পহেলা বৈশাখের উৎসবটা যদি না হতো, তাজমহলের মত মহান স্থাপত্য পৃথিবীতে তৈরীই হতো না!
আনার কলি, নূর জাহান বা মেহেরুন্নেসাকে নিয়ে তৈরী হতোনা ঐতিহাসীক মহা কাব্য গুলাও! কেন?
বলছি, ধীরে ধীরে…।
.
বাঙ্গালীর হাজার বছরের ঐতিহ্য পালনের নিয়তী ঠিক করে দিয়েছিলেন এক জন মঙ্গোলীয়ান বংশের সম্রাট। আর বাংলা সনের উৎপত্তিও বাংলায় নয়, সুদূর দিল্লীতে! তাই, ব্যাপারটার মাঝে একটু ‘ফরেন’ (Foreign) ‘ফরেন’ গন্ধ আছে!
.
হাজার বছরের ঐতিহ্যে ১৪২২ এর প্রথম দিন পালন করতে চাইলেও, বাংলা সনের বয়স কিন্তু হাজার বছর নয়। মাত্র সাড়ে চারশ বছর (৪৫৯ বছর)। কারন, চালু হওয়া প্রথম বাংলা সনটি গননা করা করা হয় ৯৬৩ সাল হিসেবে।!
.
খ্রিষ্টীয়/ ইংরেজী ১০ মার্চ ১৫৮৪ আর হিজরী ১০ রবীউল আওয়াল ৯৬৩ তে মোঘল সম্রাট আকবর “তারিখ-এ-এলাহী” নামে এই ফসলী সন চালু করেন। আর এই তারিখেই সম্রাট ভদ্র লোক পানীপথের যুদ্ধে হীমু সাহেবকে পরাজীত করে ভারত থেকে ভারতীয়দের গোষ্ঠী উদ্ধার করে দিয়েছিলেন।
.
ফসলী সনের ১২ মাসের নাম গুলাও বৈশাখ, জ্যোষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ছিলো না। কারওয়াডিন, আর্দী, বিহিশু এই রকম সব খটমট কিচিমের নাম ছিলো। পরবর্তীতে নামগুলা কিভাবে কিভাবে যেন বদলে যায়। আকাশের বিভিন্ন তারাকে এদেশীয় লোক জন যে সব নামে ডাকতো সেখান থেকে ধীরে ধীরে বাংলা মাসের নাম গুলো নাকি আসে। ঐ কালের মানুষ কত্ত জ্ঞানী ছিলো! এখনতো আমরা সব তারাকেই এক নামে ডাকি- “তারা” বলে।
.
দিল্লীর সম্রাটের ফরমান মানেতো পুর ভারতবর্ষের জন্যেই সেটা আইন। কিন্তু সেই ফসলী সনকে বাংলা সন নাম দিয়ে এই ঐতিহাসিক উৎসব কেন যেন শুধু বাঙ্গালীরাই পালন করে যাচ্ছে। উপমহাদেশের বাকি এলাকার মানুষ জনের বিষয়টা নিয়ে কেন যেন খুব একটা রা নাই। সম্রাট বেঁচে থাকলে ওসব নালায়েক গুলা সবারই কল্লা যেতো হয়তো।
.
ইংরেজী সনের দিন মধ্যরাত থেকে শুরু হয়। আরবী বা হিজরী সনেরটা হয় সন্ধার পর থেকে। কিন্তু বাংলা সনের দিন শুরু হয় ভোর থেকে। “মর্ণিং শোজ দা ডে” ইংরেজী বাণী হলেও এক মাত্র বাঙ্গালীরাই সেটা মানতেছে।
.
পান্তা-ঈলীশ এখন ব্যায় বহুল বৈশাখী অনুষঙ্গ। মূলত, পদ্মা পাড়ের উপকূল অংশের জেলে পল্লীতে ঈলিশের সময়ে জেলে পরিবারগুলো এই পান্তা-ঈলিশ খায়। এবং অবশ্যই শখ করে খায় না। ঈলিশের তেলে ঈলিশ ভেজে পান্তা দিয়ে খাওয়া তাদের চরম দারীদ্রতার পরম অনুষঙ্গ। তিন চার হাজার টাকায় আধাকেজি ইলিশ কিনে পান্তা দিয়ে খেয়ে ঐতিহ্য পালন হয় নাকি ঐ পরিবার গুলোকে চরম ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয় তা ভাবার বিষয়। এই মাছ কখনোই পুরো দেশে সহজ লভ্য এবং স্বস্তা ছিলো না। নিত্য পান্তা দিয়ে এই মাছ সবার খাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। শুধু মরীচ দিয়ে পান্তা হলে একটা ব্যাপার ছিলো। কিন্তু তাতে হয়তো ফুটানিটা ঠিক ফুটেনা।
অর্থাৎ ঐতিহ্য নির্বাচনে আমরা বোধ হয় অতটা সচেতন না। আর যে টাকায় ঈলিশ কেনা হয় বৈশাখে, সেটাতো যায় ‘আগোরা’, ‘সপ্নের’ মত স্টোর মালিকদের পকেটে, জেলে পল্লীতে না।
.
এইবার বলি তাজমহলের কথা। সম্রাট শাহজাহানের সাথে মমতাজ মহলের প্রথম দেখা এবং সম্পর্কের সূত্রপাত হয় এমনি এক পহেলা বৈশাখের উৎসবে! তখন এটা ছিলো নওরোজ উৎসব। অবশ্য তাজমহল বানানোর পেছনে এই দেখা, প্রেম, বিবাহ থেকে গুরুত্ত্বপূর্ন ছিলো মমতাজ মহলের মৃত্যু। রানী সাহেবান যদি রাজা সাহেবের পরে মারা যেতেন, তাহলেও অবশ্য তাজমহল হতো না। তবে, এইসব গল্প অন্য প্রসঙ্গের। পহেলা বৈশাখের সাথে মেহেরুন্নেসার সম্পর্কও একই। সম্রাট সেলিম সাহেব তাহার বহু বিবির এক বিবি বা মূল ‘গার্লফ্রেন্ড’ নুরজাহানের দেখা পেয়েছিলেন এমনি এক নওরোজ উৎসবেই।
তাই বলা যায়, মূলত, উৎসব আনন্দের দিনে ছেলে মেয়ে পটানোর কাজটাই বোধহয় এই এলাকার মানুষের হাজার বছরের ঐতিহ্য। সবচেয়ে জটিল ঐতিহ্য!! বৈশাখের গানটাও আমরা বানাইছি তেমন করেই-
“…বখাটে ছেলেদের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই…রে…
মেলায় যাইরে..মেলায় যাইরে……………..”
০৪১৩২০১৫