এরকমটা আমি আগে দেখিনি তা নয়, বরং এর চেয়ে ভয়াবহ ইনজুরিও দেখেছি। তবে এবার সাত বছরের এই মেয়েটার চোখ দেখে থমকে গেলাম। একটা পেন্সিল তার চোখে আমূল গেঁথে আছে। রুমের ভেতর কাঁদছে মেয়েটি আর রুমের বাইরে কার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছে তার দরিদ্র বাবা। আর দশটা বাবার মতো আমারও মনে পড়ে যাচ্ছিলো নিজের সন্তানের কথা। মনটা ভারী হয়ে ছিলো।
সাবধানে সরিয়ে আনা হলো চোখের ভেতরের পেন্সিল। আল্লাহু আকবার। চোখ সাবলীলভাবে নড়ছে। মেয়েটার দৃষ্টি পরীক্ষা করা হলো। সম্পূর্ণ দৃষ্টি অক্ষত। শুধুমাত্র সামান্য কয়েকটা সেলাই লাগলো আঘাতের যায়গায়। চোখ পরীক্ষা করে এখন কেউ বুঝতেই পারবে না যে, একটা পেন্সিল মেয়েটির চোখের কোটরে দু ইঞ্চি ঢুকে গিয়েছিলো। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, যে অ্যাঙ্গেলে এই পেন্সিল ঢুকেছে তা অত্যন্ত দুরূহ একটি অ্যাঙ্গেল এবং চোখের সেনসেটিভ সকল অংশ অক্ষত রেখে ঠিক এই বরাবর কোন কিছু ঢুকে পড়াটা অনেক বড় মিরাকলের চেয়ে কম না। সামান্য একটু এদিক ওদিক হলেই অন্ধত্ব ছিলো প্রায় নিশ্চিত।
ইমার্জেন্সি রুমে আনন্দের বাতাস বইছিলো। বাবাটির বাঁধ ভাঙা চোখে দ্বিগুন বেগে বইছিলো সুখের অশ্রু। আমার মনে হচ্ছিলো একটি কথা। এই অবিশ্বাস্য বেঁচে যাবার ব্যাপারটি আমাদের কতদিন স্মরণ থাকবে? আমাদের সকলের জীবনেই এমন বিস্ময়কর কোন না কোন ঘটনা ঘটেছে যা আমাদের বিরাট ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে, অথচ স্বল্প সময়েই আমরা তা ভুলে গিয়ে নিজের সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার বলে ধরে নিয়েছি।
প্রসঙ্গত মনে পড়ছে সাহাবা কাতাদাহ বিন নুমান রাঃ এর কথা। উহুদ যুদ্ধের ভয়াবহ অবস্থায় এক পর্যায়ে একটি তীর এসে তাঁর চোখের কোটরে বিদ্ধ হয়। তীরের আঘাতে চোখটি কোটর থেকে বের হয়ে এসে চোখের নীচে ঝুলতে থাকে। তিনি এই অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চোখটি ফেলে দিতে উদ্দত হন। রাসুলুল্লাহ সাঃ তা দেখে আল্লাহর নামে চোখটি নিজের হাত দিয়ে আবার কোটরে বসিয়ে দেন। এরপর চোখের অবস্থা এমন মনে হচ্ছিলো যেন কিছুই হয়নি। এমনকি কাতাদা রাঃ সারা জীবনেও এই চোখে আর কোন সমস্যা বোধ করেননি। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনে যে সকল মুজিজা মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে এটি ছিলো তার মধ্যে একটি। কৃতজ্ঞ কাতাদা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লাহর এই অনুগ্রহের কথা স্মরণ করতেন। এমনকি তাঁর বংশধররা পর্যন্ত এই বলে মানুষের কাছে পরিচয় দিতেন যে, "আমি হলাম সে ব্যক্তির সন্তান, যার কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়া চোখ রাসুলুল্লাহ সাঃ আবার বসিয়ে দিয়েছিলেন" (আর রাহিকুল মাখতুম)।
চোখের ভেতর পেনসিল
চোখের ভেতর পেনসিল-২
পেনসিল সরিয়ে সেলাই করা হয়েছে
এই হলো শেষ