ঈদ আসে, ঈদ যায়। আগের মত আমেজ পাই না। বয়সের সংগে ঈদের আমেজও হারিএ গেছে। ছোট বেলার সবকিছুর মত ঈদটাও ভাল ছিল। বিশেষ করে ঈদের আগের দিনের রাত। নতুন জামা, প্লাস্টিকের নতুন ডিজিটাল ঘড়ি, নতুন টুপি... সালামি হিসেবে নতুন কড়কড়ে পাঁচ টাকা দশ টাকার নোট, দল বেধে ঘোরাঘূরি, পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়ী বাড়ি গিয়ে দলবেঁধে খাওয়া-আরও কত কী! বড় হয়ে গেলে এই সবে আর মজা মিলে না, তবুও পরিবারের সাথে থাকলে ঈদের আনন্দের ঘাটতি হয় না। ভিনদেশে এর কিছুই নাই। ভিনদেশে ঈদ মানেই মন খারাপের দিন।
গেলো ঈদ-উল-ফিতরে বাড়িতে ছিলাম। ঈদে আমার উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল, ছেলেবেলায় যখন ঈদগায়ে নামাযে যেতাম বাবা হাত ধরে রাখতো যেন পড়ে না যাই। আর গত ঈদে বাবা ঈদগাতে গেল আমার কাঁধে হাত রেখে, জামাত শেষে বাড়িতে নিয়ে আসলাম আমার কাঁধে ভর দিয়েই। সময় পেরিয়ে আজ আমিও বাবা হয়েছি।
ঈদের আগের রাতে মেয়ের উচ্ছ্বাক কাছ থেকে দেখেছি। মেহেদি পরা নিয়ে সিনিয়র আপু-ফুফু-চাচিদের কাছে ছোটাছুটি, কখন কোন জামা পড়বে সেটা নিয়ে দুনিয়ার দ্বিধা, সমবয়সীদের সংগে কত পরিকল্পনা। একটু একটু পরই এসেই বলতো, বাবা এটা আনো, ওটা নাই, এটার এরকম কেন, ওটার রং এমন কেন.... বাবা জামার সাথে মিল করে চুরি এনে দাও, লাল রঙের লিপস্টিক কই? এমন করতে করতে সে আমার সাথে ৬/৭বার বাজারে এসেছে।
সবকিছু যখন ঠিকঠাক, তখন মাঝ রাত পর্যন্ত কী প্ল্যানিং তার! কোন জামার সাথে কি ম্যাচ করবে, কোন জামা পরে হাবিবাদের বাড়ি যাবে, কোনটা পরে রাইসাদের বাড়ি, কত শত আয়োজন! সন্ধায় ফোন করলাম বাবা ,মার সাথে কথা বলতে তাদের কথা আর শুনবো কি, মেয়ের কথাই ফুরায় না! গরু নিয়ে তার পেরেশানির শেস নাই! গরু ঘুমায় না কেন, মশায় কামড়ালে কি উপায়, গরুকে বালিশ দেয়া নিয়ে সবার সাথে ঝগড়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফোন রেখে তিন প্রজন্মের কথা ভাবছি। জীবন বড়ই আনন্দময়। পৃথিবীর সকল বাবা-মা আর তাদের সন্তানেরা ভাল থাকুক, ভাল থাকুক সমগ্র মানব জাতি। ঈদ মোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৭