একটা গল্প বলি। কিছুদিন আগে নতুন দিগন্তে পড়লাম।
"" .... মারফতী ফকীরদের মধ্যে একটি সাধারণ কাহিনী এমনতর শোনা যায়। একদা হজরত আলি আসিয়া হজরত মুহাম্মাদকে জ্ঞাত করান যে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সুরের আঘাতে তার নামাজে নিত্য ব্যাঘাত ঘটে। অতএব আদেশ পাইলে তিনি শ্রীকৃষ্ণের মস্তকচ্ছেদ করিতে প্রস্তুত। হজরত শ্রীকৃষ্ণকে হত্যা করিবার পূর্বে হজরত আলিকে তাহার মুখাবরণ উন্মোচন করিয়া বদনমণ্ডল দেখিয়া লইতে আদেশ করেন। আদেশমতো বাঁশির সুর অনুসরণ করিয়া যখন আলী বংশীবাদনে-সমাহিত-মন শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাৎ পাইলেন, তখন ক্রোধে তাঁহার হস্তস্থিত জুলফিকার কাঁপিয়া উঠিল। -- কৃষ্ণকে হত্যা করিবার জন্য তিনি প্রস্তুত হয়েছেন; হঠাৎ হজরতের শেষ অনুরোধ তাঁহার মনে উদিত হইলো। -- তৎক্ষণাৎ তিনি শ্রীকৃষ্ণের মুখাচ্ছাদন মোচন করিয়া চকিত হইয়া দেখিলেন যে যাহাকে তিনি বধ করিতে উদ্যত হইয়াছেন তিনি যে হজরত মুহাম্মদ স্বয়ং! ....""
যারা ড্যান ব্রাউনের দ্য ডা ভিঞ্চি কোড পড়েছেন, জানেন যে ইউরোপে খ্রিষ্টধর্ম বিস্তারের সময় স্থানীয় অনেক প্যাগান সংস্কৃতি ও আচারকে আত্মস্থ করে নিয়েছিলো। একই ভাবে বাংলায় যখন সূফী সাধকরা ইসলাম প্রচার করতে আসেন, তখন তারা স্থানীয় অনেক গল্পকথাও ব্যাবহার করেছিলেন।
বাঁশী সম্ভবত সবচাইতে কমদামী বাদ্যযন্ত্র। মেলাতে ঘুরতে গিয়ে ছোটবেলায় বাঁশী কিনে আনেননি এরকম মানুষ কমই আছে।
কমদামী হলেও বাঁশী বাজানো তত সহজ না। আর বাঁশীর মতো খুব কম বাদ্যযন্ত্রই আছে যার সুর করুণ।
সাদামাটা চোখে দুই ধরনের বাঁশুরিয়া চোখে পড়ে। একদল, যারা নিজে নিজে "এক্সপেরিমেন্ট" করতে করতে বাঁশী শিখেন। এদেরকে প্রায়ই দেখা যায় রাস্তায়। চিরচেনা বাংলার সুর বাজাচ্ছেন। উনারা সাধরণত ব্যাকরণ জানেন না। কারো কাছে হয়তো শেখেনও নি। নিজেরাই ইচ্ছেমতো সুর তোলেন। পরিচিত কোন গান, অথবা মন থেকে উঠে আসা সুর। উনাদের বাঁশীগুলো ছোট হয়। বাঁশীর স্কেল হয় অনেক উচুতে। তাই অনেক দূর থেকেও শোনা যায় তাদের বাজনা।
আরেক দল বাশুরিয়া হলেন যারা ওস্তাদের কাছে শেখেন। একদম বিধি-ব্যাকরণ ধরে ধরে। একুশের বইমেলার ভেতরে আলখাল্লা পরিহিত একজন বাঁশুরিয়াকে দেখা যায় অনেক মোটা-লম্বা বাঁশী বাজাচ্ছেন।
গিটার, সেতার, বেহালা, তবলা কিংবা হারমোনিয়াম - এই বাদ্যযন্ত্রগুলোকে কিছুদিন পর পর টিউন করে নিতে হয়। বাঁশীতে এই সমস্যা নেই। একটা ভালো বাঁশী কিনে নিলে সেটা 'ডিস-টিউন' হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। অবশ্য, অন্যান্য যন্ত্রে আপনি চাইলেই স্কেল পরিবর্তন করতে পারবেন। চড়া খাদের বেহালা নিচু খাদে নেয়া যাবে তারে একটু ঢিল দিয়ৈ। বাঁশীতে সেটা সম্ভব না। তাই বাঁশুরিয়াদের সাধারণত একাধিক বাঁশী বাজাতে হয়।
আমি নিজেকে বাশুরিয়া বলবো না। একটা বাদ্যযন্ত্র শিখতে দীর্ঘ সময় লাগে। ভালোভাবে শিখতে চলে যায় পাঁচ-সাত বছর। সেখানে বাঁশীতে আমার বয়স মাত্র ছয় মাস। এখনো দুধের শিশু। শিখছি বৈঠকী, টিএসসি-তে। প্রদীপ'দা আমাদের শিক্ষক।
আমার ভাণ্ডারে আছে:
- সি শার্প, সি, এ শার্প, এফ শার্প ও জি শার্পের মাত্র পাঁচটি বাশী

- রাগ বিলাবল (সবাইকে বিলাবল থেকে শুরু করতে হয়)
- রাগ ইমন (নিজে নিজে তুলেছি)
- রাগ শিবরঞ্জণ (অত্যন্ত করুণ)
- আয় তব সহচরী (আমাদের দেশে সঙ্গীত শিক্ষা রীতিতে এই গান দিয়ে শুরু করতে হয়)
- বড়ো আশা করে এসেছিগো (আ .... হ ....। অসাধারণ লাগে যখন বাজাই )
- পুরানো সেই, দিনের কথা ( এখনো তুলছি ...)
- মোর ভাবনারে, কি হাওয়ায়, মাতালো (কে বলে বাঁশীতে কেবল করুণ সুর তোলা যায়?)
বাঁশী আমাকে একটা অন্যভুবনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন। আমাকে প্রশান্ত করে তোলে। কিছুদিন আগে একটা মানসিক যন্ত্রনার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো। তখন বাঁশী আমার উপর বিশাল প্রভাব ফেলে। যন্ত্রণা সারিয়ে দেয়।
শেষ করি একটা মজার কাহিনী দিয়ে। একদিন মতিঝিলে রাস্তায় বাঁশী হাতে হাঁটছিলাম। এক লোক আমাকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "ভাই, এটা কি বাঁশী?"
যে পোস্ট দেখে এই ব্লগ লেখার ইচ্ছে জাগলো Click This Link