আট – সম্পর্ক
আফরিনের চেয়ারটা অনেকদিন হয় খালি । সেই যে দিন দুয়েকের জন্য সে সিএল নিয়ে বাড়ীতে গেল , এরপর থেকে তাঁর আর কোনো সাড়াশব্দ নেই । কি হোল বেচারীর ? আসমা মাহবুব বায়েজীদ আর তানজিলাকে আজই ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন, আফরিনের কথা । কি হোল মেয়েটির । বড় কোন অসুখ বিশুকে পড়েনি তো সে ! আবার মনে মনে একটু রাগও পেলেন তিনি । কি যে করে আজকালকার ছেলেমেয়েরা ! চাকরি করতে এসেছে কিন্তু চাকরির নিয়মনীতি এসব কিছুই মানবে না। কেমন কোরে যে এদের উন্নতি হবে!
তাইতো , তানজিলাও বেশ ভাবনায় পড়লো । কি যে হোল আফরিন আপুর । সে তো সদাই নিয়ম নীতি মেনে চলার সাধনা করে । আর চাকরি , ক্যারিয়ার এসব তো তাঁর প্রাণ । এসব সব বাদছাদ দিয়ে , সে বাড়িতে শুয়ে বসে অহেতুক সময় কাটাবে , এমনতরো ইচ্ছে আর যারই হোক না কেন , তাঁর কোনদিনও হবে না !
বায়েজিদ আর তানজিলাকে আফরিনকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিলেন আসমা মাহবুব । আফরিনকে বারে বারে টেলিফোন করে সুইচড অফ পাওয়া যাচ্ছে । তাঁর অন্য কোন নাম্বারও কারো জানা নেই । কেউ তা রাখবার প্রয়োজনও বোধ করেনি । আর এর জন্য আফরিন নিজেও অনেকটা দায়ী । কেন জানি সবসময় সে নিজেকে একটু আড়াল কোরে রাখতেই ভালবাসে । অথচ অন্য সবার ব্যাপার নিয়ে মাঝে মধ্যে বেশ বাড়াবাড়ি রকমের মাতামাতি করে সে।
তবে আফরিন তাঁর ছেলে তুতুনকে সবার সাথে আগেভাগেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে । অবশ্য সামনাসামনি দেখাদেখি নয় । ছবি দেখিয়ে ।মায়ের সাথে তাঁর অনেকগুলো ছবি সার সার কোরে টেবিলের উপর পাতা লম্বা গ্লাসটার নীচে বসানো ।
বড় বড় চোখ আর এলোমেলো চুলের ঢলঢলে সদ্য কৈশোরে পা দেয়া একটা নির্মল মুখচ্ছবি । যখন আফরিনের মন খুব ভালো থাকে তখন সে হেসে হেসে সবাইকে বারে বারে ছেলের ছবিগুলো দেখায় । ছেলের প্রশংসা করে আর বলে , তুতুন কিন্তু খুব শান্ত আর নম্র ছেলে । লেখাপড়ায়ও সে খুব ভালো । আর তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব এই যে , সারাজীবন একা একা থাকাটা এই কম বয়স থেকেই কেমন সুন্দরভাবে মানিয়ে নিয়েছে ।
এই একা একা থাকা বোলবার কারণটা নিশ্চয়ই , আফরিনের বরের অনেককাল হয় বিদেশ থাকা । সে আমেরিকা থাকে ! ভিসা জটিলতার জন্য দেশে আসতে পারে না ! ব্যস এটুকুই । স্বামীর বিষয়ে এর বেশী কথা আফরিন নিজে যেচে পড়ে কাউকে কোনদিন বলেনি !
তানজিলা নীলাকে বললো , নীলা আপু তুমিও চল আমাদের সাথে । নীলা যেতে পারবে না। হঠাৎ কোরে তাঁর কাজের মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে সে তাঁর বাচ্চা দুটিকে নিয়ে ভারী বিপাকে পড়েছে । কে তাঁদের দেখাশুনা করে । আবার ওদের বাবারও হোয়েছে বদলী । নিউক্লিয়ার ফ্যামিলীর মজাটা হারে হারে টের পাচ্ছে বটে সে !
আফরিন মীরপুর থেকে আসে এটুকুই মাত্র জানে তানজিলা । মীরপুর রুটের মাইক্রোবাসের ড্রাইভার নিজামের কাছ থেকে আর একটা বাড়তি খবর সংগ্রহ করা গেছে । আর তা হোল , সনি সিনেমা হলের সামনে থেকে আফরিন গাড়ীতে উঠে । কিন্তু কোন গলি থেকে সে সদর রাস্তায় এসে দাঁড়ায় তা গাড়ীর কেউ জানে না , এমনকি নিজামও নয় ।
তাহলে কি কোরে তাঁর ঠিকানা খুঁজে বের করবে তানজিলা । আর সনি হলের ডানে বায়ে গলি অগলির তো আর কমতি নেই ।
বায়েজিদ মনে মনে মহাবিরক্ত হোল বসের কথায় । একটা মেয়েকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব কেন যে তাঁকে দেয়া হোল ভেবে পায় না সে ! তানজিলার ভাবসাব দেখে তাঁর মেজাজ যায় আরও চড়ে । একটা মহান দায়িত্ব যেন পেয়ে গেছে সে ! আর তা নিয়ে অহেতুক মাতামাতি । বাবা, কেবল তো গেল সাতদিন । সংবাদ না দিয়ে সাতদিনের ছুটি কি কেউ নিতে পারে না? মেয়েদের সাথে বেশী ইনভল্বড হওয়া মানেই যে অহেতুক ঝামেলায় পড়া , তা তাঁর মতো জীবন দিয়ে আর কে বুঝেছে !
আফরিনকে মীরপুরে খুঁজতে যাওয়ার একেবারেই ইচ্ছে নাই বায়েজিদের আজ। কিন্তু তানজিলা নাছোড়বান্দা । যাবেই যাবে সে । সবার জন্য ভালবাসা তাঁর সবসময় যেন উথলে পড়ে, বায়েজিদ মনে মনে বলে ।
ঘড়ীতে এখন বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে । এ সময়টা বায়েজিদের স্মোকিং পিরিয়ড । রুম থেকে বেড়িয়ে তাঁকে বাহিরের করিডোরে যেতে হবে । এরপর লাইটার জ্বালিয়ে অনেক অনেকক্ষণ ধরে সুখটান । সব ভুলে থাকার একটা টোটকা মেডিসিন আর কি । আগে এমন চেইন স্মোকার ছিল না সে । বরঞ্চ সেইই বন্ধু বান্ধব সবাইকে সিগারেট ছাড়ার উপদেশ দিয়েছে ! কিন্তু নীনা , মানে তাঁর বউ তাঁকে ছেড়ে চলে যাবার পর নিজেকে অনেকখানি পাল্টে ফেলেছে সে ।
তবে এর সবটাই কিন্তু নিজের ইচ্ছেয় নয় । কেমন কেমন করে যেন পরিবর্তনগুলো তাঁকে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ফেলেছে ! এই যেমন , আগের মতো অহেতুক কথা বোলতে ভালো লাগে না তাঁর । কিংবা মেলামেশা করতে । এমনকি তেমন কাজ না থাকলে বাড়ীর বাহিরে বের হোতেও ভালো লাগে না । ভাগ্যিস মা এখনও বেঁচে আছেন । তিনি এই বয়সেও একমাত্র ছেলের ভালোমন্দ সব কঠিন হাতে সামলাচ্ছেন । কিন্তু এখন এসব কাজ করার কথা তো তাঁর নয় !
তানজিলার পাশেই বসেছে বায়েজীদ । ড্রাইভারের পাশে সামনের সিটটায় বসতে চেয়েছিলো সে । কিন্তু তানজিলাই প্রায় এক রকম জোর কোরে তাঁকে পেছনে বসিয়েছে । বায়েজীদের বেশ অস্বস্তি লাগছিলো এই মেয়েটির ব্যক্তিগত গাড়ীতে একেবারে তাঁর পাশেই বসতে ।
তবে অস্বস্তি লাগলেও মন্দ লাগছে না এদ্দিন পর একজন সুন্দরী রমণীর পাশে বসতে তাঁর । ইদানীং একটা বাজে ব্যামো হয়েছে বায়েজীদের । আর তা হোল মাঝে মধ্যে লুকিয়ে চুড়িয়ে তানজিলাকে দ্যাখা। সুন্দরী মেয়েদের চুরি করে দেখার একটা গোপন সুখ থাকে । এ সুখটা অনেকদিন হয় অসুকের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল । কিন্তু ইদানীং তানজিলাকে দেখার পর কেন জানি তা সুখ হয়ে ফিরে এসেছে !লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে গিয়ে মাঝেমধ্যে অবশ্য তানজিলার চোখে চোখে ধরা পড়ে গেছে সে ! কিন্ত তানজিলা এমন ভাব দেখিয়েছে যে কিছুই জানি হয়নি ।
গাড়ীতে বসে বসে বায়েজিদের মনে মনে আফসোস হোল - ইস ,আজ আর লেজ নাচানো সবুজ টিয়াগুলোকে দেখা হোল না তাঁর । হলুদ ঠোঁট সবুজ ডানার পাখীরা কি আনন্দেই না কাল কাটায় ! কিন্তু মানুষগুলোরই দুঃখ আর যন্ত্রণা কেবল বেশী । আর কারো না হোক অন্তত তাঁর নিজের !
কদিন আগেও খুব একটা প্রয়োজন না পড়লে বায়েজীদের সাথে কথা বলা হয়নি তানজিলার । আর তা বোধকরি আফরিনের কারণেই । বায়েজীদকে আঁকড়ে রাখার কেমন একটা অদ্ভুত মানসিকতা মাঝে মাঝে কাজ করে আফরিনের মধ্যে । কাজেরও পার্টনার ছিল তাঁরা একে অপরের । কিন্তু এখন বায়েজীদ এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন আফরিনকে সে চেনেই না । তাঁকে খুঁজে বের করার তাগিদও তার মধ্যে খুব কম বলেই মনে হোচ্ছে। আসলে , ছেলেরা বোধহয় এমনিই হয় , তানজিলা মনে মনে বলে।
বায়েজীদের সারা শরীর থেকে ভুরভুর কোরে সিগারেটের কড়া একটা গন্ধ বেড়ুচ্ছে। তানজিলার ইচ্ছে হোচ্ছে গাড়ীর সামনে রাখা পারফিউমের পুরো বোতলটা গাড়ীর মধ্যে ঢেলে দিতে। কিন্তু তা হবার নয় । কি আবার মনে কোরে বসবে তাঁর পাশে বসা মনমরা মানুষটা । আর দোষটা তাঁর নিজেরই । কেন যে সেধে সেধে তাঁকে পাশে বসিয়েছে । শাহেদ ছাড়া অন্য কোন অনাত্নীয় যুবকের পাশে আগে এভাবে বসেনি সে। তবে আবির হাসান তানজিলাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে চেয়েছিলো অনেকদিনই! সেই বেআক্কালটার হাত থেকে অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত রেহাই পেয়েছে সে , আর তা মাকে বেজায় চটিয়েই !
সনি সিনেমা হলের সামনে গাড়িটা থামতেই সঠান দরজা খুলে তানজিলা নেমে পড়লো । পেছনে পেছনে চোরের মতো মুখ কোরে বায়েজীদ । তাঁকে দেখে মনে হোচ্ছে যেন ফাঁসির আসামী !
-আপনি হাঁটতে পারবেন তো ? অনেকখানি পথ ঘোরাঘুরি করতে হবে কিন্তু , তানজিলা কোন দিক না চেয়েই বায়েজীদকে জিজ্ঞেস করলো ।
-আচ্ছা , এই মেয়েটি কি তাঁকে খোঁড়া না অন্ধ মনে কোরেছে । সে নিজে মেয়ে হোয়ে হাঁটতে পারলে, পুরুষ মানুষ হয়ে সে পারবে না । তবে বায়েজিদ মুখ ফুটে কিছু বললো না । কেবল মাথা নাড়ালো । তার মানে হ্যাঁ , সে পারবেই পারবে !
-আচ্ছা , বলুন তো কোন গলি দিয়ে শুরু করি । ডান বা বাম । বাম না ডান ।
-ডান । ডান । দুজনেই প্রায় একসাথেই বলে উঠলো !
বাম নিয়ে বায়েজিদের বেশ একটা কুসংস্কার আছে । সে বাম দিকে বসবে না । বাম পা আগে ফেলে ঘর থেকে বেড় হবে না । বাম চোখ নাচলে সে বড়ই চিন্তায় পড়ে । না জানি , কি বিপদ আসে । এই মেয়েটিরও কি তাই ?
বায়েজিদের এই ডান বাম করা নিয়ে নীনার সাথে ছোটখাট বচসাও হোয়েছে তাঁর অনেকদিন । অবশ্য নীনা এখন এমন বর বেছে নিয়েছে যে বাম ডান কিছুই মানে না । তাঁকে নিয়ে যে খুব একটা সুখে নেই সে তা বেশ বুঝতে পারে বায়েজিদ । না হোলে , বড় ভুল হোয়ে গেছে বলে কি আর প্রাক্তন হাজব্যান্ডকে শুনিয়ে শুনিয়ে কেউ টেলিফোনের ওপাশ থেকে কাঁদে ? কাঁদুক , কাঁদুক সে। মায়াকান্না হোলেও । । এখন কাঁদুক সে । খুব বাজে শোনালেও অনেকবছর হয় নীনা তাঁকে কাঁদিয়েছে । ভুগিয়েছে !
বায়েজিদ দেখেছে , একজন মেয়ের স্মামী চলে গেলে কিংবা সেই স্মামী আরেকটা বিয়ে করলে মানুষজন যত আহাউহু কোরে, একটা ছেলের বেলায় কিন্তু ঘটে ঠিক এর উল্টোটা । সবাই ভেবেই বসে , হয় ছেলেটি বাজে কিংবা তাঁর রয়েছে শারীরিক না মানসিক কোন অসুস্থতা । অথচ , এর কোনটাই বায়েজিদের নেই । নীনা ছেলেবেলার প্রেম আর প্রাক্তন প্রে্মিককে বায়েজিদের সাথে তাঁর বিয়ে হোয়ে যাবার পরও ভুলতে পারছিল না সে। তাই বোঝাপড়া করেই ছাড়াছাড়ি !
তানজিলা হাঁটছে না দৌড়ুচ্ছে তা ঠিক এত দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না । আসলে নীনার কথা ভাবতে ভাবতেই বায়েজীদ তানজিলার কাছ থেকে অনেকখানিই পিছিয়ে পড়েছে। কিন্তু তানজিলার সেদিকে আদৌ খেয়াল নাই । সে হাঁটছে তো হাঁটছেই । কোন ক্লান্তি যেন নেই । হাঁটতেঁ হাঁটতে মাঝেমধ্যে দোকানপাট বা লোকজন পেলে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি কি যেন জিজ্ঞেস করছে । নিশ্চয়ই আফরিনের ঠিকানা ।
চারদিকে বেশ চড়া রোদের ডানা । ছায়া নেই তাতে । মাঝে মধ্যে উত্তুরে বাতাস । বাতাসে ইচ্ছে মতো উড়ছে তানজিলার গোলাপি রঙা কামিজের পেছনের কিনারা আর লম্বা ওড়নাটা । বায়েজীদ দু চোখ ফিরিয়ে নিল । এখন বেশ লজ্জাই লাগছে তাঁর তানজিলা নামের উড়ন্ত কবুতরটাকে দেখতে । পায়রা । সবুজ রঙ্গা টিয়ে পাখী নাকি পারিন্দা ! উহ , আজকালকার মেয়েরা কেন যে এত এত লং কাটের কামিজ পড়ে । দু পাশে বিশাল ফাঁড়া । তাতেই যত বিপত্তি !
আসলে অফিসে পড়ার জন্য একটা ড্রেস কোড থাকলে মন্দ হয় না । ছেলেরাও হয়েছে তেমনি । কেউ কেউ কোন কোন দিন জিনসের চাপা ট্রাউজার আর চকচকে টি শার্ট পড়ে নিদ্ধিতায় অফিস করতে আসে ! বায়েজিদ সব সময় হোয়াইট কলারড জেন্টলম্যান ।
পাওয়া গেল অবশেষে যেন আকাশের চাঁদ । আফরিনের বাড়ীটা খুঁজে খুঁজে বের করা গেল । একটা সাদা মাটা ছ তলার ফ্লাটের চারতলা ।
অনেক শঙ্কা আর অপেক্ষা নিয়ে কলিং বেল চাপতেই একজন ১৩/১৪ বছরের ছেলে এসে দরজাটা খুলে দিল । তুতুন ! তানজিলা এক নজর দেখেই বুঝতে পারলো !
- মা কোথায় তুতুন ? মা নেই ? চেঁচিয়ে বলে উঠলো তানজিলা !
- আছে , মাথা নেড়ে একেবারেই শান্ত শিষ্ট ভঙ্গিতে বললো সে। তারপর তানজিলা আর বায়েজিদকে বাহিরের ঘরে বসিয়ে রেখে ভেতরে মায়ের কাছে গেল । ফিরে এলো একটু পড়েই ।
- মা , আপনাদের সামনে আজ আসবে না । আপনাদেরকে চলে যেতে বললেন ।
- কিন্তু কেন ? আমরা তো তোমার মার সাথে দেখা করতে এসেছি । শরীর কি খুবই খারাপ আম্মুর ?
- হু !
- আমি তো ভেতরে যেতে পারি নাকি , তানজিলা দুরু দুরু বুকে জিজ্ঞেস করলো ।
- তাহলে আম্মুকে আবার জিজ্ঞেস করে আসি ।
- হ্যাঁ , তাই যাও –বেশ একটু রুঢ় স্বরেই বললো বায়েজিদ !
- এভাবে বলা কি ঠিক হলো , তানজিলা চোখের ইশারায় জানতে চাইলো বায়েজিদের কাছে।
- নাহ, ঠিক হোল না । এ ছাড়া বা উপায়ই বা কি ? বায়েজিদ মনে মনে বললো ।
একটু পরেই ফিরে এলো তুতুন । আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছে আম্মু , তানজিলার দিকে তাকিয়ে ভীরু ভীরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো সে।
তানজিলা পায়ে পায়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলো । না ঢুকলেই বুঝি ভালো ছিল । এই কয়েকদিনে কি চেহারার হাল হয়েছে আফরিনের । ভাঙ্গা গাল । কোটরে ঢুকানো দু চোখ । এলোমেলো বেশবাস !
কিছু বলতে পারছে তানজিলা । কিইবা বলবে সে । আফরিনকে দেখে বেশ বুঝা যাচ্ছে এক প্রলংকারী ঝড় বয়ে গেছে তাঁর উপর দিয়ে ।
-আফরিনই মুখ খুললো , খুব চিন্তা করছো না তোমরা আমাকে নিয়ে ।
- হু তাতো বটেই , অফিসের সবাই । একটা ফোন করে জানাতেও তো পারতে ।
- না , পারি নাই । সে আসলো । তাঁকে নিয়েই যত টানাটানি ।
- কে ? কে এল ?
- আমার আগের বর ! বর !
-মানে ? এখন সে নেই ?
- না , অনেকদিন হয়ই সে নাই । অনন্তঃ আমাদের সংগে নেই । অথচ দ্যাখো তাঁকে নিয়ে কত কথাই না বানিয়ে বানিয়ে বলেছি তোমাদেরকে । আসলে আমাদের দু জনার ছাড়াছাড়ি হয়ে গ্যাছে অনেক কাল আগেই । তখন তুতুন সাত মাসের পেটে । ক্যামন একটা নির্দয় মানুষ বলো ! বউ ছেলেকে রেখে হায়ার স্টাডিতে গেল । তারপর সেখানেই এক বিদেশীনিকে নিয়ে পাকাপাকি থেকে যাওয়া ।
- উহ!
- হ্যাঁ , আরও শুনবার আছে তোমার । কদিন আগে মারাত্নক একটা এ্যাকসিডেন্টে মারা যাবার আগে প্রায় শেষ অবস্থায় আমেরিকার হসপিটাল কতৃপক্ষকে আমার এই ঠিকানাটা দিয়ে গেছে । বলেছে তাঁর ছেলে আর বউ এর কাছে যেন পাঠিয়ে দেয়া হয় তাঁকে । কিন্তু এটা কি কোন মানুষের কাজ হোল বলতো তানজিলা ? এটা কি ধরণের সম্পর্ক ? সম্পর্কবিহীন সম্পর্ক ! আগের কষ্টটা তাও কোন রকমে কাটিয়ে উঠেছিলাম দু জন । কিন্তু এবারের দুঃখ তুতুন আর আমি কাটিয়ে উঠতে আর পারবকি ? তুমিই বলো তানজিলা পারব কি আমি ?
আফরিনের কান্না ভেজা শরীরে দু হাত রেখে তাঁকে জড়িয়ে ধরে তানজিলা বললো , পারবে , পারবে তুমি আফরিন আপু । আমরা তোমার সঙ্গে আছি !
** সব চরিত্রই কাল্পনিক