আমরা যারা লেখাপড়া করছি তাদের সবারই আশা থাকে জীবনে অনেক বড় কিছু হওয়ার,অনেক বড় কিছু করার। কিন্তু আমরা সবাই তা পারিনা। আমরা সবসময় আমাদের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতে আর মুখের বুলি দিয়ে দেশপ্রেম দেখাতে খুব বেশি পছন্দ করি ।নিজের অপারগতাকে অপরের ঘাড়ে চাপিয়ে আর নিজের দেশের অবস্থার দোহায় দিতে থাকি।ইউরোপ,আমেরিকার মতো সুযোগ সুবিধা আমাদের দেশে আমরা কখনই পাবোনা এটা আমরা অনেকেই ধারনা করি।কিন্তু আমাদের দেশেরও বহির্বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রে অনেক সুনাম আছে, যা আমরা অনেকে জানিনা।
"নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ওপারেতে স্বর্বসুখ আমার বিশ্বাস,
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, কহে যাহা যত সুখ সকলি এপারে"--- আমরা সবাই ছোটবেলাই এই ভাবসম্প্রসারণটা পড়েছি,কিন্তু এর মর্ম আর অর্থ আমরা কেউই মনে হয় এখন পর্যন্ত বুঝিনি।
আমাদের বুয়েট এর পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক ডঃ মুহাম্মদ যাকারিয়া স্যার একদিন আমাদের ক্লাস এ একটা গল্প বলেছিলেন।যখন যমুনা সেতু তৈরী হয় তখন নিউজিল্যান্ড থেকে একজন কনক্রিট বিশেষজ্ঞ এসেছিলেন বাংলাদেশ এ। সেই বিদেশী ইঞ্জিনিয়ার এটা দেখার জন্য আমাদের দেশে এসেছিলেন যে আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররা কনক্রিট বানাতে পারে কিনা !!এটা বলে নেওয়া ভাল যে বাংলাদেশ এ যতগুলো বড় বড় কাজ হয় সবগুলোতেই বুয়েটের শিক্ষকেরা কনসালটেন্ট হিসেবে নিযুক্ত থাকেন।এমনকি বসুন্ধরা সিটি এর সেন্ট্রাল শীতাতপ ব্যবস্থা বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের একজন শিক্ষক ডিজাইন করেছেন।
সেই সুবাদে নিউজিল্যান্ড থেকে আসা বিশেষজ্ঞ বুয়েটে এসেছিলেন।তিনি বুয়েটে এসে এখানকার ছাত্রদের গবেষণা, ব্যবহারিক ল্যাব এ কাজ দেখে কোন কথা না বলেই শেরাটন হোটেল এ ফিরে যান।পরদিন সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয় "রাতে অত্যাধিক মদ্যপান এ জ্ঞান হারিয়ে নিজের হোটেল রুম এ গিয়ে ভাংচুর করেছেন নিউজিল্যান্ড থেকে আসা ইঞ্জিনিয়ার।"
সেদিন খবর পড়ে আমাদের শিক্ষকরা নাকি অনেক চিন্তাই পড়ে যান।কারণ ওই ইঞ্জিনিয়ার বুয়েট থেকে হোটেল এ ফিরে ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন।আমাদের যাকারিয়া স্যার তখন খবর পড়ে তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে,তাদের কোন ভুলের কারনে সে এমন করছে কিনা??? তখন বিদেশী ইঞ্জিনিয়ার জবাব দেন ---"আমার মাথাই একটা পাজল মানে ধাধা কাজ করছে যার উত্তর আমি কোনভাবেই মিলাতে পারছি না আর এজন্যই আমি এমন কাজ করেছি।" যাকারিয়া স্যার তখন তাকে বললেন---"বলেন দেখি কি এমন ধাধা যা্র উত্তরের জন্য আপনি এতবড় একটা কাজ করলেন???" তখন সেই বিদেশী ইঞ্জিনিয়ার বললো----"যেই দেশে এতো মেধা সেই দেশ গরীব হয় কিভাবে আর যেই দেশ এত গরীব সেই দেশে এত মেধা জন্মালো কিভাবে?????"
আমাদের দেশের অনেক ইঞ্জিনিয়ার এখন গুগল,উইকিপিডিয়া,ইয়াহু,মাইক্রোসফট এর মতো বড় বড় জায়গায় চাকরি করেন ।পৃথিবীর অনেক বড় বড় ল্যাবরেটরীতেও বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরা অবিরাম কাজ করে চলেছেন।তারা যদি আমাদের মত দেশের নিন্দা করতেই সময় পার করে দিতেন তাহলে তারা কখনই এতদুর পৌছাতে পারতেন না।
কথায় আছে "যার চোখ সুন্দর সে তার চারপাশের সবকিছুই সুন্দর দেখেন"।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৩১