পঁচাত্তরের সরকার উৎখাতে সরকারি বাহিনীর হাতে সরকার প্রধান সহ তিন পরিবারের ১৬ জন মানুষ মারা যান। এর মধ্যে এক জন ছিলো শিশু। এই পরিবারগুলো ছিলো সরকারের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারি। আর ২৪ এর গণঅভ্যুথ্থানে সরকার প্রধানের পলায়ন এর দিনই মারা যায় শ'দেড়েক মানুষ। সব মিলিয়ে প্রায় সাত শ মানুষ খুন করে সরকারের পুলিশ,বিজিবি আর বেসরকারী ভাবে পালা সরকারের দলীয় বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে জনা ত্রিশেক শিশু-কিশোর। পঙ্গু হয়েছে আরো অসংখ্য মানুষ। কিন্তু, সরকার এবং সরকার ঘনিষ্ঠ লুটতরাজের বড় ভোক্তা সবাই অক্ষত অবস্থায় পালাতে সক্ষম হয়। এখন কেউ কেউ এদিক ওদিক ধরা পরলেও আর্মী তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেছে।
৭৫ এর মত ২৪ এও সরকার পতন হয় গণ মানুষের উৎসবের উপলক্ষ। অসংখ্য লাশ, রক্ত, জখম নিয়েও গণ মানুষ স্বাধীনতা উত্তর অর্ধশত বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উদযাপনে মাতে। অন্যদিকে নজির বিহীন বর্বতা আর লুটপাট এর পরও পলাতক সরকারের পক্ষে লোকজন দেশের বিভিন্ন জায়গায় একটু সময় নিয়ে হলেও রাস্তায় নেমেছে, ইনিয়ে বিনিয়ে প্রকাশ্যে বর্বর সরকারের সমর্থনে কথা বলার রুচি দেখাচ্ছে। টানা পনের বছর অবিশ্বাস্য চুরি ডাকতিতে যে ছ্যাচড়া এলিট শ্রেনী পলাতক সরকার তৈরী করেছে তাদেরকে টেনে হিঁচড়ে, লাথ্থি উষ্ঠা দিয়েও গণমানুষের কাতারে নামানো কঠিন কাজ। ৭৫ এ আবার সরকারের সমর্থনে কেউ বের হয়নি। বরং তাদের ঘনিষ্ঠজনের অনেকে নতুন সরকারে যোগ দিয়ে বসে। যদিও দেশে তাদের প্রিয় সরকার প্রধান এবং তার গনিষ্ঠজনের লাশ পরে ছিলো।
তো, দেখা যাচ্ছে গণঅভ্যুথ্থানে গণ মানুষের বুকে পাঁড়া দিয়ে পার পায় খুনি শাসক আর তার চোরচোট্টার দল। তারা সাহস পায় আবার ফিরে আসার হুমকি দেয়ার।
এর সমাধান আছে বিচার ব্যবস্থার হাতে। ঠিক ঠাক বিচার করা গেলে, দীর্ঘ্য মেয়াদে গণ মানুষ আর তার সরকার কাঠামোকে ভয় পাবে ভবিষ্যতের যেকোন দস্যু দল। নিজের আপনজনের রক্ত বেচে কোটি কোটি মানুষের রক্ত চোষার আহ্লাদ দেখানোর সুযোগ আসবে না তখন। চান্দার টাকায় এলিট হওয়ার লোভে জিহ্বা ভেজানোর আগে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসবে যে কারো। তাই দীর্ঘ মেয়াদে, গণঅভ্যুথ্থানই ভালো ফল আনে সেনা অভ্যুথ্থান থেকে। খুনির হাতে খুনি বিদায় নিলে খুনিরাই ক্ষমতায় থেকে যায় ঐ চক্রে। ৭৫ এর তুলনায় ২০২৪ এর এই রক্তক্ষয়ী অভ্যুথ্থান বাংলাদেশের সামনে এক অফার সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে। এমন সুযোগ বাংলাদেশ এর আগে পেয়েছিলো ৭১ এ, কিছুটা ৯০ এ।
এই সরকারের বড় বড় পরীক্ষা গুলোর ঘন্টা বেজে গেছে পলাতাক সরকারের চোর চোট্টা আর খুনি পিশাচ গুলোর বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সাথে। যথেস্ট পরিমান স্বচ্ছ বিচার না করতে পারলে জেল-ফাঁসি যাই হোক ইতিহাস থেকে দায় মুক্তি পেয়ে যাবে এই ভয়ঙ্কর পিশাচের পাল। যে চুরি করেছে তাকে চুরির জন্যেই ধরতে হবে, যে খুন করছে তারে খুনের জন্যে। শর্টকাটে সবগুলোকে একই মামলায়, একই স্বাক্ষীর বরাতে একই রায় দিলে, একই উটের পিঠে চলতে থাকবে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:০০