সন্ধ্যা পার হয়ে রাত নেমেছে। দুর্ঘটনায় আঘাত পাওয়া দুজন রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল জরুরী বিভাগে। ভীড়ের ভেতর দিয়ে চল্লিশোর্ধ একজন মহিলা আউটডোরের একটি টিকেট বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “স্যার, এই ওষুধটা কি লেখা আছে?” বললাম, “রোগী কে?” তিনি বললেন, “স্যার, আমি”। মহিলাটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও বেশ বিরক্ত বোধ করলাম। সুস্থ্য দেখা যাচ্ছে তাঁকে। দুজন গুরুতর আঘাত পাওয়া রোগীর চিকিৎসার মাঝখানে তাঁর এই ডিস্টার্ব করাটা ঠিক হচ্ছে না-এমনটা বলে অপেক্ষা করতে বললাম। তিনিও সরে গেলেন।
অনেকক্ষণ পর যখন আগের দুজনের ট্রিটমেন্ট শেষ করে উঠে যেতে যাচ্ছি সে সময় তিনি আবার এলেন। “স্যার, একটু দেখবেন এই ওষুধটা কি লেখা আছে?” এবার হাতে নিয়ে দেখলাম। সকাল বেলা বহির্বিভাগের টিকেট। একটি ভিটামিন ওষুধ লেখা নিয়েই বিভ্রান্তি। বললাম এটা তো একটা ভিটামিন লেখা আছে। মহিলা বললেন, “স্যার, সকালে সাতটায় এসে তিন ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখিয়ে মুন্সিগঞ্জ চলে গিয়েছি। ভেবেছি বাড়ি গিয়ে ওষুধ কিনবো। কিন্তু মুন্সিগঞ্জের কোন ওষুধের দোকানদার এই লেখা বুঝে না। ওখানে প্রেস্ক্রিপশন নিয়ে অনেক্ষণ ঘুরেছি, সব দোকান খুঁজেছি। কেউ বুঝছে না। বাধ্য হয়ে আবার ঢাকা রওয়ানা দিয়েছি। যাত্রাবাড়ী পার হতে দুই ঘন্টা লেগেছে। এখান থেকে দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে আবার মুন্সিগঞ্জ ফিরে যাবো। জানিনা স্যার যেতে কতোক্ষণ লাগবে”।
বেশ লজ্জিত বোধ করলাম। সত্যিই তাঁর দুঃখজনক ভোগান্তি হলো। কিন্তু এই দোষটা কি ডাক্তারকে দেয়া যাবে? সত্যি বলতে কি, তা দেয়াটা মোটেই উচিৎ হবে না। একজন ডাক্তার যখন একা শখানিক রোগী দেখে ডায়াগনোসিস করে ওষুধ লেখে, তখন তাঁর কাছ থেকে শতভাগ আশা করা|টা ভুল হবে। এটা যে কতোটা স্ট্রেসফুল কাজ তা একজন ডাক্তার ছাড়া অন্য কাউকে বোঝানো কঠিন হবে।
বিকল্প ওষুধ লিখে দিলাম। মহিলার জন্য খারাপ লাগছিলো। তাঁর নিজের দিকটা চিন্তা করলে এটা একটা ইমার্জেন্সি বটে। একা মহিলা এখান থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে অন্তত রাত নয়টা বাজবে। এরপর বৃহষ্পতিবার যাত্রাবাড়ীর জ্যাম পার হয়ে যেতে হবে মুন্সিগঞ্জ। কয়টা বাজবে আল্লাহই জানেন। আল্লাহ পথে তাঁর সহায় হোন।
১৩-০৯-১৩
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:২৩