somewhere in... blog

থ্রিলার গল্প: V.I.P

২২ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বপন সাহেব বাংলাদেশের একজন টপ স্মাগলার। পার্লামেন্টের ছোট খাট এম.পি. মন্ত্রীরা তার কথায় ওঠেন বসেন। তাই, ওনার মতো একজন V.I.P যখন আমার বাসায় আশ্রয় নিলেন, তাও আবার জীবন বাঁচাতে, তখন বেশ অবাক হলাম।
ঈদের পরদিন বলে, ব্যস্ত শহরেও নেমেছিলো ঘুমের পরীরা। তখন সন্ধ্যারাত। এইসবে রাত আটটার খবর দেখে, আমি সামনের ঘরের লাইট নেভাতে এসেছি। বাসায় আমি একা, স্ত্রী বাবার বাসায় গেছেন।
সুইচ টিপতে গিয়েই বিষয়টা লক্ষ্য করলাম, দরজার ওপাশে কেউ ঘাপটি মেরে আছে।
-নিশ্চয়ই ডাকাত!
ভয়ে আতঙ্কে আমি জমে গেলাম। কিন্তু, কলোনীর ভেতরে ডাকাত এলো কিভাবে! দারোয়ানগুলোই বা কোথায়?
রান্নাঘরে শুধু একটা দা আছে, আমি শুধু সেটা দিয়ে আত্নরক্ষা করবো কিভাবে?
- এমনসময় লোকটা কেঁদে উঠলো,"প্লিজ ভাই আমাকে বাঁচান। ওরা আমাকে খুন করে ফেলবে। প্লিজ দরজা খোলেন।"
উত্তেজনায় স্নায়ুর ওপর কোন নিয়ন্ত্রনই ছিলো না। ঝট করে দরজা খুলে উঁকি মারতেই, সিঁড়ির আধো আলো ছায়ায় দেখতে পেলাম, স্বপন চৌধুরীকে।

সব ডিটেইল লেখার মতো সময় বা ধৈর্য্য কোনটাই আমার নেই। স্বপন চৌধুরীর জবানীতে শুনলাম, তার বিশ্বাসঘাতক ড্রাইভারটাই হয়তো নাটের গুরু। কে বা কারা তার চলন্ত গাড়িতে গুলি চালায়। দু'জন বডিগার্ডের একজন নিশ্চিত মরে গেছে। উনি প্রায় মাইল খানেক দৌড়ে, পালিয়ে এই কলোনীতে ঢুকেছেন। শুনলাম, দারোয়ানরা তাদের রুমে বসে টিভি দেখছে।
বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কা সামলে আপনি প্রশ্ন করলাম
-"আপনি দারোয়ানদের বলেননি কেন?"
-"ওরা দারোয়ান সহ আমাকে ব্রাস ফায়ার করতো!"
আমি ঠিক ধরতে পারলাম না, কারা বেশি বিপজ্জনক, ডাকাত নাকি 'ওরা'।
-"আপনাকে 'ওরা' কেন মেরে ফেলতে চায় বলুনতো?"
-"আমি জানি না, কারা আমার পেছনে লেগেছে। তবে কালকে মধ্যে আমি প্রত্যেকটাকে জাহান্নামে পাঠাবো..."

বাসার সব বাতি নেভানো, আমাদের বেডরুমে স্বপন চৌধুরী আর আমি ফ্যান ছেড়ে বসে আছি। স্বপন চৌধুরীর শার্টে খুব সম্ভব বডিগার্ডের রক্ত লেগে আছে, কেমন জানি বিকট একটা গন্ধ আসছে। এটা কি রক্ত না মদের গন্ধ তা ধরতে পারলাম না। এর মধ্যেই অন্ধকার রুমটায় সময় যেন আস্তে চলা শুরু করেছে।
-"বাসায় আর কেউ নেই?"
তিনি ফিসফিসিয়েই প্রশ্নটা করলেন।
-"না, নেই।"
-"একচুমুক Brandy পাওয়া যাবে?"
কোন V.I.P বাসায় এসে Brandy চাইতেই পারে, অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আমি তো ওসব খাই না।
-"পেপসি আছ...."
-"প্লিজ এটা ভরে পেপসি নিয়ে আসুন।"
সিনেমায় শিল্পপতিরা এসব পেট চ্যাপ্টা বোতলে করে মদ খায়।
আমি অন্ধকার রুমে স্বপন চৌধুরীর দামী ফোনের আলোয় দেখতে পেলাম, উনার চোখে মুখে ক্রোধ, উনি কাউকে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছেন বোধ হয়।
আমি লাইট না জ্বালিয়েই ফ্রিজের আলোয় পেপসি ঢালতে লাগলাম। বেডরুম থেকে স্বপন চৌধুরীর উত্তেজিত কথা বার্তা কানে এলো। কাউকে ফোন করেছেন। শুধু শুনলাম, "তিন তালায়...তিন তালায়, কুইক"।
আমার শুকনো গলায় পেপসি ঢালার আগেই, দরজায় কড়াঘাতের আওয়াজ শুনলাম। সেই কড়াঘাতে আমার বাসার দরজা যে ভেঙে যায়নি তা এক আশ্চর্যের বিষয়!
স্বপন চৌধুরী দৌড়ে বেরিয়ে এলেন।
দরজার ওপাশ থেকে একজন-"স্যার-স্যার বলে চিল্লাতে লাগলো।"
স্বপন চৌধুরী দরজা খুলে দিলেন। একটা গুন্ডা মতো লোক হাতে কালো রিভলবার নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
-"শমসের হোম মিনিষ্টারের পি.এস."
উত্তরে আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম। তবে স্বপন চৌধুরী বেশ খুশি হয়েছেন। সিঁড়িতে আরো ১০-১২ জন অস্ত্র হাতে দাড়িয়ে আছে।

স্বপন চৌধুরী যাওয়ার আগে আমাকে শাসিয়ে গেলেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে তিনি আমাকে আস্ত রাখবেন না।


২.
সকালে স্ত্রী-শ্যালকের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙলো।
শ্যালক ফ্রিজের সামনে পেপসির বোতলের পাশে আরেকটি বোতল দেখে একদম চুপ মেরে গেছে। বোতলটা সে লাথি দিয়ে সোফার নিচে পাচার করে দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো।
-"দুলাভাই, ঐটা কিসের বোতল ছিলো?"
আমি উত্তর দিলাম না।
টিভিতে একটা হাসির নাটক হচ্ছে। কিন্তু নিচের ব্রেকিং নিউজে লেখা,"গতরাতে শীর্ষ মাদক কারবারি স্বপন চৌধুরীর গাড়ির পাশে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশের অনুসন্ধান চলছে। প্রাথমিক ভাবে খুনিকে চিহ্নিত করা হয়েছে..."

আমি যা বুঝার তা বুঝে গেছি।
-"সজল, তোমার আপাকে গিয়ে বলো, আমাদের পাসপোর্ট গুলো এক্ষণ বের করতে"


সমাপ্তি


©প্রান্ত-৫/২২/১৮

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১২
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাই মাসে কোন আন্দোলন বা বিপ্লব হয়নি, ইহা ছিলো আমেরিকান এম্বেসীর আরেকটি ক্যু

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৫



১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট'এর পর আমেরিকান এম্বসী আরেকটি বড় ক্যু করেছিলো এরশাদকে ক্ষমতা দখলে সাহায্য করে; এরপর আরেকটি বড় ক্যু করে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধানসিঁড়িটির তীরে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৫



ধানসিঁড়িটির তীরে স্বপরিবারে ঘুরতে গেলাম। শালিক সাহেব পিছনে এসেই বসলেন। মেয়ে ছবি তুলতে গেলেই উড়ে গেলেন। বকের ঝাঁক কয়েকবার মাথার উপর দিয়ে টহল দিলেন। ছাগল ছানা খেলছিল বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে আমার দেখা আমেরিকান এজেন্টের দল

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:২৯

আমি ভ্রমে আছি। গত জুলাই মাসের আন্দোলন নিজ চোখে দেখেছি। তাতে আহতদের সেবা দিয়েছি। যাদেরকে জেলে ঢুকানো হয়েছিলো, তাঁদের সাথে কোর্ট হাজতে গিয়ে সরাসরি কথা বলেছি। আমি নিজের হাতে তাঁদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্ংসদ সদস্য হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স একুশ করার সুপারিশ কেন করা হলো?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:১২


আপনি বাংলাদেশে পড়াশোনা করে থাকলে বলুন তো কত বছর বয়সে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন ? আমার নিজের ক্ষেত্রে যতদূর মনে পড়ছে ২৩ বছর সময় লেগেছে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে। আমি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তথাকথিত বিপ্লবী ইউনুস গং দখলদাররা কেনো তথাকথিত গণহত্যার রিপোর্ট দিচ্ছেনা⁉️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:৩২





জুলাই – আগষ্ট/২০২৪ এর ঘটনাবলী নিয়ে
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে জ'ঙ্গি ইউনুস সরকারের নীরবতা কেন?
প্রতিবেদনের গুরুত্বপুর্ন সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে উল্টোটা করা হয়েছে।

জুলাই-আগষ্ট /২০২৪ এ বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×