সিলেট অঞ্চলের নাগরিক হলেও নিজেকে সবসময় সুনামগঞ্জের মানুষ বলে পরিচয় দিতেই ভালো লাগে। যারা সুনামগঞ্জ নামের জেলা চিনেন না তাদেরকে চিনিয়ে দেই। গর্বের সাথে বলি, মৎস্য, পাথর, ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ। আর একবার যাকে সুনামগঞ্জী বাউল গান, মরমী গান আর হাওরের অপার জলরাশির মধ্যে জ্যোৎস্নার মায়ায় পেয়ে বসে তাকে আর পুনর্বার কোন কিছু মনে করিয়ে দিতে হয় না।
এত কিছুর মধ্যেও খামতি আছে। প্রকৃতি প্রদত্ত বিপুল সম্পদ নিয়মিত আহরিত হলেও আমাদের জেলাটি প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। আমরা বলি, হেমন্তে পাও(পা) আর বর্ষায় নাও(নৌকা)। বলা চলে, প্রকৃতি একদিকে সহায় হয়েছে আবার অন্যদিকে আমাদের অসহায় করে রেখেছে। স্কুল কলেজ প্রয়োজনের তুলনায় একাবারে কম। উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে (মাত্র এই বছর সরকারী কলেজে কয়েকটি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়েছে)। যার কারণে আমাদের জেলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের দৌড় উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত।
এতো কিছুর মধ্যে উচ্চ শিক্ষায় আশার আলো হয়ে সিলেট শহরে চালু আছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। সুনামগঞ্জের অনেক বন্ধু ও স্বজন এই বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং এখনও আছেন। তাদের অনেকেই আজ ব্যাক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ঈর্ষনীয় সফলতা অর্জন করেছেন। সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শাবিপ্রবি যদি সুনজরে না নিত তাহলে সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক ছেলে মেয়েকে আর উচ্চ শিক্ষার নাম নিতে হত না। এই অর্জন শাবিপ্রবির।
আমার লেখা পড়ে কেউ হয়ত মনে করতে পারেন এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বুঝি ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই শাবিপ্রবিতে ভর্তি হচ্ছেন। আসলে এমনটা নয়। তবে শাবিপ্রবির শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জাফর ইকবাল স্যারের কথায় এমনটাই মনে হতে পারে। তিনি মনে করেন শুধু সিলেটী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু থাকতে পারে না। কোটা থাকুক বা নাই থাকুক সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয় কিন্তু এই অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র স্থান শাবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম থেকে এই অঞ্চলের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ছেঁটে ফেলার কথা কতটা সচেতনতা প্রসূত? এই মন্তব্যের জন্য শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে একজন স্থানীয় এমপি চাবুক মারার কথা বলেছেন। এরূপ মন্তব্যের জন্য তিনি নিশ্চয় জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবেন। বিনা ভোটে পাস করা এমপিরা কত কিছুইত বলছেন তার কোনও মূল্য কি গণতান্ত্রিক সমাজে আছে? কিন্তু সর্বোচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক শ্রেণীর ব্যাক্তি যদি এই অঞ্চলের সামাজিক পরিস্থিতি না বুঝে নীতি বাক্য আওরে বেড়ান তা কতটা সমীচীন?
সিলেট আলাদা কিছু নয়, এটি বাংলাদেশেরই অংশ। নানা কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এই অঞ্ছল অবস্থা উন্নয়নে যদি বিশেষ কোন কিছুর দাবি করে থাকে তবে সঙ্গত কারণে দেশের অন্য অঞ্চলকে বিবেচনায় আনার আগে সিলেটকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আমার অবস্থান পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশনের পক্ষে।
শিক্ষক হোন বা জন প্রতিনিধি সবার কাছে আমরা যৌক্তিক আচরণ, মন্তব্য ও মতামত আশা করি।