দেশে তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্রিক পন্যের বাজার এখন বেশ বড়। এসিআই এর মত স্থানীয় রক্ষণশীল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যখন মোবাইল ফোন বাজারে আনে তখন তা বাজারের ঊর্ধ্বগতি নির্দেশ করে। যা আশা জাগানিয়া। এতটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে।
কিন্তু, মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ, আইপি টিভিসহ হাজারো প্রযুক্তি পন্য চালু রাখতে বা এসব থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগাতে যে অবকাঠামো দরকার দেশে তা নেই বললেই চলে!
একবিংশ শতাব্দির প্রযুক্তি নির্ভর দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে দুইটি জিনিসের গুরুত্ব সর্বাধিক। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ।
বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয় এবং এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ চাহিদা নির্ধারণ করতে গিয়ে সম্ভবত প্রযুক্তি পন্যের বিদ্যুৎ চাহিদারে কথা একেবারে ভুলে যান। তারা হয়ত জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যুতের যে চাহিদা বাড়ে তা আমলেই নেন না! আর লোকজনের হাতে ডিস্পজেবল ইনকাম বাড়তে থাকায় বাজারে ইলেক্ট্রনিকস গেজেটের চাহিদাও বাড়তে থাকে। প্রবৃদ্ধির এই উভয়মুখী চাহিদা মেটাতে না পাড়ায় লোকজনের হাতে থাকা প্রযুক্তি পন্যের উপযোগিতা সাধারণ মানুষজন কাজে লাগাতে পারছে না।
বাংলাদেশে এমন শত শত গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে যা এখনও বিদ্দুতায়নের আওতায় আসেনি। এখনও পল্লি বিদ্যুতের আওতাধীন গ্রাম-গঞ্জে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভবপর হয়নি। আপনি বিনা পয়সায় যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে গ্রামের লাখো স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষিত বেকার যুবককে আউটসোর্সিং কাজে হয়তবা উৎসাহিত হয়ত করতে পারবেন, কিন্তু, তাদের যদি কম্পিউটার চালানোর মত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারেন তাহলে যে রিভার্স প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে তা একবিংশ শতাব্দির প্রযুক্তি নির্ভর দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলার পথে একসময় বিরাট বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে!
মোবাইলে বিশ্বের সর্বনিম্ন কল রেটের ছুতায় আইএসপি এবং মোবাইল কোম্পানিগুলি ইন্টারনেট সেবা দেয়ার নামে গ্রাহকের যে পরিমাণ গলা কাটছে তা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব! আমি সুনামগঞ্জে ৪৬০ টাকায় ৫১২ কেবিপিএস এর যে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করি তার সর্বোচ্চ গতি উঠে ৫০ কেবিপিএস! এই দিয়েই কাজ করতে হয়! ধীরগতির কারণে প্রদত্ত মাসিক ডাটা এলাউন্স অব্যবহৃত হয়ে মোবাইল কোম্পানির পেটে চলে যায়! অন্যদিকে, জাপানে ইন্টারনেটের গড় গতি প্রায় ১৫ এমবিপিএস। মাত্র ২৫ ডলারে (২০০০ টাকা) যেকেউ ১০০ এমবিপিএস সংযোগ নিতে পারবেন! আমি জানি রাত পেরুলেই আমরা জাপানকে ধরতে পারব না। কিন্তু, আমাদের পলিসি মেকিংত জাপানের মত দেশকে টেক্কা দিতেই তৈরি হয়, তাই না?
ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন করতে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা আমার কাছে বাস্তব সম্মত মনে হচ্ছে না। প্রথমত, ১১ হাজার মেগাওয়াট বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে এখনও ৩০% নাগরিক বিদ্যুৎহীন আছেন! দ্বিতীয়ত, দারিদ্র সীমা থেকে বের হয়ে আসা লোকজন কেবল বাতি জালিয়েই ক্ষান্ত হবেন না, তাদের ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখা কিংবা ঠাণ্ডা গরম খাবার খাওয়ার সাধও পূরণ করতে হবে; আর বড় লোকদের চাহিদার কথা আর নাইবা লিখলাম! এমতাবস্থায়, তথ্য প্রযুক্তির বিদ্যুৎ চাহিদার কথা যোগ করলে প্রকৃত চাহিদার সংখ্যা কেমন হবে তা কি সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখেছেন? এখনও উপজেলা এমনকি সব জেলায় দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিসেবা ছড়িয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারপরনাই ব্যর্থ হয়েছেন! সবাইকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করতে সরকারী উদ্যোগ তেমন একটা গতি পায়নি! অবকাঠামো নির্মাণে সরকার, ব্যক্তি খাত কেউই উৎসাহী নয়। এমতাবস্থায়, মোবাইল কোম্পানিগুলির লোভের চাপাতির আঘাতে গ্রাহকের দফারফা হয়ে গেছে!
তথ্য প্রযুক্তিতে জাপানাকে টেক্কা দেয়ার পলিসি এখন বিদ্যুৎ আমদানি আর বিদেশে ব্যান্ডউইথ রফতানির মাধ্যমে সাধিত হচ্ছে! আফসোস!
[ছবিঃ ভালো স্পিড পাওয়ার আশায় ইন্টারনেট ডঙ্গল কেউ একজন বারান্দায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন!]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১