তখন আমার ভরা যৌবনের অবারিত আবাহন। সদ্য কৈশোর পেরিয়ে উড়ছি শুধু। বল্গা হরিণের মত ছুটছি অবিরাম। কলেজের উদ্দেশ্যে বের হই প্রতিদিন, কিন্তু কলেজে আর যাওয়া হয়না খুব বেশি। বন্ধু-বান্ধ, আড্ডা, ছাত্র রাজনীতির চক্রে আবর্তিত হতে থাকি শুধু। সাথে চলার চাচাতো ভাই জিস্কু ,শামিম আর ক্লোজ বন্ধুদের অনেকেই ইউরোপ পাড়ি দিছে উন্নত জীবনের আশায় । মন খুলে মনের কথা না বলতে পারা মনের মানুষের অভাবে আমিও ছন্নছাড়া , হতাশ যাকে বলে কষ্ট বিলাসে ডুবে থাকি। বাড়িতে খবর হয়ে গেছে, পড়াশোনা আমাকে দিয়ে আর হবে না। বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো বাড়ি থেকে। কিসের ভিতর দিয়ে যেন পাসপোর্ট বানিয়ে ফেললাম, ভিসা রেডি করলাম এবং হুট করেই একদিন ফ্লাইট ফিক্সড হয়ে গেল। খুব একটা ভাবাবেগ হলো না আমার।
দোস্ত, সৌদি যাইতেছি,কয়দিন পরেই আয়া পড়ুম-এমন একটা ভাব করে ঠিক ঠিক একদিন এয়ারপোর্টের উদ্দৈশ্যে বাড়ি ছাড়লাম। যেন বাড়ি থেকে থানার মোড়ে যাচ্ছি, যখন ইচ্ছে ফিরে আসবো। আমার আর ফেরা হয়নি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এখন আমি পরবাসী।
দিনে দিনে সংসার হয়েছে, ঘর আলো করে সন্তানরা এসেছে। বটগাছের মত নির্ভরতার জায়গা বাবা, তিনিও চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সময়ের সাথে সাথে কত কী হয়ে গেল, শুধু আমার আর ঘরে ফেরা হলো না।
চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আমার কখনো কোন আক্ষেপ ছিল না, এখনো নেই। আলহামদুলিল্লাহ, বেশ ভাল আছি। মাঝে মাঝে আয়নায় চোখ পড়লে চমকে উঠি, বয়স হয়ে যাচ্ছে। সময় পরিক্রমায় আমরা একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কারোই আর ফেরা হবে না পেছনের সময় গুলোতে। সবার ক্ষেত্রেই একই রকম, যায় দিন ভাল...
কথাগুলো লেখার কারণ হলো, সদ্য চাকরিতে ঢোকা এক ছোট ভাই আক্ষেপ করে স্টুডেন্ট লাইফের আরাম আয়েসের কথা বলছিল। দায়িত্বের বোঝা কাঁধে চাপলে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে খুব কষ্ট হয়। ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে আমারো সেই সময়ের কথাগুলো মনে পড়ে গেল আবার। আমাদের ফেরা হয় না, আমরা শুধু এগিয়ে যাই, কখনো ইচ্ছায়-আবার কখনো অনিচ্ছায়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২৮