দেশে একটা সস্তা ডায়লগ আছে, সন্তান না কাঁদলে নাকি ‘মা’ ও দুধ দেয় না। মা কে নিয়ে এই জঘন্য প্রবাদটা দেশের বেশিরভাগ মানুষেই বিশ্বাস করে। আসল ঘটনা হল, মা তার সন্তানকে না চাইতেই শুধু দুধ কেন প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেয়। তবে হ্যাঁ, অনেক সময় তাকে সন্তানের মঙ্গলের জন্য অন্যান্ন কাজের চাপে ব্যস্ত থাকলে, সন্তান কেঁদেঊঠে তাকে মনে করিয়ে দেয়। মায়েরা তাই সজাগ থাকে যেন কাঁদার আগেই যেন সন্তানের খাবার-টুকু মুখে তুলে দেয়া যায়। তাই মা সম্পর্কে এই প্রবাদের কোন ভিত্তি নাই। বরং আমরাই ওরকম। কেউ চিৎকার করে না কাঁদলে আমরা সাধারণত কিছু দেই না।
কিছু উদাহরন দেই,
প্রথমে ছোটখাটো কান্নাকাটির উদারনঃ
মহাখালীর মোড়ে প্রায় এক ডজন হুজুর (চেহারায়) , বিভিন্ন কাল্পনিক মসজিদের নামে চাঁদা তুলে ভাগ বাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলছে, অথচ সত্যিকারের ধর্মপ্রাণ বহু হুজুর বিনা বেতনে মসজিদ গুলোতে কাজ করছে, তাদের কান্না না থাকায় আমরা কিছু দিচ্ছি না।
গুলশান মোড়ে টাইম শিডিউল কিনে প্রফেশনাল ভিক্ষুকরা বিপুল কালেকশন করছে অথচ সত্যিকারে দুস্থ ও অক্ষমেরা গ্রামাঞ্চলে অসহায় অবস্থায় পড়ে আছে।
মাঝারী লেভেলের কান্নাকাটি:
রানা প্লাজার দুর্গতদের কান্নাকাটি দেখে লক্ষ লক্ষ মানুষ সাভারে হাজির হল, কোটি কোটি টাকা কালেকশন হল, এখন আহাজারি কম শোনা যাচ্ছে বলে কিন্তু পুনর্বাসনের টাকা আদৌ কেউ পেল কি না, সেই নিয়ে আমাদের কারো মাথা ব্যথা নাই।
এই অবস্থা শুধু ভবন ধসের ক্ষেত্রে না, সব লঞ্চ/ বাস/ট্রেন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই। একেকটা দুর্ঘটনায় যখন সারি সারি লাশ দেখা যায়, স্বজনদের কান্নাকাটিতে যখন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যায়, তখন হ্যান করতে হবে ত্যান করতে হবে বলে রব ওঠে। বাস্তব সত্যি হচ্ছে কোন দুর্ঘটনার জন্য কারো শাস্তি হয় না, কোন নতুন নিয়ম হয় না বা কেউ ক্ষতি পূরণ পায় না, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না, কারণ তখন তো আর কান্না কানে আসছে না।
বড় অর্থাৎ জাতীয় পর্যায়ের কান্নাকাটি:
কোন কোন সময় পুরো দেশ কাঁদে। কান্না থেমে গেলে সেটাও ভুলে যাই। যেমন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের এই জাতির কান্না খুব দ্রুতই ভুলে গেছি। স্বৈরাচারের নিপীড়ন ভুলে তাকে এখন স্নেহের চোখেই দেখি। শেয়ার বাজারে ধ্বসের কিছুদিন পরেই খল-নায়কদের হাতে দেশের টাকা-পয়সার দায়িত্ব দিয়ে দেই।
আমাদের হৃদয় পাষাণের মত, চোখের জলে কিছুক্ষণের জন্য ভিজে যায় মাত্র। পাষাণের উপর জল খুব দ্রুতই শুকায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৫৪