ছোটবেলায় সাইকেলের জন্য বাবার কাছে অনেক জেদ করেছিলাম। তখন বাজারে ফনিক্স সাইকেল আর ফনিক্সের মতই মডেলের ছোটখাট হিরো সাইকেল পাওয়া যেত।অনেক জেদাজেদির পর বাবা হিরো সাইকেল কিনে আনলেন। আমি ছোট ছিলাম,সাইকেলের সিটে বসে মাটি নাগাল পেতাম না। মূলত আমার জন্য কেনা হলেও সাইকেল থাকতো আংকেলের কাছে। :-<
একটু বড় হবার পর বাজারে নানা রংয়ের নানা মডেলের সাইকেল আসে। অনেক পীড়াপিড়ির পর, একদিন রাগ দেখিয়ে না খেয়ে থাকার পর স্যান্সি মডেলের নীল রংয়ের একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিল। সাইকেল কেনার তিন দিনের মাথায় রিকশার সাথে বাধিয়ে হাটু ছিলে ফেললাম, তার পরদিনই সাইকেল নিয়ে একটা মোটরসাইকেলের সাথে বাধিয়ে দিলাম। এরপর মা সাইকেলে তালা লাগিয়ে দিলেন। একদিন মায়ের ঘর থেকে চাবি চুরি করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে তো সোজা হাসপাতালেই পৌছে গেলাম। দোষ কিন্তু আমার ছিলো না। তখনো সাইকেল চালানো রপ্ত করতে পারি নি। সাইকেলে বসলেই হাত কাপতো। সেদিন হাত একটু বেশিই কেপেছিলো, সোজা রাস্তার পাশের খাদে। :#>
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আর সাইকেল পাই নি। পরে শুনেছিলাম বাবা সেইদিনই সাইকেলটা বিক্রি করে দিয়েছিল। এরপর আর বাবার কাছে সাইকেল চাওয়ার সাহস হয়নি। একবার মাকে বলে কানের নিচে চড় খেয়েছিলাম। সবার ধারনা ছিলো আমি সাইকেলে উঠলেই কোন কিছুর সাথে বাধিয়ে দিবো, এমনকি রাস্তা যদি ফাকা থাকে, তাহলে খাদে পড়ে যাব। কথাটা মনে মনে আমিও বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম। আমার মনে ধারনা হলো আর যাই হোক বাপু, দ্বিচক্রযান আমার জন্য না।
বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকায় সাইকেলের ট্রেডিশন চালু হয়েছে। ব্যাপারটা ভালোই। ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে আটকে থাকার বালাই নাই, শরীরও ফিট থাকে। আমার অবশ্য সাইকেলের ভূত আবার মাথায় চাপলো যখন পাশের বাসার মেয়েটাকে সাইকেল চালাতে দেখলাম।হাতে গ্লভস, মাথায় হেলমেট পড়ে স্মার্ট ভঙ্গিতে সাইকেল চালাচ্ছিলো। তখন ভাবলাম ঐ পিচ্চি মেয়েটা পারলে আমি পারবো না কেন? অতঃপর মাথায় সাইকেলের ভূত চেপে বসলো।
সাইকেল আর এক্সেসরিজ মিলিয়ে হিসাব করলাম ২২-২৩ হাজার টাকা লাগবে। আমার কাছে আছে তখন ১৫ হাজার। রুমমেট বন্ধুর কাছ থেকে ধার দেনা করে শুভদিন দেখে কিনে ফেললাম সাইকেল।
সাইকেল তো কিনেছি, চালাতে ভয় করে। না জানি আবার কোন গাড়ির নিচে পড়ি, কোন গাড়ি ডাইনে পেলাষ্টিক বইলা চাপা দিয়ে যায়।
যা থাকে কপালে বইলা একদিন বের হলাম। মিরপুর ১০ নাম্বার ফুটওভার ব্রিজের একটু সামনে তুখোড় জ্যাম। আমি সেই জ্যামের ভেতরে আটকে আছি, চোখে রোদচশমা, মাথায় হেলমেট। পাশ থেকে এক সিএনজি ড্রাইভার হাইসা দিয়া বলে, "আরে মামা, সাইকেল নিয়া জ্যামের ভেতর কি করেন? চিপা চুপা দিয়ে বাইরায়া যান, নাইলে সাইকেল কান্ধে তুইলা ফুটপাত দিয়া খিচ্চা দৌড় মারেন"
আইডিয়া পাইয়া কাধে সাইকেল নিয়া ফুটপাতে হাটতিছি, সেনপাড়ার ঐখানে জনৈক পকেটমার আমার কাধে সাইকেল দেইখা বুইঝা নিছে দুই হাত আটকা। ফলাফল…
মোহাম্মদপুর গেছিলাম ১৪ তারিখে, সাইকেল তালা দিয়ে রেখে বন্ধুর মেসে ঢুকে ১০ মিনিট পর বেরিয়ে দেখি, সাইকেলের মত সাইকেল দাড়িয়ে আছে, শুধু কে যেন বাপ কা মাল মনে করে হাওয়া ছেড়ে দিয়ে গেছে।
১৬ তারিখে শ্যাওড়াপাড়ায় বিআরটিসির দোতলা থেকে কোন মহান মানব যেন কুলি করে পানি ফেলল। ফেলবি তো ফেল, একেবারে আমার মাথার উপর।
১৭ তারিখ। বন্ধুর সাথে রেস রেস খেলতে গিয়ে স্পিডব্রেকারের উপর ডিগবাজি খেয়ে ডান হাতের কনুই ছিলে ফেলছি, প্যান্ট ছিড়ে গেছে। সাইকেলও ভচকায়া গেছে গা
২০ তারিখ, সনি হলের সামনে এক মাইক্রোবাসের রিয়ার ভিউ মিরর এর সাথে লাগাইয়া ভাইঙ্গা ফেলছি। আমার সাইকেলের তেমন কিছু হয় নাই।
২২ তারিখ মগবাজার গেছিলাম। ওভারব্রিজ সারতে রাস্তা খুইড়া একাকার। এক গর্তে আটকে সাইকেল নিয়া রাস্তায় পড়ে গেছি। বাম পায়ে ব্যাথা পাইছি।
২৩ তারিখ ফার্মগেটে, এক সিএনজির সাথে...
২৭ তারিখ আবারও মগবাজার। এবার স্বকল্প বাসরে সাইড দিতে যাইয়া রাস্তায় ডিগবাজী
আমার হিষ্ট্রি শুইনা যেই বন্ধুর কাছ থিকা টাকা ধার করছিলাম, সে কইছে, তুমি বাপু চার চাকায় মন দাও, দ্বিচক্রযান তোমার হবে না।
সাইকেল ওর কাছেই বেইচা দিছি
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০৬