বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ হলেও সবচেয়ে দাপুটে ঋতু হচ্ছে বর্ষা। প্রকৃতিতে পরিবর্তনের হাওয়া লেগে বর্ষা এখন শরত্ জুড়ে দীর্ঘায়িত। মেঘের গুরুম গুরুম আওয়াজ, সাথে ঝমঝমানি বৃষ্টি। কখনও টিপ টিপ, কখনও ঝরঝর, কখনও সাঁ সাঁ বেগে। সকাল-সন্ধ্যা দিগন্ত জুড়ে কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। বিজলী চমকে ওঠে থেমে থেমে। বজ্রের কান ফাটানো আওয়াজে ধরিত্রী কেঁপে ওঠে। বিজলী চমকে গিয়ে যখন গগনবিদারী আওয়াজ হয় তখন আমরা বলি ঠাটা পড়ছে। এই ঠাটা পড়াকেই বাজপড়া বা বজ্রপাত বলে । শহর এলাকায় সাধারণত উঁচু টাওয়ার বা উঁচু দালানের উপর এটি পতিত হয়। ঐসব স্থাপনায় বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা থাকে বলে ক্ষয়ক্ষতি হয় না।কালবৈশাখীর সময়। আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি। ঝোড়ো হাওয়া আর তার সঙ্গে কয়েক পশলা ঝেপে বৃষ্টি। সব বেশ রোম্যান্টিক সন্দেহ নেই। তবে মাঝে মধ্যেই বাজ পড়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনা এর তাল কেটে দেয়। বাড়ির মধ্যে থাকলেও তাও কিছুটা বাচোয়া। তবে রাস্তায় থাকাকালীন এমন পরিস্থিতি সামনে পড়লে কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন তার কয়েকটি উপায় জানাচ্ছি।
***পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিন ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু জায়গায় না থাকাই ভালো। এ অবস্থায় সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোনো দালানের নিচে আশ্রয় নিতে পারেন।
*** উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকুন বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এ সব জায়গায় যাবেন না বা কাছাকাছি থাকবেন না। ফাঁকা জায়গায় কোনো যাত্রী ছাউনি বা বড় গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি থাকে।
*** জানালা থেকে দূরে থাকুন বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতর থাকুন।
***ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলুন বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাতের সময় এগুলোর সংস্পর্শ এসে অনেকে আহত হন।
***টিভি-ফ্রিজ থেকে সাবধান বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরবেন না। বজ্রপাতের আভাষ পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখুন।
***গাড়ির ভেতর থাকলে... বজ্রপাতের সময় রাস্তায় গাড়িতে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করুন। যদি প্রচণ্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টির সম্মুখীন হন তবে গাড়ি কোনো গাড়িবারান্দা বা পাকা ছাউনির নিচে নিয়ে যান। এ সময় গাড়ির কাঁচে হাত দেয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
***ঝড়-বৃষ্টির সময় রাস্তায় পানি জমাটা আশ্চর্য নয়। তবে বাজ পড়া অব্যাহত থাকলে সে সময় রাস্তায় বের না হওয়াই মঙ্গল। একে তো বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। উপরন্তু কাছাকাছি কোথাও বাজ পড়লে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।
***খালি পায়ে বা পা খোলা জুতো নয় বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। যদি একান্ত বেরোতেই পা ঢাকা জুতো পড়ে বের হোন। রবারের গাম্বুট এ ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো কাজ করবে।
***চার পাশে খেয়াল রাখুন বজ্রপাতের সময় রাস্তায় চলাচলের সময় আশেপাশে খেয়াল রাখুন। যে দিকে বাজ পড়ার প্রবণতা বেশি সে দিক বর্জন করুন। কেউ আহত হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।