ময়মনসিংহ জেলার কয়েকটি উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ঐতিহ্যবাহী খেলা ‘হুমগুটি’
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিছু খেলা গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনো ধরে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। সেরকমই একটি খেলা ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহি 'হুমগুটি' খেলা।
‘হুমগুটি’। ময়মনসিংহ জেলার কয়েকটি উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ঐতিহ্যবাহী খেলা। এতে থাকে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণ। সারা দেশের অন্য কোথাও এ খেলা হয় কীনা জানা যায় না। তবে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, কোতোয়ালীসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে এ খেলার প্রচলন রয়েছে।
প্রচলন:
শতাধিক বছরের প্রাচীন এ খেলাটি প্রবর্তন করেন মুক্তাগাছার তৎকালীন ষোল হিস্যার জমিদার। হুমজিক্যালি কাড়াকাড়ি করে নিজের আয়ত্তে একটি গুটি নেওয়া হয় বলেই এই খেলার নাম হুমজিক্যালি গুটি বা হুমগুটি। জমিদারদের নানাবিধ শোষণের দিক থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে এই খেলার প্রচলন করা হয় বলে অনেকের ধারণা। আবার কারো কারো মতে, জমি নিয়ে জমিদারদের মধ্যে বিরোধ হলে শক্তি পরীক্ষার জন্য হুমগুটি খেলার প্রবর্তন করা হয়।
আঞ্চলিক শব্দে ‘হুম’ মানে শক্তি বা আজগুবি কিংবা বৃহৎ কোনো বিষয়। আর ‘গুটি’ হলো গোলাকার বস্তু বা খেলার জন্য ব্যবহৃত কোনো উপকরণ। আমন ধানের ফসল ঘরে উঠার পর মাঠ থাকে পতিত। তখন খোলা মাঠে এই খেলা জমে উঠে। বিশেষ করে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে এ খেলা বেশি হয়ে থাকে।
খেলোয়াড় সংখ্যা:
মজার ব্যপার হল, এ খেলায় অংশ নেয়ার জন্যে খেলোয়াড়েরা নির্দিষ্ট সংখ্যা, বয়স, উচ্চতা বা অন্য কোনো মাপকাটি নেই। জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বয়সের পুরুষ এ খেলায় অংশ নিতে পারে। এমনও দেখা গেছে এ খেলায় একই সঙ্গে ২০-৫০ হাজার লোকও অংশ নিয়েছে।
খেলার উপকরণ:
এ খেলার উপকরণ হচ্ছে একটি বড় আকারের গুটি। যাকে বলা হয় ‘হুমগুটি’। পিতলের কলসির মাথার অংশ কেটে ফেলা কলসির ভিতরে চিনি, গুঁড় অথবা বালুমাটি দিয়ে ভরাট করা হয়।
কলসির মুখ ঝালাই করে বন্ধ করে পরে সেটিকে চটের বস্তা দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে সুতলি দিয়ে বিশেষ কৌঁশলে পেঁচিয়ে দেয়া হয়। ফলে কলসি ফেটে গেলেও কোনো খেলোয়াড়ের আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এভাবে ‘হুমগুটি’ প্রস্তুত হয়ে যায়। আবার অনেক সময় কলা গাছের গুঁড়ি, নারিকেলকাঠ কেটে গোল করে ‘গুটি’ তৈরি করা হয়। যা আকারে একটি ফুটবলের তিন গুণের কাছাকাছি।
খেলার স্থান/ মাঠ:
সাধারনত, কোন পতিত জমিতে গুটিটি রেখে খেলা শুরু করা হয়। কিন্তু এর মাঠের কোন সীমানা নেই!!! আমন ধানের ফসল ঘরে উঠার পর মাঠ থাকে পতিত। তখন খোলা মাঠে এই খেলা জমে উঠে। বিশেষ করে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে এ খেলা বেশি হয়ে থাকে। এমনকি এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলাও এই গুটি টি চলে আসে খেলতে খেলতে। মাইল এর পর মাইল মাঠজুড়ে এই খেলা হয়। তবে এক্ষেত্রে সবার সজাগ দৃষ্টি থাকে কারো কোনো ফসল বা গাছপালা নষ্ট না হয়।
খেলা শুরু:
পূর্ব নির্ধারিত স্থান, দিন তারিখ অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খেলোয়াড় এসে জমায়েত হয়। মাঠে আয়োজক কমিটির লোকজন ‘হুমগুটি’টি নিয়ে হাজির হলে খেলোয়াড়েরা মাঝখানে ‘গুটি’ রেখে সবাই গোল হয়ে হাত তালি দিতে থাকবে। এসময় ওপর দিকে মুখ করে একজন ‘আ -- বা -- দে --রে—’ বলে উচ্চ স্বরে ডাক দিবে। এসময় অন্য সকলে দাঁড়িয়ে এক সঙ্গে বলবে, ‘হিওঁ’। এটাকে খেলায় ‘আবা’ দেয়া বলে।
এভাবে ‘আবা’ চলবে কমপক্ষে তিনবার। এসময় খেলায় অন্যান্য পক্ষ সুবিধা মতো স্থানে একত্রিত হয়ে পূর্বের ন্যায় একজন ‘ফিরের আ ---বা --দে –রে-’ বলে উল্টো ‘আবা’ দেবে। এক্ষেত্রে অন্য সবাই বলবে “হিওঁ।”। একে ফিরের ‘আবা’ বলা হয়। এভাবে খেলা স্থলের চতুর্দিকে থেকে ভেসে আসা ‘আবা’ আর ফিরের ‘আবার’ ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা।
এ অবস্থায় খেলা শুরু হয়। খেলার শুরুকে বলা হয় ‘গুটিছাড়া’। কমিটির লোকজন মিলেই খেলতে থাকেন প্রথমে। তখন ‘গুটিছাড়া’ হয়েছে শোনে অন্যান্য পক্ষের লোকজন খেলায় অংশ নিতে থাকে। এসময় কমিটির লোকজন খেলা ছেড়ে খেয়াল রাখে কোনো পক্ষ যেন ‘গুটি’টি বেশি দূর নিয়ে যেতে না পারে। আর তেমনটা হলে তারা আবারো খেলায় অংশ নিয়ে নিজেদের গণ্ডির ভেতর ‘গুটি’ রাখার চেষ্টা করে।
এভাবে খেলা চলতে থাকে। বাড়তে থাকে খেলোয়াড়ের সংখ্যা। এক এলাকা থেকে খেলা ভিন্ন এলাকায় চলে যেতে পারে। খেলায় লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পেতে বিশ-পঞ্চাশ হাজার পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তখন ‘গুটি’টি কোথায় আছে তা বুঝা অনেকটা কঠিন হয়ে যায়। নিজেদের দিকে ‘গুটি’ নিতে একজন আরেক জনকে শক্তির জোরে ধাক্কা দিতে থাকে। তবে এক্ষেত্রে সবার সজাগ দৃষ্টি থাকে যেন কেউ ব্যথা না পায়।
খেলার সময়সীমা:
এই খেলার খেলোয়াড়, মাঠের সীমানার যেমন কোন ঠিক নাই তেমনি এর সময়েরও কোন ঠিক নেই!!! এমনও হয় এ খেলা তিন-চার দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। আগের দিনে গ্রামের লোকজন মিলে খেলোয়াড়দের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করে।
ফলাফল নির্ণয়:
খেলতে খেলতে ‘গুটি’টি কোনো বাড়িতে নিয়ে লুকিয়ে ফেলা হয়। একে ‘গুটিতোলা’ বলে। আর গুটিতোলা হয়ে গেলে খেলা শেষ হয়ে যায়।
যার বাড়িতে ‘গুটি’ উঠানো হবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সবাইকে চিড়ে, মুড়ি, গুড়, চিনি খেতে দেবে। অনেক সময় পরবর্তীতে গরু জবাই করে এলাকার সকলকে নিয়ে ভুড়িভোজের ব্যবস্থা করা হয়। পরের দিন এলাকার যুবকরা দলবেঁধে ঢোল পিটিয়ে হুমগুটি সঙ্গে নিয়ে সারা এলাকা ঘুরে বেড়ায়। এ খেলায় জিতে যাওয়াটাকে এলাকার সম্মান হিসেবে ধরা হয়। তবে বর্তমানে বিজয়ীদের গরু অথবা টেলিভিশন দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়ে থাকে।
খেলোয়াড়-ই দর্শক, দর্শক-ই খেলোয়াড়
***ছবিগুলো নেট থেকে নেওয়া
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন