somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ঘিরে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক বিতর্ক এবং কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা

০৭ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ইংরেজ আমলে উপমহাদেশে চালু হওয়া এই বিলাতী খেলা যতটা জনপ্রিয়তা এবং মিডিয়া আকর্ষণ পেয়েছে অন্য কোন খেলা ততটা পেতে পারেনি। দর্শক আগ্রহ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, মিডিয়া, অর্থ এই খেলাকে করে তুলেছে তুমুল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে যতটুকু পরিচিত পেয়েছে তার সিংহভাগ মূলত ক্রিকেটের সুবাদে। বিশ্বকাপের মত বৈশ্বিক ক্রীড়া আসরে বাংলাদেশ খেলেছে কেবল ক্রিকেটেই। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগে ও এর পর থেকে বাংলাদেশে এই খেলা নিয়ে যতটা প্যাশন তৈরি হয়েছে এরসাথে আর কোন খেলার তুলনা চলেনা বললেই চলে। বাংলাদেশ টিমের একেকজন ক্রিকেটার দেশের মানুষের কাছে একেকজন আইকন, এরাই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, এদের জয়ে আমরা আনন্দ করি আবার এদের পরাজয়ে আমরা বিমর্ষ হই।
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সাথে অবিস্মরণীয় সেই জয়, ২০০০ সালে মর্যাদাপূর্ন টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন, ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়া বধ, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে প্রথম রাউন্ডেই বিদায় করে দেওয়া সহ ক্রিকেটের সকল জয়ে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ উৎসবের আনন্দে ভেসেছে। দুঃখ-দারিদ্রপীড়িত এই দেশের মানুষ ক্রিকেটের মধ্যে খুঁজে পায় একটু আনন্দ, ক্রিকেট খেলা উপভোগ করে ক্ষণিকের জন্য ভুলে থাকতে চায় জীবনের সমস্যাগুলো। ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন মাঠে দর্শকদের উপস্থিতি এবং কোলাহল, পাড়ায় চায়ের দোকানে দল বেঁধে খেলা দেখা, ক্রিকেট নিয়ে বন্ধুদের আড্ডা মাতিয়ে তোলা, ইন্টারনেট/মোবাইলে ঘন ঘন স্কোর জেনে নেওয়া আমাদের জানান দেয় ক্রিকেটকে আমরা কতটা ভালোবাসি।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের ক্রিকেটের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। নানা ঘটনাপ্রবাহে বিতর্কিত হতে বসেছে আমাদের প্রানপ্রিয় এই খেলাটি। ফলে দেশের একজন সাধারন ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ হিসাবে বাকি সবার মত আমিও শংকিত দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়ে। একজন ক্রিকেটামোদী নাগরিক হিসাবে এই বিতর্ক এবং এসংক্রান্ত কিছু ভাবনা জানাতেই আজকের এই লিখার অবতারণা।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে বিসিবির সভাপতি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে লোটাস কামালকে (পুরো নাম আ হ ম মোস্তফা কামাল), যিনি মূলত একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসাবেই বেশি পরিচিত। রাজপথের আন্দোলনে অনুপস্থিত এই নেতা স্রেফ অর্থের জোরেই বাগিয়ে নেন নমিনেশন, সাংসদ হিসাবে নির্বাচিতও হয়ে যান। এরপর লাভ করেন দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবির সভাপতির পদ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গত আমলে (১৯৯৬-২০০১) বা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) বিসিবিতে যা হয়নি তা হওয়া শুরু হয় এই আমলে এসে। সাবের হোসেন বা আলী আজগর লবীর আমলে বিসিবি যতটা বিতর্কিত হয়নি তারচেয়ে অধিক বিতর্কের জন্ম দেওয়া শুরু করে লোটাস কামালের বিসিবি!
শুরু থেকেই হাস্যস্পদ বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে লোক হাসিয়েছেন এই ব্যক্তি, একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির চেয়ে বক্তৃতায় মেঠো ভাষনের ভাবটাই বেশি ফুটিয়ে তুলেন লোটাস কামাল। নানাসময়ে দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে গালভরা নানা বক্তব্য আর আশ্বাস দিলেও বাস্তবে আমরা কি দেখেছি? ঢাকার বাইরের ক্রিকেট উন্নয়নে তেমন কিছুই করতে পারেনি বিসিবি। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা সহ নানা জায়গার স্টেডিয়ামে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা দেখিনি কোন কার্যকর ভূমিকা। ঢাকাকেন্দ্রিক ক্রিকেট হওয়ায় ঢাকার বাইরের সমস্যাগুলো সমাধানে সবসময়ই দীর্ঘসূত্রিতা আর অনীহা দেখিয়ে চলেছে বর্তমান বিসিবি আর ক্রীড়া মন্ত্রনালয়।
এতো গেলো অবকাঠামোগত সমস্যা; এর বাইরেও নানা ঘটনায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিসিবি। আমি বিস্তারিত কাহিনী ব্যাখ্যায় যাবোনা, শুধু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার দিকে আলোকপাত করতে চাই।

সম্প্রতি দেশে আয়োজিত হয়ে গেলো আইপিএলের আদলে টি২০ ক্রীড়া আসর বিপিএল। অর্থের অপচয় করে পুরোপুরি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আয়োজিত এমন আসর দেশের ক্রিকেটকে কতটুকু এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে তা এখনো অনেকের মনে প্রশ্নসাপেক্ষ, যাইহোক, এটি নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতেও অনেক আলোচনা হয়ে গেছে। আমি শুধু বলতে চাই, বিপিএল আসরের শেষদিকে এসে আমরা কি দেখলাম? বিসিবির অদক্ষ আর অযোগ্য কর্মকর্তারা জন্ম দিলেন একের পর এক নাটক! টেকনিক্যাল কমিটি নামের 'তামাশা কমিটি' বাইলজের দোহাই দিয়ে বারবার তৈরি করেছে বিতর্ক, এই বিতর্কে আরো ঘি ঢেলে দেয় একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া লোটাস কামালের বক্তব্য। যেটিকে উনার ব্যক্তিগত মতামত ও পছন্দ বলে আবার উড়িয়ে দেয় টেকনিক্যাল কমিটির লোকজন। সমস্যা আরো ঘনীভূত হয় যখন চিটাগং কিংস ফ্র্যাঞ্চাইজের মালিক চট্টগ্রামের দলটিকে সেমি থেকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে আইনের আশ্রয় নেন, যদিও হাইকোর্ট রিট আবেদন খারিজ করে দেয় তবুও বিষয়টি যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দেয় এবং বিপিএল সহ সামগ্রিক অর্থে বিসিবিকেই ফেলে দেয় বিতর্কের মুখে। পরবর্তীতে বিসিবি সভাপতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিককে বিপিএল আসরে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেই ক্ষান্ত দেন!
এর পাশাপাশি বিপিএলে যুক্ত হয়েছিল ক্রিকেটের কলংক স্পট ফিক্সিং কেলেংকারি, বিপিএল চলাকালীন মাঠ থেকে পাকিস্তানি নাগরিক সাজিদ খানের গ্রেফতার ও তার সাথে চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজির এক পাকিস্তানি ক্রিকেটারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের তথ্য বিপিএল আসরে জন্ম দেয় অনেক বিতর্কের। এছাড়া বিপিএল শুরুর আগে সাবেক এক বাংলাদেশি ক্রিকেটার মারফত ঢাকার অধিনায়ক মাশরাফির কাছে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব নিয়েও চলেছে ব্যাপক গুঞ্জন। এখানেই শেষ নয়, বিপিএলে অনিয়ম নিয়ে ক্ষুব্ধ মন্তব্য করার কারনে বিসিবি সভাপতি শাস্তির ঘোষনা দেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বিরুদ্ধে! নির্মম সত্যগুলো সাহস করে বলাটাই কাল হলো যেন মুশফিকের জন্য, ফলে তাকেও পড়তে হয়েছে বিসিবি সভাপতির রোষানলে।
এরপর পাকিস্তান সফরে দল প্রেরণ নিয়ে বিসিবি সভাপতি শুরু করেন আরেক নাটক, দেশের মানুষ সহ সচেতন ব্যক্তিগণ যখন চায়না ঝুঁকি নিয়ে দল পাকিস্তানে যাক তখন স্রেফ আইসিসির পদের লোভেই দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চাইছেন লোটাস কামাল। পাকিস্তানে 'নিরাপত্তা বিশ্লেষক' দল পাঠিয়ে উনি ঘোষনা দেন পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিসিবি সন্তুষ্ট। এটা আগে থেকেই আন্দাজ করা গিয়েছিলো এমন কিছুই বলা হবে, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ দল পাঠানো ছিলো কেবলমাত্র আইওয়াশ। এরই মধ্যে জাতীয় দলের কোচ স্টুয়ার্ট ল ঘোষনা দিয়ে বসেন দলের সাথে পাকিস্তানে যাবেননা উনি! দেশের সচেতন মানুষেরাও নানা মিডিয়া, ব্লগ, পেপারে জানাতে থাকেন তারাও চাননা দল পাকিস্তানে যাক। আমরা দেখেছি যখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জঙ্গীবাদ অধ্যুষিত আর সমস্যাশংকুল পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলতে যেতে চায়নি তখন পাকিস্তানের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলংকা। বিনিময়ে লাহোরে শ্রীলংকান ক্রিকেটারদের পড়তে হয়েছে হামলার মুখে! এরপর আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়া পাকিস্তানের ক্রিকেট পড়ে যায় সমস্যার ঘেরাটোপে। এখনো সেখানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রিকেট আয়োজনের উপযোগী নয় বলেই বিশ্লেষকরা মতামত দিয়েছেন। এমতাবস্থায়, কোন স্বার্থে বিসিবি সভাপতি দেশের ক্রিকেটারদের ঠেলে দিতে চাইছেন বিপদের মুখে? আইসিসির যে পদের লোভে তিনি এহেন কাজ করছেন সেই পদের ক্ষমতা নানাভাবে ইতিমধ্যেই খর্ব করা হয়েছে, লোটাস কামালের অযোগ্যতা জেনেই এই কাজটা করা হয়েছে কি না এটাও নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তবুও তিনি ক্ষান্ত দিচ্ছেননা, দলকে পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যাপারে উনার অতি-উৎসাহী মনোভাব জন্ম দিয়েছে নতুন বিতর্কের। অনেকে হয়তো এই সিদ্ধান্তকে ডিফেন্ড করার জন্য বলতে পারেন মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের ক্রিকেট দল কেন জঙ্গিদের টার্গেট হবে? কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে জঙ্গীদের কোন ধর্ম নেই, এরা ধর্মকে ব্যবহার করে চরমপন্থা আর উদ্দেশ্যপূরনের হাতিয়ার হিসাবে। জঙ্গীবাদি হামলা যখন হয় তখন কিন্তু ধর্ম বিবেচনা করে এরা হামলা চালায় না, এদের হামলায় মারা পড়ে সাধারন নিরীহ মুসলমানরাও। সেখানে আমরা আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ক্রিকেটারদের এরকম ঝুঁকির মুখে কেন ঠেলে দিবো সেটা আমাদের সবাইকে ভেবে দেখতে হবে। ক্রিকেটাররাও আমাদের কারো না কারো ভাই-সন্তান-বন্ধু, এদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়ে বিসিবি সভাপতি কোন খেলায় মেতে উঠতে চান?

ক্রিকেট বিতর্কের সর্বশেষ এবং নতুন সংযোজন বিসিবির প্রধান নির্বাচক আকরাম খানের পদত্যাগ। দল নির্বাচনে বারবার বিসিবি সভাপতির অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদেই এই পদত্যাগ বলে আকরাম খান জানিয়েছেন। আসন্ন এশিয়া কাপের জন্য নির্বাচকদের ঠিক করা দল থেকে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়া নিয়েই এই নতুন বিতর্কের সূচনা, এই বাদ দেওয়ার ঘটনাটা লোটাস কামালের সরাসরি হস্তক্ষেপে ঘটেছে। বিদেশে বসে লোটাস কামাল নিজের মতামত চাপিয়ে দলে পরিবর্তন এনেছে আর এরই প্রতিবাদে আকরাম খানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। যদিও আকরাম খানের মোটিভ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, নিজের ভাতিজাকে বাদ দিয়েছে বলেই উনার এত ক্ষোভ এটাও অনেকে বলছেন। এর আগে বিসিবি সভাপতি নানাসময়ে দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে অনেককে দল থেকে বাদ দিলেও তখন আকরাম খান কেন প্রতিবাদ করেননি এটাও একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায়। তখন উনি চুপ থাকলেও এখন নিজের ভাতিজার উপর কোপ পড়ায় উনি ক্ষেপেছেন কিনা এটাও ভেবে দেখতে হবে।
তবে এই প্রতিবাদের মোটিভ যেটাই হোক না কেন, বিসিবি সভাপতি স্বেচ্ছাচারিতার আরেকটা নজির এর মাধ্যমে প্রকাশিত হলো, দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং নিজের পছন্দমত দল সাজানো লোটাস কামালের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। যদি সভাপতিই দল নির্বাচন ও দলে কাটাছেঁড়া করবেন তাহলে নির্বাচক কমিটি কেন আছে? এরা কি তাহলে স্রেফ স্বাক্ষী গোপাল? বিসিবি সভাপতির এরুপ কর্মকান্ড আমাদের দেশের ক্রিকেটকেই ঠেকে দিচ্ছে বিতর্কের মুখে।
বিসিবিতে অবস্থান পাকাপোক্ত করার মানসিকতা নিয়ে বিসিবির সংবিধান সংশোধন করে সাবেকদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। ক্রিকেটের সংস্থা বিসিবিতে ক্রিকেটারদেরই করে তোলা হয়েছে অপাংক্তেয়! বিসিবি সভাপতির খেয়াল-খুশীর মর্জিতে এই সিদ্ধান্ত। অনেকেই আশংকা করছেন উনি নিজের পছন্দের ধামাধরা লোকদের বিসিবিতে বসাতেই এরুপ কাজ করেছেন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সাবেক ক্রিকেটাররা ইতিমধ্যেই এক প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছেন এবং কঠিন কর্মসূচি দিতে চলেছেন। এখন আকরাম খানের এই পদত্যাগ এবং আকরামের সমর্থনে সাবেক ক্রিকেটার এবং নির্বাচক রফিকুল হক ও ফারুক আহমেদের বিবৃতি এই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে অনেকে ধারনা করছেন। যদিও বাকি দুই নির্বাচক সুমন-নান্নু অপেক্ষা করছেন বিসিবি সভাপতির দেশে ফেরার এবং 'ভবিষ্যতে দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা হবেনা' এধরনের মুচলেকা আদায়ের, তবে তা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে বা আদৌ সভাপতি সাহেব এধরনের কোন মুচলেকা দিবেন কি না তা সময়ই বলে দিবে। আগামীতে এই ইস্যু নিয়ে বিতর্ক নতুন মাত্রা পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।

উপরোক্ত ঘটনাপ্রবাহ নিঃসন্দেহে আমাদের ক্রিকেটের জন্য শংকার কারন। আধুনিক ক্রিকেটে বিতর্ক থাকবেই, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে একটা বিতর্ক জন্ম দেয় নতুন বিতর্কের, যা আমাদের ক্রিকেটের চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। অযোগ্য ও একগুঁয়ে বিসিবি সভাপতির নানা কর্মকান্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আমাদের দেশের ক্রিকেট, ক্রিকেটপ্রেমী জনতার মনে একেঁ দিচ্ছে বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
আলোচিত শেয়ারবাজার কেলেংকারি অন্যতম নেপথ্য নায়ক এই লোটাস কামাল পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করে এখন শুরু করেছে্ন দেশের ক্রিকেটকে বিতর্কিত করা। কোনদিকে চলেছে আমাদের ক্রিকেট? দেশের অন্যান্য ক্রীড়াক্ষেত্রে যখন বিরাজ করছে সীমাহীন অনিয়ম ও অবহেলা সেখানে ক্রিকেটকে আশ্রয় করেই আমরা স্বপ্ন দেখছিলাম, আমাদের প্রাণের অনুষঙ্গ এই জনপ্রিয় খেলাটিও কি তাহলে শেষ হয়ে যেতে বসেছে?
কতিপয় লোকের স্বার্থ আর লোভের বলি হতে চলেছে আমাদের ক্রিকেট। অনিয়ম আর দূর্নীতি ঝেঁকে বসেছে এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে, ক্রিকেটের শরীরে বাসা বেঁধেছে অনিয়মের ক্যান্সার। এই ক্যান্সার সময় থাকতেই প্রতিরোধ করতে হবে, আমাদের প্রিয় খেলাটিকে শেষ হয়ে যেতে দেওয়া যাবেনা। এজন্য দরকার নাগরিক জনমত এবং সচেতনতা।
প্রয়োজনে সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাঁচাতে হবে আমাদের দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটীয় সংস্থা বিসিবিকে। লোটাস কামালের মত অযোগ্য লোকেরা আজ রাজত্ব করছে দেশের সর্বত্র, এরাই আজ দন্ডমুন্ডের কর্তা। এদের হাতে আমরা কি ছেড়ে দিতে পারি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে?
দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে তাই আসুন আমরা সচেতন হই, নিজ নিজ অবস্থান থেকে এসকল বিতর্কিত কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাই। জনগণ এবং মিডিয়া সম্মিলিতভাবে সচেতন হলে সরকার বাধ্য হবে এসকল বিতর্কিত কর্মকান্ড বন্ধ করতে। কারন বর্তমান অবস্থায় কেবলমাত্র কর্তৃপক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপই পারে বিদ্যমান অচলাবস্থা এবং বিতর্কের অবসান ঘটাতে। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে আসুন তাই একত্রিত হই।


৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×