আমার মেয়ে সিঁথির যখন প্রথম দাঁত ওঠে, তখন ও সব কিছুই কামড়ে দেখতে চাইতো। সুযোগ পেলে কামড় দিয়েই বসতো। আর কোনো কারণে কামড়াতে না পারলে কেঁদেই দিতো। ক্যামেরা কেনার পর আমার অবস্থাও হয়েছে সেরকম। ডিএসএলার পেয়ে দুনিয়ার সব কিছুর উপরই ক্লিক করে দিচ্ছি, কিন্ত ছবির কিছুই হচ্ছে না। যা তুলতে চাই, ছবি যেন গল্প বলে সেরকম কিছু, বাট তুলতে চাই এক আর হচ্ছে আরেক। তুলতে চাচ্ছি ছবি, হয়ে যাচ্ছে গবি। এ বিষয়ে আহামেদ ভাইকে আজ কয়দিন যাবত বিরক্ত করছি অনেক, এটা কি অটা কি বলে ক্রমাগতই অস্থির করে ফেলছি বেচারাকে। উনি নেহায়েত ভদ্রলোক বলে একটুও বিরক্ত হচ্ছেন না বরং দারুণ করে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, বিভিন্ন বেসিক জিনিস শেখাচ্ছেন আমাকে।
আশেপাশে যা পাচ্ছি তারই ছবি তুলছি। মানুষ, গাড়ি, বিল্ডিং, বালু, আকাশ, গাছপালা যা পাই ক্লিক করে দিই। আরব দেশে মানুষের ছবি তুলে মজা নাই। সুন্দরি পরীরা সব বোরখার নিচে। আর পুরুষরা সব যুদ্ধংদেহী বেশে জোব্বা পরিহিত। ক্যামেরা কেনার পর যা বুঝলাম তা হলো, আসলে ফটোগ্রাফি কোনো সহজ বিষয় নয়। সুন্দর মনের সাথে ক্যামেরা চালানোতে ভাল দক্ষতা থাকতে হবে। ক্যামেরাই এখনো বুঝে উঠতে পারিনি, সুতরাং ভাল ছবি তোলা তো অনেক দূরের ব্যাপার। কখনো আইএস বাড়িয়ে ছবি তুলি, তোলার পর দেখা যায় সব কিছুই কালো অন্ধকার। আবার কখনো বা সাদা, কখনো ঝাপসা!!
এত এত সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে জিগাইলাম স্বপ্নবিলাসকে, সে বললো ভাই আমি কোনোদিন ডিএসএলআর চালাই নাই । দুই কাঠি সরস হয়ে সে আমাকে উল্টো একটা খোঁচা দিলো ভাই,আপনার ক্যামেরা সুইচ কয়টা টোটাল গুণছেন এখনো? আসলেই তো, গুইণা তো দেখি নাই! অবশেষে গুণে দেখলাম, সামনে পিছনে মোট ২৪ টা।
এরপর জিজ্ঞেস করলাম, কাল্পনিক ভালবাসাকে, ভাই ক্যামেরাতে ২৪টা সুইচ এখন কোনটা টিপলে কি হবে? একটা সুইচেও কোন লিখা নেই। কাভা ভাই বলে , ভাই আপনি এখন আমার থেকে এতো দূর আছেন কেমন করে আপনারে আমি টিপাটিপি শিখামু? অশ্লিলতার ইঙ্গিত পেয়ে আর কথা বাড়াইলাম না।
ব্যক্তিগত অনুভূতি আমি এই ক্যামেরা দিয়েই ছবি তুলে প্রকাশ করতে চাই । জানি যদিও বিষয়টা সহজ নয়। তবুও আমি যেভাবে পৃথিবীকে দেখি সেই চোখ দিয়েই ছুবি তুলবো শুধুই নিজের আনন্দের জন্যেই । ফটোগ্রাফির ওপরে ধারনা নিতে যেয়ে অনলাইনে কয়দিন যাবত বেশ পড়াশোনা করছি শিক্ষক নামে এক স্কুলে সেখানে এক কোর্সে পড়া কয়টা লাইন আমার মনে ভীষণ ভাবে গেঁথে গেছে - “আশেপাশের পৃথিবীকে একটু অন্যরকম ভাবে দেখা, একটু নিজের মতো করে দেখা – এই ব্যপারটা যার মধ্যে আছে, তার মধ্যেই একজন ফটোগ্রাফার আছে। অনেকে হয়তো ক্যামেরা হাতে নেয়ার পর ব্যপারটা উপলব্ধি করেন। অনেকের হয়তো সেই সুযোগ হয় না – এক জীবন কেটে যায় সৃজনশীল একটা সত্ত্বা নিয়ে, যার প্রকাশ ঘটেনা কখনও।“
ফেসবুকে রাজনৈতিক লিখালিখির কারনে আমার অনেক বন্ধু অভিযোগ করে থাকেন কেন আমি রাজনিতিক পোস্ট করি, প্রেম, কবিতা, গল্প নিয়ে কেন শুধু থাকি নাহ। ভাবছি সেই সব বন্ধুদের সাথেই তাল মিলিয়ে লুতুপুতু করবো। লিখা দিয়ে না হোক, নিজের তোলা ছবি দিয়েই গল্প বলবো। তবে তাই হোক...