হঠাত্ আব্বাজানের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল!
--এই রেডি হ মেয়ে দেখতে যাবি।
--মেয়ে দেখব মানে?
--তুর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবি।
--আব্বা আপনি এসব কি বলতেছেন।বিয়ে করব মানে?আমার তো এখনো বিয়ের বয়সই হয়নি।
--আচ্ছা তুর বয়স কত হয়েছে শুনি?
--এইতু ১৮ বছর ৭/৮ মাস হবে।
--মেয়েদের যদি ১৮ বছরে বিয়ে হতে পারে তাহলে তুর হবে না কেন?ছেলে মেয়ে সমান অধিকার।সন্ধ্যার পরে যাবো যা গিয়ে রেডি হ!
-
-
আমার রুমে আইসা ভাবতাছি,আব্বা এতু ক্ষেপলেন কেন!কিছুই তো বুঝতেছি।এই বয়সে বিয়ে করলে বাকি জীবন অন্ধকার চোখ বুঝেই বলে দেওয়া যায়।আর বিয়েই যদি করি বউ আইনা খাওয়ামু কি!!আর মেয়েই কি বা এত কম বয়সের একটা ছেলেকে স্বামী হিসাবে মেনে নেবে।মেয়ের বয়সই কত সেটাও তু জানিনা।আমি পড়ালেখায়ও তেমন খারাপ না।আমার তেমন কোন বদ অভ্যাসও নেই।পাড়ার ভদ্র ছেলে প্রেম টেম ও করিনা,মেয়েদের পেছন পেছন ও দৌড়াই না তাহলে আব্বাজান কেন বিয়ে করানোর জন্য ক্ষেপলেন!! চিন্তায় চিন্তিত ভাব নিয়া গেলাম আম্মাজানের কাছে।
,,,
--আম্মা কি হইছে বলতো?আব্বা এসব কি বলতেছেন আমিতো কিছুই বুঝতেছিনা।
--এসব আমাকে বলে লাভ নেই বাবা!যা জানে তুর আব্বাই জানে।
--আচ্ছা সেই মেয়েটা কে সেটা জানো।
--না,তবে বলছে তার এক বন্ধুর মেয়ে।
--আচ্ছা বয়স কত,কিসে পড়ে,নাম কি এসব কিছু জানো?
--শুধু জানি তুর সাথেই পড়ে!আর কিছু জানিনা।
-
-
মাথা আমার আউলা যাউলা হওয়ার উপক্রম।কি করব কিছুই বুঝতেছিনা।আমার বাবা এক কথার মানুষ কথা এভায় সেবায় হয়না। কপালে শনির দশা থাকলে এই হয় বুঝি।এই ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম পাশের একটা ফার্মেসিতে ঘুমের ট্যাবলেটের জন্য।যা হবাব হবে এক সাথে ১২-১৪ টা খেয়ে পরে থাকব বাল। বললাম না শনির দশা,ফার্মেসি ওয়াল প্রেকসিপশন ছাড়া ঔষদ দিতে নারাজ।ডাবল টাকা দেওয়ার অফার করলাম তারপরও হালার বেটা দিলনা।কি আর করার রিক্সা নিয়ে তিন কি.মি দূরের একটা পরিচিত ফার্মেসি থেকে ২০ টা ঘুমের ট্যাবলেট নিলাম।তারপর বাসায় আইসা গুনে গুনে পনেরো টা ট্যাবলেটের খোলস ছাড়ালাম।পথমটা কিছু না ভেবে পানি ছাড়াই গিলে ফেললাম তারপর দ্বতীয়টা গিললাম এরপর তৃতীয়টা, সালার সময় পায় না আর এটা গলায় বেধে গেছে।রান্না ঘর থেকে ফ্রিজের পানি নিয়ে আবার রুমে আসলাম।পানি গ্লাসে চুমুক দিচ্ছি আর ভাবতেছি এগুলা করা কি ঠিক হচ্ছে।সবগুলো ট্যাবলেট যদি একসাথে খেয়ে পড়ে থাকি জিন্ধেগীতে আর চোখ খুলতে পারবো কিনা তাও সন্ধেহ আছে।আছমকা ধাক্কা খেয়ে জীবনের রিক্স নিতে পারিনা।আমি এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র না। এখানে আব্বার অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।এই ভাবতে ভাবতে বাকি ট্যাবলেট গুলো জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম।আর ভাবলাম,মেয়ে দেখতে যাবো বিয়ে তো আর করতেছিনা।তাহলে সমস্যা কি!
-
-
আস্তে আস্তে গোসল করে রেডি হতে লাগলাম।তিনটা ট্যাবলেটেই মারাত্বক ধরছে,চোখ দুটো বন্ধ হয়ে যেতে চাচ্ছে।তারপর ও আমি.......
.
অবশেষে সন্ধা বেলা রওনা দিলাম বাবার সাথে।আমি আমার এক ফ্রেন্ডকে সাথে নিতে চাইলাম কিন্তু আব্বার বারন থাকার কারনে তা আর হয়ে উঠল না।মেয়ে বাড়ি যেতে যেতে একটু সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল॥মেয়ে বাড়িতে যখন পৌচালাম তখন আমার অবস্তা এমন হল যে চোখ দুটো খুলে রাখা অসম্ববই হয়ে পড়ছে।এর আগেও কতবার একটা দুইটা ঘুমের ট্যাবলেট গিলেছি কিন্তু এভাবে তো এত ঘুমে ধরেনাই তাহলে আজ কেন এমন হচ্ছে।বললাম না শনির দশা।
-
রাত্রে খাওয়া দাওয়া হল হালকা কিন্তু আমি কি খাইছি ঘুমের ঘুরে নিজেই জানিনা।খাওয়া দাওয়া করার পর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটু গা এলাতেই কখন যে চোখ বন্ধ হয়ে গেল নিজেই জানিনা।তারপর আর আমার নাগাল কে পায়।আব্বা ঠিক ই বুঝেছিলেন আমি কিছু একটা খেয়েছে।বোধ হয় অনেক ডাকাডাকিও করলেন কিন্তু আমার সাড়া নাই।
-
খুব ভোরে যখন নেশার ঘুর আর ঘুমের ঘুর দুটাই ছাড়ল তখন আমি সেই আগের জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলাম।যেখানে শুয়েছিলাম ঠিক সেখানেই।হালকা ভয় করতে লাগল রুমে কেও নাই, আব্বাও নেই।এই বাড়িটা কার সেটাও জানিনা।ছি! ছি! মেয়ে দেখতে এসে এভাবে ঘুম ,মানুষে শুনলে হু হু করে দাত কেলিয়ে হাসবে এতে কোন সন্ধেহ নাই।রুমের দরজা খুলে একটু বাহিরে পা বাড়ালাম।একটু সামনে অপর বারান্ধায় এক অষ্টাদশী মেয়েকে দেখতে পেলাম।বেশ সুন্দর দেখতে।এক পাশ করে দাড়িয়ে দূর দিগন্তে তাকিয়ে আছে।যার কারনে এক কানের দুল ঠিক স্পষ্ট দেখে যাচ্ছে,মাথার চুলগুলো বাতাসে বারবার গালের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে সেই চুল গুলে সরাতে বারবার ব্যাস্ত হচ্ছে বালিক।এক কথায় অপরূপ। আমার বুকের বাম পাশে আচমকা ধাক্কা খেল।ভাবলাম এই বোধহয় সেই মেয়ে যাকে দেখার জন্য এখানে এসেছিলাম।আমি আগ্রহ ভরা চোখ নিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাময। হঠাত্ মেয়েটা একটু মাথা ঘুরাতেই আমাকে দেখতে পেল!কয়েক সেকেন্ড স্তব্দ তারপর মেয়েটা আমাকে উদ্দেশ্য করে....
--আপনি আল আহসান?
--জ্বি॥আপনি?
--যার উদ্দেশ্যে আপনার এখানে আসা॥
--ও তাহলে আপনি সেই...!!নামটা জানতে পারি?
--নামটা পরে জানা যাবে॥আপনি রুমে যান আমি অসতেছি।
-
কিছু সময় পর মেয়েটা হাতে এক মগ কফি নিয়ে আমার রুমে ডুকল!
আমি মেয়েটাকে জিঞ্জাস করলাম..
--আপনার বাবা যে আপনাকে বিয়ে দিতে চায় আপনি কি রাজি?
--না!আমি চাই এত কম বয়সে আমার বিয়ে হোক।সবে মাত্র আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি!কম বয়সে বিয়ে করে আমি আমার পড়ালেখা নষ্ট করতে চাই!আমি আমার ক্যারিয়ার গড়তে চাই,তারপর বিয়ে।বাবা যে কেন এসব করছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
--আপনি আপনার বাবাকে বাবাকে এসব কথা বলেছেন?
--হুম বলেছি তিনি আমার কথা শুনতে নারাজ।আচ্ছা আপনি কি রাজি বিয়ে করার জন্য।
--আরে নাহ,এত কম বয়সে কেও বিয়ে করে নাকি।আব্বার চাপে পরে....
--তু এখন আপনি কি করবেন?
--হুম সেটাই ভাবতেছি কিছু তো একটা করতেই হবে।আর যাই করিনা কেন এত কম বয়সে এই বিয়েটা আমি কিছুতেই করতে পারিনা।আর হ্যাঁ অপনি আবার কিছু করে বইসেন না যেন! যা করার আমি করবো।
(মেয়ে মানুষ বলা তো যায় না কখন আবার গলায় টলায় ফাঁস লাগাই দেয় তাই বললাম আরকি!)
--হা হা হা আমাকে এত সহজ ভাইবেন ন॥
--আচ্ছা আমার আব্বা কোথায?
--উনিতো কাল রাত ই চলে গেছেন!আর আপনি কি খাইছিলেন ,এত ডাক ডাকলেন আপনার কোন খবরই নাই।বলে গেছেন আপনি যাতে একা একা চলে যান।
--কিহ!আব্বা চলে গেছেন!এটা কোন এলাকা সেটাই তো জানিনা,যাবো কি করে?
--সামেনেই বাস স্টেশন।বাসে উঠবেন সুজা চলে যাবেন।
--আপনার নামটা কিন্তু এখনো জানা হল না!
--আমার নাম রিহা।
--আচ্ছা একটা ব্যাক্তিগত একটা পশ্ন করি?
--হুম করতে পারেন!
--আপনার কি অন্য কারো রিলেশন আছে,এই মানে বয়ফ্রেন্ড?
--নাহ!তেমন কেও নেই।
.
.
.
সকাল ৮টা, বাসার সবাই আস্তে আস্তে ঘুম থেকে উঠতে লাগল।রিহার বাবা মা আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।গত রাতে আমার কি হয়েছিল,কেন বা এভাবে.......।কিছু সময় পর দেখি এক ডাক্তায় ও এসে হাজির। ডাক্তার হালকা চেকাপ টেকাপ করলো। সাড়ে নয়টার দিকে সবার সাথে একটু নাস্তা সেড়ে নিলাম।রিহার বাবা মা আদর যত্নের কোন কমতি রাখতে চান না। তারপর রিহার মা রিহাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।সেটার কোন দরকার ছিলনা অবশ্য রিহার সাথে তো ভোরই পরিছয় হয়েছে।
-
বেলা এগারোটার দিকে রিহাদের বাসা থেকে বিদায় নিলাম।সামনের স্টেশন থেকে বাসে করে আমার বাসায় যেতে কোন সমস্যা হয়নি।
.
.
.
এখন আমার মাথায় পুরা ট্রাফিক জ্যাম লেগে গেল!কি করব কিছুই বুঝতেছিনা।হঠাৎ আব্বা আমার রুমে আসলেন...
--কিরে মেয়ে পচন্দ হয়েছে?
--না!
--কি?ও দেখতে কোন দিক দিয়ে খারাপ যে তুর পচন্দ হলনা?(একটু উত্তেজিত)
--ও দেখতে খারাপ না, কিন্তু আমার পচন্দও না।আর আব্বা আপনি বুঝতেছেন না কেন আমি এত কম বয়সে বিয়ে করতে চাই না।
---- কোন কথা না আমি বিয়ের কথা পাকা করতেছি।
-
আমার চোখে আন্ধকার হানা দিল।আমার কথার যেন কোন দামই নেই।আত্ন হত্যা করে মরে যাওয়ার ইচ্ছে করতেছে!কিন্তু আমি এত সহজে হার মনতে চাই না।আমাকে কিছু একটা করতে হবে,হ্যাঁ কিছু একটা করতেই হবে।কিন্তু আমি করব।মাথায় কাজ করতে চাইছে না! হাঠাৎএকটা প্যাচ খেল।
-
রাত এগারো টা! হালকা কিছু কাপর নিয়ে এক বন্ধুর সাহায্যা নিয়ে বাসা থেকে পালালাম।বুকে ভয় এর আগে কোন দিন বাসা থেকে পালাইনি এমন কি পালানোর চিন্তা পর্যন্ত করিনি।শুনেছি মেয়েরা বিয়ে টেকাতে বিয়ের আগে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে পালায় আর আমি কিনা ছেলে হয়ে নিজের বিয়ে টেকাতে একা একা পালালাম...........
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৮