নিয়ন্ত্রণহীন মাদকের বিস্তৃতি এখন দেশজুড়েই, ক্রমেই হয়ে উঠেছে সর্বগ্রাসী। ভয়াল মাদক তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব- সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন পর্যন্ত। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে বাবা-মা, ঘনিষ্ঠ স্বজন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন, নেশাখোর পিতা মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার ক্রোধে নিজ সন্তানকে খুন করছে অবলীলায়। নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা, মাকে জবাই করা, আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার মতো মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি।
ইয়াবা’ নিয়ে অনেক আলোচনা চারদিকে| এটি আসলে কী? ‘ইয়াবা’ বলে দুটো জায়গা আছে পৃথিবীতে একটা লাগোসে, আরেকটা বুরকিনা ফাসোতে| এ ড্রাগের নাম কিন্তু সেসব জায়গা থেকে আসেনি| থাইল্যান্ডে এ ড্রাগের ব্যবহার ও উৎপাদন বেশি বলে এর নাম থাই ভাষায় ‘ইয়াবা’| এর মানে ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ওষুধ| অনেকে একে বলে নাজি স্পিড বা শুধু স্পিড| ১৯৭০ সালে এ ওষুধের মূল উপাদান থাইল্যান্ড এবং সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ করা হলেও থাইল্যান্ডের ট্রাকচালকদের মধ্যে এর বহুল ব্যবহার ছিল| কারণ ইয়াবা খেলে ঘুম আসে না, রাতভর ট্রাক চালানো যায়| কিছু ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর সবাই টের পেল যে রাতভর ট্রাক চলে বটে, তবে তা পথে নয়, চলে খানাখন্দ আর ব্রিজ ভেঙে নদীতে| একসময় থাইল্যান্ডে এ ড্রাগ পেট্রলপাম্পে বিক্রি হতো|
ইয়াবার মূল উপাদান মেথ্যামফিটামিন| সঙ্গে থাকে উত্তেজক পদার্থ ক্যাফিন| ২৫ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম মেথ্যামফিটামিনের সঙ্গে ৪৫ থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিন মিশিয়ে তৈরি এ ট্যাবলেটের রং সাধারণত সবুজ বা লালচে কমলা হয়ে থাকে| এর নানা রকম ফ্লেভার আছে| আঙ্গুর, কমলা বা ভ্যানিলার স্বাদে একে অনেকে ক্যান্ডি বলে ভুল করবে| এ কারণে এগুলো সহজে পরিবহন ও লুকিয়ে রাখা যায়| এর আকৃতি ড্রিঙ্কিং স্ট্রর ছিদ্রের সমান| স্বাদ-গন্ধ থাকার ফলে বিক্রেতারা সহজেই তরুণ-তরুণীদের এর ব্যাপারে আকৃষ্ট করতে পারে এবং তারা একে ক্ষতিকারক মনে করে না| না করারই কথা| লজেন্স ভেবে অনেকে এটাকে সহজেই খেয়ে নেয়|
এবার জানা যাক মেথ্যামফিটামিনের ইতিহাস| ১৯১৯ সালে জাপানে সর্দি আর নাক বন্ধের ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার করা হতো| একসময় মেদভঁুড়ি কমানোর জন্যও এ জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, ব্রিটেন, জার্মানি ও আমেরিকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা জেগে থাকতে এবং ক্লান্তি দূর করতে এটা খেত| যুদ্ধের পর এ ওষুধের বিশাল মিলিটারি স্টক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের হাতে| ১৯৫০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় এ ড্রাগটা আইনসংগতভাবে তৈরি হতো| পরে ছাত্রছাত্রী, ট্রাকচালক ও অ্যাথলেটরা এর যথেচ্ছ ব্যবহার করতে থাকলে কুফল সম্পর্কে জানা যায়| ১৯৭০ সালে বিশ্বব্যাপী এটা নিষিদ্ধ করা হয়|
এখন এ ড্রাগের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় মিয়ানমারে এবং এর বিরাট বাজার হলো থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ| আমেরিকাসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও এর ছোবলের বাইরে নেই| দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও এর ব্যবহার বাড়ছে দ্রুত| পার্টি ড্রাগ হিসেবে এর ব্যবহার হয় এবং একসট্যাসি নামের অন্য একটি ড্রাগের সস্তা বিকল্প হিসেবে এটি আমেরিকায় ড্রাগ অ্যাডিক্টদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে|
ইয়াবা প্রধানত খায়| অনেকে এটা পাতলা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করে তাপ দিয়ে পুড়িয়ে ধোঁয়া সেবন করে| বেশি আসক্তরা শিরাপথেও এটা নেয়|
ইয়াবার প্রচণ্ড উত্তেজক-ক্ষমতা আছে এবং তা অনেকক্ষণ থাকে বলে কোকেনের চেয়ে অ্যাডিক্টরা এটা বেশি পছন্দ করে| ইয়াবা খেলে সাময়িক আনন্দ ও উত্তেজনা, অনিদ্রা, খিটখিটে ভাব ও আগ্রাসী প্রবণতা বা মারামারি করার ইচ্ছা, ক্ষুধা কমে যাওয়া ও বমি ভাব, ঘাম, কান-মুখ লাল হয়ে যাওয়া এবং শারীরিক সঙ্গের ইচ্ছা বেড়ে যায়| তবে এ সবই অল্প কয়েক দিনের বিষয়| বাড়ে হূৎস্পন্দনের গতি, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শরীরের তাপমাত্রা| মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলোর ক্ষতি হতে থাকে এবং কারও কারও এগুলো ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়| কিছুদিন পর থেকে ইয়াবাসেবীর হাত-পা কাঁপে, হ্যালুসিনেশন হয়, পাগলামি ভাব দেখা দেয়, প্যারানয়া হয়| হ্যালুসিনেশন হলে রোগী উল্টোপাল্টা দেখে, গায়েবি আওয়াজ শোনে| আর প্যারানয়াতে ভুগলে রোগী ভাবে, অনেকেই তার সঙ্গে শত্রুতা করছে| তারা অনেক সময় মারামারি ও সন্ত্রাস করতে পছন্দ করে| কারও কারও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, খিঁচুনি হয়| খিটখিটে ভাব, অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুর, নার্ভাসনেসে ভুগতে থাকে ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিরা|
স্ম্বরনশক্তি কমে যায়, সিদ্ধান্তহীনতা শুরু হয় এবং কারও কারও সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়| অনেকে পাগল হয়ে যায়| লেখাপড়ায় খারাপ হয়ে একসময় ডিপ্রেশন বা হতাশাজনিত নানা রকম অপরাধ প্রবণতা, এমনকি আত্মহত্যাও করে থাকে| হার্টের ভেতরে ইনফেকশন হয়ে বা মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে অনেকে মারা যায়| অনেকে মরে রাস্তায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে| কেউ কেউ টানা সাত থেকে ১০ দিন জেগে থাকে, তারপর ড্রাগ ওভার ডোজেও মরে যায়|
যাদের টাকার জোর কম তারাও হাতুড়ে পদ্ধতিতে তৈরি করছে ভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। বিভিন্ন কাশির সিরাপের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তৈরি করা এ নেশাদ্রব্য ঝাঁকি বা 'ঘুটা' নামেই বেশি পরিচিতি। সহজলভ্য মদ-গাঁজা আর নিজেদের তৈরি ঘুটার পাশাপাশি অননুমোদিত যৌন উত্তেজক নেশাজাতীয় কোমল পানীয় (এনার্জি ড্রিংক) দ্বারাও নেশা করছে তরুণ-তরুণীরা। মূলত যে কোনো উপায়ে তরুণ-তরুণী নেশার সঙ্গে যুক্ত থাকছে এবং এটাকে 'আধুনিকতা-ফ্যাশন' বলেও মনে করছে। নেশার সর্বগ্রাসী থাবা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডি পর্যায়েও মাদকের ভয়াল অভিশাপ নেমে এসেছে। সহজলভ্যতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, কালো টাকার আধিক্য, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ ইত্যাদি কারণে মাদকাসক্তের মিছিল দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
দেশে বর্তমানে ৩২ ধরনের মাদক সেবন চলছে। এ পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন নামের যেসব মাদক উদ্ধার হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- হেরোইন, গাঁজা, চোলাই মদ, দেশি মদ, বিদেশি মদ, বিয়ার, রেক্টিফাইড স্পিরিট, কেডিন, ফেনসিডিল, তাড়ি, প্যাথেডিন, ব্রুপ্রেনরফিন, টিডি জেসিক, ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড, ওয়াশ (জাওয়া), বনোজেসিক ইনজেকশন (বুপ্রেনরফিন), টেরাহাইড্রোবানাবিল, এঙ্এলমুগের, মরফিন, ইয়াবা, আইসপিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, মিথাইল, ইথানল ও কিটোন। এ ছাড়া ইনোকটিন, সিডাঙ্নিসহ বিভিন্ন ঘুমের ট্যাবলেট, জামবাকসহ ব্যথানাশক ওষুধ কিংবা টিকটিকির লেজ পুড়িয়ে কেউ কেউ নেশা করে থাকে। এসব দ্রব্যের নেশাজনিত চাহিদা থাকায় বেশির ভাগই ভেজাল উৎপাদিত হচ্ছে দেশেই।
মাদকাশক্তদের মতে অন্যান্য মাদকের তুলনায় ইয়াবা অধিকতর বেশী কার্যকর এবং উত্তেজক হওয়ায় এর ব্যাবহার এবং চাহিদা বেশী। এমনকি হেরোইনের চেয়েও বেশী। সবচেয়ে বেশী উদ্বেগের বিষয় হল ইয়াবা ব্যবহার বাংলাদেশের শিক্ষিত অভিজাত শ্রেণীর থেকেই শুরু হয়েছে এবং এখনো চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই নি¤œবিত্ত বা নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানূষ উচ্চ বিত্ত শিক্ষিত সমাজকে অনুকরন অনুসরন করে থাকে আর সেই উচ্চ বিত্ত শিক্ষিত সমাজ যদি অসামাজিক বা অমানবিক কর্মকান্ড করে থাকে তা হলে অতি সহজেই তা নি¤œবিত্ত বা নি¤œমধ্যবিত্ত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুর দিকে এদেশের অভিজাত এলাকার বিভিন্ন নাইট ক্লাব সহ আবাসিক হোটেল গুলোতে ইয়াবার ব্যাবহার হলেও বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত্য অঞ্চল সহ নিম্নমধ্যবিত্ত বা নিম্নশ্রেণীর দিনমজুর পর্যন্ত ইয়াবায় আসক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুলের ছোট ছোট ছাত্রদের কাছে ইয়াবা বিক্রয় করা হয় বলে পত্র পত্রিকায় এসেছে।
বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটি অতি সম্ভাবনার দেশ। বর্তমানে প্রায় ১৫ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী ই যুবক এবং কর্মক্ষম, যেখানে অনেক উন্নত দেশেই বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেশী এবং কর্মক্ষম লোকের অভাব। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে গত ২০০৭/৮ সাল থেকে সারা বিশ্ব একটি অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রাšত হয়েছে যেখানে বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশে তার তেমন কোন ছোয়া লাগেনি। তার একটি মাত্র কারন আমাদের যুবসমাজের একটি বড় অংশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন যা দিয়ে বিশ্ব মন্দাকে দুরে ঠেলে রাখা সম্ভব হয়েছে। এবং আরেকটি যুব সমাজ দেশে পরিশ্রম করে উৎপাদিত পন্য বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। এই যুব সমাজ যদি ইয়াবা বা মাদকের কারনে ধ্বংশের দিকে ধাবিত হয় তবে দেশের অ¯িতত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। আজকের যুব সমাজ তথা বাংলাদেশ কে একটি উন্নত দেশে পরিনত করে বিশ্বায়নের স্বাদ নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে ইয়াবা(মাদক) পাচার ও ব্যাবহার বন্ধের কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশ তথা ভারত বর্ষের সভ্যতা অতি প্রাচীন। বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ কারনে আলাদা আলাদা গোষ্ঠি এই এলাকাকে শাসন ও শোষন করলেও বর্তমানে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট যা অনেক রক্ত, জীবন ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। একই সাথে স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে অনেক ব্যার্থতা ও অনেক অর্জন থাকলেও এ জাতির ভবিষ্যৎ অত্যšত সু-প্রসন্ন বলা যায়। এমতাবস্থায়; মাদক দ্রব্য বা ইয়াবার ছোবলে এদেশের যুব সমাজ ধ্বংশ হলে বাঙালির হাজার বছরের অর্জণ ধুলায় মিশে যাবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তিরিশ লক্ষ্য শহীদের আত্মার অসম্মান করা হবে। কাজেই ইয়াবার মত অভিশাপ কে চিরতরে দুর করতে সরকারী,বেসরকারী ও সামাজিক ভাবে ইয়াবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে হবে।
ইয়াবার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে চিরতরে বন্ধ করতে হলে দেশের সর্বস্তরের মানুষের সর্বাত্বক অংশগ্রহনে যে কাজগুলো করতে হবে তা এ ভাবে বলা যেতে পারে যেমন:
১. মাদক দ্রব্য আইন ১৯৮২ মোতাবেক ইয়াবা বা এ জাতীয় ড্রাগ উৎপাদন,পাচার ও বিক্রয়ে সর্বোচ্চ শান্তির বিধান মাত্র ১০ বছরের জেল অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা দুটোই রাখা হয়েছে। কিšতু যেহেতু ইয়াবা সেবনে মানুষের মৃত্যু হয় এবং শুধুই মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় তাই ইয়াবা উৎপাদন, পাচার,বিক্রয়, ও ব্যাবহার সহ সংশ্লিষ্টতার কারনে সর্বোচ্চ শা¯িত মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত।
২. বাংলাদেশের সীমাšত এলাকা ১০০% সুরক্ষীত রাখতে হবে।
৩. দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আইন প্রয়োগের ব্যাপারে ১০০% নিশ্চিত হতে হবে।
৪. ইয়াবা বা মাদক উৎপাদন, পাচার,বিক্রয়, ও ব্যাবহারের অপরাধের শাস্তির মাত্রা অত্যন্ত কঠিন ও ভয়াবহ রেখে বিশেষ আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৫. বাংলাদেশে আইন প্রয়োগের খে¦ত্রে দুনীতি একটি বড় বাধা,তাই দুনীতি রোধে বিশেষ আইন প্রণয়ন সহ সরকার কে বিশেষ ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে।
৬. ইয়াবা বা যে কোন মাদক দ্রব্য ব্যাবহারের কুফল সমন্ধে পরিষ্কার ধারনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বই হইতে উচ্চতর শিক্ষার বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে দেশের প্রতিটি নাগরিক মাদক ব্যাবহারের ভয়াবহতা সম্বন্ধে অবগত হয়ে সতর্ক হতে পারে।
৭. সরকারী ও বেসরকারী ভাবে সভা-সমাবেশ,সেমিনার,আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ইয়াবার ভয়াবহতা ও এর প্রতিকারের ব্যাপারে অবগত করতে হবে। এ ব্যাপারে ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং এনজিও বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে।
৮. স্থানীয় সরকার যেমন:বিভাগ,জেলা,থানা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড পর্যন্ত্য সমস্ত প্রশাসন ও জন প্রতিনিধি কে স্ব স্ব এলাকায় মাদক দ্রব্য উৎপাদন,বিক্রি ও ব্যাবহারের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। সেই সাথে দায়িত্ব পালনে ব্যার্থতার জন্য প্রত্যেক এলাকার প্রতিনিধিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এটা এই জন্য যে,তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধিরা স্ব স্ব এলাকার ব্যাপারে বেশী অবগত থাকেন।
৯. দেশের শহর এলাকায়, বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে সম¯ত নাইট ক্লাব, ইয়ুথ ক্লাব, আবাসিক হোটেল, ষ্টেশন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পার্ক ইত্যাদি সহ যে সব এলাকায় যুবকদের বিচরন বেশী সেই সব এলাকা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরে রাখতে হবে।
১০. পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন মানুষের সুস্থ ভাবে বেচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ন, তাই এ ব্যাপারে তৃণমুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে উচ্চতর শিক্ষালয় পর্যšত্য ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষার মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে উৎসাহিত করার ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে।
১১. পরিবারের ছেলে-মেয়েদেরকে শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়স পর্যšত্য রক্ষনাবেক্ষন, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মধ্যে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন বিষয়ে পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের কে সরাসরি অথবা পূ¯তকের মাধ্যমে ধারনা দেয়া যেতে পারে। কারন বেশীর ভাগ যুবক-যুবতী ভুল পথে যাওয়ার ও মাদকাশক্ত হওয়ার পেছনে পিতা-মাতা ও অভিভাবকের অসতর্কতাই দায়ী।
১২. লেখাপড়ার পাশা পাশি প্রতিটি শিশু কে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার দিকে উৎসাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সমাজ ও সরকারকে বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে।
১৩। ৩য় বা ৪র্থ শ্রেনী থেকেই শরীরচর্চা বা সূস্বাস্থ গঠনে করনীয় বিষয়ে বিশেষ পুস্তক পাঠ্য বইয়ের সাথে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তা হলে প্রতিটি শিশু সু-স্বাস্থ্য গঠনের পরিপন্থী কোন কাজ বা প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহনে উৎসাহিত হবেনা। তবে এই ব্যাপারে দেশের প্রতিটি শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনতে হবে।
১৪. প্রতিটি শিশু ও যুবক-যুবতীকে পারিবারিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের মনের ইচ্ছাকে স্বাধীন ভাবে ব্যাক্ত করার সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন আচরণ করতে হবে।
১৫. ইয়াবায় আসক্তদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করতে হবে।সরকারী,বেসরকারী উদ্দোগে আসক্ত ব্যাক্তিদের সুস্থ করে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের কে বুঝাতে হবে যে তারাও পরিবার ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ
১৬. দক্ষিন ও দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার দেশগুলো সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে ইয়াবা বা মাদক পাচার বন্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সব অপরাধমুলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।
১৭. জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইয়াবার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতায় প্রচারাভিযান চালানো উচিত।
সব শেষে এতটুকু বলতে চাই, যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার সমস্যা এসেছে, আর মানুষ সম্মিলিত ভাবে সেই সব সমস্যা সমাধান করে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেশ ও জাতি গোষ্ঠির স্বাভাবিক জীবন যাপন নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ইয়াবা ও তেমনি একটি মারাত্বক সমস্যা বা ব্যাধি,তবে আমি বিশ্বাস করি অচিরেই আমাদের সবার সচেতনতা ও স্ব স্ব দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার ও বিক্রয়কারীদেরকে নিধনের মাধ্যমে যুব সমাজ কে এর হাত থেকে বাচাতে পারবো এবং সুস্থ সমাজ ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বাভাবিক জীবন যাপন নিশ্চিত করতে পারব।
এই লিখাটি আমার বন্ধু Ashrafuzzaman Minhaz এর লিখা। মিনহাজ ভাই কানাডাতে নিজেকে স্থায়ীভাবে স্যাটেলড করেছে। বর্তমানে উনি কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে সরকারী নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উপর পিএইচডি করতেছে যার উদ্দেশ্যে হলো বাংলাদেশ, নেপাল, ইন্ডিয়া ইত্যাদির মত উন্নয়ননশীল দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করা। উল্লেখ করা যেতে পারে মিনহাজ ভাইয়ের গবেষণার বিষয় হলো, গবেষণার ক্ষেত্রের সংগে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগসমুহ জড়িত। তার গবেষণার ফান্ডিং করছে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি। কানাডার প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী জো অলিভার, পরিবেশ মন্ত্রী পিটার কেন্ট, অভিবাসন মন্ত্রী জেসন কেনি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সংগে কাজ করেছেন চট্টগ্রামে।
মিনহাজ ভাইকে আমি বললাম,মিনহাজ ভাই আপনি আমাদের দেশের ব্লগ গুলিতে কেন লিখেন না ? মিনহাজ ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে , আমার ভাল লাগে না, আমি চাইও না" উনার ব্যাপারে আরেকটা কথা বলে নেওয়া উচিত এই মিনহাজ ভাই বিদেশী ব্লগ আর পএিকায় লিখা লিখি করে থাকে। তার সমস্ত লিখা গুলিই অনেক তথ্যভিক্তিক ও গনসচেতন মূলক লিখা। কিন্ত আমার ভাল লাগে না তার এই সুন্দর লিখা গুলি আমাদের দেশের ব্লগ গুলিতে না আসাতে। আমি চাই তার এই লিখা গুলি পড়ে মানুষ উপকিত হোক, তাই মিনহাজ ভাইয়ের অনুমতি নিয়েই তার একটা লিখা এখানে পোস্ট করলাম আমি। ইনশাল্লাহ অচিরেই তাকে দিয়ে সামুতে একটা নিক খুলিয়ে ফেলবো।
মিনহাজ ভাই যেমন মেধাবী তেমনি খুবই সাধারণ এবং আমোদ প্রিয় ছেলে। সবার সাথে খুব সহজেই মিশে যেতে পারে। মিনহাজ ভাই সহৃদয়বান, দৃঢ়চেতা, পজিটিভ এবং উৎসাহী, বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন ও এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় এবং প্রগতিশীল একজন মানুষ। মিনহাজ ভাই তাদেরই একজন যারা সব সময় জীবনের মানে খুঁজতে ব্যস্ত থাকে। আশা করি মিনহাজ ভাই তার জ্ঞান, মেধা আর কর্ম দিয়ে আমাদের দুঃখী এই দেশটার ভাল কিছু করবে। তার দীর্ঘ আয়ু আর সুস্থ জীবন কামনা করছি। মিনহাজ ভাইর লিখাটি Click This Link পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৪৪