প্রকৃতির স্বাভাবিক কিছু নিয়ম-কানুন আছে। এই নিয়মের ভেতর যারা চলে, তারা সাধারণ মানুষ। রাতে ঘুমায়, সকালে উঠে, সারাদিন কাজ করে, টাকা উপার্জন করে এবং দিনশেষে নীড়ে ফিরে যায়। ফের ঘুম-ফের জাগা ব্যস্ততা।ৱ
দুই শ্রেণীর মানুষ এই নিয়মের ব্যতিক্রম করে-
এক. যারা ট্যালেন্টেড একং ক্রিয়েটিভ। ট্যালেন্টেড বলছি এই কারণে,এরা একই ধরণের কাজ ভিন্নভাবে করতে পারে অথবা প্রথাগত নিয়মের বাইরে নতুন কিছু সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানী, শিল্পী, গায়ক, নায়ক ইত্যাদি ইত্যাদি এই শ্রেণীর।
দুই. এরা সময়ের উল্টো পথের পথিক, আমরা যাদেরকে সমাজের আবর্জনা বলি। ব্যতিক্রম কিছু করতে গিয়ে এরা পথ থেকে বিপথে চলে যায়। প্রতিটি সমাজের উত্থান এবং পতনে এই দুই শ্রেণীর মানুষের অবদানই সবচেয়ে বেশি। তথাকথিত নেশাখোর নায়ক-গায়করাই মূলত এই শ্রেণীর প্রতিনিধি।
এই দুই শ্রেণীর বাইরে যারা, তারাই সাধারণ শ্রেণী। এই শ্রেণী ট্যালেন্টেড/ক্রিয়েটিভ শ্রেণীর সৃষ্টিশীলতা দ্বারা উপকৃত হয় এবং আবর্জনা শ্রেণী দ্বারা বিভিন্ন ধরণের ঝামেলার মুখোমুখি হয়।
সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত মডেল (!) জ্যাকুলিন মিথিলার আত্নহত্যার বিষয়টি নিয়েই এই লেখা। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার শিরোনাম হওয়ার জন্য এই মেয়ে ফেসবুকে যা খুশি তাই করেছে। জ্যাকুলিন মিথিলার মত আরো কিছু সো কল্ড মডেল আছে এই তালিকায়। মূল মিডিয়ায় জায়গা পাওয়ার জন্য পুরো কালচারটাই এরা নষ্ট করে ফেলেছে এবং ফেলছে। কুরুচিপূর্ণ ড্রেসে ফেসবুক লাইভে এসে কিশোর-তরুণদের সুড়সুড়ি দিয়ে মাথা নষ্ট করাই এদের মূল কাজ এবং এই সস্তা জনপ্রিয়তাকে (!) পুঁজি করেই এরা উপরে উঠার স্বপ্ন দেখছে। এতে কাজের কাজ আসলে কিছুই হয়না। সাময়িক দু-একটি ভাল সুযোগ হয়তো আসতে পারে, কিন্তু এই জনপ্রিয়তার পারসিসটেন্সি থাকেনা। শরীর আর ব্যক্তিত্ব বিকোতে বিকোতে একটা সময় এদের হুঁশ হয়, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। এরা প্রচন্ড রকমের ফ্রাস্টেটেড হয়ে পড়ে, ফলে আশ্রয় খোঁজে নেশার ভিতর। উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরার কারণে পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয় স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এরা অন্ধকারের পথে পা বাড়ায়। সেই অন্ধকার এক সময় আরো গাঢ় হয়। শরীরের নেশা কেটে গেলে মৌমাছিরাও পালিয়ে যায়। অনবদ্য নিঃসঙ্গতা আর অসহায়ত্বের একমাত্র সমাধান তখন আত্নহনন। মিথিলার ক্ষেত্রেই সেটাই হয়েছে।
এরকম ঘটনা আরো ঘটবে আমাদের দেশে। জ্যাকুলিন মিথিলা এর শুরু মাত্র। একটা বাংলাদেশী মেয়ের এরকম বখে যাওয়াটা এ্যালার্মিং। সবাইকে অনুরোধ করবো, আপনার মেয়ে, বোন, বান্ধবী, প্রেমিকাকে সামলে রাখুন, আগলে রাখুন। পারিবারিক বন্ধনটাকে দৃঢ় করুন। আমরা যাতে ভুলে না যাই এটা বাংলাদেশ এবং আমাদের দেশে এরকম নোংরামি এখনো স্বাভাবিকতা পায়নি। যতদিন পর্যন্ত জ্যাকুলিন মিথিলাদের এরকম চলাফেরা উচ্ছৃঙ্খলতা হিসেবে বিবেচিত হবে, ততদিন পর্যন্ত এরকম অস্থিরতা চলতেই থাকবে, আত্নহননও থামবেনা। সুতরাং, আমাদের উচিত হবে সময়ের বিপরীতে চলার চেষ্টা না করা। সব কাজ সবার জন্য না, সবার মডেল হবার দরকারও নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৯