শুকনা কাপড় গুলো সব ভিজে গেছে এভাবে হটাৎ বৃষ্টি আসবে মেঘা বুঝতেই পারেনি । আম্মু এখনও বকা দিচ্ছে –আজকাল মন কোথায় থাকে কোন কাজে দেখি তোর মন নাই । কি ভাবিস এতো ।
মন কোথায় পড়ে আছে মেঘা নিজেও জানে না ,তবে এখন আর কিছুই ভালো লাগে না ।ভেজা কাপড় গুলো হাত নিয়ে মেঘা এক পলকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ওই পাখি গুলো কোথায় যাচ্ছে , ইসস আমিও যদি উড়ে যেতে পারতাম এভাবে তার কাছে ।
শিশির আজ দুই দিন কোন যোগাযোগ করছে না । কল করতে না পারলে SMS করে বলে দিতে পারে কী অসুবিধা, ফোনটা একেবারে বন্ধ করে রেখেছে । মেঘা কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেনা ।
মেঘা আর শিশিরের পরিচয় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে । মেঘার bestfriend শিলার বিয়েতে ওদের পরিচয় , শিশির ছিল শিলার cousin । শিলার বিয়েতে ওরা সবাই মিলে অনেক মজা করেছিল ,কিভাবে বরের জুতা চুরি করবে ,কিভাবে বরপক্ষকে বোকা বানাবে এসব নিয়ে কত পরিকল্পনা করেছিল মেঘা আর শিশির মিলে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন টা করতে পারিনি সবটুকু শিলার বাবা আবার অনেক রাগি তিনি এসব পছন্দ করেন না ,তবে মেঘা আর শিশির একেবারে ছেড়ে দেয়নি সেই থেকে মেঘা আর শিশির দুই জন খুব ভালো বন্ধু কিন্তু এখন শুধু বন্ধু না মেঘার কাছে শিশির বন্ধুর থেকেও যেন বেশি কিছু । তবে মেঘা জানে না শিশির এমন ভাবে কিনা নাকি সে মেঘা কে শুধু বন্ধু ভাবে ।
দুই দিন কেটে গেলো শিশির এর কোন খোঁজ নাই মেঘার এবার একটু চিন্তা হতে লাগলো কোন বিপদ হল নাতো ছেলেটার । হটাৎ সন্ধ্যায় মেঘার ফোনটা বেজে উঠলো আর স্ক্রীন এ ছিল শিশির এর নাম মেঘা এক মিনিট দেরি হল না ফোন টা রিছিভ করতে ।
-হ্যালো , তুই কোথায় ছিলি । দুই দিন কোন খোঁজ নাই কেন , তোর ফোন বন্ধ কেন ??
-একটু বিস্মিত হয়ে শিশির বলল , হুম বলছি
- বলছি মানে আমি চিন্তায় মরি আর তুই ......
-আমার জন্য তোর এতো চিন্তা ,মাত্র তো দুই দিন ফোন করি নাই
-তুই বুঝবিনা এ দুই দিন আমার কাছে দুই যুগ মনে হয়েছে ,
-তাই,কাল আমার সাথে দেখা করতে পারবি অনেক কিছু বলার আছে তোকে ।
-হুম পারবো । কোথায় ??
-আমার প্রিয় জায়গাতে ...
-আচ্ছা আসবো ।
সারা রাত মেঘা চোখের পাতা এক করতে পারি নি কি বলবে কাল শিশির সেই ভেবে কিন্তু আর আগেও ওরা দুজন দেখা করেছে অনেকবার কিন্তু মেঘার এমন মনে হয়নি ।তার মনে হচ্ছে আজ রাত টা যেন সবচেয়ে বড় রাত সকাল যেন হতেই চাইছেনা ।
আজ শিশির অনেক আগে এসে অপেক্ষা করছে মেঘার জন্য , মেঘা এসে দেখল শিশির বসে আছে ।
-কিরে আজ এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে অন্য দিন তো আমাকে বসে থাকতে হয় ।
-হুম আজ আমার জন্য দিনটা অন্য রকম হবে
-কি রকম
-বুঝবি একটু পরেই ।
-হুম কি যেন বলবি বলছিলি ,আচ্ছা আগে বল দুই দিন কোথায় ছিলি ??
-আচ্ছা আমাকে নিয়ে তোর এতো চিন্তা কেন ??
-তুই আমার বন্ধু না তোর জন্য চিন্তা করবো না ।
-শুধু কি বন্ধু ভাবিস ।
- মেঘা চুপ করে আছে কি করে বলবে যে ও শুধু এখন বন্ধু না ওর জীবন ।
-কিরে চুপ যে , আচ্ছা বাদ দে জানিস আমি আমার স্বপ্ন কন্যা কে খুঁজে পেয়েছি ।
- কি সত্যি নাকি (মেঘার বুকের ভিতর কেমন যেন একটা ধাক্কা লাগলো )
-হুম আমি তাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি তাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না
-হুম
-সে আমার জীবনে কি তা তোকে বোঝাতে পারবোনা ।
-(মেঘার দুচোখে পানি ছলছল করছে কিন্তু সে কাঁদতে পারছেনা ,তার সব স্বপ্ন যেন এক নিমিষে চুরমার হয়ে যাচ্ছে ) কিন্তু সে অনেক কষ্টে কান্না লুকিয়ে শিশির কে বলল , কিরে কে সে এতো দিন তো বলিস নি তাঁর কথা ।
-এতো দিন তো তাকে খুঁজে পাই নি হটাৎ করে তাকে পাওয়া
- হুম বুঝেছি এজন্য দুই দিন তোকে পাওয়া যায় নি তাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলি
- হুম তাকে আমার কথা কি ভাবে বলল বল তো
-কি ভাবে বলবি সরাসরি বলে দে । কিন্তু কে সে সেটাই তো জানলাম না ।
- জানবি তাকে আজ সে আসবে ।
-কোথায় এখানে ।
-হুম
-আচ্ছা তাহলে আমি যাই তাকে তোর কথা একা একাই বলতে হবে আমি থাকলে যদি সমস্যা হয়
- না তুই থাকলে কিছুই হবে না , আচ্ছা তোর কেউ নাই স্বপ্নের মানুষ ?
-কি বলবে মেঘা এখন , তাঁর স্বপ্নের মানুষ তো তাঁর পাশেই আছে কিন্তু তবুও সে ওর নয় অন্য কারো ।
-কিরে চুপ যে ,
-না কিছু না , না আমার তেমন কেউ নেই আর থাকলে তো জানতেই পারতিস । আচ্ছা তোর স্বপ্ন কন্যা কখন আসবে আমার কাজ আছে আমি চলে যাবো । (মেঘা এখানে আর থাকতে পারছেনা তাঁর যে ভীষণ কান্না পাচ্ছে )
-কেন আর একটু অপেক্ষা কর আমার কথা গুলো তো তোকে বলাই হয় নি
-তোর মনের সব কথা তোর স্বপ্ন কন্যার আগে জানা দরকার তাকেই সব বলিস ।
-আচ্ছা তোকে তাঁর ছবি দেখাই তুই তো আর অপেক্ষা করতেই চাইছিস না ।
-নারে অন্য কোন দিন একেবারে পরিচিত হয়ে নেবো ছবি দেখে কি হবে
-না তোকে তো দেখতেই হবে না হলে হবে না তুই তো এখন আমার সবথেকে কাছের বন্ধু তুই আগে দেখে বল কেমন আমার স্বপ্ন কন্যা
-আচ্ছা দে তাড়াতাড়ি দেখবো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে
-এইটা খোল এটার মধ্যে আছে আমার স্বপ্ন কন্যা ।
-মেঘার একটুও ইচ্ছা করছেনা দেখাতে কিন্তু মেঘা তাঁর কাছের বন্ধুর জন্য এটা করতেই হবে ,
-কিরে দেখ ............
-হুম । অনেক কষ্ট হচ্ছে মেঘার ও চোখ বন্ধ করে খুলল ।
- কি দেখলি
- মেঘা না দেখেই বলে দিল । তোর স্বপ্ন কন্যা অনেক সুন্দর একদম পরির মত
- সত্যি বলছিস
-হুম সত্যি
-না তুই মিথ্যা বলছিস কেন
-আরে না সত্যি
-তুই ভালো করে দেখ
-মেঘা এবার ভালো করে দেখল , কিন্তু এবার মেঘা যা দেখল সেটা ও কল্পনা করে নি
- কি হল
- মেঘা আর নিজেকে আটকাতে পারলনা সে এবার কেঁদেই ফেলল
-তুই কাদছিস কেন আমার স্বপ্ন কন্যা কে দেখে ভয় পেলি নাকি
- তুই একটা ...... আমার সাথে মজা করছিস তুই
-নারে এটাই আমার স্বপ্ন কন্যা ।
-মেঘা শিশির কে জড়িয়ে ধরল তুই সত্যি আমাকে .........
- হুম , কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না তুই আসলে কি ভাবিস আমাকে নিয়ে তবে কাল ফোনে কথা বলার পর আমি বুঝতে পেরেছি তুই ও আমাকে অনেক ভালোবাসিস.........
-মেঘা কিছু বলতেই পারছেনা সে অঝোরে কাদছে
-কিরে কিছু বলবি না
-আর একটু হলে আমি মরেই যেতাম যদি দেখতাম ওখানে অন্য কারো ছবি আছে ।
-কি বলিস আমার স্বপ্ন কন্যাকে আমি কখন মরে যেতে দিতে পারি তাহলে তো আমিই মরে যাবো ।
আকাশ ভেঙ্গে হটাৎ বৃষ্টির ধারা নেমে এলো আর সেই বৃষ্টির ধারার সাথে মিশে গেলো মেঘা আর শিশিরের অশ্রুধারা তবে এটা কোন দুঃখের অশ্রু নয় এটা মেঘা আর শিশিরের ভালোবাসার অশ্রু ..................