বাস্তবতা বদলানোর কাব্য সম্ভার
রবিন শাহের নির্বাচিত কবিতা ২০১৭
--জোকার--
জোকার ! সে যে এই জগত মঞ্চের মধ্যমনি
জোকারের চেয়ে উপকারী বান্ধব আর কেউ নেই
“প্রেমিক” যেমন মাছেদের বরশী থেকে মুক্ত করে আনন্দ সমুদ্রে ছেড়ে দেয়
জোকারও তেমনি , দর্শকদের মন টা দুঃখ থেকে আলগা করে শুন্যে মিলিয়ে দেয়
আর যা পরে থাকে তা শুধুই বিশালতা আর আনন্দ ।
কখনই জোকারের আনন্দ বাহিরে মিলিয়ে যায় না ,
কারন তার বাহির বলে আসলে কিছু নেই ,
এই “জগত মঞ্চ” , এই “দর্শক” সবাইকে সে তার ভেতরের সত্তা মনে করে
তাই সে যখন আনন্দ ছড়িয়ে দেয় , সে আসলে নিজের ভেতরেই তা ছড়িয়ে দেয় ।
--অমূল্য দান--
বলেছিলে তুমি- কি দিতে পারি আমি ?
শিশুর সরলতায় তোমায় শুধু হাসাতে পারবো
হাসতে হাসতে আমরা উড়ে বেড়াব- আকাশ থেকে আকাশে আকাশে
আর ভাসবো শুধু ভালোবাসার বাতাসে ।
--ধ্যান-১--
ও মন! চলো যাই শুন্যেরও বাজারে
ফাকা হবো , নিশ্চিহ্ন হবো , আর না কিছু ধরে রবো
খোলামেলা এক হাওয়ার মত উদার হবো , হারিয়ে যাবো
কিছুই না আর চাবো রে মন , কিছুইনা আর দিবো
বন্ধ হবে লেনা দেনা , আর রইবো না এ সংসারে
বলা হবেনা , শোনা হবে না , জানা হবেনা , বুঝা হবে না , যাওয়া হবেনা , আসা হবে না
চিন্তা ভাবনা কিছুই হবেনা ।
কিছুইনাতে বিলিন হবো , ফাকারো মাঝারে
চলো মন শুন্যেরো বাজারে ।
খোজার কিছু নাই , বুঝার কিছু নাই , তাড়া হুড়া নাই , ব্যস্ততা নাই
শুধু আমি আমাকে হারাই , শুন্যে মিলাই ।
--ধ্যান-২--
প্রত্যেক শ্বাসে মাতাল
প্রত্যেক প্রশ্বাসে পাগলামী ।
প্রত্যেক শ্বাসে প্রশান্তি
প্রত্যেক প্রশ্বাসে ত্যাগ ।
প্রত্যেক শ্বাসে তৃপ্তি
প্রত্যেক প্রশ্বাসে যতন ।
প্রত্যেক শ্বাসে গর্ব
প্রত্যেক প্রশ্বাসে হাসি ।
প্রত্যেক শ্বাসে ঝরো হাওয়ায় ওড়া উড়ি
প্রত্যেক প্রশ্বাসে উবে যায় সব জঞ্জাল ।
প্রত্যেক শ্বাসে স্পন্দনে চুম্বনে শরীরে খেলে যায় বিদ্যুৎ
প্রত্যেক প্রশ্বাসে ভেঙে যায় ঘৃনার দেয়াল ।
প্রত্যেক শ্বাসে প্রেমানন্দে ভরপুর হৃদয়
প্রত্যেক প্রশ্বাসে বেরিয়ে যায় দ্বিধা অবিশ্বাস ।
প্রত্যেক শ্বাসে ছন্দ আনন্দ
প্রত্যেক প্রশ্বাসে অটল মূর্তি ।
প্রত্যেক শ্বাসে ঝর্না ফোয়ারা
প্রত্যেক প্রশ্বাসে স্থির নামে জল ।
--দৃষ্টি ভঙ্গি--
যখনই আমি কারো সাথে কথা বলি বা কিছু করি , তখনই শারীরিক মানোসিক কাঠামোর মধ্যে বন্দি হয়ে যাই ।
যত বেশী আমি শারীরিক মানোসিক অবয়ব দ্বারা প্রভাবিত হবো , আসক্ত হবো , তত দ্রুত দাসত্ব বরন করে নিবো , আমার দুর্বলতা প্রকাশের মাধ্যমে । এমনটি ঘটে থাকে কারন আমি প্রকাশ্য এই জগতটাকে আসলে বিচ্ছিন্ন মনে করি , বাহির মনে করি । যে “ঢেউ” নিজেকে বিশেষ আলাদা কিছু মনে করে সে অচিরেই উবে যায় , শেষ হয়ে যায় , আর যে নিজেকে “সমুদ্র” মনে করে , তার বিনাশ নেই , সে বয়ে চলে উত্তাল প্রেমানন্দে । বাস্তবতা হচ্ছে - বাহির বা ভেতর বলে আসলে কিছু নেই , সবই “এক অখন্ড আমি” সত্তা , এ জগত আমার শরীর , যেখানে পরম মমতায় সমস্ত খন্ড শরীর আমার আশ্রয়ে আছে , এ বিরাট বোধই হৃদয়ে আনন্দ বন্যা বইয়ে দেয় ।
--আনন্দের শর্ত--
এ জগত সংসার আমার ভালোবাসা। এ সমগ্রকে দিয়ে যেতেই আমার ভালো লাগে , এই ভালোলাগায় আমি মুক্ত থাকি চাওয়া পাওয়ার যাতনা থেকে , জগতে মুক্ত থাকার চেয়ে আনন্দের কিছু নেই ।আমার কাছে আলাদা বিশেষ বলতে কিছু নেই , আমি তো হারিয়ে গেছি ভেতর বাহির জুড়ে এক অখন্ড প্রেমের অনন্ত আনন্দে ।
প্রেমানন্দে মাতাল হৃদয় আমার হাসতে হাসতে আনন্দ ছড়িয়ে দেয় । তারপর ঝর্না ধারার মতো অঝর ধারায় নয়ন বেয়ে ঝরে পরে । আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে , এ ধারায় করো স্নান মনে প্রানে।
ওদিকে অতৃপ্ত মন তৃপ্তি পেতে , বিশেষ কিছুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরে , যেমন এক ফোটা শিশির একটি সামান্য পাপড়ির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সমস্ত গোলাপ বাগানের সৌরভ হারায় । খন্ডকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অখন্ডের আনন্দ প্রসাদ থেকে বঞ্চিত হয় , “তীব্র আসক্তি” তাকে সামান্য পাপড়ির দাসে পরিনত করে অথচ সেও ঝর্না ধারায় বিলিন হয়ে ঝর্নাধারা হতে পারতো , অবাধ অগাধ হতে পারতো , আত্মনির্ভরশীল মক্ত মহাপ্রান হতে পারতো।
--মন্ত্র--
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি-
আমি বিশ্বের নাম্বার 1 ধনী
আমার চেয়ে ভাগ্যবান আর সুখি কেউ নাই ।
--গুরুত্ব--
বাদামের খোসা , ডিমের খোসার চেয়ে এর ভেতরের প্রানটা যেমন গুরুত্বপুর্ন
তেমনি মানুষের বাহিরের অবয়ব নয় বরং তার ভেতরের প্রানটা গুরুত্বপুর্ন
এক মহাপ্রান “প্রেমানন্দ” আবেগে সবার মাঝে বিরাজমান
সে আবেগের জোয়ারে ভেসে গেলেই আনন্দ আর আনন্দ !
--মানুষ--
“মানুষ” পরমের প্রকাশ্য রূপ
তাই মানুষকে দিও চরম সম্মান
মানুষের সেবা করিলে পরমেরই সেবা করা হয়
সদা সর্বদা , রাখিও তার সাথে- প্রেমানন্দ কৌতুক ভাব ।
--চেতনা--
ত্যাগের আনন্দ ছড়িয়ে দাও চারিদিকে
দেখবে “সারা জাহান” নতজানু তোমার চরনে ।
অথচ “কাম ভাব” বাহিরে বেরিয়ে পরলে
বরন করে নিতে হয় সারা জাহানের দাসত্ব , নিজেরও অজান্তে
তাই “কাম ঘোড়া” রে শুধু গোপন রেখো নিজেরও ভেতরে ,যাতে থাকো বলবান
“কাম” ছাড়া সমস্ত শক্তি অচল ।
আর পাগলের না আছে “কাম ভাব” , না আছে “প্রেম ভাব”
তার “বিকলাঙ্গ ভাব” থাকে শুন্যে ঝুলে ।
--বিশ্বাসের সুধা--
এক গ্লাস পানিকে বিষাক্ত করতে , এক ফোটা বিষই যথেষ্ট
এক বুক ভালোবাসায় যন্ত্রনা আনতে , এক বিন্দু ঘৃনাই যথেষ্ট
অগাধ বিশ্বাসকে কাবু করতে , একটু সন্দেহই যথেষ্ট ।
--ধনী ও গরীব--
যে ব্যক্তি যত দরিদ্র , সে ব্যক্তিকে তত বেশী ব্যক্তি স্বার্থে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়
যে ব্যক্তি যত ধনী , সে ব্যক্তিকে তত বেশী ব্যক্তি স্বার্থ ত্যাগ করে সামাজিক উন্নয়নে ব্যাস্ত থাকতে দেখা যায় ।
--শক্তিমান--
১০০ নারীর মন নিয়ন্ত্রন করে যে পুরুষ
সে পুরুষ নয় সাধারন , সে মহাপুরুষ ।
--বিশালতা--
প্রেমিকের হৃদয় মহাসমুদ্রের মত অনন্ত উত্তাল
যেখানে হিমালয় পর্বতও অনায়াসে আশ্রয় পেয়ে যায় ।
--“সুখ”--
“সুখ” যেন একটা মোমবাতির আলো
বাহিরের বাতাসে “মোমবাতির-আলো” নিজেকে মেশালেই নিভে যায়
ঠিক এভাবেই , “মন” বাহিরের “সুখ” তালাশ করলে , বিনিময়ে পায়- দুঃখ
“মন” বাহির থেকে কিছু আশা করলে , বিনিময়ে পায়- নৈরাশা
“মন” ব্যক্তির থেকে কিছু পেতে চাইলে , বিনিময়ে পায়- “যন্ত্রনা” ।
অথচ যে “মন” নিজের ভেতরে “সুখ”কে পেয়ে গেছে , সে আর বাহিরের জ্বালে বন্দি নয়
বাহিরের থেকে তার চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নেই
বরং সে কেবল তার ভেতরের “সুখ” বাহিরকে দিয়ে যায় ।
--ঝর্না ফোয়ারা--
আমি হচ্ছি- এক ঝর্না ফোয়ারা
যে কিনা প্রতি মুহুর্তে , প্রেমানন্দ দিয়ে এ জগতকে ভিজিয়ে দিচ্ছে ।
--বাঘ বন্দি--
ব্যক্তি স্বার্থবাদী , সামাজিক স্বার্থবাদীর হাতে বন্দি
সামাজিক স্বার্থবাদী , স্বার্থের জালে বন্দি
অথচ এই “দুই বন্দি” আধ্যাতিক প্রেমিকের ভেতরে আশ্রিত ।
একজন “প্রকৃত প্রেমিক” , এই উভয়কেই পরিপুর্নতা দান করে ত্যাগের মাধ্যমে
তার “ত্যাগ” তাকে রাখে-
দিল খোলা হাওয়ার মত খোলামেলা ।
--করোনা তালাশ—
সুখ করেনা সুখের তালাশ
বরং “যন্ত্রনা” , তালাশ করে করে মরে ।
সৎ করেনা সত্যের তালাশ
বরং “অসৎ” , তালাশ করে করে মরে ।
জীবন করেনা জীবনের তালাশ
বরং “মরন” , তালাশ করে করে মরে ।
বিশ্বাসী করেনা বিশ্বাসের তালাশ
বরং “সন্দেহবাদী” , তালাশ করে করে মরে ।
প্রেম করেনা ভালোবাসার তালাশ
বরং “ঘৃনা” , তালাশ করে করে মরে ।
সরল করেনা সরলতার তালাশ
বরং “জটীল” , তালাশ করে করে মরে ।
ভদ্র করেনা ভদ্রতার তালাশ
বরং “অভদ্র” , তালাশ করে করে মরে ।
বিশ্রাম করেনা বিশ্রামের তালাশ
বরং “অলস” তালাশ করে করে মরে ।
নিখুত করেনা নিখুতের তালাশ
বরং “খুত” তালাশ করে করে মরে ।
সমুদ্র করেনা বিশালতার তালাশ
বরং “সংকীর্ন মন” , তালাশ করে করে মরে ।
হিমালায় করেনা উচ্চতার তালাশ
বরং “ছোট লোক” , তালাশ করে করে মরে ।
ফুল করেনা সৌন্দর্য্য ও সৌরভের তালাশ
বরং “পরশ্রীকাতর” , তালাশ করে করে মরে ।
বাঘ করেনা শক্তির তালাশ
বরং “দুর্বল” , তালাশ করে করে মরে ।
মুক্ত আকাশ করে না মুক্তির তালাশ
বরং “বদ্ধ হৃদয়” , তালাশ করে করে মরে ।
“তৃপ্ত” করেনা তৃপ্তির তালাশ
বরং “অতৃপ্ত” , তালাশ করে করে মরে ।
“কামদেব” করেনা কামের তালাশ
বরং “বিভ্রান্ত” ,তালাশ করে করে মরে ।
জোকার করেনা কৌতুকের তালাশ
“মিষ্টার সিরিয়াস” তালাশ করে করে মরে ।
--আপন পর--
সমুদের কাছে নেই- দূরে কিংবা কাছে
সমস্ত মাছেরা এক সমুদ্রের বুকে বয়ে বেড়ায় সুন্দর ।
--মজাদার সেবা--
Mr.Joker এর Funny Love ,
Mr.Perfect এর Serious Love থেকে সব সময়ই আমার কাছে এগিয়ে থাকবে ,
কারন আমি যুক্তির থেকে আনন্দাবেগকে বেশী পছন্দ করি ।
--নিয়ন্ত্রন--
আমি আছি তো দুনিয়া আছে , আমি নাই কিছু নাই
আমি দুনিয়াতে না , বরং দুনিয়া আমাতে
আমি গাছ হলে , দুনিয়া আমার পাতা
দুনিয়া ঢেউ হলে , আমি সমুদ্র
আমি গাড়োয়ান হলে , দুনিয়া আমার ঘোড়া , আর আমার লাগাম হলো “ত্যাগ”
লাগাম হাত ছাড়া করলে , আমি ভোগি হয়ে যাই
লাগাম হারিয়ে ধপাস করে নিচে পরে যাই ,
আর দুনিয়া মানে ঘোড়ার লাথি খেতে খেতে জীবন যায় ।
--Don’t Mind--
শীত মনে করলে শীত আছে , না মনে করলে শীত নাই
ভারী মনে করলে ভারী , না মনে করলে কোন ওজন নাই
কিছু মনে করলে “কিছু” আছে , কিছু মনে না করলে কিছুই নাই
সমস্যা মনে করলে সমস্যা , না মনে করলে সমস্যা নাই
ব্যাথা মনে করলে ব্যাথা আছে , না মনে করলে ব্যাথা নাই
--প্রেম কামনা—
বস্তু দেখলে – “প্রেম” জাগে
প্রেম জাগলে – “কাম” আসে
কাম আসলে – “আনন্দে” ভাসে ।
--নাঙ্গা সাধক—
জিজ্ঞাসিলাম এক অখন্ড প্রেমিককে-
“এমন তীব্র শীতেও উদাম আছেন , শীত করে না?”
তিনি বললেন- “আমিই এই সমগ্র , সদা সর্বদা উদাম , খোলামেলা
যার বাহির বলতে কিছু নাই , যার ভেতরে শীত
তারে বাহিরে আর ছোবে কি?”
--ভোগ ও ত্যাগ--
মহাশূন্যের বিশালতার আনন্দে , আমি ধারন করি এ শরীর
আমিই ত্যাগী , কারন আমি যখন শরীরের যতন করি ,
তখন শরীর আমার থেকে যতন নিয়ে ভোগ করে ।
এ শরীরের যতনে যে উদাসীন , সে আসলে ঘৃনায় আবদ্ধ এক গুমোট পাথর
আর শরীরের যে যতন করে সে প্রেমিক , সে মুক্ত মহাপ্রান ।
-দৃষ্টিভঙ্গি--
চাওয়া পাওয়ার কারাগারে- আমার দৃষ্টি বন্দী হয়ে গেলে
বেড়ে যায় আমার কষ্ট ।
অথচ শুধু দিয়ে যেতে পারলে
আমিও উড়ে বেড়াতে পারতাম ঐ পাখির মত মুক্তানন্দে ।
--প্রেম চর্চা--
দেখো এ বাহির , দেখো ভেতরও
সবত্রই তুমি দেখতে পাবে- “প্রেম” কি করতে পারে!!
সে শুধু অকাতরে দিয়েই যায় , তার বিশালতার কোন সীমা নেই
হে মন! হারানোর ভয়ে অযথা কেন উত্তেজিত?
তোমার কি আছে যে হারাবে?
যা কিছু নিয়ছো , এখান থেকেই নিয়েছো , যা কিছু দিয়েছো এখান থেকেই দিয়েছো
এমনকি এই শরীরটিও , প্রেমই তোমাকে গড়ে দিয়েছে
কেউ চীরকাল বাচে না , আকড়ে ধরে থাকার কিছু নেই
শেষ পর্যন্ত এই শরীরটাও , এই প্রকৃতি এই প্রেমকে দিয়ে চীরকালের জন্য বিদায় নিতে হবে।
অতএব দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন বাস্তবতা নেই ।
--অধিকার--
সবারই আছে অধিকার
পূর্নতা পাবার ।
“প্রেম” দিতে দিতে- হৃদয়ে বইয়ে দিক আনন্দ হিল্লোল
“কামনা” পেতে পেতে- শরীরে আনুক ব্যাঘ্র শক্তি
“কামনা” প্রেমের টানে সাড়া দিক
যেমন বাশরীর ডাকে বাশী সাড়া দেয় ।
“তীব্র আবেগ” হয়ে যাক সমুদ্র উত্তাল
“যুক্তি” ধারালো ছুরির মত ফালা ফালা করে কেটে দিক- ঘৃনার যত ফাদ ।
--কথা-বার্তা—
মানুষ স্বয়ং এক মহাপ্রানের প্রকাশ
মানুষকে ভালোবাসলে পরমকেই ভালোবাসা হয়
প্রানে প্রান মেশালে পরমানন্দ পাওয়া যায় ।
--প্রেম রসিক--
রোম যখন পুরছিল
সম্রাট নিরো তখন বাশী বাজাচ্ছিল
সম্রাট নিরো, প্রেম রসিক ছিল ।
প্রেম রসিক ছাড়া আর সব অর্থহীন , মূল্যহীন
মানোসিকতা , যুক্তি , গবেষনা , যাচাই , বাছাই , সমাজ সংসার এদের লক্ষ্য হও তুমি
আর তোমার লক্ষ্য হোক প্রেমানন্দ
তোমার বিকাশ হোক প্রেমোময়
তোমার প্রকাশ হোক রসে টুইটুম্বর ।
--মূল্যবোধ—
যে ছুরিতে ধার নেই , ছুড়ে ফেলে দাও সে ছুরি
যে শাপ ফনা তোলে না , খেতে হয় তারে লাঠির বারি ।
যে বাঘ অদম্য নয় , সে তার খাবার হারায়
যে পাখি উড়তে জানেনা , মুক্তির স্বাদ সে না পায় ।
যে সাগরে প্রেমাবেগ নেই , সে সাগর মৃত সাগর
যে জীবনে প্রেম নেই , সে জীবন মৃত জীবন ।
যে ফুলের সৌরভ নেই , সে ফুলের কোন চাহিদা নেই
যে মানুষ প্রকাশ্য নয় , তার গর্বের কিছু নেই ।
যে পর্বত অটলতা হারায় , অচিরেই সে পরবে ধসে
যে বাহন ছুটতে পারেনা , সে বাহনে আর কেউ না ওঠে ।
যে কামনায় প্রেম নেই , সে কামনা পৈচাশিক
যে প্রেমে কামনা নেই , সে প্রেম বেগতিক ।
যার কথায় রস নেই , সে মনের দাসত্বের শিকার
যে ঈগলের তীক্ষনতা নেই ,দুর্ভাগ্য থেকে তার নাই নিস্তার ।
--অখন্ড বোধ--
হে মন !
বলোনা পাতার ছায়ায়… বরং বলো- গাছের ছায়ায় প্রান শীতল হয়েছে
বলোনা ঢেউ এর সাথে… বরং বলো- সমুদ্রের সাথে মেতেছি সারাদিন
বলোনা মেঘেদের বুকে… বরং বলো- আকাশের বুকে পাখি উড়েছে
বলোনা পৃষ্ঠার লেখাটা… বরং বলো- বইটা দারুন হয়েছে
বলোনা মানুষকে… বরং বলো- পরমকে দেখে প্রান ভরেছে ।
--নির্বাক আনন্দ--
মানুষকে দেখলেই আমার হাসি পেয়ে যায়
জোর করেও সে হাসি থামাতে পারিনা
আমার হাসি ঠিক ঐ বাগানের মালির মত , যে তার ফুলকে দেখে হাসে
আমার আনন্দ ঐ সমুদ্রের মত , যে তার ঢেউদের নিয়ে আনন্দ উত্তাল
আমার আনন্দ ঐ কাশবনের মত , যার মায়ায় কাশফুলেরা দোলে আর দোলে ।
“ভাষা” আড়াল , “ভাষা” পর্দা , “ভাষা” বিভ্রান্তি
মানুষের মুখের কিংবা মনের ভাষার মত আমার আনন্দের কোন ভাষা নেই
ভাষা নিয়ে আসলে আমার কোন চিন্তা ভাবনা বা প্রতিক্রিয়া পর্যন্ত নেই ।
--নসিহত--
ঘৃনার কারাগার ধসে পরতো
দুনিয়ার সমস্ত শক্তি তোমার দিকে হেলে পরতো
শুধু যদি এক “প্রেম”কে ধরে থাকতে ।
--সংসার জগত--
এ “বাহির” , আমার অখন্ডে
এ “বাহির”, আমার ভেতরে
এ “বাহির”, আমার হৃদয়ে
এ “বাহির”, আমার প্রেমে
এ “বাহির”, আমার যতনে
এ “বাহির”, আমার অটলে
এ “বাহির”, আমার নীরবে
এ “বাহির” , আমার সহজে
এ “বাহির”, আমার আনন্দে
এ “বাহির”, আমার আশ্রয়ে
এ “বাহির” , আমার বিনা শর্তে
এ “বাহির”, আমার রঙ বেরঙে
এ “বাহির”, আমার প্রান উৎসবে
এ “বাহির”, আমার নিত্য নুতনে
এ “বাহির”, আমার নয়নে নয়নে
এ “বাহির”, আমার শয়নে স্বপনে ।
--শান্তির শর্ত--
ভোগে বন্দী হবে
ত্যাগে মুক্তি পাবে
“মুক্ত-প্রান”ই আনন্দিত হবে।
--প্রতিদিন ছুটির দিন--
আজ কোন নীতি বাক্য হবে না
সাধনা হবে না
দর্শন হবে না
গবেষনা হবে না
আলোচনা সমালোচনা হবে না
যাচাই হবে না
বাছাই হবে না
বিচার হবে না
দোষারপ হবে না
গুন কীর্তন হবে না
নাটক হবে না
যুদ্ধ হবে না
দেখতে হবে না , বলতে হবে না , শুনতে হবে না
যুক্তি তর্ক কিছুই হবে না
আজ শুধু প্রেমের সমুদ্রে ডুবে যেতে হবে
ডলফিনের মত ফূর্তিতে মাততে হবে , নিঃশব্দে ।
--কথাবার্তা--
তারা বলছিল, তোমার সুমধুর কন্ঠে মোহাচ্ছন হয়ে যাই ,
নেশাগ্রস্ত হয়ে যাই তোমার ধ্বনির মূর্ছনায় ।
আমি বললাম, তোমরা ভুল বললে, কোন কন্ঠ থেকে এ কথা বের হইনি
“এক প্রেম এই সমগ্র” থেকে ঝরে পরেছিল- প্রান ছোয়া এ কথার মালা
সে কাউকে বিচ্ছিন্ন বিশেষ কিছু মনে করে কথা বলেনা
সে যখন কথা বলে , মনে করে সে নিজের সাথেই কথা বলছে
যেমন গাছ তার পাতাদের সাথে কথা বলে ।
--আনন্দ স্রোত--
নীরব নিস্তবদ্ধ চারিদিক
ফুরফুরে মাতাল হাওয়ায়…হৃদয়ে বয়ে গেলে প্রেম…
আনন্দ আসে আর দুঃখ চলে যায়
চিন্তারা সব শুন্যে মিলায়
অসুন্দর সুন্দর
আর “পর” , আপন হয়ে হাসায় ।
--দুরাবস্থার মর্মমূল—
বাহিরে সমগ্র নারী জাতি পুরুষের মা জননী
ভেতরে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের গোপন মোহমায়া আসক্তি
আসক্তির দুর্গন্ধ যদি বেরিয়ে পরে প্রকাশ্য জগতে
সৃষ্টির সেরা মানুষ এসে যায় রাস্তার কুকুরের স্তরে ।
--আমার জগত—
বলোনা- “প্রকাশ্য এ জগত” বাহিরে
বরং বলো- এ জগত আমার ভেতরে ।
বলোনা – এই শরীরের ভেতর আমি আছি
বরং বলো- ছোট ছোট শরীরেরা আমার ভেতরে হেটে বেড়ায়
যেমন সমুদ্রের বুকে ঢেউ এরা বয়ে বেড়ায়
সমুদ্র ! সে তো আপনার বিশালতায় আপনি আনন্দ উত্তাল , ঢেউ এ উজার , বয়ে চলেছে সীমাহীন ।
--আত্মমর্যাদা--
কেহ নহে কেহ আমার বাইরে
এই মহাশূন্য , এই জগত , এই “জীবন-মরন” সবাই আমারই ভেতরে
কি বিরাট আমি !
ধন্য আমি
নিজেকে নিয়ে নিজের আমার গর্বের শেষ নাই , আনন্দের সীমা নাই ।
--মোহমায়া ও প্রেম--
যেকোন কিছুর প্রতি মোহমায়া আসক্তি , তোমাকে ১ টি সুখ দিয়ে ১০টি দুঃখও ফেরত দিবে
অথচ প্রেম কোন কিছু আশা না করেই দিয়ে দেয় , একারনে প্রেমানন্দ কখনো ফুরিয়ে যায় না ।
--পরামানন্দের সূত্র--
সব বন্ধ করে দাও আর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাও
তারপর ভালোবেসে ধারন করো এই সমগ্রকে
যেমন নিস্তবদ্ধ মহাশুন্য ধারন করে পৃথিবীকে ।
--জনদরদী--
জননেতা যেন এক বিরাট বট বৃক্ষ
জনগন তার পাতা
সে দোলে তো পাতারাও দোলে
সে আছে তো পাতারা আছে
সে নাই তো কিছু নেই ।
--অন্বেষন--
কই আপনি ?
--এই যে আমি।
কই আপনারে তো দেখি না ? চারিদিকে শুনাসান নীরবতা ছাড়া তো আর কিছুই নাই
--তুমি যে স্থানে আছো , এই গহীন নীরব স্থানটিই আমি।
কি বলছেন এসব? তাহলে আমি কোথায় বলেন?
--তুমি আমার ভেতরে।
আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন?
--মাছ কখনো সমুদ্রকে দেখতে পায় না।
--কবির অনুভুতি—
প্রকৃত রোমান্টিক কবির আসলে নির্দিষ্ট কোন শরীর নেই
অথচ সমগ্রের সাথে তার “অবিচ্ছেদ্য আন্তরিক সম্পর্ক”
তাকে সার্বোক্ষনিক যৌনানন্দ দেয়।
--প্রেমধর্ম--
প্রেমই ভেতর , প্রেমই বাহির , সবই প্রেমানন্দময়
শুধু সেই “মন” বিষন্ন , যে “মন” ঘৃনায় আচ্ছন্ন , বিচ্ছেদকে লালন করে ।
--প্রেম আর কামনা--
কাম নদীতে সাতার কেটে
প্রেম সমুদ্রে মিলতে হয়।
--সর্বক্ষন প্রেম--
যা কিছু করো , প্রেমের সাথে করো
যেখানে থাকো , যেভাবে থাকো , প্রেমেই থেকো
শুধু প্রেমে থাকলে-
“অসুন্দর” সুন্দর হয়ে যায়
“গরীব” ধনী হয়ে যায়
“ক্ষুদ্র” বিরাট হয়ে যায়
“সীমা” অসীম হয়ে যায়
“জটিল” সহজ হয়ে যায়
“খন্ড” অখন্ডে পরিনত হয়
“দ্বিধা” হাস্যল্লোসে পরিনত হয়
“কামনার লাগাম” হাতের মুঠোয় এসে যায়
“বদ্ধ অন্তর” খোলা আকাশের মত খুলে যায় ।
--প্রেম শক্তি—
প্রেম আছে বলেই সব সুন্দর
প্রেম আছে বলেই হৃদয় খোলা আকাশ
প্রেম আছে বলেই প্রেমিক প্রেমিকা আকাশে ওড়ে
প্রেম আছে বলেই প্রানে প্রানে হিল্লোল জাগে
প্রেম আছে বলেই এই “অখন্ড সমগ্র” সাধকের শরীর
প্রেম আছে বলেই চোখের জায়গায় চোখ , ঠোটের জায়গায় ঠোট
প্রেম আছে বলেই সোনালী ধানে কৃষকের হাসি
প্রেম আছে বলেই অদম্য শিশূর উদ্যম আনন্দ
প্রেম আছে বলেই মুক্তির উল্লাসে প্রান নাচে
প্রেম আছে বলেই এতো রঙ এতো রূপ
প্রেম আছে বলেই মহাসমুদ্র সম জননেতার বিশালতা
প্রেম আছে বলেই ধুলোর মাঝেও আশার আলো ফোটে
প্রেম আছে বলেই নিস্তবদ্ধ নীরবতায় “জয় পতাকা” ওড়ে
প্রেম আছে বলেই মায়ের কোলে শিশু হাসে
প্রেম আছে বলেই সরল প্রানে গ্রাম্য বধুবালা
প্রেম আছে বলেই সিংহের গর্জনে আকাশ কাপে
প্রেম আছে বলেই সুমধুর কন্ঠে কোকিল ডাকে
প্রেম আছে বলেই ছুরির প্রান্ত অটল ধারালো
প্রেম আছে বলেই “চরম শক্তি” সব ধারন করে
প্রেম আছে বলেই সুস্বাদু তৃপ্তি ঢেকুর
প্রেম আছে বলেই বিশ্বাসে মেলায় বস্তু , তর্কে বহু দূর
প্রেম আছে বলেই এখনো নানান ফলের উৎসব চলে
প্রেম আছে বলেই এখনো ফুলের বাগানে সুবাস ওড়ে
“প্রেম”কে ভুলে গেলে , “দুঃখ” চলে সঙ্গে সঙ্গে
“প্রেমহীন সত্তা” নিঃসঙ্গ কুকুরের মত ঘুরে ঘুরে মরে ।
--বন্ধুত্ব --
স্ববান্ধব হাস্যজ্জোল
ফুর ফুরে হাওয়ায় স্নান সারি , চলো শুন্যে উড়ি ।
--প্রেম সাধনা--
“প্রেম শক্তি” মহাশক্তি , সব শক্তির ধারক , বাহক
তাই “প্রেম”কে ভক্তি ছাড়া আর কোন কাজ নেই
সে নেয় না , শুধু দেয়
“প্রেম” এক ঘর , সবার আশ্রয়
অথচ সে নির্ভার , ফুরফুরে খোলামেলা এক দমকা হাওয়া
“প্রেম” নিস্তবদ্ধ নীরবতা থেকে উৎসারিত সমুজ্জোল সুবাতাস
প্রেম সহজানন্দ
এক “প্রেম” ছাড়া সব অর্থহীন , মূল্যহীন
প্রেমের চোখে আলাদা বলে কেউ নেই , যেমন “শরীর” নিজের অংগকে আলাদা মনে করে না
প্রেমে পরে বোকা হয়ে যাওয়ার মত , ভালো কিছু নেই
প্রেমে যে পরে , সে শিশু হয়ে যায়
প্রেমাগের উত্তাল স্রোতে চিন্তা উবে যায়
“প্রেম” স্বর্গের সুখরে , মাটিতে এনে ছাড়ে ।
--জয় অখন্ড--
যে “পাতা” নিজেকে আলাদা মনে করে , সে ঝরে যায় অথচ গাছ রয়ে যায়
যে “ঢেউ” নিজেকে আলাদা মনে করে , সে উবে যায় , অথচ সমুদ্র থেকে যায়
যে “ফুল” নিজেকে আলাদা মনে করে , সে মরে যায় , অথচ বাগান রয়ে যায়
যে “মন” ঘৃনা লালন করে সে , যে ব্যাথা পায় , অথচ “প্রেম” শুধু সুখ পায়
যে “পৃষ্ঠা” নিজেরে আলাদা মনে করে , সে খসে পরে অথচ বই রয়ে যায়
যে মানুষ নিজেকে আলাদা মনে করে , সে ইতর হয় , অথচ “পরম” থেকে যায়
যে “প্রাকৃতিক” নিজেকে আলাদা মনে করে , সে কৃত্তিম হয় , অথচ বিশ্ব-প্রকৃতি রয়ে যায়
যে “সহজ” নিজেকে আলাদা মনে করে , সে জটিল হয় , অথচ সহজানন্দ রয়ে যায়
যে “শরীর” নিজেকে আলাদা মনে করে, সে পচে যায় , অথচ ব্রন্মান্ডের শরীর রয়ে যায়
--মিষ্টি—
যার ভেতরে মিষ্টি , সে কখনো মিষ্টির দোকানে যায় না
যার ভেতরে শান্তি , সে শান্তির তালাশ বাইরে করেনা
--ডুবুরী--
প্রেম সমুদ্রে ডুবে গেলে- সব ভেসে যায় , থাকে শুধু “মুক্তানন্দ”
প্রেম সমুদ্রে ডুবে গেলে- “খন্ড জ্ঞান” যায় হারিয়ে , থাকে এক “অখন্ড”
প্রেম সমুদ্রে ডুবে গেলে- সবখানে “সুন্দর”
প্রেম সমুদ্রে ডুবে গেলে- খালি কলস ভরে যায়- “সহজে”
প্রেম সমুদ্রে ডুবে গেলে- পাখি ভাসে আকাশে “অনায়াসে”
প্রেম সমুদ্রে ডুবে গেলে- “পর” হয়ে যায় জানের দোস্ত
প্রেম সমুদ্রে ডুবে গেলে- ড্যাম কেয়ার সিংহের সামনে “মরন”ও অসহায়
প্রেম সমুদ্রে ডুবে গেলে- নিস্তব্ধ নীরব চারিদিক
প্রেম সমুদ্রে ডুবে গেলে- শুধু বিশ্রাম আর অনন্ত বিশ্রাম ।
--স্বাধীনতার স্বাদ--
আমার আর কিছুই দরকার নেই
আমার “মুক্তানন্দ” আমার জন্য যথেষ্ট
আমার “মুক্তানন্দ” আমার মহামূল্য ধন , সদা সর্বদা পূজোনীয়,বরনীয়,স্মরনীয়
কোন কিছুর বিনিময়ে আমি চাই না হারাতে- আমার “মুক্তানন্দ”
আমার শরীর , ধন-সম্পদ সর্বস্ব নিয়ে নাও , তবু আমার মনকে শুধু মুক্তানন্দে নিশ্চিহ্ন হতে দাও
পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল তুমি নিয়ে নাও
আর আমায় থাকতে দাও নিস্তব্ধ নীরব , কারন নীরবতা আমার মুক্তানন্দের একমাত্র আশ্রয়
সমস্ত ব্যস্ততা নিয়ে নাও আর আমায় থাকতে দাও আমার মুক্তানন্দের সাথে
আমার “মুক্তানন্দ” আমার অনন্ত বিশ্রাম ।
--অখন্ড ফুল--
এ বিশ্ব-ব্রম্মান্ড তো এক প্রস্ফুটিত ফুল
আর আমিই সেই ফুল
যে প্রতি মুহুর্তে বিকশিত হয়ে রূপ নিচ্ছে- বিরাট থেকে বিরাটতরো ।
এ ফুলের পাপড়ি গুলো আমারই খন্ড অস্তিত্ব মাত্র
এ পাপড়ির যতনে অকাতরে ছড়াই – প্রেম সৌরভ
সে সৌরভের মাদকতায় উড়ে বেড়াই- আমি মুক্তানন্দ ।
--যুদ্ধ--
মাঝে সাঝে গোলাপের সৌন্দর্য আস্বাদনে ছেটে দিতে হয় “কাটা” ।
মায়াকে বাচাতে , হতে হয় চরম নির্দয়
প্রেমের জয়যাত্রায় , ঘৃনারে স্বমূলে উপরে ফেলতে হয়- নিঃশব্দে ।
--আমি অখন্ড—
এ ভেতর এ বাহির
এ মূর্ত এ বিমূর্ত
এ আমি এ তুমি
এ কামনা এ প্রেম
এ গোলাপ , কাটা , সৌরভ
এ গোলাপের বাগান
সবই আমার এক সত্তা ।
আমার বিশালতায়- আমি নির্বাক
আমার সৌন্দর্যে- আমি স্তব্ধ
আমার স্মরন- আমার একমাত্র লক্ষ্য
আমার নীরবতার প্রতি সজাগ আমি সদা সর্বত্র
আমাতে আমি পরিপুর্ন সদা তৃপ্ত
নিজেকে নিজের অকাতরে দানে-
নিজের প্রতি নিজে চীর কৃতজ্ঞ , শ্রদ্ধা অবনত
নিজেতে নিজে নিশ্চিহ্ন আমি , পরমানন্দ পাই অবিরত ।
--ধনী—
দু হাত বাড়িয়ে
সে ছুটে এসেছিল- জীবনের কাছে
জীবনও অকাতরে তারে করেছিল দান- প্রান ঐশ্বর্য্য ।
উদাম হৃদয়ে সে এসেছিল জীবনের কাছে
জীবনও অঝরও ধারায় ঝরে পরেছিল তার ওপর- রিনিঝিনি রিনিঝিনি ছন্দে
তা থৈ তা থৈ নেচে ছিল সে , কি যে পরমানন্দে !! কি যে পরমানন্দে !!
--আনন্দ আচরন—
নিঃস্বার্থ মায়াবিনীর
রসময় প্রকাশ ।
--সংসার জগত--
তার আলাদা কোন শরীর ছিল না
স্বপনের এ জগত এ সমগ্রই ছিল তার শরীর
স্বপনের এ অবাস্তব জগতে সে হাওয়ার মত উড়ে উড়ে সব করে ফেলতো , হও বললেই হয়ে যেত
সব স্বপনই ঘুম ভাঙলে নাই হয়ে যায় , বাস্তবতা নাই হয়ে যায় না , বাস্তবতার তুলনা নাই
তার নিজের ভেতরে “প্রেমাবেগে ভরপুর মৌণ প্রশান্তি”ই ছিল তার একমাত্র বাস্তবতা ।
--শেষ বিদায়--
এক পলকের এ জীবন
বাচতে দাও প্রান ভরে ।
এ গানই , জীবনের শেষ গান
গাইতে দাও প্রান খুলে ।
এ ভালোবাসাই , শেষ ভালোবাসা
ভুল-ত্রুটি সব ভুলতে দাও ।
এ আনন্দ , শেষ আনন্দ
প্রান আনন্দে মাততে দাও ।
এ খেলা , জীবনের শেষ খেলা
সেরা খেলাটা খেলতে দাও ।
এ বিদায়, শেষ বিদায়
আরেকটু কাছে থাকতে দাও ।
এ উচ্ছাস , জীবনের শেষ উচ্ছাস
হাসতে হাসতে অশ্রু নামে ।
এ শোক , জীবনের শেষ শোক
কান্নার জোয়ারে সব ভাসে ।
এ দেখাই শেষ দেখা
যেমন আকাশ দেখে- পাখি উৎসব ।
এ কথাই শেষ কথা
কথার মায়ায় জড়িয়ে ধরি ।
এ ভ্রমন , আমাদের শেষ ভ্রমন
ফুরফুরে হাওয়ায় উড়ি আর উড়ি ।
এ কাজই জীবনের শেষ কাজ
পরতে পরতে ছড়াই সুন্দর ।
এ বিশ্বাসই জীবনের শেষ বিশ্বাস
বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই ।
এ ঘুমই জীবনের শেষ ঘুম
নিশ্চিহ্ন আমি আধারে মিলাই ।
এই তো চায়ে শেষ চুমুক
প্রান ভরে নেই অমৃত স্বাদ ।
একটু পরেই আসবে মরন , উড়বে আমার পরান পাখি
ভাঙবে খাচা সকল বাধ ।
--ভুলে যাওয়া—
ভুলে যাই পুরাতন
ভুলে যাই ভবিষ্যত
ভুলে যাই চাওয়া
ভুলে যাই পাওয়া
ভুলে যাই লেনদেন
ভুলে যাই দীর্ঘ শ্বাস
শুধু এই মুহুর্তে বাচি- সতেজ নির্যাস
সহযে হাসি আনন্দে - নিত্য প্রকাশ ।
-জীবন মন্ত্র--
ভালোবাসি- কোন আশা না করে
খাই- প্রান ভরে
কাজটা করি- ভালোবেসে
ঘুমাই- আরামে
--অখন্ড প্রশাদ--
আমিত্বের খাচা ভেঙে , সেদিনই পাখি উড়ে যাবে
যেদিন “খন্ড জ্ঞান” হারিয়ে যাবে ।
আর যেদিন সে অখন্ড হবে , সেদিনই সে অনন্ত হবে , মুক্ত হবে।
--অখন্ড সত্তা--
ও শরীর ! তুমি যদি শরীর হও , আমি নিস্তব্ধ হৃদয়
তুমি যদি ঢেউ হও , আমি সমুদ্র
তুমি যদি পাতা হও , আমি বট বৃক্ষ
তুমি যদি ঘাস হও , আমি সবুজ দীগন্ত
তুমি যদি পাখি হও , আমি ফুরফুরে হাওয়া
তুমি যদি শুধু নিতে জানো , আমি শুধু দিতে জানি
তুমি যদি ফুল হও , আমি ফুলের বাগান
তুমি যদি পথিক হও , আমি আশ্রয়
তুমি যদি থাকো চিন্তা জটজালে বন্দী , আমি নিস্তব্ধ নীরব মুক্তানন্দ
তুমি যদি খন্ড হও , আমি অখন্ড এই সমগ্র ।
--মহাশক্তি--
একবিন্দু ভোরের শিশির যেমন সূর্যের চুমোয় উবে যায়
এ প্রকাশ্য জগত , এ শরীরও তেমনি প্রেমের সমুদ্রে ডুবে যায়।
--প্রেমানন্দ-
অভিমানী সুরে তুমি আমায় বলেছিলে,
আমি কেন তোমার দিকে চেয়ে থাকিনা , কথা বলিনা।
অথচ এ কথা কি তুমি জানতে না?
তুমি যে ছিলে আমার কাশফুল আর আমি ছিলাম কাশবন।
মাতাল মিলনে আমরা দুজনে হতাম এক আর বয়ে যেতাম নিস্তব্ধ নীরব।
--পুরুষোত্তম--
একটি শীতল অটল ধারালো ছুরি , যদিও নরম কেকের ওপর দিয়ে যায়
তবু ছুরি সবসময় ছুরি
তার “শীতল ধারালো অটল” ধর্ম থেকে সে একচুলো নড়ে না
সুস্বাদু কেকের কোমলতার কাছে সে কাবু হয় না ।
--আমার স্বাদ—
বসন্তের আমি এক মাতাল হাওয়া
ফুরফুরে উড়ে বেড়ানোই আমার নিয়তি
এ জগত সংসার আমার ফুলের বাগান ।
পরশে আমার , ফুলেরা ঐ দোলে আর দোলে
ওদের সুখে হৃদয় আমার , ওড়ে শুধু ওড়ে ।
--মন্ত্র--
বিশালে হাসি
এমনি ভালোবাসি....
--সুত্র--
হাসি এখন
কান্না পরে ।
--মধুর ভুল--
কাটা গুলো – এই ভুল গুলো সরিয়ে
শুধু ভালোবাসবে আর আমার সুবাস নিবে
মাতাল হবে , ধন্য হবে ।
--ধনী--
যে দেয় , সে পায়
যে চায় , সে হারায় ।
--যৌনতা—
বীর্য ধারন ক্ষমতাই সাধককে যৌনতা ছাড়াই সর্বোক্ষন যৌনানন্দ দেয়
বীর্য পতন তাকে সব দিক দিয়ে দুর্বল করে দেয়।
--জপমালা--
প্রতিদিন ১০০ বার বলিঃ
আমিই “অখন্ড মুক্তানন্দ”
প্রতিদিন ১০০ বার বলিঃ
আমার কারনে সবাই সুন্দর
প্রতিদিন ১০০ বার বলিঃ
“সহজ প্রেমানন্দ” ছাড়া আর সব ফালতু ।
--সর্বোক্ষন--
শিশুর মুক্ত মনরে করো স্মরন
হাসো বিশালে অকারন
এই কথাটা মানিলে ও মন
হবে না আর তোমার মরন ।
--হাজিরা--
তোমার উপস্থিতি যদি হয় , অন্যের ভালোলাগার কারন
ধন্য তুমি , “প্রেমানন্দ” তুমিই কর ধারন
--তীরন্দাজ--
সবাই দেখছিল- সে লক্ষ্য বস্তুর দিকে চেয়ে আছে
আসলে তার “মন-চোখ” চেয়েছিল- সেই অখন্ডের দিকে- “মুক্ত প্রেমানন্দ” যার নাম
তার অখন্ড চেতনায়-
দূর এসে পরেছিল কাছে
বড় হয়ে গিয়েছিল ছোট
কঠিন হয়ে গিয়েহিল সহজ
জনতা হয়ে গিয়েছিল – নীলাকাশের পায়রা ।
--বাস্তবতা--
বিড়াল ভয় পায় বলে , বিড়ালের কপালে খাবার ঝোটে না
সিংহ Damcare বলে , সিংহের সামনে খাবার হাজির।
--ভেতর-বাহির--
“বাহির” , আমার স্বর্গ
আর “ভেতর” , সে স্বর্গের উৎস ধারা
এক একটা মানুষ , স্বর্গের এক একটা ফোটা, একটা আনন্দ
--আধ্যাতিকতা ও বাস্তবতা--
বর্তমান বিশ্বে যান্ত্রিকতার সাথে সাথে মানুষ মুখোমুখি হচ্ছে জটিল মানোসিক পরিস্থিতির । এ জটিলতা থেকে পালাতে মানুষ দ্বারস্থ হচ্ছে ড্রাগ , এলকোহল ও ভোগবাদী বস্তুর ওপর , এবং প্রকাশ্য জগতের দাসে পরিনত হছে । আবার কেউ কেউ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে অতিমাত্রায় ধার্মিক বা সন্নাসী জীবন যাপন করছে , এ দুটিই আসলে ভুল পথ। এ সমস্যার মূলে আছে মূলত শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা।শিশুকাল থেকে মানোস কাঠামো গঠনে যে আত্মউন্নয়নমূলক শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহন করা উচিত ছিল , সেটির ব্যবস্থা কেউ করতে পারেনি। কবি নজরুলের ভাষায় বলতে হয়- “মম এক হাতে বাকা বাশের বাশরী আর হাতে রন তুর্য । বাশরী দিয়ে কবি রোমান্টিকতার কথা বলেছেন আর রন তুর্য হচ্ছে বাস্তব জগতে টিকে থাকার লড়াইয়ে যুদ্ধাস্ত্র”। মানুষকে প্রতি মুহুর্তে কঠিন বাস্তবতার মুখে পরে লড়াই সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয় , তবে টিকে থাকার এ লড়াইয়ে সে তার আত্মিক শান্তিও নষ্ট করতে চায় না ।অথচ বাস্তবতার দ্বারা প্রভাবিত তার দুর্বল মন হার স্বিকার করতে বাধ্য হচ্ছে, তার ভেতরে শান্তি বলে আর কিছু থাকছে না । তবে সবাই যে হেরে যাচ্ছে তা নয় খুব অল্প সংখ্যাক আবার বাস্তবকে প্রভাবিত করে জয় লাভ করছে , সফল হচ্ছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাদের সফলতার কারন কি? মূল বিষয় হচ্ছে- আত্ম উপলব্ধি , নিজেকে চিনতে পারার ক্ষমতা তাকে বদলে দিয়েছে। ভেতর বাহির সমগ্রই তার অখন্ড অস্তিত্ব , সে আর শুধু নিজের শরীর কাঠামোয় আবদ্ধ নয় , সে বিরাট , সে মহা বিশ্বব্রম্মান্ড । এমন সত্তাকে কখনো অভিমান বা দুঃখ স্পর্শ করতে পারেনা , যেমন একমুঠো ময়লায় সমুদ্রের কিছু যায় আসে না ।সে তার বিরাট সত্তাকে ভালোবেসে , নিজেই নিজেকে যতন করে , আদর করে , গড়ে তোলে আর নিজের সাথে নিজে খেলা করে , নিজের সাথে নিজের এমন সম্পর্কে কেউ নিশ্চয় বিনিময় , লাভ ক্ষতি আশা করে না ।সে শুধু নিজের বিশালতাকে উপভোগ করে , নিজেকে নিয়ে নিজে আনন্দ করে।এসব সবই করে সে নীরবতা থেকে , নীরবতা তার মর্ম মূল ।তার বিরাট নীরবতার টানে , প্রেমের টানে সবাই তার দ্বারা প্রভাবিত হয়- মন , প্রকাশ্য জগত সব কিছু , সমস্ত জগত তার হাতের মুঠোয় এসে যায় , সে যা চায় তাই হয়ে যায় , বাস্তবতা তাকে অনুসরন করে যেমন ঢেউরা অনুসরন করে সমুদ্রকে ।
--প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া--
“খন্ড জ্ঞানে দূষিত সত্তা” মাত্রই চাওয়া পাওয়া লালসা দ্বারা আক্রান্ত । তারা সহজেই পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায়। আরেক খন্ডের সাথে স্বার্থ দ্বন্দে লিপ্ত হয়ে , প্রতিক্রিয়া আক্রান্ত হয়ে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে। অথচ অখন্ড সত্তার পারিপার্শ্বিকতা বলে কিছু নেই , তার চাওয়ার পাওয়ার কিছু নেই বরং তার আশ্রয়ে থাকে সবাই , তিনি স্বয়ং পারিপার্শ্বিকতা , “এক অখন্ড সমগ্র ঘর” তিনি , যেখানে সবাই আশ্রয় নিয়ে আছে , আশ্রিতা মাত্রই আশ্রয়দাতা দ্বারা প্রভাবিত হয় , এটাই স্বাভাবিক । তিনি স্বয়ং সম্পুর্ন আত্মনির্ভরশীল সত্তা , তিনি কারও আশ্রয়ে নাই বিধায় ,তিনি কারও মুখাপেক্ষি নন , তার পক্ষে প্রভাবিত হওয়া সম্ভব নয় । তার বিশালতা , অকাতরে দান , মুক্ত প্রেম , তার হৃদয়ে বইয়ে দেয়- বাধ ভাঙ্গা আনন্দ জোয়ার , এ জোয়ারে ডুবে থাকতে থাকতেই তার সময় কেটে যায় , প্রভাব প্রতিক্রিয়া নিয়ে তার মাথা খারাপ করার সময় কই?
……০……
প্রিয় সাধকদের থেকে চয়নকৃত চুম্বক অংশঃ
বিশ্বখ্যাত সাধক রামানা হৃদায়া্মার কিছু বানীঃ
দুনিয়া, শরীর থেকে বিচ্চিন্ন নয়
শরীর , মন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়
সুচেতনা থেকে মন বিচ্ছিন্ন নয় , এই তো অস্তিত্ব
কাজেই এটা অনায়াসে বলা যায় যে , সবি সত্তা এবং আর কিছু নয় শুধু সত্তাই অস্তিত্বময়
-
আমি বাস করি সত্যের দুনিয়ায় , যেখানে তোমারটা কাল্পনিক। তোমার দুনিয়া নিজস্ব , ব্যক্তিগত , ভাগাভাগি অযোগ্য , একান্তই তোমার নিজের। কেঊ এটাতে ঢুকতে পারেনা ।দেখো যেমনটি – তুমিই দেখো , শুনো যেমনটি- তুমিই শুনো , তুমিই তোমার আবেগকে অনুভব কর এবং তোমার ভাবনা চিন্তা কর । তোমার পৃথিবীতে তুমি আসলেই বড্ড একা , তোমার জীবনের জন্যে যে স্বপ্ন দেখো- সেটিতেই আবদ্ধ থাকো ।
আমার দুনিয়া একটা খোলা দুনিয়া , সবার জন্যেই একরকম , সবার দ্বারা ব্যবহৃত আমার দুনিয়ায় আছে গোত্র , সংঘ , বাহির-ভেতর , প্রেম , আসল মান । এখানে স্বতন্ত্র হচ্ছে সমগ্র আর সমগ্র হচ্ছে স্ব্তন্ত্র । সবাই এক আর একেই সবাই ।
-
আত্মো-উল্লাসে কেউ নাচবে কেউ গাইবে গান , কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীরবতাই তোমাকে প্রদান করবে স্বাধিনতা । খোলো তোমার চোখ , দেখো সেই আলো- যে তোমাকে রাখে উজ্জ্বল , সমস্ত চিন্তা চেতনাকে ছাপিয়ে যে রাখে তোমার হৃদয়কে উচ্ছল ।
-
অমুর্তি সত্য দৃষ্টিভঙ্গি যখন অর্জিত হয় , সেখানে আর কোন দ্রষ্টা , দৃষ্টি , দ্রষ্টব্যের মধ্যে পার্থক্য থাকেনা। সচেতনতার এই ধরনের দৃষ্টিভংগী , তার নিজের অদ্বৈত এবং অভাগকৃত । এটা সীমাহীন , অনন্ত এবং পরিপুর্ন। যখন “আমি”র স্বতন্ত্র চেতনা শরীরে উদয় হয় , তখন পৃথিবী দেখা হয়। যদি এই চেতনা অনুপস্তিত থাকে – তাহলে কে আর দুনিয়া দেখে ?
~ Sri Poonjaji 'Papaji' এর পবিত্র বানীঃ-
যখন বাহিরের কোন কিছু থেকে তোমার কোন কামনা থাকেনা , তখনই সুখ আসে , শুধু তোমার নিজের সত্তা থেকে ।
*
প্রেমই ধ্যান
ধ্যানই প্রেম
“হৃদয়ের কোন সীমা নেই”- এই অসীমের ধ্যান কর ।
*
সবাইরে ভালবাসো- হও প্রেম আর তা ছড়িয়ে দাও
তুমি প্রেম , সবার হৃদয়ে তোমার আসন
এখানে হৃদয় থেকেই তুমি সবকিছু দেখতে পারো
কারন সবকিছু এখান থেকেই প্রতিফলিত
*
যদি এই মন্ত্র , বার বার পড় , তাহলে আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি , তুমি মুক্তি পাবে।
কি সেই মন্ত্র? -
“আমি মুক্ত” ।
*
নিঃস্তব্ধ থাকো
“তুমি যে কোন ব্যাক্তি নও” এই জানাটাই তোমাকে নিঃস্তব্ধ রাখে ।
“এই নিঃস্তব্ধতা , এই নিরাবতা”- কথা বলা বা না বলার সাথে কিছুই করে না
কারন যখন তুমি কথা নাও বলো , তখনও মন সবখানে দৌড়ে চলেছে
নীরব মন থেকে কোন চিন্তাই বেরিয়ে আসে না
কোন কিছুর প্রতি সচেতনটা এটি নয়
যে এই সচেতনতার প্রতি সচেতন- সেই তো নীরবতা ।
*
নিশ্চিত কর যে কোন কামনার উদয় হচ্ছে না এবং তুমি হবে অনিন্দ্য সুন্দর , নিখাদ খাটি , দাগহীন
এই সবকিছু তৎক্ষনাৎ তোমার আগেই প্রস্ফুটিত হবে , তখন এই পরম সুন্দর নিজেকেই নিজে জড়িয়ে ধরবে।
*
যখন কেউ প্রান খোলা হাসি হাসে , তখন তার কোন মন থাকে না ।
*
ধর্ম মানে কোন ধারনাকে আকড়ে থাকা নয়
চরম ধর্ম সব ধর্মকে বাদ দিয়ে দেয়
তুমি যদি সবকিছু বাদ দিয়ে দাও , তাহলে কি ঘটে?
সব ধর্ম বা ধারনার বোঝা তোমার মন থেকে ঝরে পরে
আর থাকে শুধু শান্তি আর প্রেম
এটিই তোমার আসল ধর্ম ।
*
“আমি মুক্তি চাই” - এই ধারনাটি তোমার আর মুক্তির মাঝে একটা দেয়াল তুলে দেয়। এই ধারনাটি আসলে একটা নিছক কল্পনা মাত্র , এর আসলে কোন অস্তিত্ব নেই , তুমি আসলে সব সময়ই মুক্ত , এই বিশ্বাস তোমার জন্য যথেষ্ট ।
*
ভেতরে তাকাও
তোমার সত্তা আর গুরুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই
তুমি সব সময়ই মুক্ত
সেখানে কোন শিক্ষক নেই , ছাত্র নেই , শিক্ষাও নেই
*
তোমরা সবাই সিংহ- তাই চল তোমার নিজের পথে
কোন পথকেই অনুসরন করোনা
সিংহরা একে অন্যকে ফলো করেনা যেমন ভেড়ারা করে
*
তুমি কেবল তখনই শান্তি কে খুজে পাবে যখন তুমি ঘরে ফিরে আসবে , তোমার নিজস্ব সত্তায়
*
যখন কেউ সত্তা হয়ে বাচে
তখন “পরম শক্তি” তার জীবনের দায় দায়িত্ব নিয়ে নেয়
তখন কোন মানোসিক চেষ্টা ছাড়াই- সবকিছু সতঃস্ফুর্ত ভাবে হয়ে যায় ।
*
ঘুমিয়ো না
সত্তায় সদা সর্বদা থেকো সজাগ
এক পলকই যথেষ্ট রাজাকে পথের ভিখারী করে কুকুরের পেছনে পেছনে খাবারের পানে ছুটতে
তাই তো একটি সেকেন্ডও নিজের সত্তা থেকে দূরে সরে যেওনা
এতে ব্যাক্তি অহংও জেগে উঠবে না ।
*
শুধুমাত্র সত্তা একাই তোমাকে শান্তিতে রাখে
সব শান্তি সত্তা থেকেই আসে
সব সমস্যা , দুঃখ আর কষ্ট আসে মন থেকে ।
*
পুকুরে যখন ঢেউ থাকে না , তখনই তুমি তোমার মুখ দেখতে পারো । এই ঢেউ গুলো আসলে চিন্তা ভাবনা । যদি তুমি তোমার মনে কোন চিন্তা ভাবনাকে নড়তে না দাও , তাহলে এখনই তুমি তোমার মুখ দেখতে পাবে। সমস্ত প্রকাশ্য বিষয় বস্তুই আসলে শুধু একটি সামান্য ঢেউ মাত্র । এর নিচে তুমি প্রশান্ত আর নীরব , এটিই তোমার আসল স্বভাব ।
*
যখন কেউ কোন চিন্তাকে অনুসরন করে তখন সেটিও একটি চিন্তা ! যখন তুমি জানবে দুটোই চিন্তা , তখন তুমি ঘর । তুমি ঘরে নও , তুমিই ঘর । এরপর তুমি চিন্তাকে জেগে উঠতে দাও এবং এক চিন্তা আরেক চিন্তাকে অনুসরন করতে অনুমোদন দাও , আর তুমি থেকে যাও অচঞ্চল এবং অজ্ঞাত সত্তা । এটিই সর্বোচ্চ বোঝা পরা ।
*
*
যদি তোমার মনে শান্তি থাকে তবে সবার মধ্যেই তুমি শান্তিকে খুজে পাবে। তোমার মন উত্তেজিত থাকলে সর্বত্রই তুমি উত্তেজনা দেখতে পাবে। তাই প্রথমেই ভেতর থেকে শান্ত হও আর তাতে তুমি দেখবে তোমার ভেতরের শান্তি সর্বত্র প্রতিফলিত হচ্ছে । তুমিই সেই শান্তি !
*
যখন মন প্রশান্ত থাকে , তখন সবই সত্তা । যখন মন চঞ্চল তখন দুনিয়ার উদয় হয়। তাই স্থির হও , সব কিছু ছুড়ে ফেলো আর মুক্ত থাকো ।
*
যা কিছুই আসুক আসতে দাও , যা কিছুই থাকুক থাকতে দাও , যা কিছুই যাক , চলে যেতে দাও
*
চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে তোমার গভীরতম স্বভাব দেখতে না দেয়ার একটা বাধা
কোন চিন্তাকেই উদয় হতে দিওনা আর আবিষ্কার কর , তুমি কে?
তুমি হচ্ছো অনন্ত শান্তির সমুদ্র
এটা কি এমন যাতনা যার জন্য আমরা কষ্ট পাচ্ছি?
শান্তিকে আমরা সর্বত্র খুজে বেড়াচ্ছি অথচ এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছিনা যে আমরাই শান্তি।
*
থামাও , সবকিছু থামিও দাও , এরপর তুমি উপলব্ধি করবে যে তুমিই “মুক্তি”, যাকে তুমি এতোদিন খুজে বেড়াচ্ছিলে।
*
যখন তুমি চিন্তা কর – দেখবে এ সবই তোমার কামনা বাসনা । কিন্তু যখন তোমার মন শান্ত হয়ে যায় , তোমার মধ্যে কোন কামনা বাসনা কাজ করে না , তখনই তুমি পরিপূর্ন আর ঠিক তেমনটি সুন্দর , যেমনটি তুমি সব সময় ছিলে।
*
মুক্তির জন্যে কে দৌড়াচ্ছে? যে এরই মধ্যে মুক্ত।
*
বন্ধুদের মধ্যে প্রেম আসলে সত্তার নিজের সাথে নিজের আলিঙ্গন , শরীরের সাথে শরীরের নয় , আসল প্রেমের কোন অন্য প্রেমিক নেই , কারন সব প্রেমই এক সত্তার প্রেম ।
*
থাকো নিশ্চুপ , নিস্তব্ধ , অচিরেই কোলাহল শব্দরাশী স্তব্ধ করে দেয়া হবে
এরপর প্রশান্তি স্বয়ং ওপরে উঠে আসবে
এটি সহজ
একে অনুসরন কর।
*
কোন চাওয়া পাওয়া না থাকলে তুমি মুক্ত , যদি তুমি চাও ,তাহলে কারাগারে তোমাকে বদ্ধ করা হবে , এখন তুমিই বল তুমি কি চাও । চাওয়া পাওয়া কখনই পূর্ন হয় না।
*
ভেতরে এটি একবারে স্বচ্ছ। যখন তোমার কোন সন্দেহ থাকেনা , সেখানেই থাকে প্রশান্তি।
*
উৎসের কাছে ফিরে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে নিজের “মন”কে দেখো।“মন” যাতে বাহিরের সাথে সংযুক্ত না হতে পারে এ জন্য সচেতন থাকো আর তুমি যদি নীরব হয়ে যাও , একটি চিন্তার উদয় হবেঃ “আমার উৎস কোথায়”? বাহিরে ছু্টোনা , শুধু নীরব থাকো । এই নীরবতায়, “মন” স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার উৎসের কাছে ফেরত যাবে। সেখানে ফেরত যেয়ে, “মন” হারিয়ে যাবে আর সেখানে কোন “মন” থাকবেনা যে কিনা কোন আলো কিংবা জ্ঞান খুজছিলো। এবং সেখানে অঝর ধারায় প্রশান্তির ঝর্নাধারা বয়ে পরবে। সমস্ত সন্দেহ দূর হয়ে যাবে , সব কিছু স্বচ্ছ হয়ে যাবে আর তুমি নীরব থাকবে জ্বীহবা দিয়ে নয় , সমস্ত হৃদয় দিয়ে। তোমার ব্যক্তি অহং সম্পুর্নভাবে শেষ হয়ে যাবে। একেই বলে প্রশান্তি আর উৎসের কাছে ফিরে যাওয়া।
*
মহাঋষি সময় নীরব থাকতেন আর নীরবতার মধ্যে দিয়েই চিন্তা করতেন। এটি প্রত্যেকেরই আসল প্রকৃতি। নীরবতার কারনে তোমার মন অন্য কোন ব্যাক্তি, বস্তু বা চিন্তা ধারনার প্রতি সংযুক্ত হতে পারেনা। চরম নীরবতার চর্চা কর, এই নীরবতায় যেকেউ সুখ-শান্তি অনুভব করবে।
*
খুজে বের কর যে দেখছে সে আসলে কে? খুজে বের কর তুমি কে? এটি কখনই হারিয়ে যায় না , সেটি সময় সেখানেই থাকে , তুমি খাও , ঘুমাও , স্বপ্ন দেখো কিংবা জেগে থাকো না কেন। দ্রষ্টা সব সময় সেখানে ।
*
নিজের সত্তাকে জানো এবং তারপর জানো বিশ্রামকে , যদি প্রয়োজন মনে কর। এই যে ভ্রান্তির দৃশ্য তুমি দেখছো , এটিও একদিন দূর হয়ে যাবে যখন তুমি তোমার নিজের সত্তাকে উপলব্ধি করতে পারবে। এই ভ্রান্তি দৃশ্যকল্প আর দেখা দিবে না যখন “আসল” তোমাতে প্রকাশিত হবে। এর কোন আকার নেই , নেই কোন নাম, এর কোন ভৌগলিক অবস্থান নেই, নেই ভেতর কিংবা বাহির। এটি এক অসীম বিশ্রাম। তোমরা প্রত্যেকেই এরইমধ্যে এতে আছো। একটি মাত্র বাধা হচ্ছে- তোমার পুর্ব ধারনায় আবদ্ধ থাকা কোন কিছুর সাথে , অবাস্তব কিছুর সাথে। এটিই একমাত্র বাধা , অন্যথায় এই স্বাধীনতা, এই জ্ঞান , এই সৌন্দর্য্য , এই প্রেম সর্বদা তোমাকে আমন্ত্রন জানাচ্ছে । শুধু তোমার মনোযোগটা তোমার নিজের সত্তার দিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে এবং তুমি দেখবে যে তুমি সময়ই মুক্তই ছিলে। এটি তোমার নিজের আসল প্রকৃতি।
*
আর যখন তুমি স্বাধীনতা কামনা কর , এটি তৎক্ষনাৎ সেখানেই। তোমার এটি খোজার দরকার নেই- এটি কোন বস্তু নয় যে একে খুজতে হবে। এটি তোমার খুব ভেতরের প্রকৃতি। এটি তোমার খুব কাছে , তোমার শ্বাস প্রশ্বাসের চেয়েও কাছে। যখন কিছু তোমার শ্বাস-প্রশ্বাসের চেয়েও কাছা কাছি তাহলে তোমার কি এমন চেষ্টা করতে হবে এর সাক্ষাত পেতে। এটি খুব কাছে, খুব প্রিয় , খুব আন্তরিক তোমার প্রতি, কিন্তু তুমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছো সেই সব বস্তু আর লোকদের কামনায় যারা বন্ধুত্বের মূল্য দিতে জানে না ।
………0……..
Shah Rajib Al-Din -
ভালবাসাকে আমরা যারপরনাই ব্যবচ্ছেদ করিয়াছি। অসংখ্য নামে বেনামে তাহাকে খণ্ডবিখণ্ড করিয়া ফেলিয়াছি। যদি কোন কারনে কাহাকে আমাদের গোত্রভূক্ত না করিতে পারি তবে ঘৃনা করিয়া বসি। নিজের সন্তানকে ভালবাসি, অন্যের সন্তানকে নাংগা দেখিলে দুরদুর করিয়া তাড়াইয়া দেই। জাতি বর্ণ ধর্ম গোত্র পরিবার নির্বিশেষে শত সহস্র খণ্ড বিখণ্ডে আমরা বিভক্ত। ভালবাসা ভালবাসাই, ইহার একটাই রূপ। প্রকাশভঙ্গী ভিন্নতর হইতে পারে কিন্তু তাহাতে ভালবাসার গুনগত রূপ বদলায় না। ভালবাসাকে একই রূপে দেখিতে পারিলে তাহা সামগ্রিক রূপ পায়। সামগ্রিক ভালবাসা বোধ আমাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা হইতে বাহির করিয়া এককের সাথে যুক্ত করিয়া দেয়। আমরা কোন কিছু হইতেই বিচ্ছিন্ন নই ইহা যদি বুঝিয়া থাকি তাহা হইলে আমাদের দ্বারা কেহ ক্ষতিগ্রস্ত হইবে না।
------------0--------------
কাজী নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা :
বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর -
বল মহা বিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া,
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির উন্নত শির।
আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধুর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির!
…
আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দণ শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর!
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত- চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক’রে দেখা অনুখণ,
আমি চপল মেয়ের ভালবাসা, তা’র কাঁকন চুড়ির কন্ কন্।
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেনু-বীণে গান গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি,
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি।
আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!
…
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্,
ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম্
মম বাঁশরীর তানে পাশরি
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠে’ যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!
আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরণীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল-ধ্বংস-ধন্যা-
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ঞু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কলা-ফণী!
আমি ছিন্নমন্তা চণ্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!
আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজয় অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ পাতাল-মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধা!!-
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম-স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে,
মহা- বিদ্রোহী রণ-কাল্ত,
আমি সেইদিন সব শান্ত,
যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দণ-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত।
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন;
আমি স্রষ্টা-সুদন; শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন।
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন।
আমি চির-বিদ্রোহী-বীর-
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
আমি এই করবো, সেই করবো ! ! !
মানুষের সচেতন মন অনেক বড় বড় কাজ করতে চায়। বলে- এটা করবো, ওটা করবো, কিন্তু অবচেতন মনের সম্মতি না থাকলে তেমন কিছুই করা হয় না। অবচেতন মনই সচেতন মনকে পথভ্রষ্ট করে বিপথে নিয়ে যায়। অবচেতন মনের অসম্মতির কারণে সচেতন মন কোন কাজ অখন্ড মনোযোগের সাথে করতে পারে না, কাজটি ধরে রাখতে পারে না, চিত্ত বিক্ষিপ্ত হয়। অবচেতন মন সচেতন মনকে দাস বানিয়ে রাখে। অবচেতন মনের অসম্মতির কারণে মানুষ নিজের মনোবাসনা শতভাগ পূর্ণ করতে পারে না। তাই আত্ন উন্নয়নের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন অবচেতন মনকে সচেতনে রুপান্তর করা। এই প্রকৃয়ার জন্যই সর্বোচ্চ সহজ উপায় হল কুন্ডলিনির ধ্যান । কুন্ডলিনির ধ্যান করলে অবচেতন মনের চেতনা মন্ডল গুলো সজাগ হয়ে সচেতনে রুপান্তর হয়ে যায়। নিজের চেতনা শতভাগ বশে থাকে। মুক্তির সাধকরা নিজের চেতনাকে শতভাগ বসে এনে মহাশুন্যে বা পরমাত্নায় মিলিত করার জন্য কুন্ডলিনির ধ্যান করেন। সাধারণ মানুষ জাগতিকতা অর্জনে নিজের চেতনা দৃঢ় নিয়ন্ত্রণের জন্যও কুন্ডলিনির ধ্যান করতে পারেন। তাছাড়া কুন্ডলিনির ধ্যানের অনেক শারীরিক উপকার আছে। যেমনঃ মানব দেহে আছে সাতটি প্রধান শক্তিচক্র বা এনার্জি সেন্টার। কসমস বা মহাজগৎ থেকে এই প্রধান সাতটি চক্রে শক্তিপ্রবাহিত হয়। আমরা যে সুস্থ থাকি তার কারণ হল মুখ্য সাতটি এন্ডোক্রাইন বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতে অবিরাম শক্তি প্রবাহ বা চক্র প্রাণশক্তি বা এনার্জি নিরন্তর আহরণ করে থাকে। এই শক্তি বা এনার্জি শরীরের সাতটি এন্ডোক্রাইন গ্রন্থিতে প্রবাহিত হয়।
যখন কোন চক্র বা সংশ্লিষ্ট এন্ডোক্রাইন গ্রন্থিতে কোন কারণে কসমিক এনার্জির প্রবাহ বাধা গ্রস্থ হয়, তখন সেই গ্রন্থি প্রাণশক্তির অভাবে সাময়িকভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থির সাথে যুক্ত অঙ্গ প্রত্যাঙ্গ সমূহ সাময়িক ভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন মহাজাগতিক প্রাণশক্তির প্রবাহ দিলে বা প্রয়োগ করলে অসুস্থতা দূর হয়ে যায়। মহাজাগতিক শক্তি তথা কসমিক এনার্জির প্রবাহের মাধ্যমে এই চিকিৎসা সম্পন্ন হয় বিধায় পাশ্চাত্যে এই প্রকৃয়াকে এনার্জি থেরাফি, এনার্জি মেডিসিন বা এনার্জি হিলিংও বলা হয়ে থাকে।
[বি:দ্র: পরিপূর্ণ মন নিয়ন্ত্রণের জন্য শত শত আত্নউন্নয়ন মূলক বই ও মেডিটেশনের কোর্স করেও যা হবেনা, কুন্ডলিনির ধ্যান করলেই তা হবে। নিজের মনকে মনের মত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ]
আধ্যাত্নিক বিজ্ঞান (Spiritual Science)! আমাদের বস্তু কেন্দ্রিক জ্ঞানেন্দ্রিয় মোট ৫ টি। চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বক। এই পাঁচটি ইন্দ্রিয় দিয়ে আমরা বস্তু জগতকে পর্যবেক্ষণ করি ও বস্তু জগতের জ্ঞান অর্জন করি।
এই পঞ্চইন্দ্রিয়ের বাইরের জগৎ হচ্ছে আধ্যাত্নিক জগৎ। এই জগতের উপলদ্ধি বিশ্বব্যাপি Extra Sensory perception (ESP) নামে পরিচিত। এই আধ্যাত্নিক জগতের সাথে অবচেতন ভাবে আমরা সবাই পরিচিত।
আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের চেতনা অবচেতন মনের গভীরে অবস্থান করে। সেই মনের মাঝে এক স্থান ও কালের উর্ধ্বের জগতে সে অবস্থান করে। সেখানে সে ঘুরে বেড়ায়, দেখে, শোনে, ঘ্রাণ নেয়, স্বাদ ও স্পর্শ নেয়। অবচেতন মনের মাঝের এই ক্রিয়াকলাপকে আমরা বলি স্বপ্ন। এই স্থান ও কালের উর্ধ্বের জগতই আধ্যাত্নিক জগত।
এই আধ্যাত্নিক জগতের উপলদ্ধিকে কেন্দ্র করেই আধ্যাত্নিক বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত। সাধারণ মানুষ অবচেতন ভাবে ঐ জগতে বিচরণ করে আর আধ্যাত্নিক বিজ্ঞানীরা সচেতন ভাবে ঐ জগতে বিচরণ করে ধ্যানের মাধ্যমে।
অনেক বস্তুবাদীরা এই অতীন্দ্রিয় উপলদ্ধিকে ভন্ডামি বলে হেসে উড়িয়ে দেন। মহান বস্তুবাদী দার্শনিকরা এটাকে মান্য করে না দেখে তারাও মান্য করেন না। তারাও এক প্রকার বিশ্বাসের ভাইরাসে ও বিশেষ ব্যাক্তিত্বের প্রভাবে আক্রান্ত। ঐ মহান দার্শনিকদেরকে চূড়ান্ত শাশ্বত মান্য করে তারা তাদের জ্ঞানের বিকাশের দরজা বন্ধ করে রেখেছেন।
কেউ আগে থেকেই যদি মস্তিষ্কে লালন করেন আধ্যাত্নিক বিজ্ঞান ভূয়া তাহলে সে ভুল করবে। সে অনুসন্ধানী নয়, সে অন্ধ বিশ্বাসী। তাকে নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধান করতে হবে যে বস্তু কেন্দ্রিক ইন্দ্রিয়ের মত অতীন্দ্রিয় দিয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায় কি না।
--------- জুনায়েদ ইকবাল
…0…
আমরা সবাই উটের পিঠে ছিলাম, কিন্তু সুফি ফকির পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করছিলেন।
তা সত্ত্বেও, তাঁর আনন্দের কোন সীমা ছিল না এবং তিনি বলে চলেছিলেন, “আমি কোন উটের বোঝা নই, কোন উটও আমার বোঝা নয়। না আমি কারো প্রভু, না আমি কারো দাস। আমার অতীত নিয়ে কোন অশান্তি নেই, ভবিষ্যৎ নিয়েও নেই। বর্তমানই আমার জন্য যথেষ্ট। আমার জীবন কেবল মুহূর্ত থেকে মুহূর্তে বয়ে চলে। আমি পূর্ণ শ্বাস নি—পরিপূর্ণ জীবন যাপন করি।”
-অশো
ফূর্তির কবি ওমর খৈয়ামের নির্বাচিত কবিতা (অনুবাদঃ কাজী নজরুল ইসলাম)ঃ-
১
প্রেমের চোখে সুন্দর সেই হোক কালো কি গৌর-বরন
পরুক ওড়না রেশমি কিংবা পরুক জীর্ন দীন বসন
থাকুক শুয়ে ধুলায় সে কি থাকুক সোনার পালঙ্কে
নরকে সে গেলেও প্রেমিক করবে সেথায় অন্বেষন ।
২
নিদ্রা যেতে হবে গোরে অনন্তকাল, মদ পিও
থাকবে না কো সাথী সেথায় বন্ধু প্রিয় আত্মীয়
আবার বলতে আসবো না ভাই, বলছি যা তা রাখ শুনে-
ঝরেছে যে ফুলের মুকুল, ফুটতে পারে আর কি ও?
৩
মরুর বুকে বসাও মেলা, উপনিবেশ আনন্দের
একটি হৃদয় খুশি করা তাহার চেয়ে মহৎ ঢের
প্রেমের শিকল পরিয়ে যদি বাধতে পার একটি প্রান-
হাজার বন্দী মুক্ত করার চেয়েও অধিক পুন্য এর ।
৪
শারাব নিয়ে বসো, ইহাই মহমুদেরই সুলতানৎ
দাউদ নবীর শিরিন-স্বর ঐ বেনু বীণার মধুর গৎ
লুট করে নে আজের মধু, পূর্ন হবে মনস্কাম
আজকে পেয়ে ভুলে যা তুই অতীত আর ভবিষ্যৎ ।
৫
এক নিশ্বাস প্রশ্বাসের এই দুনিয়া, রে ভাই, মদ চালাও !
কালকে তুমি দেখবে না আর আজ যে জীবন দেখতে পাও
খাম খেয়ালির সৃষ্টি এ ভাই, কালের হাতে লুটের মাল
তুমিও তোমার আপনাকে এই মদের নামে লুটিয়ে দাও !
৬
নগদ যা পাও হাত পেতে নাও,
বাকির খাতা শূন্য থাক।
দুরের বাদ্য লাভ কি শুনে,
মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক।
……………
বাবা জালালুদ্দিন রুমির কাব্য গ্রন্থ থেকে চয়নকৃত চুম্বক অংশঃ
প্রেমে বোকা হয়ে যাও
*
রুমি বললেন, "ঠিক আর বেঠিক বা ন্যায় ও অন্যায়ের ধারণার বাইরে এক জায়গা আছে,
তোমার (মাশুকের) সাথে মিলব আমি সেইখানে গিয়ে।"
*
হৃদয়ের কৃষক আমি
বুনে যাই “প্রেম বীজ” , আর তুলে নেই “আনন্দের ফসল”
*
যেখানেই তুমি থাকো , আর যাই করো না কেন , প্রেমেই থেকো ।
খুলে গেলাম আমি আর হলাম প্রেমে পূর্ন
*
এমনকি সমস্ত পৃথিবীও যদি দুঃখ দিয়ে মুড়ে ফেলা হত
সে তেমন কষ্ট পেতনা , যদি শক্ত করে “প্রেম” কে ধরে থাকতো
এবং প্রেম যদি তাকে এতটুকুন নাচাতো
এমন হাজারো পৃথিবী তার ছোট্ট হাতে এসে পরতো
*
যখন আমি তাকে দেখি তখন আমি আমাকেই দেখি
আর যখন আমি আমাকে দেখি তখন তাকেই দেখি
*
তোমার আলোর ঝলকানিতে আমায় বিদ্ধ করো , যাতে আমার দৃষ্টি তোমার প্রেমে হয় উজ্জ্বল
*
বাইরে দৌড়িয়ো না , ভেতরে দৌড়াও , যেমনটি পাকা আঙ্গুর নিজের মিষ্টতার দিকেই দৌড়ায়
*
ও প্রেম , ও বিশুদ্ধ গভীর প্রেম , এইখানে , এখনে , সবাতে
*
জিজ্ঞেস করো না – প্রেম কি করতে পারে ?
বরং তাকাও এই দুনিয়ার রঙে
*
যখন আত্মা জেগে ওঠবে- ঠোটে
তুমি সেই চুম্বন করবে অনুভব
যা তুমি চেয়েছিলে
*
যদি সারা জাহানো কাটায় ভরে যায় , তখনো প্রেমিকের হৃদয় গোলাপের বিছানা
*
যখন তুমি প্রেম কে খুজে পাবে , তুমি খুজে পাবে তোমার নিজেকে
ডানা নিয়েই তুমি জন্মেছিলে
পোকা মাকড়ের মতো হামাগুড়ি দেয়ার জন্যে তুমি না , হামাগুড়ি দিয়োনা
*
আমি চাই সেই প্রেম যে পাহাড় নাড়িয়ে দেয়
আমি চাই সেই প্রেম যে সমুদ্রকে পর্যন্ত আলাদা করে দেয়
আমি চাই সেই প্রেম যে হাওয়ায় ধরায় কাপন
আমি চাই সেই প্রেম যে বজ্রের মতো গর্জন করে ওঠে
আমি চাই সেই প্রেম যে মৃত্যুকেও জাগিয়ে তোলে
আমি চাই সেই প্রেম যে পরমানন্দে আমাদের উঠিয়ে নেয়
আমি চাই সেই প্রেম যে অসীমের স্তব্ধতা
*
এটা প্রেমঃ
গোপন আকাশে যায় উড়ে
*
জটিল সব ভাবনাকে ছাড়িয়ে যাও
আর খুজে পাও সেই বেহিসেবি বেহেস্ত
তোমার ছোট এই পৃথিবীটাকেও ছাড়িয়ে যাও
আর খুজে পাও প্রভুর রাজষিক সেই দুনিয়া
*
প্রেমের পরষে তীতা হয়ে যায় মিঠা
প্রেমের পরষে তামা হয়ে যায় সোনা
প্রেমের পরষে ময়লা হয়ে যায় পরিষ্কার
প্রেমের পরষে যন্ত্রনা হয়ে যায় আরোগ্য
প্রেমের পরষে মরনও বেচে যায়
প্রেমের পরষে বাদশা হয়ে যায় গোলাম
জ্ঞানে প্রেম বেড়ে ওঠে
বেহায়া হয়েও অন্ততঃ কেউ এমন রাজষিক শক্তিতে জায়গা করে নিতে পেরেছে ?
*
“প্রেম” আমাদের আত্মা কে ওপরে উঠিয়ে নেয়- কোন মই ছাড়াই
*
আমিতো তোমারি প্রেম সমুদ্রে বেচে থাকি
*
একবার যদি তোমার স্বার্থপর সত্তাকে বশীভূত করতে পারো
তোমার সমস্ত আধার হয়ে যাবে আলো ।
*
এ জগত সংসার এক রসের ভান্ডার
হও রসিক আর পান করো সাবধানে ।
…………………………
…………..
মানুষের মহিমাই ধরা পড়েছে জালাল খার গানের বিভিন্ন চরণে। কয়েকটি দৃষ্টান্ত এ-রকম,-
৬. থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা
পান করো রে পাগলা মন
হায়রে পান করো রে পাগলা মন
থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা ।।
দিন গেলে দিন আর পাবেনা
ভাটা যদি লয় যৈবন ।
আসমানে জমিনে যে প্রেম অনন্তকাল ধরিয়া।
তাই তো তারে মেঘ বাদলে রাখে শান্ত করিয়া।
তা না হলে হলে হুলে। (হায়রে) শোভিত না (খোদার) এই ভুবন
থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা
পান করো রে পাগলা মন ।
পাহাড়ে সাই ঘুরে যে প্রেম ফাটাইয়াছে এক সাথে।
তাই তো পানি বাস্প হইয়া উঠে গিয়া তার মাঝে।
দেখছ নি তাই মন ভাবিয়া। হইতেছে কত পরেশন
থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা
পান করো রে পাগলা মন
খোদার প্রেমে জংগলবাসী মনি ঋষি আওলিয়া (আওলিয়া…)।
সারা জনম কাটায় তারা গাছতলাতে বসিয়া
পাইলো কী ধন কইলো না রে
পাইলো কী ধন কইলো না তাই (সদাই) কান্দেরে জালালের মন
থাকতে ক্ষুধা প্রেম শুধা
পান করো রে পাগলা মন।।
………………
প্রিয় কবি সাহিত্যিকদের থেকে চয়নকৃত চুম্বক অংশঃ
--পাতার মুকুটপরা নিঃস্ব মানুষ--
আমি প্রকৃত নিঃস্ব মানুষের মতো
মরতে চেয়েছি
পাহাড়ের ঘর অরণ্যে
একদল মানুষ ওদের স্নিগ্ধ মেয়েদের নিয়ে এলো
ওরা গাইলো
ঝরনাধারার মতো নাচলো
আমাকে ক্রীতদাসত্বের গ্লানি
বিষয়ে বললো
বিমানের তেল ফুরিয়ে যাওয়ার পর
তার প্রয়োজনীয়তার কথা বললো
একটা ফুটফুটে মেয়ে
তারা প্রকৃত নিঃস্ব ও সৎমানুষের মতো
বাঁচতে বলে
আমার মাথায়
পাতার মুকুট
পরিয়ে দিলো
সকালে ওই মুকুট দেখে যারা খুব হাসলো
ওদের আমার খারাপ মনে হলেও
একটি অদৃশ্য ভালোবাসা
আমাকে শান্ত রেখেছিল…
-হাফিয রশীদ খান
………
হিসেব
_____- তসলিমা নাসরিন
কত টুকু ভালোবাসা দিলে,
ক তোড়া গোলাপ দিলে,
কতটুকু সময়, কতটা সমুদ্র দিলে,
কটি নির্ঘুম রাত দিলে, কফোঁটা জল দিলে চোখের –
সব যেদিন ভীষণ আবেগে শোনাচ্ছিলে আমাকে,
বোঝাতে চাইছিলে আমাকে খুব ভালোবাসো,
আমি বুঝে নিলাম-
তুমি আমাকে এখন আর একটুও ভালোবাসোনা।
ভালোবাসা ফুরোলেই মানুষ হিসেব কষতে বসে, তুমিও বসেছো।
ভালোবাসা ততদিনই ভালোবাসা
যতদিন এটি অন্ধ থাকে, বধির থাকে,
যতদিন এটি বেহিসেবি থাকে।
…………
মনে থাকবে?
____-আরণ্যক বসু
পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু'জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল
গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক'রে দুচোখ ভ'রে থাকবো
চেয়ে...
মনে থাকবে?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে
যেন
মনে থাকবে?
আমি হবো উড়নচন্ডি
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেব
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?
পরের জন্মে কবি হবো
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে__
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো...
মনে থাকবে?
আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার__
অনন্তনীল সকাল হবো;
এসব কিছু হই বা না হই
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?
পরের জন্মে তুমিও হবে
নীল পাহাড়ের পাগলা-ঝোরা
গাঁয়ের পোষাক ছুড়ে ফেলে
তৃপ্ত আমার অবগাহন।
সারা শরীর ভ'রে তোমার হীরকচূর্ণ ভালোবাসা।
তোমার জলধারা আমার অহংকারকে ছিনিয়ে নিল।
আমার অনেক কথা ছিল
এ জন্মে তা যায়না বলা
বুকে অনেক শব্দ ছিল__
সাজিয়ে গুছিয়ে তবুও ঠিক
কাব্য করে বলা গেল না!
এ জন্ম তো কেটেই গেল অসম্ভবের অসঙ্গতে
পরের জন্মে মানুষ হবো
তোমার ভালোবাসা পেলে
মানুষ হবোই__ মিলিয়ে নিও!
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে...
বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে...
মনে থাকবে?
…………
ঈশ্বর বন্দনায় ব্যাস্ত মানুষগুলোর
ঈশ্বর থাকে সাত আসমানে;
আমার ঈশ্বর এইখানে
যেখানে তুমি আমি জড়িয়ে আছি
গভীর আলিঙ্গনে !
-আঞ্জুমান রোজী
…………………
……………..
দৈনন্দিন বেচে থাকার সংগ্রামে অযথাই উদ্বিগ্ন দুশ্চিন্তার নাটক চলে বিরতীহীন । এই অর্থহীন বিদ্ধংশী আচরন চলতে থাকে ঠিক ঐ শিশুর মত-যে সৈকতে বালুর প্রাসাদ গড়ে আবার তা ঢেউ এ ভেসে গেলে হতাশ হয়ে পরে।
~ H.H. Dilgo Khyentse Rinpoche
………….
ঘরের কাঠে ঘুনে খায়
কাঠ আনিতে বনে যায় ।
-খনার বচন
………
"সন্ধ্যা হয়—চারিদিকে"
----জীবনানন্দ দাশ
সন্ধ্যা হয়—চারিদিকে শান্ত নীরবতা ;
খড় মুখে নিয়ে এক শালিখ
যেতেছে উড়ে চুপে ;
গোরুর গাড়িটি যায় মেঠো পথ
বেয়ে ধীরে ধীরে;
আঙিনা ভরিয়া আছে সোনালি খড়ের ঘন স্তূপে ;
পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু'জনার মনে ;
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে
আকাশে আকাশে।
[কাব্যগ্রন্থ :রূপসী বাংলা]
----0----
আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট
আব্রাহাম লিংকনের
একটি কালজয়ী চিঠি-----
ছেলের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট তিনি লিখেছিলেনএ চিঠি......
মাননীয় মহাশয়,
আমার পুত্রকে জ্ঞানার্জনের জন্য আপনার কাছে প্রেরণ করলাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন-এটাই আপনার কাছে আমার বিশেষ দাবি।
আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন- সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়। তাকে এ-ও শেখাবেন প্রত্যেক বদমায়েশের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে, প্রত্যোক স্বার্থপর রাজনীতিকের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকে। তাকে শেখাবেন প্রত্যেক শত্রুর মাঝে একজন বন্ধু থাকে। আমি জানি এটা শিখতে তার সময় লাগবে, তবুও যদি পারেন তাকে শেখাবেন পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান। এ-ও তাকে শেখাবেন, কীভাবে পরাজয়কে মেনে নিতে হয় এবং কীভাবে বিজয়োল্লাস উপভোগ করতে হয়। হিংসা থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও তাকে দেবেন। যদি পারেন নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য তাকে শেখাবেন। সে যেন আগ-ভাগেই এ কথা বুঝতে শেখে যারা পীড়নকরী তাদেরই সহজে কাবু করা যায়। বইয়ের মাঝে কি রহস্য লুকিয়ে আছে তা-ও তাকে বুঝতে শেখাবেন।
আমার পুত্রকে শেখাবেন, বিদ্যালয়ে নকল করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক। নিজের ওপর তার যেন সুমহান আস্থা থাকে। এমনকি সবাই যদি সেটাকে ভুলও মনে করে। তাকে শেখাবেন ভদ্রলোকের প্রতি ভদ্র আচরণ করতে, কঠোরদের প্রতি কঠোর হতে। আমার পুত্র যেন এ শক্তি পায় হুজুগে মাতাল জনতার পদাঙ্ক অনুসরণ না করার। সে যেন সবার কথা শোনে এবং তা সত্যের পর্দায় ছেঁকে যেন ভালোটাই শুধু গ্রহণ করে- এ শিক্ষাও তাকে দেবেন সে যেন শেখে দুঃখের মাঝে কিভাবে হাসতে হয় আবার কান্নার মাঝে যে লজ্জা নেই-এ কথা তাকে বুঝতে শেখাবেন। যারা নির্দয়, নির্মম তাদের সে যেন ঘৃণা করতে শেখে আর অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ থেকে সাবধান থাকে। আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেন না। কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তানের যেন অধৈর্য হওয়ার সাহস না থাকে, থাকে যেন তার সাহসী হওয়ার ধৈর্য। তাকে এ শিক্ষাও দেবেন নিজের প্রতি তার যেন সুমহান আস্থা থাকে আর তখনই তার সুমহান আস্থা থাকবে মানবজাতির প্রতি।
সশ্রদ্ধ সালাম,
আব্রহাম লিংকন।
"তোমার কারো দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানোর কোন দরকার নাই। নিজের ভিতরে ভ্রমন করো। মনের মনি-মুক্তার কোঠায় প্রবেশ করো এবং নিজের আত্মার স্বর্গীয় আলোতে স্নান করো।"
-- জালাল উদ্দিন রুমি (রহ)
....................... জড়থুস্থ বললেন...............
প্রেমে তো পাগলামি সবসময় থাকে। আর পাগলামিটা কী? আর পাগলামিটা হল তুমি কেন ভালবাস তা জানোনা। কোন যৌক্তিক কারন বলতে পারনা। কারন বলতে পার যখন অন্য কোন কাজ কর, যেমন তুমি ব্যবসা কর কারন তোমার টাকা দরকার আর টাকা কেন দরকার, হয়ত তোমার একটা ঘড় দরকার আর ঘড় দরকার বেচে থাকার জন্য। আমাদের সাধারন জীবনে প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে? না। কোন কারন নেই।
তুমি শুধু বল “ আমি জানিনা, আমি শুধু জানি আমার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তাহল প্রেম” আর এটা বুদ্ধিবিত্তিক নয়, এটা কোন পণ্য নয়। এটা হল অনেকটা গোলাপের উপর মুক্তোর মত একফোটা উজ্জ্বল শিশির বিন্দু যা সকালের মৃদু বাতাস আর অরুন আলোয় নৃত্য করে চলছে। আর প্রেম হল এরূপ জীবনের নৃত্য।
যে জানেনা প্রেম কি? সে জীবনের সেই নৃত্যটাকে আর দেখতে পেলনা। সে বঞ্চিত হল ফুল হয়ে ওঠা সম্ভাবনা থেকে। সেই কারনেই পার্থীব মানুষের কাছে, হিসাবি মানুষের কাছে, চতুর মানুষের কাছে, অর্থনীতিবিদের কাছে প্রেম এক ধরনের পাগলামি।
“এই যে পাগলামি তাই হল প্রেম আর এই পাগলামির কে বিশেষ ধরন আছে” জড়থুস্থ যখন এই কথা বলে তখন এর মাঝে এক গভির অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে আর এটা কোন সাধারন পাগলামি নয়।
প্রেমময় মানুষদের কোন মানুষিক চিকিৎসা দরকার নেই। প্রেমের এক অসাধারন নিজস্ব নিরাময় ক্ষমতা রয়েছে। আর যে এ শক্তির সম্মুখিন হয়নি সে শূন্য, সে কখনোই পূর্ণ নয়।
সাধারণ পাগলামির কোন ধরন নেই তা যেকোন রকম হতে পারে কিন্তু প্রেম নামক পাগলামীর এক বিশেষ ধরন রয়েছে। সেই ধরনটা কী? সেটা হল প্রেম তোমার জীবনকে নান্দনিক করবে, তোমার জীবনকে সুমধুর সংগিতে পরিণত করবে এটা এক আশির্বাদ হয়ে তোমার জীবনে আসবে।
প্রেমেমত্ত এমন কোন মানুষকে দেখেছো কখনো? তাকে তা বলে বেড়ানোর দরকার নেই। তার চোখ দেখ, সেখানে পাবে এক নতুন গভীরতা । তার চেহারায় এক আর্শিবাদ ঝলমল করবে, যেন নতুন এক সৌন্দর্য। তার হাটা যেন নৃত্যে পরিনর হয়। সে আগের মানুষই আবার সে একজন নতুন মানুষ। তার জীবনে প্রেম এসেছে মানে তার জীবনে বসন্ত এসেছে। তার আত্মায় কুসুম ফুটে উঠেছে। প্রেম এক তাৎক্ষনিক রূপান্তর ঘটায়। আর যে প্রেমে পড়েনি সে কখনো বোধ সম্পন্ন হতে পারেনা, কখনো সুন্দর হতে পারেনা, কখনো আশির্বাদপ্রাপ্ত হতে পারেনা। তার জীবন নিছক এক ট্রাজেডি।
OSHO.
Zarathustra A God That Can Dance.
Osho,
The sword and the lotus
অনুবাদ ঃ King SoloWmon
আমাদের গ্রামে এক বৃদ্ধের ছোট্ট একটি মিষ্টির দোকান ছিল। আমি প্রায়ই তার দোকানে সামনে বসে থাকতাম। না। মিষ্টি আমাকে প্রলুব্ধ করত না, আমাকে টেনে নিয়ে যেত তার হৃদয়ের মিষ্টতা। সে বলত তার মিষ্টির দাম একটাকা করে কিন্তু কেউ যদি তার পরিবার জন্য ও শ্রমের মূল্য দিতে চায় তবে সে আরো একটাকা দিতে পারে-এটাই তার লাভ। প্রথম সে তার উৎপাদন ব্যয়টা বলত ও পরে সে তার লাভের কথা বলত। এখন তোমার উপর নির্ভর করছে, তুমি চাইলে শুধু উৎপাদন ব্যয় দিয়ে কিনে নিতে যেতে পার। সে বলত আমি ধনি নই তাই এর কমে আমি দিতে পারব না। তোমার জন্য আমি মুনাফা ছেড়ে দিতে পারি, আমি দিয়ে দিতে পারি আমার পরিশ্রম কিন্তু উৎপাদন ব্যয় তো তোমার দিতেই হবে। এটা ছিল একটা মিষ্টির বাজার তাই আমি তার কথা অন্য দোকানে গিয়ে যাচাই করেছিলাম। সে যে পরিমান মিষ্টি এক টাকায় বিক্রি করত তা অন্য দোকানে বিক্রি হত দুই থেকে আড়াই টাকায়। কিন্তু সেই স্বাধ আর সেই প্রেম অন্য কেউ দিতে ব্যার্থ হত। সে যখন মিষ্টি বানাতো আমি তার সামনে বসে থাকতাম। তাই সে একদিন বলল " একমাত্র তোমাকেই দেখলাম যে সবসময় বসে এখানে বসে থাক, কেন?" আমি বললাম এই যে আপনি এত যত্ন করে ভালবেসে মিষ্টি বানান আমার দেখতে খুব ভাল লাগে। দেখলে মনে হয় আপনি আপনার খুব আপন জনের জন্য মিষ্টি তৈরি করছেন সে হয়ত অনেক দিন পর আপনার সাথে দেখা করতে আসছে। অথচ আপনি তা বিক্রয় করবেন ভিন্ন ভিন্ন খরিদ্দার কাছে- যাদের কে আপনি হয়ত চেনেনও না। সে হেসে বলল " যতদূর আমি জানি আমার কাছে সবসময় একজন খরিদ্দারই আসে তবে সে আসে ভিন্ন ভিন্ন চেহারা নিয়ে কিন্তু আসে একজনই। তাই আমি প্রতারনা করতে পারিনা, ভেজাল মেশাতে পারিনা কারন আমি তাকে ঠকাতে পারবনা আর সেই একজন কে আমি ভিন্ন ভিন্ন চেহারা হলেও চিনে ফেলি।
২৯.১০.২০১৬
অনুবাদঃKing SoloWmon
উৎসর্গঃNi Rahman
১৮ই জনুয়ারী, ২০১৭
---০---
ইংরেজ কবি জন ডানের মৃত্যু নিয়ে একটি কবিতা - ‘ডেথ্, বি নট প্রাউড’।
"একটা ছোট্ট ঘুমের পর যখন আমরা চিরকালের জন্য জাগবো / মৃত্যু, তুমি তখন থাকবে না; তুমিই তখন মারা যাবে।"
#ত্রিবেণী (স্রষ্টার অবস্থান)
_____________
ঈড়া হল ধমনী, যার মধ্য দিয়ে বিশুদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হয়, পিঙ্গলা হল শিরা, যার মধ্য দিয়ে দূষিত রক্ত প্রবাহিত হয় পুনরায় রক্তকে শুদ্ধি করণের জন্য এবং সুষুণ্মা হল স্নায়ু তন্ত্র, যার মাধ্যমে আমাদের অনুভূতির উৎপত্তি ঘটায়।
এই তিন নদীর মিলমস্থলকে 'ত্রিবেণীর ঘাট" বলা হয় এটা আগেই উল্লেখ করেছি। তবে ভ্রান্ত সাধকদের সাথে আমাদের এইখানে পার্থক্য যে, তারা ত্রিবেণীর ঘাট বলতে নারীর যৌনাঙ্গকে বুঝে, আর আমরা বুঝি অন্যকিছুকে।
সূফীতত্ত্ব মতে সুলতান নাসিরা পথে অর্থাৎ বাম নাসিকায় ঈড়া ও ডান নাসিকায় পিঙ্গলা এবং এই দুইটার মাঝখানে সুষুম্নার নাড়ি। ডানে সূর্য তথা দিন, আর বামে চন্দ্র তথা রাত। এখানেই মতি, মুঙ্গা ও রত্ন প্রবাহিত হয়। আর এই তিনের মিলনস্থল আখফায়। এখানেই মূলত দিব্য নয়ন। এটা উর্ধ্ব দিকে গিয়ে মিলিত হয়েছে সহস্রার সহস্রদলে। আর এখানেই ত্রিবেণীর ঘাট। এটাই মূলত 'হাহুত' মোকাম বা স্রষ্টার বারামখানা। তাই সূফীবাদের প্রতি দমে দমে জিকির করার কথা বলা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে 'পাছ-আনফাস' এর জিকির। এই ত্রিবেণীর ঘাটের জল দিয়ে কেউ নিজেকে শুদ্ধ করে নিতে পারলে তার দেহে আর কোনো পাপ থাকে না। সে তখন হয় শুদ্ধপুরুষ। তখন তার মিনের অন্ধকার দূর হয়ে যায়। এই ত্রিবেণীর ঘাটের প্রভু তাঁর ভাবের বাঁশি বাজাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যাকে সনাতন শাস্ত্রে বলে কৃষ্ণের ভাবের বাঁশি। একজন কামেল মুর্শিদ চাইলে মূহূর্তের মধ্যে ভক্তকে সেই বাঁশির সুর শুনিয়ে দিতে পারেন।
তাছাড়া স্রষ্টা তাঁর অবস্থান নিয়ে স্পষ্টই বলেছেন যে 'আমি আরশে অবস্থান করি, আর মুমিনের হৃদয়ই হল আমার আরশ।" নারীর যৌনাঙ্গে কখনো আল্লাহ্ থাকতে পারেন না। আর সেখানে কোনো ভাবের বাঁশিও বাজায় না আমার প্রভু।
সত্য উপস্থাপন করলাম, সত্যকে বিবেক দ্বারা গ্রহন করার দায়িত্ব আপপনার। হেদায়েতের মালিক আল্লাহ্, আমি ত শুধু চেষ্টা করে যেতে পারি। যদি কারো পীর এই ভ্রান্ত মতের হয়, তবে তাকে ত্যাগ করে কামেল পীরের নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে তওবা করে।
হে প্রভু! আপনি আমাদের সরল সঠিক পথের দিশা দিন, আপনি পথ না দেখালে আমমরা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
-লেখাঃ DM Rahat
এই চারটা স্থর ও মাধ্যম একটি অন্যটির সাথে জড়িত। মূলত আসল সাধনা হলো 'লা' বা হাহুত +সহস্রার সহস্রদল) মোকামে আমার দয়াল যে 'হু হু হু' শব্দ করতেছেন এবং শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভাবের বাঁশি বাজাচ্ছেন, তাহা শ্রবন করা মোরাকাবা মোশাহেদার মাধ্যমে। এটাকে 'আনহাদ নাদ' বলা হয় ও হিন্দু ধর্মালম্বীরা "ঔঁ" কার নাদ বলে। এই ধ্বনি শোনার জন্য মনকে স্থির করতে হয়। আর মনকে স্থির করার জন্যই মূলত দম সাধনা করতে হয়। দুনিয়ার সমস্ত শব্দ বন্ধ করার পর আপন দেহের মাঝে লা মোকামে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকেই 'আনহাদ নাদ' বলে। এখানেই প্রভুর বাস। এই শব্দ আসে সহস্রহার সহস্রদল থেকে। এটাই সর্ব শ্রেষ্ঠ সাধনা। সকল ধর্ম ও শাস্ত্রের গুরুগনই মূলত এই সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছেন। আপনি শত চেষ্টা করেও হয়তো এই ধ্বনি শুনতে পাবেন না, আর শুনলেও বুঝতে পারবেন না। কিন্তু গুরু কৃপা করে মূহূর্তেই এই কৃষ্ণের ভাবের বাঁশির সুর আপনাকে শুনিয়ে দিতে পারবেন। এই 'আনহাদনাদ' সম্পর্কে সবাই গুরুর কাছ থেকে যেভাবেই হোক তাকে সন্তুষ্ট করে বিস্তারিত জেনে নিবেন। -DM Rahat
---0---
জ্ঞান দেহকে ভালবাসে তেমনি দেহ জ্ঞানকে রক্ষা করে। ইহাই ভালবাসার বর্তমান।
- হযরত ফকির শাহ্ সুলতান জালালী
---0---
সুকান্ত ভট্টাচার্য » ছাড়পত্র (কাব্যগ্রন্থ)
দেশলাই কাঠি
আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি
এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি নাঃ
তবু জেনো
মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ-
বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস;
আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।
মনে আছে সেদিন হুলস্থূল বেধেছিল?
ঘরের কোণে জ্বলে উঠেছিল আগুন-
আমাকে অবজ্ঞাভরে না-নিভিয়ে ছুঁড়ে ফেলায়!
কত ঘরকে দিয়েছি পুড়িয়ে,
কত প্রাসাদকে করেছি দূলিসাৎ
আমি একাই- ছোট্ট একটা দেশলাই কাঠি।
এমনি বহু নগর, বহু রাজ্যকে দিতে পারি ছারখার করে
তবুও অবজ্ঞা করবে আমাদের?
মনে নেই? এই সেদিন-
আমরা সবাই জ্বলে উঠেছিলাম একই বাক্সে;
চমকে উঠেছিলে-
আমরা শুনেছিলাম তোমাদের বিবর্ণ মুখের আর্তনাদ।
আমাদের কী অসীম শক্তি
তা তো অনুভব করেছ বারংবার;
তবু কেন বোঝো না,
আমরা বন্দী থাকবো না তোমাদের পকেটে পকেটে,
আমরা বেরিয়ে পড়ব, আমরা ছড়িয়ে পড়ব
শহরে, গঞ্জে , গ্রামে- দিগন্ত থেকে দিগন্তে।
আমরা বার বার জ্বলি, নিতান্ত অবহেলায়
তা তো তোমরা জানোই!
কিন্তু তোমরা তো জানো না:
কবে আমরা জ্বলে উঠব-
সবাই শেষবারের মতো!
মন যার স্থির নয়
তার মন বাহিরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়
এ মন পরম সুখ পায় না ।
-(মহা অবতার বাবাজী)
--কথা বলা--
গোলাপের মত নিস্তব্ধ হও
কথা বলো তার মত সৌরভের ভাষায় ।
-(লাহিরি মহাশয়া)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:২৯