somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পটি বিবর্ণ বৈশাখের : জাহাঙ্গীর অালম মাসুম

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরনে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। মাথায় বেধেছে ফুলের গোছা। লম্বা চুলের খোপায় চন্দ্র মল্লিকা,গাজরা আর লাল গোলাপের তৈরী মালাখানি মিতুকে যেন অপ্সরী বানিয়ে তুলেছে। মিতু তো অপ্সরীই। আর কারো না হোক অন্তত মিরানের চোখে। মিরানের ধারণা, অপ্সরীর বিষয়টি মানুষের বোধগম্য করার জন্য বিধাতা মিতুর মতো দুয়েকজনকে পৃথিবীতে পাঠান। আর অতীব সৌভাগ্যবশত অপ্সরীর একটি নমুনা এখন তারই দখলে! ভার্সিটির প্রথম ক্লাসে মিতুকে দেখে বদলে যায় মিরানের এইম ইন লাইফ। শৈশব-কৈশরের মতো রচনা লিখতে দিলে সে অবলিলায় লিখে দিতো ‘আমার এইম ইন লাইফ মিতুর জীবনের অংশ হওয়া’। এটা বন্ধু হিসেবে হোক অথবা স্বামী হিসেবে। কারণে-অকারণে,সময়ে-অসময়ে এবং প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মিরান মিতুকে সঙ্গ দিতে চায়। কিন্তু তার এ ধরণের অযাচিত আচরণে মিতু যারপরনাই বিরক্ত। বিরক্তির সীমা যখন চরমে-তখন বিষয়টি ক্যাম্পাসের ‘বড় ভাই’ পর্যন্ত গড়ায়। বড় ভাইদের হুমকি-ধমকি আর অপমানে কিছু দিনের জন্য দম নেয় মিরান। তবে, এসময় ত্রাতা হিসেবে এগিয়ে আসে নিউটনের তৃতীয় সূত্র। মিরানের থেমে যাওয়াই মিতুকে এগিয়ে আনে তার পাশে।
টেলিফোনে মিতু : আমি হেরে গেছি। তুমি থেমে গেছো, কিন্তু আমি...মিরানের জবাব-সুন্দরীরা হারে না। তারা হারার ভান করে। -এভাবে অপমান করোনা প্লিজ। তুমি আমার সব শেষ করে দিলে। আমি চাইনি কখনো সম্পর্কে জড়াই, তুমি সে পথ থেকে আমাকে সরিয়ে দিলে। - আমি কি বিপথে ডেকেছি ? - তাই তো মনে হচ্ছে। -ফিরে যাও। -না যাবো না। আমরা সবাইতো পথ চেয়ে বসে থাকি সর্বনাশের আশায়! আমি কি ধরে নিবো, কারো সর্বনাশ করতে পেরেছি।- নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। মহাসর্বনাশ করেছেন জনাব।
আজ পহেলা বৈশাখে তারা দুজন সকালেই উপস্থিত হয়েছে চারুকলার সামনে। বৈশাখী সাজে বেশ লাগছে দুজনকেই। মিরান বললো- চলো এবার রমনা বটমূলের দিকে যাই। -না, বেশ রোদ। যেতে ইচ্ছে করছে না। আরে চলো তো রমনায় না গেলে কি বৈশাখ উদযাপন হবে? আমি গেলেই কি তোমার বৈশাখ পূর্ণতা পাবে? তুমি আমার জীবনে এসেছো তাতেই আমার জীবন কানায় কানায় পূর্ণ। দুজনে গেল রমনায়। ভির ঠেলে চলে গেল একেবারে সামনে। মঞ্চে গান বাজছে। ঢোল,তবলা, করতাল আর বাঁশির সুরে শ্রোতারা বিমোহিত। বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েই গান শুনছে মিরান- মিতু। ভিরের কারণে যেন দুজন আলাদা না হয় সেজন্য একে অপরের হাত ধরে গভীর মনোযোগ দিয়ে মঞ্চের পরিবেশনা উপভোগ করছে তারা।
হঠাৎ বিকট আওয়াজ! কিছু বুঝে উঠার আগেই মিরান দেখলো তার আশপাশ ধুয়ায় ছেয়ে গেছে। মিতু বলে চিৎকার দিল সে। হাজারো মানুষের আর্তচিৎকার। এটা কী হলো? আমার মিতু কোথায়? মিতু...মিরান টের পেল রক্তে তার পিঠ ভিজে গেছে। বোমার স্প্রিন্টারের আঘাতে তার পিঠ ঝাঝরা হয়ে গেছে। কিছু সময় পর পাশেই অচেতন অবস্থায় পেল মিতুকে। কিন্তু তার শরীরের একটা পা কোথায়? হেল্প...হেল্প আমার মিতুকে বাঁচান। মিতুর পা উড়ে গেছে। কে কোথায় আছেন আমাদের বাঁচান প্লিজ। কেউ এগিয়ে এলনা। দীর্ঘ সময় পর এ্যাম্বুল্যান্সের আওয়াজ শুনে রক্তাক্ত মিতুকে কোলে করে এগিয়ে যায় এ্যাম্বুল্যান্সের দিকে...
মিতুর সঙ্গী এখন একটি হুইল চেয়ার এবং শিশু সন্তান জারা। হুইল চেয়ারে বসেই প্রিয় সন্তানকে নিয়ে পুরো ঘরময় ঘুরে বেড়ায় সে। মিরান অফিস থেকে ফিরলে জারার জিজ্ঞাসা- আব্বু, তোমার দুইটা পা আমারও দুইটা পা তাহলে আম্মুর একটি পা নাই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলতে পালনা মিরান। মিতুর দিকে তাকাতেই লক্ষ করলো মিতুর চোখ বেয়ে অশ্র“ ঝরছে। মিরানও তার চোখের জল ধরে রাখতে পারলোনা।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ,ঢাকা।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×