার বাড়ি আয়ুভাতু’তে লেখাপরার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয় যেখানে সে ‘সালগা’তে জয়পাল নাগ নামক জনৈক ব্যাক্তি কর্তৃক পরিচালিত স্কুলে ভর্তি হয়। মাত্র দুই বছরে জয়পাল নাগ ‘বীরসা মুন্ডা’র মেধার চরম পরিচয় পেয়ে যান এবং তাকে জার্মান মিশন স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সেসময় মিশন স্কুল গুলোতে দেশীয়দের ভর্তির প্রধানতম শর্ত ছিল খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরীত হওয়া। খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে ‘বীরসা মুন্ডা’ নাম ধারন করলেন ‘বীরসা ডেভিড’ যা পরবর্তীতে হয় ‘বীরসা দাউদ’। স্কুলের স্বাভাবিক পাঠে ড. নটরট নামক জনৈক শিক্ষক একদিন যখন বারংবার ‘মুন্ডা’দের নিয়ে অপমানজনক কথা বলে চলেছিলেন তখন তিনি তার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং প্রতিবাদ স্বরুপ স্কুল ত্যাগ করেন, এটা ছিল তার জীবনের গুরুত্বপূর্ন টার্নিং পয়েন্ট যেখানে তার ‘সাহেব সাহেব এক টোপি হ্যায়’ (সব ইংরেজ-ই এক) নামক বিখ্যাত অনুধাবনটি সামনে চলে আসে। ১৮৮৬-১৮৯৪ পর্যন্ত তিনি জার্মান মিশন স্কুলে অবস্থান করেন যেখানে খ্রিস্ট ধর্ম তার নিজের ধর্মকে নিয়ে তাকে ভাবার অবকাশ করে দেয়। খ্রিস্ট ধর্মের আদলে তিনি তার নিজের ধর্মকে একটা অবয়ব দিতে চেষ্টা করেন।
কিশোর বীরসা ‘মুন্ডা’দের স্বর্নযুগ এবং অতীতের ‘উলগুলান’ সংক্রান্ত গল্পগুলো বেশ মনযোগের সাথে শুনতেন এবং সর্বদা ‘উলগুলান’কে আবারো একটা রুপ দিতে উদগ্রীব থাকতেন। নিজের জীবনের উন্নতি সাধনে মনোনিবেশের পরিবর্তে তিনি লক্ষ্য করা শুরু করেন যে তার হাজারো ‘মুন্ডা’র ধর্ম ত্যাগের ফলে তার ধর্ম, সংস্কৃতি, আচার-প্রথা সব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তিনি অনুধাবন করেন যে অত্যাচারিত ‘মুন্ডা’র কাছে ব্রিটিশ সম্পর্কযুক্ত খ্রিস্ট ধর্ম বিক্রি করা খুব সহজ এবং এটা বেশ শক্তিশালী একটা প্রপঞ্চ।
১৮৯০ সালের দিকে তিনি বান্দগাঁও জমিদার জগমোহন সিং এর মুন্সী ‘আনন্দ পান্ডে’র সান্নিধ্য লাভ করেন যিনি কিনা একজন পরম বিষ্ণু ভক্ত ছিলেন। ‘আনন্দ পান্ডে’র সান্নিধ্যে এসে তিনি হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বিস্তর বিস্তর জ্ঞান লাভ করেন একই সাথে বৈষ্ণব রীতি নীতি তথা মাংস খাওয়া ত্যাগ, তুলসী গাছ পুজা দেয়া এবং উপবীত ধারণ (পৈতা) গ্রহন করেন। এই জ্ঞান এবং কর্মকান্ড তাকে ‘বীরসাইত’ নামে মুন্ডাদের জন্য নতুন এক ধর্ম তৈরিতে আগ্রহী করে তোলে যেখানে ঈশ্বরে বিশ্বাস রয়েছে, কিছু আইন কানুন রয়েছে, মদ পান থেকে বিরত থাকার মত কিছু উপদেশ রয়েছে। তিনি আশা করেছিলেন ‘মুন্ডা’রা এই ধর্মে দীক্ষিত হয়ে জাদুবিদ্যা আর ডাকিনী বিদ্যার মত কুসংস্কারে বিশ্বাস স্থাপন বন্ধ করে দিবে এবং একই সাথে তিনি এই আশাও ছেড়ে দেন নাই যে একদিন ‘মুন্ডা’রা আবারো তাদের স্ব-ভূমিতে ফিরে যাবে।


১৮৯৫ সালে স্ব-গোত্রে ফিরে এসে ‘বীরসা মুন্ডা’ বীর দর্পে নিজেকে নতুন ধর্মের উদ্ভাবক এবং ঈশ্বরের বার্তাবাহক হিসেবে দাবী করে বসলেন। একই সাথে তিনি ভগবান দর্শন করেছেন বলে দাবি করেন এবং নিজেকে রোগ আরোগ্য করার জাদুকরি ক্ষমতাসম্পন্ন একজন অবতার হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি মহাপ্লাবনের ভবিষ্যদ্বাণী করেন। হাজার হাজার মানুষ বিরসার নতুন বাণী শোনার জন্য সমবেত হয়। এই নতুন অবতার আদিবাসীদের রীতিনীতি, ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধাচরণ করেন। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, পশুবলি বন্ধ করা, মাদকবর্জন করা, পবিত্র উপবীত ধারণ করা এবং ‘সরণ’ বা পবিত্র নিকুঞ্জে উপাসনা করার প্রাচীন রীতিতে প্রত্যাবর্তন করার জন্য বিরসা মুন্ডাদের প্রতি আহবান জানান। বিরসার কর্মকান্ড ছিল মূলত একটি পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন; মুন্ডা সমাজকে বিজাতীয় উপাদানমুক্ত করে তাকে তার আদি রূপ দান করাই ছিল এই আন্দোলনের লক্ষ্য। খ্রিস্টান ধর্মও এ আন্দোলনকে প্রভাবিত করে।
বীরসার নিজেকে ‘ঈশ্বরের বার্তাবাহক’ দাবীটি ধীরে ধীরে পুরোদস্তুর ‘ঈশ্বরের দাবী’তে পরিনত হতে থাকে। সম্প্রদায়ের লোকেদের কাছে সে বীরসা ভগবান কিংবা ‘ধরীত্রি আবা’ (বিশ্ব পিতা) নামে পরিচিতি পেতে থাকে। মানুষেরা তাকে সুপ্রীম ঈশ্বর সিং-বোঙ্গার অবতার অথবা সিং-বোঙ্গার পুত্র কল্পনা করতে থাকে। বীরসার অসুস্থকে সুস্থতা দান, দ্বৈব বানী, দ্বৈব ক্ষমতা, ধর্ম প্রচার সংক্রান্ত খবরগুলো খুব দ্রুত দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পরতে থাকে। মুন্ডা, ওরাও এবং খাড়িয়ারা দলে দলে তাদের নতুন ঈশ্বরকে দেখতে, সুস্থতা কামনা করতে এবং মনের বাসনা পূরনে নব্য এই ঈশ্বরের কাছে ভীড় জমাতে শুরু করে।
বীরসা মুন্ডা মূলত একজন স্বপ্নদর্শী মানুষ ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন যে ব্রিটিশদের এই উপমহাদেশে আগমনের উদ্দেশ্য মূলত অত্যাচার আর লূন্ঠন। একই সাথে তিনি এটাও বুঝে গিয়েছিলেন যে ব্রিটিশদের এই হীন উদ্দেশ্যের বিপক্ষে প্রতিবাদ/প্রতিরোধ করা ছাড়া আর দ্বিতীয় মুক্তির কোন পথ খোলা নেই। আর এই প্রতিরোধের জন্য সম্মিলন খুব জরুরী একটা বিষয় ছিল। তিনি বুঝেছিলেন যে একমাত্র ধর্মই পারে এই মানুষগুলোকে একটা ছাতার নিচে নিয়ে এসে জড়ো করতে। তিনি মূলত ধর্ম আর রাজনীতির একটা সমন্বয় ঘটানো এবং এই সমন্বয়কে ভিত্তি হিসেবে ধরে একটা সেনা সংগঠন তৈরির নিমিত্তে গ্রাম থেকে গ্রামে যাত্রা করা শুরু করেন যেখানে ‘মুন্ডা’দের মাঝে ধর্মীয় বানী প্রচারের পাশাপাশি তিনি ‘মুন্ডা’ আদিবাসীদের, ইংরেজ ও খ্রিস্টান মিশনারি যে আলাদা কিছু নয় তা বোঝাতে শুরু করলেন এবং একই সাথে একসময়ের সর্দারদের করা ‘উলগুলান’ (প্রবল বিদ্রোহ)কে তিনি পুনরায় উজ্জ্বীবিত করতে চাইলেন । তিনি অনুসারীদের বোঝাতে শুরু করলেন সাদারা কখনো গরিব দুঃখী আদিবাসীদের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। মিশনারি এবং অফিসার সবাই এক জাত এরা আমাদের শোসন, লুন্ঠন এবং অত্যাচার করার জন্যই এসেছে। তিনি সকলকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেন এবং বীরদর্পে ঘোষনা করেন – ‘আবুয়া রাজ স্তে জানা, মহারানী রাজ টান্ডু জানা’ অর্থ্যাত মহারানী রাজ নিপাত যাক আমাদের (মুন্ডা) রাজ কায়েম হোক। বিশ্ব পিতার বিরাসার নির্দেশে মুন্ডারা, জমিদারদের জমিতে হাল চাষ বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে সরকারি খাজনাও বন্ধ করে দেয়। এ খবর ব্রিটিশ সরকারের কাছে গেলে ইংরেজ সরকারের ভিত কেঁপে ওঠে। ব্রিটিশ সরকার বিশাল সৈন্য বহর নিয়ে অমানবিক নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের আশ্রয়স্থল জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে আদিবাসীদের ধরপাকড় ও গ্রেফতার করতে থাকে। ‘উলগুলান’ মূলত এখান থেকেই শুরু হয়ে যায়। ১৮৯৫ সালের দিকে তিনি তার কর্মকান্ডের জন্য প্রথমবারের মত এরেস্ট হন এবং হাজারীবাগের কেন্দ্রীয় কারাগারের নিক্ষিপ্ত হন। বীরসার এরেস্ট হওয়ার ফলে ‘উলগুলান’ কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসলেও ১৮৯৭ সালে তিনি যখন কারাগার থেকে মুক্ত হলেন তখন আবারো দ্বিগুন উৎসাহে ‘উলগুলান’ সংঘটনে ঝাপিয়ে পড়লেন।


বিভিন্নভাবে তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পুরো কমিনিটিতে জমিদার এবং ব্রিটিশ বিরোধী আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তিনি গা ঢাকা দিয়ে তীর-ধনুকের দুটো সেনা ইউনিট তৈরি করে ফেললেন। যার একটি সেনা বাহিনী ট্রেইনিং এবং সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য এবং অন্যটি প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য। আসন্ন যুদ্ধের আগে গড়ে তুললেন সুবিশাল খাদ্যের মজুদ। ১৮৯৭ সালে বীরসা মুন্ডা এবং তার ৪০০ সহযোগীর তীর-ধনুক হাতে খুন্তি পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমনের মধ্য দিয়ে ‘উলগুলান’ শুরু হয়ে যায়। এরকম নানা খন্ড খন্ড যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ‘উলগুলান’ স্থায়ীত্ব পায় ১৯০০ সাল পর্যন্ত। অবশেষে ডিসেম্বর ২৪, ১৮৯৯ যুদ্ধের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিরসা বাহিনী প্রথমার্ধে খুন্তি, জামার, বাসিয়া এবং রাঁচি-র পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমন করে যেখানে ৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন এবং ৩২ জন পালিয়ে যান, ৮৯ টি জমিদার বাড়ি, চার্চ এবং ব্রিটিশ সম্পত্তি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।


প্রতিরোধ যুদ্ধের এই আগুনের দামামা ছোট নাগপুর প্রদেশের প্রায় ৫৫০ বর্গ মাইলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এবং এতে করে ব্রিটিশ প্রশাসন এতটাই ঘাবড়ে যায় যে যুদ্ধের চতুর্থ দিনে রাচীর ডেপুটি কমিশনার সেনাবাহিনী নিয়ে আসতে বাধ্য হন। যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ‘মুন্ডা বাহিনী’র হাতে ছিল বিষ মাখানো তীর এবং ধনুক যেটি ব্রিটিশ সেনার আধুনিক অস্ত্রের সামনে পরাজিত হিসেবে গন্য হয়। ব্রিটিশ সেনা বাহিনী তাদের আধুনিক অস্ত্রের মাধ্যমে ‘আদিবাসী’দের মধ্যে ম্যাসাকার চালায়। শত শত ‘আদিবাসী’ প্রান হারায়। এই বিদ্রোহটি পুরো ব্রিটিশ প্রশাসনকে নাড়িয়ে দিয়ে চলে যায়। বীরসা মুন্ডা কে এরেস্ট কারীর জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার পর্যন্ত ঘোষনা করা হয়। পরবর্তীতে মুন্ডা যোদ্ধাদের সম্মিলন স্থল ডুম্বারী নামক পাহাড়ে ব্রিটিশ ফোর্স এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে পুরো পাহাড়কে ‘আদিবাসী’ যোদ্ধা এবং মানুষের লাশে পরপূর্ন করে দেয়। সম্মিলন স্থল থেকে বীরসা কোন ভাবে পালাতে সক্ষম হলেও ফেব্রুয়ারী ৩, ১৯০০ সালে চক্রধরপুরের জামকোপাই নামক জঙ্গল হতে ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি আটক হন।


১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারের অন্ধকারের কুঠরিতে নিক্ষেপ করা হয়। বীরসা মুন্ডাকে পেয়ে অন্য আটককৃত আসামিদের মধ্যে আরও উদ্দীপনা বেড়ে যায়। কারাবাসীরা বীরসা মুন্ডাকে পেয়ে যারপরনাই খুশি হয় এবং বীরসা মুন্ডার নেতৃত্বে তারা অর্থাৎ কারাবন্দীরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পায়। বীরসা মুন্ডার তেজোদীপ্ত কথায় উজ্জীবিত হন সব কারাবন্দী। ইংরেজ সরকার অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে কারা অভ্যন্তরে এক ডাক্তারকে পাঠিয়ে চিকিৎসার নামে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে এই মহাপুরুষ বীরসা মুন্ডাকে ১৯০০ সালের জুন মাসের ৯ তারিখে হত্যা করে। বীরসা মুন্ডার মৃত্যুকে জেল কর্তৃপক্ষ কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মর্মে প্রকাশ করে। এই বিদ্রোহের মহানায়কের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এখান থেকে প্রেরণা নেয় গোটা ভারতবাসী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিকামী বৃহত্তর জনগোষ্ঠী একে একে স্বাধীনতার স্বাদ বুঝতে পারে। আদিবাসীদের মধ্যে এই ঘটনাই প্রেরণার উৎস হয়ে তাদের উৎসাহিত করে তোলে। সব আদিবাসী ওই মহান পুরুষ মুন্ডা বিদ্রোহের মহানায়ক বীরসা মুন্ডাকে আজও ভগবান বীরসা মুন্ডা বলে অন্তরে ধারণ করে।



পোস্ট উৎসর্গঃ অগ্নিপুত্র 'নীর' এবং 'শ্রেয়ান' কে।
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার শতদ্রু একটি নদী...,ব্লগার গেম চেঞ্জার, ব্লগার কিরমানী লিটন, ব্লগার সুমন কর, ব্লগার গিয়াস উদ্দিন লিটন, ব্লগার রক্তিম দিগন্ত, কবি সেলিম আনোয়ার, ব্লগার বিদ্রোহী ভৃগু, ব্লগার সাহসী সন্তান, ব্লগার চাঁদগাজী, ব্লগার রমিত, ব্লগার জেন রসি, ব্লগার গিয়াস উদ্দিন লিটন, ব্লগার থিওরি, ব্লগার হামিদ আহসান, ব্লগার আহমেদ জী এস, ব্লগার আমিনুর রহমান, ব্লগার রেজওয়ানা আলী তনিমা, ব্লগার অন্ধবিন্দু, ব্লগার কাল্পনিক_ভালবাসা এবং অন্যান্য যারা পুরোটা সময় জুড়ে সিরিজেরে সাথে থেকে অনুপ্রেরনা জুগিয়েছেন, সতিই এ এক অন্য রকম ভাললাগা। প্রনতি জানবেন।



তথ্যসূত্রঃ
অরণ্যের অধিকার (১৯৭৭), মহাশ্বেতা দেবী রচনাসমগ্র-০৮, সম্পাদনা : অজয় গুপ্ত, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৩।
চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর (১৯৮০), মহাশ্বেতা দেবী রচনাসমগ্র-০৯, সম্পাদনা : অজয় গুপ্ত, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৩।
সুরজ গাগরাই (১৯৮৩), মহাশ্বেতা দেবী রচনাসমগ্র-১২, সম্পাদনা : অজয় গুপ্ত, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৩।
Elwin, Verrier (1955). The Religion of an Indian Tribe. Bombay: Oxford University Press. McDougal, Charles (1963). The Social Structure of the Hill Juang. Ann Arbor: University Microfilms.
Orans, Martin (1965). The Santal: A Tribe in Search of a Great Tradition. Detroit: Wayne State University Press. Yamada,
Ryuji (1970). Cultural Formation of the Mundas. Tokyo: Tokai University Press.
Shrivastava, Mukesh Kumar (2013), Mundari Khuntkatti: An Institution of Customary Right over Land
Khan, A. H. Birsa Munda. Ministry of Information and Broadcasting.
Rycroft, Daniel J. (December 2004). "Capturing Birsa Munda: The Virtuality of a Colonial-era Photograph" (PDF). Indian Folklore Research Journal 1 (4). Retrieved 4 February 2015.
Singh, Suresh (1966). The Dust-storm and the Hanging Mist: A Study of Birsa Munda and His Movement in Chhotanagpur, 1874-1901. Calcutta: Firma K. L. Mukhopadhyay. OCLC 192213. Retrieved 4 February 2015.
Singh, Kumar Suresh (1983). Birsa Munda and His Movement 1874-1901: A Study of a Millenarian Movement in Chotanagpur. Oxford University Press. ISBN 978-0195614244.
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪
২১টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×