somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'ধুম্রজাল ত্রিলার'

১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



_____ধুম্রজাল-ত্রিলার
-
এক
সকাল সকাল উঠে পত্রিকা ও সাথে এক কাপ কফি না হলেই নয়। অভ্যেস হয়ে গেছে। আজও তার ব্যতিক্রম হল না। বেলকুনিতে বসে পেয়ালায় চুমুক দিয়ে পত্রিকায় চোখ বুলালাম।
উফ্! কী নৃশংস খুনের ছবি! এলোপাতাড়ি ছুরি চালানো হয়েছে ছেলেটার মুখে। শরীর জুড়ে আঘাতের চিহ্ন। চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই লাশটা কার।
ক'দিন পরপরই এমন খুনের ছবি পত্রিকার পাতায় উঠে আসে। খুনগুলো যে একই ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত, তা বোঝার অবকাশ রাখে না। তারপরেও কী করে যে খুনী ধরা পড়ছে না, তা আমার বোঝে আসছে না। একমাত্র ভুড়ি বাড়ানো ছাড়া কিছুই হবে না এদেশের পুলিশদেরকে দিয়ে।
পত্রিকা জুড়ে শুধু গুম, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, লুটপাট এসবের খবর। দেখে মনে হয় এগুলো ছাড়া আর কিছুই ঘটে না এই সোনার দেশে।
নাহ্! দিনের শুরুতেই মেজাজটা বিগড়ে দিল। পত্রিকাটা ছুড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ালাম। মেজাজটা ঠান্ডা করতে কল দিলাম স্বর্নাকে। খুব মিষ্টি করে কথা বলে মেয়েটা। কথা বললে মনে হয় মৌচাক থেকে ঝুপঝুপ করে মধু ঝরছে। হুম! এমন মধুর কন্ঠের অধিকারিনী আমার প্রেমিকা। এই তো মাত্র সপ্তাহ খানেক হল ওর সাথে প্রেম হয়েছে। তবে পরিচয় হয়েছে এরও কিছুদিন আগে। এখনও পরস্পরে সম্মুখীন হইনি। পরিচয়টা হয়েছে এ যুগের জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। এফবিতে ওর নিজের কোনও ফটো নেই। তবে আমাকে একটা ফটো দিয়েছিল ইনবক্সে।
পরিচয়ের শুরুটা এভাবে,
হটাৎ একদিন ইনবক্স করল ও, 'আপনার লেখা আমার খুবই পছন্দ।'
টুকটাক লেখালিখি করার বদৌলতে এমন অনেক মেসেজ আসে। তাই ব্যাপারটা আমার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এখন দায়সারা উত্তর দেই। এবারও তাই করলাম।মেসেজ বক্সে 'ধন্যবাদ' লিখে সেন্ড করে দিলাম।
কিন্তু ও আমাকে ঘনঘন নক করতে শুরু করল। আমি প্রথমে বিরক্ত হয়ে রিপ্লাই করলেও একসময় ওর প্রতি কেনও জানি আগ্রহ জন্মালো। ওর কথার আবেগে জড়িয়ে গেলাম। চ্যাট করতে লাগলাম সানন্দে। তারপর মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান, ফোন কল, অতঃপর একসময় প্রণয়।
মাত্র এক সপ্তাহেই ওর সাথে সম্পর্কটা অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। ওর মাঝে মানুষকে আপন করে নেয়ার অদ্ভুত রকম শক্তি কাজ করে। আমি যতই ওর নৈকট্য লাভ করছি, ততই ওর মোহের মায়াজালে আটকে যাচ্ছি। এত সহজেই কেউ আমাকে বশ করে নিতে পারবে ভাবতেও পারিনি।
রিং হচ্ছে। তবে টুট-টুট শব্দে নয়। গান বাজছে, ' আজ ফির তুমপে পেয়ার আয়া হে.. '। ওকে বেশ কয়েকবার বলেছি গানটা চেঞ্জ করার জন্য। বন্ধুদের খপ্পরে পরে একবার এর ভিডিওটা দেখেছিলাম। ছিঃ! কী বিশ্রী দৃশ্য। এখন এর অডিও গান শুনলেই দৃশ্যগুলো চোখে ভেসে ওঠে। তাই ওকে নিষেধ করা। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমার অনুরোধকে পাত্তাই দিল না। আমি যেমন ও ঠিক তার বিপরীত। আর বিপরীত ধর্মীয় কোনও কিছুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ থাকে বেশি।
ফোনটা রিসিভ হল। ওপাশ থেকে আওয়াজ আসল,
'হ্যালো।'
'হ্যাঁ, কী খবর তোমার?'
'ভাল। আজ এত তাড়াতাড়ি ফোন দিলে যে? পত্রিকা পড়া হয়ে গেছে?' বলে দুষ্টুমি মাখা হাসি দিল।
'আর বলো না! মেজাজটা হাই ভোল্টেজে আছে। ঘুম থেকে উঠেই খুনের খবর পড়তে হয়। তাও আবার একদম ফ্রন্ট পেজে।' অনুযোগের সুরে বললাম আমি।
'দেশে খুন- খারাবি হচ্ছে, তো পত্রিকায় আসবে না? তুমি এতো ভাবছ কেন? তোমার সাথে তো আর হচ্ছে না।'
'হতেও তো পারে।'
ও বিড়বিড় করে কী যেন বলল। বুঝতে পারলাম না।
'কী? বুঝি নাই।'
'কিছু না,' থেমে গিয়ে আবার বলল, 'তোমাকে না খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। চলো দেখা করি।'
' কী! সত্যি?' আমি অতি উৎসাহিত হয়ে বললাম,'আমারও তোমাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। কোথায় আসব বলো?'
খুশিতে হিতাহিত জ্ঞান হারাবার উপক্রম আমার।
'এত অস্থির হওয়ার কিছু নেই। আমি যথা সময় জানিয়ে দেব।'
'ওকে।'
'এখন রাখি। ফ্রেস হব। বাই।'
'ওকে, আল্লাহ হাফেজ।'
ওর সাথে কথা বলে মনটা চাঙ্গা হয়ে গেল। এবার জমপেশ করে ব্রেকফাস্টটা সেরে নেয়া দরকার।
দুই
আজ স্বর্নার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। মনের ভেতর কেমন জানি হচ্ছে। ঠিক বুঝিয়ে বলার মত না। প্রথম প্রেম, সেই সাথে প্রেমিকার সাথে প্রথম মোলাকাত বলে কথা।
ও একটা অফিসের ঠিকানা দিয়েছে। এখানে ও কাজ করে।
ঠিকানা মত এসে তো আমি রীতিমত টাশকি খেয়ে গেলাম! কোথায় অফিস? এতো দেখি ডুপ্লেক্স বাসা। এলাকাটা বেশ নির্জন। আমি খানিক ভেবে ওকে ফোন দিলাম।
'কোথায় তুমি?'
'উপরে তাকাও।'
আমি উপরের দিকে তাকালাম। দেখি ও হাত দিয়ে ইশারা করছে উপরে যাওয়ার জন্যে।
বাসার গেইট খোলাই ছিল। আমি টিপটিপ পায়ে সিড়ি ভেঙে উপরে উঠতে লাগলাম।
উপরে উঠতেই দেখি দরজার সামনেই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্না।
'এটাই তোমার অফিস?'
আমার সমস্ত লজ্জা এখন রাগে রূপান্তরিত হয়েছে।
‘তুমি এত আন- রোমান্টিক কেন? প্রেমিকার সাথে প্রথম সাক্ষাত আর এভাবে বে-রসিকের মত কথা বলছ?'
'এক্সকিউজ মি? তুমি কে?'
রীতিমত ভিমড়ি খেয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
'মানে?' ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল ও।
'মানেটা খুবই পরিষ্কার। তুমি তো সেই মেয়ে নও যার সাথে আমার সম্পর্ক!'
'এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছ?' মুখ টিপে হাসল ও।
'ইউ চিট উইথ মি!' আমি উত্তেজিত হয়ে পড়লাম।
'চিট? চেহারাই কি সব? তুমি পরিচয়ের শুরুতেই আমাকে দেখতে চেয়েছ। আমি কোন বিশ্বাসে তোমাকে আমার ফটো দেই? সম্পর্ক হয়ে যাওয়ার পর ভেবেছিলাম সত্যটা বলে দেব। কিন্তু পরে ভাবলাম ব্যাপারটা সারপ্রাইজ হিসেবেই থাক।'
সমম্বিত ফেরে আমার। ওর কপট অভিমান ও চপল কটাক্ষে রাগ জমে আবেগের বরফ হয়ে গেল। অপলক ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম শুধু। ফটোর মেয়ের চেয়েও ও কয়েকগুণ সুন্দর। দেখলেই যে কারও প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করবে ওর। পলক যেন পড়তেই চাচ্ছে না আমার। আর মনে হচ্ছে আশেপাশে কেউ বীণা বাজাচ্ছে। সুরের আর রূপের সাগরে যেন আমি হারিয়ে যাচ্ছি।
কাঁধে ওর মৃদু ধাক্কায় আমার ঘোর কাটল।
'কী দেখছ অমন করে?'
'ও.. কিছু না .. ' একটু থেমে বললাম, ‘তুমি সত্যিই অনেক সুন্দর!'
ও মুখে মিষ্টি হাসি টেনে বলল, 'ভিতরে আসো।'
তিন
বিছানায় পাশাপাশি বসে আছি দু'জন। একটা কাল টিশার্ট আর কাল স্কার্ট ওর পরনে। ও আমার হাতে হাত রেখে কথা বলছে। আমি জানতাম ও এমনই। অবাক হইনি। তবে আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে। কথা বলতে গিয়ে বারবার আটকে যাচ্ছি।
কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর ও আচমকা বলে উঠল, 'আচ্ছা, তোমাকে একটা কিস করতে পারি?’
আমার মস্তিষ্কে অনুরণন সৃষ্টি হল। আগে-আগে কী ঘটতে পারে তা চোখের সামনে ভাসতে লাগল।
আমি কোনও মহাপুরুষ নই। এমন আবেদনময়ী আহ্বানে আমি হারিয়ে যেতে বাধ্য। আমি নিজেকে যথা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করলাম। ওকে আর বেশি এগোতে দেয়া যাবে না। তা না হলে নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলব নিশ্চিত।
ওকে নরম কন্ঠে বললাম, 'দেখো, এগুলা কি এখন না করলেই নয়? বিয়ের পর হোক?'
'বিয়ের আগে একটু চুটিয়ে প্রেম না করলে কি হয়? এটা এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার!' অদ্ভুত ভঙ্গিতে বলে উঠল ও।
আমি ওকে শান্ত করার জন্য ওর চিবুক ধরে বললাম, 'অ্যাডভেঞ্চার? তাই না?'
পরক্ষণেই বুঝলাম এই কাজটা আমাকে আরও মহা বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ও পাগলের মতো হয়ে ওঠল। আমার কোলে চেপে বসলো। তারপর আমার ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এনে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করল। আমি দ্রুত ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
'কী করছো এসব? পাগল হয়ে গেছ?' খেঁকিয়ে উঠলাম আমি।
'হ্যাঁ, আমি পাগল হয়ে গেছি। কী প্রবলেম তোমার? আমি চাচ্ছি, অথচ তুমি চাচ্ছ না! প্রেমে তো এসব এখন কমন ব্যাপার।'
'চুপ করো! তোমার মত মেয়ের সাথে কথা বলাই চলে না। তুমি আধুনিক মেয়ে জানতাম। কিন্তু তুমি যে একটা "বেশ্যা" তা জানতাম না।' রাগে ক্ষুব্ধ হয়ে কথাগুলো আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল।
'কী? তুই আমাকে বেশ্যা বললি? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা!'
একটু থেমে গিয়ে হাঁক ছাড়ল, ' রাতুল, রাতুল!'
আচমকা একটা ছেলে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। আমি জগতের কৌতুহল নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম। পুরো বাসায় তো কেউ আমার নজরে পড়েনি। ও আসলো কোথা থেকে? আর এর অন্তরালে কী রহস্য লুকিয়ে আছে!
স্বর্ণার কথায় হুশে ফিরলাম।
'ও খুব সাধুগিরি দেখাচ্ছে। ওকে সাইজ করতে হবে!' কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল ও।
আমি ওর এই পরিবর্তে চমকে গেলাম। এই মূহুর্তে কেউ আন্দাজ করতে পারবে না, মাত্র কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটার মুখ থেকে মধুকথা ঝরছিল। ব্যাপারটা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম আমি।
এই সুযোগে ছেলেটা কখন যে আমার সামনে এসে দাঁড়াল বুঝতেই পারিনি। ও হুট করে হাত চালিয়ে দিল। রিফ্লেক্সের বশেই কিছুটা সরে গেলাম। ঘুসিটা তাই মাথার একপাশে লাগল। ছেলেটাও কিছুটা তাল হারাল। সেই সুযোগে একটা লাথি ঝেড়ে ওকে মেঝেতে ফেলে দিলাম। ছেলেটা উঠে দাঁড়ানোর আগেই ওর উপর চেপে বসে দিলাম এক ঘুসি। ঠিকভাবে ঘুসিটা লাগেনি। আরেকটা দিতে যাব, ঠিক তখনই মাথায় প্রচন্ড রকম আঘাত পেলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করতে শুরু করল। পৃথিবীটা যেন ঘুরছে দুরন্ত গতিতে। তারপর আর কিছুই মনে নেই।
চার
চোখে পানির ঝাপটা লাগতেই আস্তে করে চোখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করলাম। মাথাটা এখনো ঝিমঝিম করছে। আঘাতের স্থানটা টনটন করছে। চোখে হাত দিতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, যে চেয়ারে আমি বসে আছি সেটার সাথে আমার হাত পা বাঁধা। আমার সামনে আরেকটা চেয়ারে বসা স্বর্না।
'কী ডারলিং, ঘুম ভাঙল তোমার?' বিশ্রী হাসি হাসল স্বর্না।
'তুমি...তুমি আমার সাথে এমন করলে কেন?'
'হা হা হা!' অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল ও, 'এটাই তো আমার কাজ।'
'মানে?' ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
'মানে বোঝাচ্ছি চান্দু! প্রথমে আমার আসল পরিচয় দিয়ে নিই। তুমি আমার সম্পর্কে যা জান আমি তা নই,' একটু থেমে গিয়ে বলল, 'আমি একজন শয়তানের উপাসক!' মুখে পৈশাচিক হাসি স্বর্নার। আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। কৌতূহলী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ও বলতে লাগল, 'আমার সম্পর্কে ছোট্ট করে বলি। ছোট থেকেই আমার শয়তানের প্রতি খুব ইন্টারেস্ট ছিল। ইন্টারনেট ও বিভিন্ন বই ঘেটে শয়তান সম্পর্কে ভাল করে জেনেছি। কোন কোন উপায়ে শয়তানকে খুশি করা যায়, সেই তথ্য কালেক্ট করেছি। মনে জেদ চাপল, যে করেই হোক শয়তানকে হাসিল করতেই হবে। কিন্তু এত সব জটিল প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতে হয় যে একা একা করা সম্ভব না। তাই একজন পার্টনার খুজছিলাম। এর কিছুদিন পর রাতুলকে পেলাম। আমার ভার্সিটিতেই পড়ে, শয়তানের প্রতি ইন্টারেস্টেড। ব্যস! দু'য়ে দু'য়ে চার মিলে গেল। আমি আর ও মিলে শয়তানকে খুশি করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলাম। কিন্তু যেসব প্রক্রিয়ার সন্ধান পাই তার সবই খুব পুরনো। এই যুগে ঐসব জিনিস খুজেও পাওয়া যায় না। আমরা পড়ে গেলাম বিপদে। একসময় এক অভিনব আইডিয়া মাথায় আসল।' একটু বিরতি নিলো ও।
আমি অবাক হয়ে শুনে যাচ্ছি। তবে ব্যাপারটা মোটেই অবিশ্বাস্য নয়। এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে এই পৃথিবীতে।
'শয়তানের কাজ কি জান?' ও আবার বলতে শুরু করল, 'মানুষকে বিপথগামী করা। আমরা তাতে সহযোগিতা করার চেষ্টা করলাম, যাতে শয়তান খুশি হয়ে আমাদের ধরা দেয়। যারা এমনিতেই বদ লোক তাদের দিকে আমরা দৃষ্টিপাত করি না। ভাল ছেলেকেই খারাপ করা আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। এখন আমাদের কাজ সম্পর্কে বলি। রাতুলের কাজ হল সবচেয়ে ভাল, চরিত্রবান ছেলে খুঁজে বের করা। যারা মেয়েদের দিকে তাকাতেও লজ্জা পায়। তারপর আমি তাদের বিভিন্ন ছলচাতুরীতে আমার প্রেমের ফাঁদে আটকে ফেলি। ওদের ডেকে আনি আমার বাহুডোঁরে। তারপর ওদের সাথে মেতে উঠি আদিম খেলায়। হা হা হা! কি করে ভাবলে তোমার মতো খ্যাঁত একটা ছেলের প্রেমে পড়ব আমি। সবই আমার খেলা। যত ভাল ছেলেই হোক না কেন, আমার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে কেউ থাকতে পারেনি। জান, আমার রতি শক্তি প্রবল। ওদের শরীরের বিন্দুমাত্র শক্তি থাকতেও ছেড়ে দেই না। একসময় ওরা নেতিয়ে পড়ে। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকে না তখন। তারপর ওদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করে ঠেলে দেই মৃত্যুর দিকে। শালারা জান্নাতে যাওয়ার জন্য কী সাধু হয়ে চলত, এবার যা জাহান্নামে!' ওর চোখ দুটো জ্বলে ওঠল।
'এই তাহলে তোমার আসল রূপ?' আমি এবার মুখ খুললাম। ও আমার কথায় কান দিল না। 'কিন্তু আফসোস! তোমাকে কিছুতেই বশে আনতে পারলাম না। হয় তো আরেকটু সময় নিলে পারতাম। কিন্তু বেশ্যা বলে গালি দিয়ে তুমি আমাকে রাগিয়ে দিলে। তাই ফুর্তি ছাড়াই তোমাকে মরতে হবে। ভয়ংকর যন্ত্রণা পেয়ে মরতে হবে তোমাকে! শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি দেব তোমাকে।' ওর চেহারায় হিংস্র ভাব ফুটে উঠল। আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম।
ও আমার দিকে খানিকটা ঝুঁকে আসল। হাতে একটা ছুরি।ওর হাতে ছুরি কোথা থেকে এল। হয় তো পিছনে লুকিয়ে রেখেছিল। আমার আত্মাটা কেঁপে ওঠল। ও আমার কাছাকাছি এসে আমার হাতে আলতো করে ছুরিটা চালাল। আমার মুখ থেকে শব্দ বের হলো 'উফ্!'
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। ও কাটা স্থানে মুখ লাগিয়ে রক্ত চুষে নিল। তারপর একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল, ' তোমার যৌবন সুধা তো পান করতে পারলাম না, অন্তত রক্তটা তো টেস্ট করে দেখতে পারি।'
তারপর আমার মুখের কাছে এসে ঠোঁটে গভীর চুম্বন এঁকে দিল। উফ্! কী বিশ্রী অনুভূতি। আমি পাশে থুথু ফেললাম। ও হেসে মোবাইল বের করে একটা ভিডিও প্লে করল। মোবাইলটা আমার চোখের সামনে ধরতেই দেখলাম একদম উলঙ্গ একটা ছেলে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। সামনে বসা আরেকটা মেয়ে। মেয়েটা আর কেউ নয়, স্বর্ণা। ওর হাতে একটা ছুরি। ও এলোপাতাড়ি ভাবে ছুরিটা ছেলেটার শরীরে চালাতে লাগল। একসময় হটাৎ গলায় ছুরি চালিয়ে দিল। কাটা কবুতরের মতো ছটফট করে ছেলেটার শরীর নিস্তেজ হয়ে গেল। এবার স্বর্না মোবাইলটা আমার চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নিল।
'তোমার জন্য এর চেয়েও ভয়ংকর মৃত্যু অপেক্ষা করছে! প্রিপারেশন নাও। আসছি আমি।' রূঢ় কন্ঠে বলল ও। তারপর রাতুলকে ডাকতে ডাকতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
ও যাওয়ার পরপরই আমি মুচকি হাসলাম। নিজেকে খুব চালাক ভাবে ও। যেন অন্যরা সব বোকা। আমার শার্টের বোতামে একটা মাইক্রোফোন লাগানো। এর মাধ্যমে আমার কথাগুলো ইন্সপেক্টর আসিফ শুনতে পাচ্ছে। এইবার আমি ডাকলাম, 'আসিফ ভিতরে চলে এস।'
পাঁচ
বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গেল, কিন্তু আসিফ আসছে না কেন! আমার হার্ট বিট বাড়তে লাগল। অস্থিরতা অবিরত বেড়েই চলল। এবার কী হবে কে জানে! কোনও অঘটন ঘটেনি তো? আমার জীবন মরণের প্রশ্ন এখন।
হটাৎ দেখি আসিফ ও কনস্টেবল সামির রুমে প্রবেশ করল। আসিফ তড়িৎ গতিতে আমার বাঁধন খুলে দিল। আমি চাঁপা কন্ঠে বললাম, 'এতো দেরী হল কেন আসতে?'
'স্যরি স্যার! তালা খুলেই রেখেছিলাম। কিন্তু যখন ঢুকব তখন মেয়েটাকে সিঁড়িতে দেখি। তাই আসতে দেরী হল।'
'এখন কোথায়?'
'মেয়েটাকে দেখে সরে গেছিলাম। যখন আবার তাকালাম,তখন আর মেয়েটাকে দেখলাম না।'
'ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি সার্চ লাগাও। তবে সাবধানে!'
'ওকে, স্যার।'
ওরা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি রুমটার চারপাশে চোখ বুলালাম। হটাৎ দৃষ্টি পড়ল দরজার দিকে। মুর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে স্বর্ণা। চোখ থেকে যেন আগুন ঝরছে। আমি প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিলাম।
'কী ভেবেছিলে? আমিও অন্যদের মত বোকা, নাদান, আর তুমি খুব চালাক? তোমার পরিচয় দিয়েছিলে না? এবার আমারটা দেই?' আমি খুব দ্রুত বলতে লাগলাম। কারণ জানি আমার হাতে খুব একটা সময় নেই। 'হ্যাঁ, তুমি যা সন্দেহ করছ আমি তাই। আমি গোয়েন্দা অফিসার আকরাম খান। এই কেসের ভার আমার উপর পড়েছে। গত কয়েক মাস ধরে তন্য তন্য করে তোমাকে খুঁজেছিলাম। কিন্তু খুঁজ মিলেনি তোমার। অথচ কী আশ্চর্য দেখো, তুমি নিজেই এসে আমার কাছে ধরা দিলে,' থেমে গিয়ে আবার শুরু করলাম, 'ভাবছ আমি কী করে জানলাম তুমিই সেই? শোনো, তোমার হাতে যারা খুন হয়েছে তাদের অনেকের ফেইসবুক আইডি সার্চ করেছি। তাদের প্রত্যেকের প্রেমিকার ফেইসবুক আইডির নামের শেষে 'ইসলাম' লাগান। কাকতালীয় ভাবে আমার প্রেমিকার আইডির নামের শেষেও 'ইসলাম' লাগান!তাদের কনভার্সেশন ও চেক করেছি। তোমার স্টাইলেই লেখা। আমি যদিও প্রথমে সন্দেহ করিনি, কিন্তু তোমার আচরণে সন্দেহ হতে লাগল। একসময় প্রায় নিশ্চিত হলাম, তুমিই সেই। তারপর তোমার সাথে প্রেমের নাটক করলাম।'
আরও কিছু বলতে যাব, হটাৎ রাতুলের চিৎকার শুনলাম,
'স্বর্না!'
স্বর্না এতোক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। চিৎকার শুনে হুশে এল। কী ভেবে হটাৎ দৌঁড় দিল। আমি সাত পাঁচ না ভেবে চট করে কোমর থেকে পিস্তল বের করে ট্রিগারে টান দিলাম। বুলেটটা রকেট গতিতে গিয়ে ওর পায়ে বিধঁল। ও আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
স্বর্না জানত না আমার কাছে যে আগ্নেয়াস্ত্র আছে। কী করে জানবে? মাত্র কিছুক্ষণ আগে আসিফ আমার হাতে এটা ধরিয়ে দিয়ে গেছে।
আমি এগিয়ে গেলাম ওর দিকে। এরই মধ্যে আসিফ ও সামির রাতুলকে ধরে নিয়ে এসেছে।
আমি স্বর্নার কপাল বরাবর পিস্তল রেখে বললাম, 'আফসোস, তোমাকে অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্তু সময় যে কম,' থেমে গিয়ে আবার বললাম, 'এবার কার মৃত্যু নিশ্চিত তা দেখার পালা। ডাক দে তোর প্রভু শয়তানকে। বাঁচাতে আসে কি না দেখি।'
তারপর আসিফকে উদ্দেশ্য করে বললাম, 'ওদের ভাল করে বেঁধে ফেলো। যেনতেন লোক নয় ওরা! যেকোনও সময় অঘটন ঘটাতে পারে। শয়তানের উপাসক বলে কথা!'
নিজের অজান্তেই মুখ থেকে ব্যঙ্গাত্মক কুৎসিত হাসি বের হয়ে আসল।
********
স্বর্ণা ও ওর সঙ্গী রাতুলের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়ে গেছে। এই কেসের সফলতার জন্য আমার প্রমোশন হয়েছে,সেই সাথে মিলেছে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে গোল্ড মেডেল।আমার শিরায় শিরায় আনন্দ ধারা বইছে। অনেকদিন যাবত প্রায় নির্ঘুম রাত কেটেছে। আজ রাতটাতে শান্তিতে একটা ঘুম দিতে হবে।
পরিশিষ্টঃ কয়েকমাস পর....
আকরাম খান বেলকুনিতে বসে পত্রিকা পড়ছেন। পত্রিকার দিকে গভীর মনোযোগ তাঁর। এমন সময় মোবাইল ফোনটা তীক্ষ্ণ সুরে বেজে ওঠল। তিনি খানিক বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা হাতে নিলেন। ভ্রু কুঁচকে স্কিনের দিকে তাকালেন। ইন্সপেক্টর আসিফের ফোন।
' হ্যাঁ আসিফ, বলো।'
'স্যার একটা সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে গেছে!'
'কী সাংঘাতিক ঘটনা?'
'আজ পত্রিকা পড়েননি?'
'না পড়িনি এখনও।'
'আজ পত্রিকায় একটা খুনের ছবি প্রকাশ করেছে। খুনটা হুবুহু স্বর্নার স্টাইলে করা। সারা শরীর জুড়ে ছুরির আঘাত! তবে একটা ব্যাপার ভিন্ন। এবারে লাশটা ছেলের নয়, মেয়ের!' বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে পড়ল আসিফ।
'তাই নাকি?' কন্ঠে বিস্ময়ের ছাপ তাঁর, 'তাড়াতাড়ি খুঁজ লাগাও! ব্যাপারটা সত্যিই সাংঘাতিক! আমি একটু পরেই অফিসে আসছি। এখন রাখি।'
'ওকে স্যার!'
আকরাম খান ফোনটা রেখে আবার পত্রিকায় চোখ বুলালেন। খুনের ছবিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। রহস্যময় সে হাসি। যার কারণটা শুধু তিনিই একা জানেন। আর কেউ জানে না। আর কেউ না!
(কার্টেসি-বড় ভাই)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৩৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×