somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আকাশ নীল : জাহাঙ্গীর অালম মাসুম

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছু রোগের উপসর্গ থাকে না । থাকে অনুসর্গ। প্রথমটায় বোঝা যায় না কী রোগ। রোগীর অবনতি ঘটতে থাকে আর রোগের হতে থাকে উন্নতি। শেষটায় রোগীকে সে নিঃশেষ করে তবেই ক্ষান্ত হয়। নিতু বোধহয় এমনই রোগে আক্রান্ত। নিজেকে তার রোগী মনে হয়। কিন্তু রোগের কোন লক্ষণ খুঁজে পায় না। একা থাকতে ভাল লাগে। মানুষের সঙ্গ তার অসহ্য লাগে। তবে কিছু লোকের সঙ্গ সে চাইলেও এড়াতে পারে না।
-নিতু,তোর ফোন বাজছে। ফোনটা ধর মা।
তুমি যাও মা। আমি দেখছি।
হ্যালো,রায়ান বল।
বন্ধু, সন্ধায় বেইলি রোড চলে আসিস। একটা নতুন রেস্টুরেন্ট হয়েছে, সেখানে আমাদের সব জিনিস পাওয়া যায়। এখন আর কষ্ট করে বনানি যেতে হবে না।
ঠিক আছে আমি চলে আসবো।
পুরো নাম জান্নাতুল ফেরদাউস নিতু। বাবা-মায়ের অতি প্রিয় মেয়েটির এসএসসি এবং এইচএসসি দুটোতেই জিপিএ-৫। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে বলে বাবা ভর্তি করে দিলেন নামকরা একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। প্রথম কয়েকটি সেমিস্টারের রেজাল্ট সবাইকে চমকে দেয়ার মতো। ভাল ছাত্রী হিসাবে ক্লাসে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। বাড়তে থাকলো বন্ধুর সংখ্যা। বন্ধু..বন্ধু..এবং বন্ধু।
‘নিতু,বিদুষী কন্যা নিতু, তুমি আমাদের ভার্সিটির অহংকার আর দুখিনী বাংলা মায়ের আলোকবর্তিকা। আপনার অভূতপূর্ব সাফল্যে আমরা মুগ্ধ। আজ সন্ধায় এজন্য এক জমকালো পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি মহারানীর শুভাগমন ঘটবে।’ একদিন ক্লাসশেষে নিতুকে লক্ষ করে রায়ানের দুষ্টুমিভরা কাব্যিক উক্তি।
রায়ানও ক্লাসে ভালই। তবে ইদানিং তার পড়াশোনার মান ধীরেই অবনতি হচ্ছে। গুছিয়ে কথা বলাতে ওস্তাদ। বিশেষত নিতুর সঙ্গে আকাশের সব রঙ মিশিয়ে কথা বলে সে।
সেদিনের পার্টিশেষে ঘরে ফিরলো অন্য নিতু। রায়ান তাকে জোর করে কী একটা খাইয়ে দিয়েছে। প্রথমে অপ্রকৃতস্ত লাগলেও পরের অনুভূতি অন্যরকম। মনে হলো স্বর্গীয় কেউ তাকে এসে সুরা পান করিয়েছে।
দিনে দিনে স্বর্গের প্রস্রবন ধারার স্বাদ শতগুণে বাড়তে লাগলো। বাড়তে থাকলো নিতুর অলকনন্দা উপভোগের ধারা।
মা,গত সেমিস্টারের রেজাল্ট কী হলো জানালে না তো।
ভাল হয়েছে বাবা।
বাবা-মেয়ের সংক্ষিপ্ত কথোপকথন। নিতুর ব্যবহার ইদানিং বাবার কাছে বেশ অসংলগ্ন লাগছে। নানা অজুহাতে সে প্রচুর টাকা নিচ্ছে। শোনা যাচ্ছে,সে নাকি বন্ধুদের কাছ থেকেও ধার করছে।
নিতু যতক্ষণ রেস্টুরেন্টের বিশেষ কামরায় থাকে ততক্ষণ তার মনে হয় তার আকাশে জড়ো হয়েছে পৃথিবীর সব নীল রং। সে অস্ফুট স্বরে বলে- রায়ান,তুই আমাকে এ কোন জগতে নিয়ে এলি? এখানে আনন্দের হোলি উৎসব। হাজারো রংয়ের মেলা। আমার প্রিয় রং নীল। আমার চোখ শুধু নীল দেখে। চারিদিক নীল। নী..ল। আকাশ নী..ল। আমার আকাশ নী...ল।
নিতু নামের মেধাবী মেয়েটির অমন অধপতনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে রাফি। নীল বসনা নিতুকে অসম্ভব সুন্দর লাগে তার। মেয়েদের প্রসংশা তার ভাল লাগে না। কিন্তু নিতুকে দেখে তার মন বলেছিল,বেহেশতের হুর এই মেয়ের চেয়ে রুপবতী হবে আমি তা বিশ্বাস করি না। নীল বিষয়ক একটা কবিতা কবে যেন পড়েছিলাম- ‘‘তোমার চোখের চেয়ে বেশি নীল অন্য কোন আকাশ ছিলনা যেখানে উড়াল দিতে পারি।’’ রাফির প্রিয় নিতু আজ বিধ্বস্ত নীলিমা। সে মনে মনে পণ করলো যে করেই হোক নিতুর সঙ্গে কথা বলবে। তাকে এ চোরাবালি থেকে তুলে আনবে সোনালি রাজপথে। নিতু অন্ধকারে নয়,হাটবে আলোর পথে।
নিতু আজকের লেকচারটা কি বুুঝেছো তুমি? নিতুর সঙ্গে কথা বলার একটা ফাঁদ পাতলো রাফি। ফাঁদ কথাটা মন্দ অর্থে ব্যবহার হয়। কিন্তু রাফির এ ফাঁদ হিংস্র বাঘের দিকে এগিয়ে যাওয়া একটি নিরীহ হরিণ শাবককে রক্ষার ফাঁদ।
আমার এসব লেকচার টেকচার আর ভাল লাগে না। তুমি ভাল করে বুঝো। তুমি তো এখন ক্লাসে ভাল করছো। তোমার দরকার হবে।
কী বলছো নিতু? শুধু আমার একার কেন দরকার হবে? আমার চেয়ে বেশি দরকার তোমার।
না আমার দরকার নেই। তুমি মেধাবী তাই তোমার দরকার।
আমি যদি তোমাকে একটা কথা বলি বিশ্বাস করবে?
অবিশ্বাস্য না হলে করবো।
তুমি আমার চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী।
হা..হা..হাসালে রাফি।
জানো নিতু,কত দিন পর তোমার এমন বিশুদ্ধ হাসি দেখলাম। তুমি হাসলে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে।
এসব কমন ডায়ালগ রেখে কাজের কথা বলো।
আমি তো অনেক কাজের কথা তোমার জন্য জড়ো করে রেখেছি। আমি বলতে চাই ,তুমি শুনবে সেসব কথা?
এমন কাব্য করার কিছু নাই। যা বলার বলো।
আজ বিকেলে চলো আমরা কোথাও বসি।
না বিকালে আমার সময় নাই। কাজ আছে।
আজকের জন্য কাজটা একটু থাক না হলে। আমার জন্য এটুকু সেক্রিফাইস করনা প্লিজ!
আচ্ছা দেখি।
আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো। সেই রেস্টুরেন্টে যেখানে তুমি আর আমি প্রথম কফি খেয়েছিলাম।
নিতুকে দেখে রাফির চোখ ছানাবড়া। রাফির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার স্বপ্নের নিতু। নীল কাপড়ে মোড়ানো আকাশপরী। আজকের নিতুকে দেখে রাফির চোখ ভিজে গেল। এমন একটি নিষ্পাপ মেয়েকে ওরা কানাগলিতে নিয়ে গেল। ওদের কি একটুও...।
কি হলো রাফি হা করে কী দেখছো?
অনেক কিছু দেখছি। অনেক কিছু ভাবছি। ভাবছি..
রাফির কথাগুলো কেমন গুছালো। এটা নিতুর ভাল লাগলো না। কাব্য কথা তাকে নিয়ে গেছে ভিন্ন জগতে। হঠাৎ নিতু বলে উঠলো-আমার সঙ্গে কখনো গুছিয়ে কথা বলবে না। একটু আশ্চর্য হয়ে জানতে চায় রাফি- কেন?
-কেন জানি না। বলতে না বলেছি তাই বলবে না।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এখন থেকে গুছিয়ে গুছিয়ে অগুছালো কথা বলবো। তুমি খুশি? রাগমুখো নিতু মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখলো। কোন কথা বললো না। রাফি নিতুর সামনে এসে তুলে ধরলো নীল রঙের একগুচ্ছ ফুল। ফুল কেন? রাফি সঙ্গে সঙ্গে গাইতে শুরু করলো-হ্যাপি বার্থডে টু নিতু..হ্যাপি বার্থডে...। নিতুর মনে পড়লো আজ তার জন্মদিন। রাফির এমন আয়োজনে সে বেশ চমকে গেল। মনে মনে ভাবতে লাগলো আমি দূরে যেতে চাই তুমি কেন কাছে টানো?
ইন্টারনেট ঘেটে এডিকশন প্রিভেনশনের অনেক তথ্য যোগাড় করেছে রাফি। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাঁর পরামর্শ মতো নিতুর সঙ্গে আচরণ করছে। প্রতি বিকেলে নিতুকে নিয়ে বাইরে বের হয়। মাঝে মাঝে নিতু যখন বলে আমার অনেক খারাপ লাগছে আমাকে বেইলি রোড নিয়ে চল। তখন নিতুকে সে ডাক্তারের কথা বলে একটা ওষুধ খাইয়ে দেয়।
রাফি আর নিতু হাত ধরে হাটছে। বিকেলের পর বিকেল এভাবে হেটে যায় ওরা। নিতু এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তার জীবনের একটি তিমির অধ্যায় শেষ হয়ে, এলো বর্ণালি অধ্যায়।
রাফির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে নিতু। কিছু একটা বলতে চাইছে, পারছে না। আকাশের দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বলল,রাফি দেখো আকাশ আজ কতো নীল। আকাশে কোন মেঘ নেই। শুধুই নীল। নীল আকাশ। আকাশ নীল। আমার আকাশ নীল। রাফিও ভেজা গলায় বলল, নিতু তোমার আকাশ চিরকাল নীল থাকুক এটাই আমার প্রার্থনা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×