আজ হঠাৎ খেয়াল করলাম এই মাসে একটাও পোষ্ট দেইনি। আমি এমনিতেই আলসেমি করি, পোষ্ট লেখার কোন আইডিয়াও মাথায় নাই। তবুও সেপ্টেম্বর ফুরাতে ঘড়ির কাটায় যখন মিনিট ত্রিশেক বাকি, তখন লিখতে বসলাম। এক মাসে একটাও লেখা না লিখলে কেমনে কি?
আমি ছোটবেলায় পড়েছি লজিং টিচারের কাছে। তো ক্লাস থ্রিতে বা ফোরে পড়ি, একদিন স্যার একটা অংক করতে দিছিল, বই দেখে করছিলাম। সেই দিন পাষন্ড টিচার আমাকে অনেকক্ষন কান ধরে চেয়ারে দাড় করিয়ে রেখেছিলেন। একশবার খাতায় “আমি আর কখনো নকল করিবো না” বাক্য লিখিয়েছিলেন।
সেদিনের পর আমি একদম সোজা হয়ে গেলাম। প্রাইমারি স্কুল লাইফে নিজে নকল করতাম না এবং অন্যকে নকল করতে দেখলে স্যারদের বলে দিতাম। ফাইভের সেকেন্ডটার্ম পরীক্ষায় খাতা দেখাবার সময় বাংলা স্যার আমাকে ডেকে বললেন তোমার খাতায় এতো কাটাকুটি কেনো? আমার সাফ জবাব, স্যার আমার পিছনে যে বসছিলো সে খালি আমারটা দেখে লিখছিলো, তাই ইচ্ছে করে ভুল বানানে লিখেছি, পরে ঠিক করেছি। (তখন বাংলায় তিনটা বাণান ভুল গেলে এক মার্ক মাইনাস হতো)
হাই স্কুলে আমি খুবই ভদ্র ছেলে, নকল ছাড়াই ক্লাসের পর ক্লাস পেরোতে লাগলাম। তো ক্লাস এইটে আমার বন্ধুদের দেখতাম কেউ স্কেলে, কেউ শার্টের হাতায় কেউ ঘড়ির ডায়ালের ভেতর কেউবা আন্ডারপ্যান্টের ভেতর নকল নিয়ে আসতো আমাদের ফার্ষ্ট বয় থেকে লাষ্ট বয় প্রায় সবাই নকল করতো, যে প্রশ্নের উত্তর পারতো সেটাও নকল করতো। পরীক্ষা শেষে ক্রেডিট দেখা হতো, কে কয়টা নকল করেছে, কয়বার স্যারকে ফাকি দিয়েছে। তো আমার বন্ধুদের এহেন কান্ড দেখে আমারও খুব শখ করলো নকল করতে। নকল করা একটা থ্রিল। এ্যাডভেঞ্চারের বিষয় ছিলো। (বিদ্রঃ আমি তখন মাসুদ রানা পড়তাম)
আমি নকল করার চেষ্টা করি কৃষি শিক্ষা পরীক্ষায়, উইয়ার্ড বাট ট্রু।কিন্তু স্যার যখন এসে বললেন, “যার কাছে নকল আছে দিয়ে দাও, ধরতে পারলে কঠিন শাস্তি” আমি ঘাবড়ে গেলাম। স্যার গৎবাধা এ কথা প্রতি পরীক্ষায়ই বলেন, কিন্তু আমার পকেটে তখন ৩টা নকল। একটায় বিভিন্ন সারের নাম, আরেকটায় মৎস পালন পদ্ধতি আরেকটায় যেন কি ছিলো মনে নাই। সব কয়টা প্রশ্নই আমার মুখস্থ ছিলো। জাষ্ট এ্যাডভেঞ্চারের আশায় নকল করা। তো প্রথম ঘন্টা প্রচুর ভয়ে ভয়ে কাটার পর ঘন্টা দিতেই বেড়িয়ে গেলাম। বাউন্ডারির পেছনে গিয়ে নকল বের করে তার উপর প্রশাব করে দিয়ে এলাম। সেবার আর আমার নকল করা হয় নাই। অবশ্য সেবার নকল ছাড়াই কৃষি শিক্ষায় আমি ৯৪ নম্বর পেয়েছিলাম।
আমার প্রথম নকল করার অভিজ্ঞতা হয় ক্লাশ টেনে। টেষ্ট পরীক্ষায়।বেশী কিছু না, অংকের কয়েকটা সূত্র লিখে নিয়ে গেছিলাম, দুইটা কাজে লাগছিলো।
কলেজে নকল করা একটা মজার ব্যাপার ছিলো। কত পদ্ধতিতে যে নকল করেছি তার ইয়ত্তা নাই। একজনের নকল নিয়ে বিশ-ত্রিশ জন পরীক্ষা দিয়েছি।নকলেরও চ্যাপ্টার ভাগ করা থাকতো। তখন হাতে লিখতাম না, ফটোকপির দোকান থেকে ছোট সাইটের কপি করে নিয়ে যেতাম। একবার এক স্যার দেখে ফেলেছিলেন, অবশ্য কিছু বলেন নাই।
তবে কোন পাবলিক পরীক্ষায় নকল করিনি। পাশ করার জন্যও না। মজা লাগতো, রোমাঞ্চ লাগতো তাই নকল করতাম।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:০৪