শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর অব্দি ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে! প্রতিদিন লম্বা হতে থাকা এই মৃত্যু মিছিল দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। জান-মালের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তা সম্পূর্ণ না হোক অন্তত অনেকখানি প্রতিরোধযোগ্য।
করের অর্থে রাস্তাঘাট তৈরি করে সরকারি দপ্তর। গাড়ী-ঘোড়া সেই রাস্তার উপর দিয়ে চলাচল করে। এইগুলি চালানোর দায়িত্বে থাকেন এক বা একাধিক পেশাদার মানুষ। গাড়ী আর এর চালকের যোগ্যতা নির্ধারণ করে আরেকটি দপ্তর। এই তিন স্তরের যেকোনো একটিতেই গোল বাধলেই ক্ষয় হয় মূল্যবান জীবনের!
গাড়ী জড় পদার্থ। নিজ থেকে নড়াচড়া করার ক্ষমতা তার নেই। বলতে গেলে আমাদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। রাস্তা-ঘাট যদি ঠিকঠাক না থাকে তাইলে দুর্ঘটনা ঘটবে! বাছ-বিচার না করে গাড়ী রাস্তায় নামানো ও চালানোর অনুমতি দিলে সমস্যা হতেই পারে! লক্কর ঝক্কর মুড়ির টিনে দুঃসংবাদ প্রত্যাশিত। চালক/হেলপার যদি জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্য দেন বেশী তাইলেত কথাই নেই!
হরেক সাইজের দেশী বিদেশী গাড়ী রাস্তায় চলছে! বড় রাস্তায় ছোটটি আর ছোট রাস্তায় বড় গাড়ীটি অবলিলায় দাবড়ে বেড়াচ্ছে! খোলে-আম চলছে চাঁদাবাজি। মহাসড়কে ১৮ চাকার লরির পাশাপাশি ভটভটিও চলছে, বিশ-বাইশ টনের ট্রাকের পাশাপাশি পদ চালিত সাইকেলেরও দেখা মেলে! যোগাযোগ ব্যবস্থায় সকল প্রকার অনিয়মই আসলে নিয়ম!
আজকাল নাটক সিনেমার কুশীলবরা সীট বেল্ট বাঁধেন না। তাই দেখে শেখার ব্যবস্থা নাই। হিরো, হিরোইনেরা হ্যালমেট ছাড়াই বাইকে করে অজানায় পথ হারায়! ক্যালরি সচেতন মানুষ ওভারব্রিজ ছেড়ে দৌড়ে রাজপথ পাড়ি দেয়! দরজা থেকে পড়ে চাকার নিচে পিষ্ট হতে রাজি কিন্তু একটু সময় করে কেউ অফিস যেতে চাইবে না! ঈদের সময় ট্রেন বা বাসের ছাদে আরোহণ করতে না পারলে নাকি ফিলিংস আসে না! নির্ঘাত মৃত্যু জেনেও ডুবু ডুবু লঞ্চে ঢাকায় ফিরা চাই-ই চাই! নীতি নির্ধারনী ফোরাম যখন অসচেতনতা তখন আম পাবলিকদের কিভাবে দোষী বলা যায়?
দুই একজনের অপ্রয়োজনীয় ব্যস্ততা, অনিয়ম, অসতর্কতা এবং অসেচতনতায় ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। ক্ষয় হচ্ছে জান মাল। আশংকার ভিতর আছি আমি আপনি সবাই। শুধু নিজে সচেতন হলে হবে না। চাই সামগ্রিক সচেতনতা। নইলে সড়ক, রেল কিংবা নৌ পথে মৃত্যু মিছিল শুধু লম্বাই হবে।