সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে খুলনা-পাইকগাছা/কয়রা সড়কের পাশে অবস্থিত প্রায় মাটিতে দেবে যাওয়া প্রাচীন মসজিদটি আগন্তুক অনেকের কৌতুহলের কারন হয়ে দাঁড়ায়। মসজিদটি মূলত তেতুলিয়া শাহী মসজিদ নামে পরিচিত হলেও অফিসিয়ালি এটি খান বাহাদুর সালামতুল্লাহ মসজিদ নামে পরিচিত। তেতুলিয়ার জমিদার কাজী পরিবারের বংশধর খান বাহাদুর মৌলভী কাজী সালামাতুল্লাহ খান ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট্য এই মসজিদটি ১৮৫৮-৫৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। একই সঙ্গে তিনি আরো একটি ভবন নির্মাণ করেছিলেন মসজিদটির পাশে। যেটি পরিচিত ছিল সালাম মঞ্জিল নামে। একই স্থাপত্য রীতিতে তৈরি করা হয় সালাম মঞ্জিলটিও। কিন্তু ভবনটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় অযত্ন-অবহেলায়। ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেলেও প্রায় দেড়শ বছর আগে নির্মিত মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে তালার ইতিহাস-ঐতিহ্য আরা সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে। মসজিদটি নির্মাণ করা হয় মোগল স্থাপত্য রীতির অনুসরণে। এর গাঁথুনি, চুন, সুরকি আর চিটাগুড়ের। প্রায় ১০ বর্গফুটের ১২টি কলাম বা পিলারের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এর ছাদ। এটি ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। মিনার আছে ২০টি। বেশির ভাগ মিনারের উচ্চতা প্রায় আট ফুট। তবে চার কোণার চারটি মিনারের উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। বেশ দূর থেকে বড় চারটি মিনারকে বেশ ভালভাবেই দেখা যায়। মসজিদটিতে রয়েছে নয় ফুট দৈর্ঘ্য ও চার ফুট প্রস্থের সাতটি দরজা। পাশেই রয়েছে অযু করার জন্য ঘাট বাধানো একটি গভীর দীঘি। মসজিদটির মূল ভবনের বাইরে অর্থাৎ বারান্দার মত জায়গায়ও নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা আছে। মসজিদটি দেখতে অনেকটা টিপু সুলতানের বংশধরদের আমলে তৈরীকৃত বিভিন্ন স্থাপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মসজিদটির চর্চা ‘মোঘল মনুমেন্টস অফ বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থেও পাওয়া যায়।
মসজিদের ছবিঃ
মসজিদের ফলকঃ
মসজিদের ভেতরেঃ
(বারান্দা)
(নামায ঘর)
মসজিদের ঘাট বাধানো পুকুরঃ
দেবে গিয়েছে মনে হওয়া অংশঃ
দূর হতে দেখলে মনে হবে মসজিদটি দ্বিতল বিশিষ্ঠ। যার একটি তলা মাটিতে দেবে গিয়েছে। এক তলা আদৌ মাটিতে দেবে গিয়েছে কিনা এর সঠিক উত্তর আসলে কেউ দিতে পারে না। কেউ বলে মসজিদের স্থাপত্য শৈলিই এমন আবার কেউ বলেন এর একটি তল মাটির ভেতরে। তবে দূরত্ব যত হয়েছে মসজিদটি নিয়ে কল্পনা-জল্পনা, রুপকথা-উপকথা ও বেড়েছে। কথিত আছে যে, এই মসজিদ আসলে কেউ নির্মান করেন নাই। মাটি ফুঁড়ে বের হয়েছে এই মসজিদ। অনেক আগের কথা, সেই এলাকায় কোন মসজিদ ছিল না। একদিন ফজরের সময় এলাকাবাসী গায়েবী আযানের শব্দ পান। পরে সকালে গিয়ে দেখেন মসজিদ আর পুকুর। অনেকেই মনে করেন মাটি ফুঁড়ে উঠে আসা এই মসজিদটি আবারো মাটির ভেতরে চলে যাচ্ছে। তবে সত্য যাই হোক না কেন, অযত্ন-অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে মসজিদটির অবস্থা এখন নাজুক প্রায়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৯