শিশু পরিবার সুনামগঞ্জে ১০০ জন এতিম বালিকা সরকারী তত্বাবধায়নে বেড়ে উঠছে। এদের মধ্যে কারো বাবা নেই, কারোবা নেই মা, কয়েকজন আবার অকালে বাবা মা দুইজনকেই হারিয়েছে! একেকজনের জীবনের গল্প একেক রকম। তারপরও ঈদ এলে সবাই তাদের পরিবারের কাছে বেড়াতে চলে যায়। ব্যাতিক্রম কেবল ৬ বছরের তাহমিনা আর ৭ বছরের সুইটি! এদের পরিবারের কোন খোঁজ নেই! এদের একজন পরিবার পরিত্যাক্ত আর অন্যজন দুর্ভাগ্যক্রমে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে! ঈদের সময় পুরো এতিমখানা খালি হয়ে গেলেও ওরা থেকে যায়। ঈদ তাই তাহমিনা আর সুইটির জন্য আরো বেশী কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায়! এদের পরিবার নেই, আনন্দও নেই!
খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওরা দুইজন ছিল সিলেট পুলিশের ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে। পরে আদালত ওদের এতিমখানায় রাখার নির্দেশ দেন। সিলেটে জায়গা না হওয়ায় ওদের স্থান হয় সুনামগঞ্জ এতিমখানায়। সেই থেকে ওরা এখানেই আছে।
পরিবারে সবার ছোট ৬ বছরের তাহমিনা বাবা মায়ের সাথে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারতে এসেছিল। দুর্ভাগ্যবশত মাজার প্রাঙ্গনে সে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সে তার বাড়ি বালাগঞ্জ বলে জানায়। তার বাবার নাম সেলিম, তিনি চা বিক্রেতা। মার নাম হালিমা। বড় বোনের নাম রাশিদা, ভাইদের নাম শাহিন, নাহিন।
৭ বছরের সুইটি একদিন চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার বাবা আনোয়ার তার মাকে মারপিট করছে! মা শিউলি চলে যান বাবার বাড়ি। ছোট্ট সুইটি রয়ে যায় তার বাবার সাথে। অন্য জায়গায় তার মায়ের বিয়ে হয়ে যায়। বাবাও আবার বিয়ে করেন। একদিন তার বাবা তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সিলেট কিন ব্রিজের নিচে ফেলে রেখে যায়! ছোট্ট মনে এহেন ঘটনা দাগ কেটে যায়। পুরো এতিমখানায় সেই সবচেয়ে উশৃঙ্খল মেয়ে। কারো কথা সে শুনতে চায় না। বাবার আচরণ সে একেবারে ভুলতে পারছে না। ছোট্ট সুইটি বলে, বাবাকে পেলে সে নাকি খুন করবে! তার উপর, তার মায়ের উপর করা নিপীড়নের বদলা নেবে! একটা শিশু কতটুকু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে এমন চিন্তা করতে পারে তা আমাদের বুঝতে পারার কথা!
ফুটফুটে তাহমিনা আর সুইটি দুইজনই তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চায়। পরিবারের অন্যসব সদস্যের সাথে ঈদ করতে চায়, আনন্দ করতে চায়, স্নেহ ভালোবাসার মধ্যে বেড়ে উঠতে চায়। ঈদ আসছে, সবাই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরবে, কেবল তাহমিনা আর সুইটিই ব্যতিক্রম!
সর্বশক্তিমান ওদের প্রতি সহায় হোন এই কামনা করি। ধন্যবাদ
[কেউ যদি ভালোবাসা বঞ্চিত এই শিশুদ্বয়ের পরিবারের খোঁজ পান তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন সরকারী শিশু পরিবার (বালিকা), সুনামগঞ্জ; ফোনঃ ০৮৭১-৬২৭৯৪]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩২