এক।।
আমার এক ছাত্র সামী(নামটি কাল্পনিক) এবার বরিশাল মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। বাড়ী ছেড়ে হল জীবন শুরু করেছে একমাসও হয়নি। এর ভিতর তার সাথে সিলেট থেকে আর যেই দুজন ওখানে ভর্তি হয়েছিল তারা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গত ডিসেম্বরে বরিশাল গিয়ে ট্রান্সফার আবেদন করে সিলেট মেডিকেলে চলে এসেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে তখন তার মা তাকে ওদের সাথে যেতে দেয়নি। তিনি তখন যেতে দিলে ছেলেটা এখন হয়ত তর রুমে বসে কল অব ডিউটি খেলত। এইজন্য তো আন্টির মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমার এক বন্ধু সামীর ছোটবোনকে পড়ায়। তার মাধ্যমে এই খবর পেয়ে টিউশানি শেষ করে গেলাম আন্টিকে সান্তনা দিতে। গিয়ে মনে হল প্রায় চব্বিশ বছরের এই জীবনে প্রথমবারের মত মায়ের ভালবসার একফালি ধরা পড়ল। চোখের নীচে কালী, একেবারে চুপ হয়ে গেছেন আন্টি।
এতটাই বিমর্ষ তাকে লাগছিল যে রাতে রুমে ফিরে মনে হয়েছে এখনই যেই বাস পাই তাতেই বাসায় আম্মুর কাছে চলে যাই। কদিন আগে ফোনে শোনা আম্মুর বিমর্ষ কন্ঠটার কথা মনে পড়ছিল-"আব্বা তোমারে একটু দেখতে ইচ্ছে করছে।" আন্টিকে এই বলে সান্তনা দিয়ে এসেছিলাম - "আমি তো আপনার ছেলের মতই, সামী সাথে কথা বলতে হলে আমাকে একটা ফোন দিবেন, আমি চলে আসব।"
দুই।।
কিছুদিন আগে আন্টি আর আঙ্কেল গিয়েছিলেন বরিশাল, ছেলেটা তাদের কেমন আছে দেখার জন্য। যেদিন ফিরে এলেন সেদিন সামীর ছোটবোনকে পড়াতে গেলে আমাকে চা দিতে এলেন। তখন তিনি ক্যম্পাসে সামীকে কিভাবে দেখে এসেছেন তা বর্ননা শুরু করলেন। ভাল লাগল এই ভেবে যে তার চোখে বেদনার পরিবর্তে চকচক করছিল আনন্দ। ছেলে ভালই আছে। হলে সামীর রুম কেমন দেখলেন তার বর্ননা তিনি যা দিলেন তাই তুলে ধরব নীচে। তার কথার মাঝে আমর কথাগুলো লিখছি না।
দুইটা এপ্রন ময়লা হয়ে কালো হয়ে গিয়েছে। তাই পড়ে কলেজে যায়। আমি ঐ দুইটা এপ্রন হোটেলে নিয়ে এসে ধুয়ে দিয়েছি। হলের নিচেই লন্ড্রি। ওখানে রেখে আসলেই তো ধুয়ে দেয়।
ছোট্ট একটা রুম। ছয়জন থাকে। খাটটা এমন ভাবে রাখা যে ঘরে ঢুকতে হয় খাটের উপর দিয়ে। রুমের ভিতর খালি দড়ি আর দড়ি। এই মাথা থেকে ঐমাথা পর্যন্ত দড়ি বাধা আর দড়ির উপর কাপড় ঝুলছে। সবার কাপড় একসাথে। কিভাবে যে বুঝে কার কাপড় কোনটা কে জানে? আমি সামীকে একটা বড় প্লাস্টিকের হ্যঙার কিনে দিয়েছিলাম, রুমের দেয়ালে ঐটা আটকানোও আছে। কিন্তু কাপড় ঝুলছে ঠিকই সেই দড়িতে।
টেবিলের উপরে গতদিনেয় খাওয়া কলার ছোলা রাখা, ফেলেনি। আর কিছুদিন থাকলে ঐ টেবিলে বসে পড়তে পারবে ও? পিপড়ে কামড়াবে না?
টয়লেটের বেসিনের ট্যপটা নষ্ঠ। নিচের পানির যেই ভালভটা আছে সেইটা দিয়ে পানি ছেড়ে পানি ব্যবহার করে সবাই। ছেলেরা কয়জন মিলে তো ট্যপটা ঠিক করে নিতে পারে, একটা পানির মিস্ত্রিও তো ডাকা লাগে না। আমি মনে করছিলাম আমিই লোক ডেকে ঠিক করিয়ে দিব কিনা।
তিন।।
ঐদিন টিউশনি থেকে ফেরার পথে আমার নিজের খাটটার কথা মনে পড়ছিল। আমার মা যদি এভাবেই খাটটা দেখতে পেতেন, তার আমাকে নিয়ে গল্পটা কেমন হত?