আমরা এক একটা শিক্ষিত হইতাছি। শিক্ষিত হইবার লাইগা কলেজ ভার্সিটি তে দৌড়াইতাছি। কলেজে আইসা হুদাই বাপের টাকা নষ্ট করবার লাগছি। কামের কাম জিরো। আমাগো দিয়া না দেশের লাভ হইবো, না নিজের বা বাপ মায়ের। এই পড়া লেখার জীবনের হিসাব দিতে দিতে কবরের জিন্দিগি পার হইয়া যাইবো। আল্লাহ মাফ করো এমন শিক্ষা ব্যবস্হার আমিও একজন শিক্ষার্থী। যেখানে মানুষের বাচ্চা গুলো ঠিকই ভর্তি হয় কিন্তু বের হয় জানোয়ার হয়ে। আমি নিজেকে আলাদা জাতি ভাবতে ভয় পাচ্ছি। পুনারাবৃত্তি করছি, এমন শিক্ষা ব্যবস্হার আমিও একজন শিক্ষার্থী।
একটা ব্যাচের বিদায় অনুষ্ঠানে সবার বক্তবের মাঝে একটু খানি বলার সুযোগ হয়েছিল, বলে ছিলাম “বড় বড় পদে আসিন এক সময় আমরাই হবো। কিন্তু আমাদের নৈতিকতা যদি ঠিক না থাকে তবে এই আমাদের দিয়ে দেশ ও জাতির বিন্দু মাত্র ফায়দা হবে না।” পুথি গত বিদ্যার আগে দরকার নৈতিক শিক্ষার যার বড় অভাব আমাদের। ২০০৭ সালে বিখ্যাত বনের রাজা ওসমান গনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ছাত্র ছিল, কিন্তু বাস্তব জীবনে টাকা উপার্জন ছাড়া শিক্ষা আর কোন কাজেই লাগেনি। এমন ভুড়ি ভুড়ি উদাহরন আরো আছে, দিতে চাই না্। একাওর পরর্বতী সময় বাঙালী জাতির পিতা বলে পরিচিত শেখ মুজিবুর রহমান বলে ছিলেন, “সবাই পায় সোনার খনি আমি পেয়েছি চোরের খনি। আমার ডানে চোর বামে চোর। সাত কোটি মানুষের সাড়ে সাত কোটি কম্বলের ভিতর আমারটাই পেলাম না।” সে মুজিবুর রহমান আজ নেই ঠিক তবে চোর গুলো রয়ে গিয়েছে। চুরির শিক্ষা আজ কাল কলেজ ভার্সিটি থেকেই নিয়ে বের হচ্ছি যাতে বড় বড় পোষ্টে গিয়ে দ্বিধায় পড়তে না হয়।
আসল কথায় আসি, কলেজের মেধাবি সুডেন্টরা সব পরিক্ষা দিতেছে বিভিন্ন কলেজে। আমাদের সহ আরো অনেক কলেজের সিট পড়েছে বি এল কলেজে। সব শিক্ষিত ছেলে মেয়ে ইন্টার শেষ করে ভর্তি হয়েছে। আমিও কিন্তু সেই হিসাবে শিক্ষিত্। একদম সেইরাম শিক্ষিত। তো এইখানের অবস্হা কি হওয়া উচিত? আর না পড়ে এক মিনিট কল্পনা করুন তো। যদি কারো সামান্য কিছুও হারিয়ে যায় তাও পৌছে যাবে আসল মালিকের কাছে। প্রসেস এমনি বের হয়ে যাবে। কি এটাই ভাবছেন তো? আমি এমনটাই আসা করি। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ফেরত দিবে তো দূরে কথা পারলে অন্যের তা নিজের পকেটে ভরে। অবাক হচ্ছেন? আমিও হয়ে ছিলাম যখন আমার ফ্রেন্ড মুখ কালো করে সবার অগোচরে বাস ভাড়া চেয়েছিল, বাড়ি যাবে বলে। ভাবছেন বাস টাকা নেই তাই বাস ভাড়া চেয়েছে। না ! এমন টা হলে অনেক খুশি হতাম। কিন্তু যখন শুনলাম পরিক্ষা শেষে ভিড় ঠেলে নামার সময় পিছনের পকেট থেকে মানি ব্যাগ পকেট মার হয়ে গিয়েছে, তখন আর কিছু বলতে পারলাম না। এটাও শুনতে হলো? আচ্ছা যে মানি ব্যাগটা নিয়েছে সে কি পথের কেউ? না সে আমাদের মতোই ছাত্র। আইনের ভাষায় অপরাধী নিদির্ষ্ট না হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ সন্দেহের বাহিরে না, সে হিসাবে আমিও ঐ পকেট মার হতে পারি। ভিড়ের ভিতর যে আমিও ছিলাম। লজ্জা । তথাকথিত মানুষ হতে এসে শেষ পর্যন্ত চোর হলাম।
২০১৩ সালের মেবি ২৮ ডিসেম্বর, কমার্স কলেজের ভর্তি পরিক্ষা ছিল। টিচার আর ভর্তি পরিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ছাড়া বাহিরের কেউ ছিল না। বিশেষ করে হলের ভিতর তো শুধুই শিক্ষিত পোলাপান। পরিক্ষা শুরুর আগে স্যার সব মোবাইল ফোন সামনে রাখতে বলল, পরিক্ষা শেষে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে। বেশির ভাগ স্টুডেন্টই বা সবাই জমা রাখল। যাওয়ার সময় আমার এক ফ্রেন্ডের মোবাইল পাওয়া গেল না। আবারও আমি চোর হলাম, কারন অপরাধী তো ধরা পড়েনি। লজ্জা। ওর বাবা নেই, ভাইয়ের টাকায় পড়াশুনা করে। মোবাইলটা হারানোর পর ওর কতটা কষ্ট হয়েছে বোঝেন/
খুলনা সুন্দরবণ কলেজের একজন শিক্ষার্থী পরিক্ষার হলে তার শিক্ষার্থীদের মোবাইল সামনে রাখতে বলার পাশাপাশি উপদেশ দিচ্ছেন, মোবাইল সামনে রাখো ঠিক আছে, তবে যাওয়ার সময় নিজের টা নিয়েই ফিরো। সাথে অন্যের মোবাইল নিয়ে তার কান্নার কারন হয়ো না। তারপর সামান্য একটা ঘটনা বলল, “এক পরিক্ষায় ফোন জমা নেয়ার পর যাওয়ার সময় কোন এক শিক্ষিত স্টুডেন্ট নিজের মনে করে অন্য এক ভাইয়ের মোবাইল ফোন ও নিয়ে গিয়েছে। ছেলেটি কান্না করে বলে ছিল ম্যাম, আমার একটাই ফোন ছিল গ্রামে বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ করার সেটিও হারিয়ে (চুরি) গেল। এখন আমি বাড়িতে কিভাবে যোগাযোগ করবে? আমার যে নতুন ফোন কেনার সামর্থ্য নেই! পরে সব শিক্ষকরা মিলে তাকে ফোন কিনে দেয়া হয়।” তোমরা এমন করো কেন ? যার ফোন নিচ্ছ সেও তো তোমারই সহপাঠী।
কিচ্ছু ভাবতে পারছি না, মাথায় শুধু ঘুরছে, আসলেই আমরা এমন কেন? শিক্ষা গ্রহন করতে এসে যদি চোর হয়ে ফিরে যাই, তবে বাবা-মাকে মুখ দেখাবো কি করে? উওর নেই। শুধু বলি আমি এমন শিক্ষা ব্যবস্হা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী। যেখানে সহপাঠী রূপী চোর আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ১০:০৯