মানুষের সবচাইতে আদিতম পেষা হচ্ছে কৃষি। কৃষি কাজ করেই মানুষ তার জীবন ধারনের জন্য খাদ্য সষ্য উৎপাদন করে থাকে। বর্তমানে কৃষক তার উৎপাদিৎ পণ্যর ন্যয্য দাম না পাওয়ায় কৃষক যেমন হতাস তেমনি অর্থনৈতিক ভাবে কৃষক দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো তারা এই পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
বাংলাদেশের কৃষকেরা সবচাইতে বেশী উৎপাদন করেন ধান যা আমাদের খাদ্য চাহিদা পূরন করে থাকে। কৃষক তার বিনিময়ে কিছু অর্থ পায় যা দিয়ে তার সংসারটা কোনমতে সচল থাকে। কিন্তু এই বছরে ধানের ব্যপক উৎপাদন এবং সরকারের বিদেশ থেকে চাল আমদানির কারনে কৃষক পড়েছে বিপাকে। উৎপাদন খরচের চাইতে কমমূল্য উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যারা একটু দাম বাড়ার অপেক্ষায় ধান রেখে দিয়েছেন তারাও তেমন আশার মুখ দেখতে পাননি। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বর্তমান ধানের মূল্য ৪৮০ টাকা থেকে ৫১০ টাকা মণ। এই দামে ধান বিক্রি করে কৃষক কি লাভবান হবেন??
যেখানে তার উৎপাদন খরচ ই হয়েছে ৫৩৭.৭৭ টাকা মণ। এভাবে লোকশান দিয়ে আর কতদিন কৃষক টিকে থাকবে??
মাত্র একমাস পরেই শুরু হবে আমন মৌসুম ইরি বোরো ধানই কৃষকের গোলায় আছে যা তার ন্যায্য দামের অভাবে পড়ে আছে। আমন ধান উঠলে কি বাজার বাড়বে না কমবে এমন এক দোদূল্যমান অবস্থায় কৃষক!!..
যদি সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে তাহলে একটু সুবিধে পাবে কৃষক।
এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় নিম্নরুপ।(অন্ঞ্চল ভেদে কিছু কম বেশী হতে পারে)
হাল (চাষ) = ৬০০টাকা
বেছন কেনা= ৪০০টাকা
সেচ বাবদ= ১২০০টাকা
ইউরিয়া ৫০ কেজি= ১০০০টাকা
টি এসপি ১৫ কেজি= ৪৫০টাকা
জিপসাম ৫কেজি=৩০টাকা
পটাস ৫ কেজি=১০০ টাকা
বেছন বপন লেবার ৫জন ২৫০টাকা করে ১২৫০টাকা
আগাছা নিধন লেবার দুইবারে ৮জন ২৫০টাকা করে ২০০০টাকা
বালাইদমন বাবদ=৩০০ টাকা
ধানকাটা কৃষানের মজুরী ১২০০ থেকে দুরত্ব অনুযায়ী ২০০০টাকা পর্যন্ত গড়ে ১৫০০ টাকা ধরলাম।
ধান মাড়াই ৩৫০ টাকা।
অন্যান্য খরচ ৫০০টাকা
এবার সর্বমোট=৯৬৮০ টাকা এক বিঘা ৩৩ শতাংশে খরচ।
উৎপাদিত ফসল গড়ে ১৯ মণ হলে রোদে শুকানোর পরে টিকবে ১৮ মণ।
১৮ মণ হলে ৯৬৮০/১৮=৫৩৭.৭৭ টাকা প্রতি মণ উৎপাদন খরচ।
যিনি কৃষক তার খাটা খাটুনির কি কোন মূল্য নেই?..
৯৬৮০ টাকা বিনিয়োগ করে কৃষক ধান পেলেন ১৮ মণ যার বর্তমান মূল্য ৪৮০ টাকা দরে ৮৬৪০ টাকা। তাহলে তার লোকশান হচ্ছে ৯১৮০-৮৬৪০=৫৪০ টাকা প্রতি বিঘায়।
এটি রংপুর বিভাগের একটি পরিসংখ্যান যেখানে একজন শ্রমিকের মজুরী মাত্র ২৫০ টাকা। অন্য অন্ঞ্চলে যদি মজুরী বেশী হয় তাহলে উৎপাদন খরচ আরো বাড়বে।
যদি তার ১০ বিঘা জমি থাকে তাহলে লোকসানের পরিমান দারায় ৫৪০০টাকা।
এভাবে কৃষক আর কতদিন বেচেঁ থাকবে লোকসান করে?
তার নিজের ও তো জীবন জাপনে খরচ আছে??
এ বিষয়ে সরকারী লোকজনের আশু দৃষ্টি কামনা করছি।
কৃষক ফসল ফলায় বলেই আমরা তা খেয়ে জীবনযাপন করি। কৃষক বাঁচলে দেশের মানুষ ভালো থাকবে তাই কৃষিপণ্যর ন্যায্য দাম কৃষকের পাওয়া উচিৎ। মধ্যসত্বভোগিরা মুনাফা লুটবে আর কৃষক শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে ফসল ফলিয়ে লোকশান গুনবে এটি মেনে নেয়া বরই কষ্টকর।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:৫৮