somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকায় সেভেন স্কাই স্কুলঃ আধুনিক ও ইসলামিক শিক্ষার সমন্বয়, তবে শুধুই উচ্চবিত্তের নাগালে

১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্তানকে ইসলামী শিক্ষা দেয়ার জন্য বাংলাদেশে সাধারণ অপশন হলো দুটি। মাদ্রাসায় ভর্তি করানো কিংবা ‘হুজুর’ রেখে ঘরে ইসলামী শিক্ষা দেয়া। তবে সত্যিকার অর্থে দুটির কোনটিতেই বিশুদ্ধ ও আপোষহীন ইসলামী শিক্ষা বাচ্চারা পায়না বললেই চলে। এদেশের অধিকাংশ মাদ্রাসার শিক্ষা যে ইসলামের নামে ইসলামের সাথে সম্পর্কহীন বস্তাপঁচা জ্ঞান আর বানোয়াট মাসায়েলের ফাঁদে আটকানো এবং এই অপইসলাম শিক্ষা যে কোমলমতি বাচ্চাদের মাথার মূল্যবান নিউরনগুলোর ধ্বংস করছে, তা এর সামান্য ভেতরে প্রবেশ করলেই জানা যায়। হাজার হাজার মাদ্রাসা থেকে পাশ করে লক্ষ লক্ষ আলিম নামের বোঝা আজ আল্লাহ্‌র পবিত্র নামকে বেচে মানুষের দাওয়াত খাওয়া আর মাইকে সুর করে দান খয়রাত চাওয়ার মুখাপেক্ষী হয়ে আছে। মদ্রাসা পাশ অধিকাংশ ব্যক্তি নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এসব কাজের বাইরে কিছু চিন্তা করার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলে। ঘরে হুজুর রাখিয়ে পড়িয়েও বাচ্চার প্রকৃত ইসলামী শিক্ষার অবস্থা হয় অযথা মাসায়েলের ঘোরটোপে বন্দী কোন হুজুরের মতোই। ইসলাম যে কেবল মাসায়েলেই সীমাবদ্ধ নয় তা এ পৃথিবী বিগত তেরোশত বছর দেখলেও নিকট অতীত থেকে নিয়ে বর্তমান দেখছে এর উল্টোটা।

সন্তান ভাষা, অংক, সাইন্স, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি সকল বিষয়কে সাথে রেখেই ইসলামের শিক্ষায় বেড়ে উঠবে এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই দুর্ভাগা দেশে নেই বা থাকলেও হাতে গোনা। আর তাই একজন সুহৃদ ছোটভাই যখন বললো ডঃ তৌফিক চৌধুরীর সেভেন স্কাই স্কুল ঢাকায় আসতে যাচ্ছে তখন খুব ভালো লেগেছিলো।

ডঃ তৌফিক চৌধুরীর কিছু লেকচার ইউটিউবে শুনেছি। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় ডাক্তার ও একইসাথে ইসলামী স্কলার তিনি। মেডিকেলে চতুর্থ বছরে থাকা অবস্থায় পড়া স্থগিত রেখে মদীনা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন এবং সাত বছর পর শরীয়া বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ফিরে গিয়ে মেডিকেল শিক্ষাও সমাপ্ত করেন। ‘মার্সি মিশন’ নামে তাঁর একটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান আছে। ইসলাম বিষয়ে তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা বাংলাদেশে প্রায় অপরিচিত হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি একজন বিখ্যাত ইসলামী স্কলার ও ‘দায়ী’ বা আহবানকারী।

সেভেন স্কাই স্কুলটি প্রথমে মালয়েশিয়াতে খোলা হলেও কিছু জটিলতার জন্য সেখানে কার্যক্রম স্থগিত হয়। এরপর তৌফিক চৌধুরীর ব্যক্তিগত ও তাঁর পরিবারের প্রচেষ্টায় তা ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বারিধারা বসুন্ধরার ১১ নম্বর রোডে শুরু হয়েছে এর প্রাথমিক কার্যক্রম, জানুয়ারী থেকে ক্লাস শুরু হবার মধ্য দিয়ে যা পুরোদমে শুরু হবার কথা।

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে গত শুক্রবার পরিবার নিয়ে হাজির হলাম ওখানে। বড় দুটি বহুতল ভবন ভাড়া নিয়ে ক্যাম্পাস বানানো হয়েছে। রিসিপশনে আপাদমস্তক হিজাব ও নিকাবে ঢাকা এক বোনকে চমৎকার উচ্চারণে ইংরেজীতে কথা বলতে দেখলাম। ভালো লাগলো। শুধু রিসিপশন নয়, স্কুলের সকল মেয়েদের নিকাবসহ হিজাবে আবৃত দেখলাম। পুরুষদের অধিকাংশই শ্মশ্রুমণ্ডিত। সকলেই বাংলা ও ইংরেজীতে খুব সাবলীল। শুক্রবার দিনটি ছিলো বাচ্চাদের জন্য গেট টুগেদার ও মিলন মেলার মতো এবং পিতা-মাতার জন্য স্কুল সম্পর্কে ধারণা দেয়ার নানা আয়োজনে সাজানো। সকাল এগারোটা থেকে শুরু হয়ে এ সকল আয়োজন চললো বিকাল চারটা পর্যন্ত। আবশ্যিক আরবী গ্রামার থেকে শুরু করে প্রতি বয়স শ্রেণীতে কুরআনের বড় একটা অংশ পড়ানো ও শেখানো হবে বলে জানানো হলো। এর বাইরেও যারা হিফজ করতে চায় তাদের স্কুল সময়ের শেষে আলাদা আধঘন্টা সময় নিয়মিত ক্লাসের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করবে। এর সাথে থাকবে ইংরেজি, বাংলা, অংক, বিজ্ঞান সহ অন্যান্য সকল বিষয় যা কেম্ব্রিজ সিস্টেমের অনুসারী হবে। ডঃ জাকির নায়েক পরিচালিত মুম্বাইয়ের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এই সিস্টেমকেই কম বেশী অনুসরণ করে বলে জানি। আমরা যারা সেখানে গিয়েছে তারা মোটামুটি অভিভূত হলাম।

তবে সমস্যা দেখা দিলো স্কুলের বেতন ও ভর্তি ফি নিয়ে এবং অনেক পিতা-মাতাকে তখন আমার মতোই চুপসে যেতে হলো। স্কুলের ভর্তি ফি প্রায় নব্বই হাজার টাকা-তাও নাহয় মানা গেলো। কিন্তু বেতন ধরা হয়েছে মাসিক প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। হিসাব করে দেখা গেলো প্রথম ভর্তিতে কম বেশী পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হবে প্রতিটি শিশুর জন্য। সংখ্যাটা অনেকের জন্য কিছু না হলেও তা বোধ হয় এদেশের সাধারণ জনসাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দুঃখ নিয়েই ফিরে এলাম সেদিন।

তবুও আশায় আছি হোক এমন একটা স্কুল। চলুক তা ভালোভাবে। এমন সময় আল্লাহ্‌ দিন যেন আমার সাধ্য তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে কিংবা তাদের চাহিদা আমার সাধ্যের ভেতর নেমে আসে।

৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সেই পুরোনো সিনেমা

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০৮



ঘটনা হইতেছে, পাকিস্তান জ*গী পাঠাইয়া আক্রমণ করাইছে।

ভারত বলছে 'কাম কি করলি? তোর সাথে যুদ্ধ'। পাকিস্তান বলছে 'মাইরেন না মাইরেন না আমরা মারিনাই, ওই কুলাংগার জ*গীরা মারছে'

'আমরা আপনাগরে ওদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলেম কি? এ বিষয়ে বান্দার দায়িত্ব কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:১০




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প- ৯৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০১



নাম তার তারা বিবি।
বয়স ৭৭ বছর। বয়সের ভাড়ে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। সামনের পাটির দাঁত গুলো নেই। খেতে তার বেগ পেতে হয়। আমি তাকে খালা বলে ডাকি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়ি বুনো ফল-রক্তগোটা ভক্ষন

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০৫

পাহাড়ি বুনো ফল রক্তগোটা এর রয়েছে বিভিন্ন নাম-রক্তগোটা, রক্ত ফল, রক্তআঙ্গুরী, রক্তফোটা, রক্তজবা পাহাড়িরা আবার বিভিন্ন নামে ডাকে। এর ইংরেজী নাম ব্লাড ফ্রুট।











প্রতি বছর... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষমেষ লুইচ্চা হামিদও পালিয়ে গেলো!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩



৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয় ফেসিস্ট হাসিনা ও তার দল আম্লিগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির চোরচোট্টা নেতাকর্মীরা। অনেক চোরচোট্টা দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলো আম্লিগ সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×