এক সেকেন্ডে কি হতে পারে? অনেক কিছুই হতে পারে। তবে এর ভেতরে সবচেয়ে বিস্ময়কর সম্ভবত নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ফিরে আসা। গতকাল সন্ধ্যায় মাত্র পাঁচ হাত দূর থেকে বছর পঁচিশেক বয়সের যুবকটির কপালের মাঝ বরাবর তাক করে পিস্তল থেকে গুলি ছোঁড়া হলো। তা ছিলো অনেক লোকের সামনেই। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবাই গুলির শব্দ শুনতে পেলো। যাকে গুলি করা হলো ফ্র্যাকশন অব সেকেন্ড বলতে যা বোঝায় সে সময়টুকুতেই তার মাথা একদিকে কাত হলো। যা হলো তা তার সজ্ঞানে হয়নি। গুলি তার চোখের আধা ইঞ্চি নীচ দিয়ে চোয়াল বরাবর ঢুকলো এবং বেরিয়ে গেলো গালের ডান পাশ দিয়ে। পড়ে গেলো সে। গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে পালিয়ে গেলো অস্ত্রধারী।
রক্তপাত হলো প্রচুর। মফস্বল থেকে তাকে নিয়ে আসা হলো ঢাকায়। গুলি ঢুকেছিলো চোখের নীচের চোয়ালের কাছ দিয়ে আর বেরিয়ে গেছে গালের ডান পাশ দিয়ে। বেঁচে গেলেও এই গুলিতে ক্ষতি পারে অনেক। চোয়ালের হাড় ও মাড়িতে ফ্র্যাকচার হলে সারা জীবন ভুগতে হবে। বুলেট চোখের কোটরে ঢুকে গেলে চোখ হারাতে হবে স্থায়ীভাবে। ব্রেন যে ভল্টে থাকে তার ভেতর সামান্য লাগলেই ভীষন বিপদ হতে পারে। গাল ও গলায় যে সকল অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সেনসিটিভ রক্তনালী আর নার্ভ আছে তা কেটে গেলে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এই গুলিটি তার কতটুকু ক্ষতি করতে পেরেছিলো?
চোয়ালের হাড়-অক্ষত। কোন ফ্র্যাকচার নেই।
দাঁত ও মাড়ি- সম্পূর্ণ অক্ষত।
ব্রেনের ভল্ট- অক্ষত।
গালের দরকারী সব নার্ভ- সম্পূর্ণভাবে কাজ করছে। কোন ইনজুরি হয়নি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চোখ- আশ্চর্যজনকভাবে শতভাগ অক্ষত। দৃষ্টি স্বাভাবিক ও স্বচ্ছ।
গুলিটি চোয়ালের মাংসের ভেতর দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে গেছে গালের অন্যপাশের মাংসের ভেতর দিয়ে। এক লক্ষবার ক্যালকুলেশন করে এই রুটে গুলি ছুঁড়লে একবারও এমন সবকিছু অক্ষত রেখে গুলি বের করার সম্ভাবনা প্রায় শূণ্য। আমি আশ্চর্য হয়ে প্রায় সুস্থ্য এই মানুষটিকে দেখছিলাম। রাজ্যের বিস্ময় আর কঠিন নিরবতা তার সঙ্গী এখন। তার সাথে আসা সকলেই স্তম্ভিত। আল্লাহর কাছে তারা কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাবে তা-ই বললো অনেক্ষণ ধরে।
রিফ্লেক্স নামের স্নায়ুর এক বিস্ময়কর যাদু আল্লাহ মানবদেহে দিয়েছেন যার ফলে অতি দ্রুত কোন ঘটনা বা সিদ্ধান্তে আকস্মিকভাবে নার্ভাস সিস্টেম তার কর্মপদ্ধতি বদলিয়ে অঙ্গের নিয়ন্ত্রন নেয়। অসামান্য এই কাজটির মাধ্যমে কতভাবে যে আমরা উপকৃত হই তা বলার সাধ্য কারো নেই। নিশ্চিত মৃত্যু থেকে প্রায় অক্ষত ফিরে আসা এই যুবকটি শুধু নয়, প্রতিনিয়ত পৃথিবীর সাতশো কোটি মানুষ জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতসারে এর দ্বারা অবিশ্বাস্যভাবে উপকৃত হচ্ছে। আমরা আমাদের সারাটা জীবন হয়তো পার করে দিচ্ছি এই অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর কাছে একটিবারের জন্যও কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে।
মনে পড়ছে একটি হাদিস। রাসুলুল্লাহ সাঃ সাহাবাদের বললেন, “জেনে রেখো, কারো আমলই (আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে) তার মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়”। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, “ও আল্লাহর রাসুল, এমনকি আপনার আমলও নয়?” রাসুল সাঃ বললেন, “না, এমনকি আমার আমলও নয়, যদি আল্লাহ নিজ করুণা দিয়ে আমাকে আবৃত করে না নেন” (বুখারী)।