somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন জিব্রাইল গেট / এক্সোডাস কোথায় হয়েছিল?-৯ (আরব ডায়েরি-১২১)

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(৩০ মার্চ, ২০১৭ এর মধ্যরাতে আমরা ৪ জন প্রায় দুঃসাহসিক এক পরিকল্পনা করে বসি। ভাঙ্গাচোরা একটি গাড়ি নিয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়ি। সেমিস্টার ব্রেক ১ সপ্তাহের। ১ সপ্তাহ পর ৫,০০০ কি.মি. ভ্রমণশেষে যখন আবহা ফিরে আসি নিজের কাছেই বিশ্বাস হচ্ছিল না যে পরিকল্পনাটি সমাপ্ত হয়েছে।)


আমাদের ভ্রমণপথ

১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
৭ম পর্ব
৮ম পর্ব

বাকী দড়জাটি “বাবুস সালাম” এর ঠিক বিপরীতপ্রান্তে অবস্থিত। এ দড়জাটি মোহাম্মদ (সাঃ) এর সময়ে ছিল না। বাকী দড়জা দিয়ে বের হতেই হাতের বাম পাশে ছোট একটি ঘেরাও দেয়া জায়গা। এ স্থানটিতে মোহাম্মদ (সাঃ) জানাজার নামাজ আদায় করতেন। এখন জায়গাটি ঘেরাও করে রাখা আছে। বাকী দড়জা ও জানাজার স্থানের সামনে খোলা জায়গায় ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান (রাঃ) এর বাসস্থান ছিল। একদল বিদ্রোহী এই স্থানটিতেই ওসমান (রাঃ)কে হত্যা করে। ইতিহাস হতে জানা যায় উক্ত বিদ্রোহী দলে আবু বকর (রাঃ) এর ছেলে মোহাম্মদ জড়িত ছিল।


বিভিন্ন সময়ে মসজিদের বর্ধিতকরণ


বাবুস সালাম



আমরা সেখানে বেশ কিছু ছবি তুললাম। এখন সবাই বাকী কবরস্থানে যাব। কিন্তু দেখতে পেলাম হাতের বাম পাশের ‘জিব্রাইল গেট’ খোলা এবং সেখান দিয়ে মানুষ প্রবেশ করছে। এই দড়জার স্থান দিয়ে জিব্রাইল (আঃ) ওহী নিয়ে আসতেন এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে মোহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। বেশীর ভাগ সময়ই এ দড়জাটি বন্ধ থাকে। সম্ভবত ফজরের পর কিছু সময়ের জন্য দড়জাটি খোলা থাকে। আমরা কালবিলম্ব না করে দড়জা দিয়ে ঢুকে পড়লাম। বর্তমান দড়জাটি মসজিদ সম্প্রসারণের সময় তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান দড়জা দিয়ে ঢুকে প্রাচীন দড়জাদুটি দেখা যায়। জিব্রাইল গেট যা সবুজ ও সোনালী রঙের গ্রিল দিয়ে আটকানো, একটি জানালা আছে। এর পাশেরটি ‘ফাতিমা গেট’, একই রকম সবুজ ও সোনালী রঙে রাঙ্গানো এবং তা বড় তালা দিয়ে সিল করে দেয়া হয়েছে। খন্দকের যুদ্ধের পর আয়েশা (রাঃ) মূল গেটটিতে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ (সাঃ) ও জিব্রাইল (আঃ)কে কথপোকথন করতে দেখেন। সে সময় জিব্রাইল (আঃ) এর শরীর ধুলিময় ছিল।


বর্তমান জিব্রাইল গেট


ফাতিমা গেট

মূল গেটেদুটির কাছে যাওয়া যায় না, ঘেরাও দেয়া। সেখানে একজন শাইখ সব সময় দাঁড়িয়ে থাকেন। আবেগ বা অজ্ঞতার বশে যাতে কেউ আবার সেখানে সেজদা, চুমু, কাপড় ঘষাঘষি করতে না পারে সেজন্য। আমরা সেখানে ঠিক মোহাম্মদ (সাঃ) এর চেম্বারের পাশে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়লাম। কিছুক্ষণ পর সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পুলিশ সবাইকে উঠিয়ে দিলে আমরা বের হয়ে আসলাম।

মসজিদের পূর্ব প্রান্তে ‘বাকি কবরস্থান’। আমরা তা জিয়ারত করতে যাই। অতীতে কবরগুলো চিহ্নিত থাকলেও, এখন আর তা নেই। এখানে এক সময় বিশিষ্ট সাহাবাদের কবরের উপরে গম্বুজ নির্মিত ছিল। মুলতঃ তুর্কি আমলে এর ব্যাপক প্রসার পায়। ইসলামে কবর পাকা করা বা কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করা নিষিদ্ধ। মানুষ সে সময় এসব কবরের কাছে গিয়ে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগীতা চাওয়া শুরু করে, শিরকে লিপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে সৌদ বংশের শাসকরা গম্বুজগুলো ভেঙ্গে ফেলে এবং কবরগুলোকে সমান করে দেয়। বর্তমানে তবুও অনেককে দেখলাম আলাপ করছে এটা ওর কবর, এখানে উনি শায়িত ইত্যাদি। একদম পূর্বপ্রন্তে পৌছে একটি কবরকে ঘিরে অনেক লোকের জটলা দেখতে পেলাম। কেউ না বললেও বুঝে গেলাম, এটা ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান (রাঃ) এর কবর। মনের অজান্তেই মনটা ব্যাথিত হয়ে গেল। উনি যখন নিহত হন, বিদ্রোহীদের বিরোধীতার কারনে ওনাকে বাকী কবরস্থানে সমাহিত করা যায়নি। কবরস্থানের বাহিরে সীমানা ঘেষে সমহিত করা হয়। পরবর্তীতে উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া (রাঃ) বাকী কবরস্থানের সীমানা বাড়িয়ে দেন যাতে ওসমান (রাঃ) এর কবর সীমানার ভেতরে আসে।


ওসমান (রাঃ) এর কবর

ঘুরতে ঘুরতে আরো কিছু কবরকে চিহ্নিত করতে পারলাম। কিন্তু আমার লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে, আসল ঘটনা বা এক্সোডাসের কাছাকাছিও যেতে পারিনি। পরবর্তীতে আলাদাভাবে বাকী কবরস্থান নিয়ে লেখার আশা আছে।

দুপুরে মসজিদে নববী হতে খুব কাছেই প্রায় ২০০ মিটার পশ্চিমে দেয়াল ঘেরা একটি বাগানে গেলাম। এটি বনু সায়েদা’র বাগান ছিল। মোহাম্মদ (সাঃ) মারা যাবার পর এ বাগানে বসেই বিশিষ্ট সাহাবীরা পরবর্তী খলিফা কে হবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।


বনু সায়েদা’র বাগান


তিনটি মসজিদ

মসজিদে নববীর ৩০০ মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ৩টি আলাদা ছোট মসজিদ রয়েছে। দূরের ৬ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি মসজিদে গামামা এবং মসজিদে ঈদ নামে পরিচিত। ইতিহাস হতে জানা যায় এই মসজিদের স্থানে মোহাম্মদ (সাঃ) তাঁর শেষ ৪ বছর ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। পাশাপাশি অনেকে বলেন, এখানে মোহাম্মদ (সাঃ) বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করেছেন। যার জন্য মসজিদের নাম “গামামা” অর্থাৎ মেঘ।


মসজিদে গামামা

অনেকের মতে এটাই সেই জায়গা যেখানে মোহাম্মদ (সাঃ) তৎকালিন আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) রাজা নাজ্জাশি’র মৃত্যুর পর জানাজার নামাজ আদায় করেন। মক্কার কোরায়েশদের হাত হতে বাঁচার জন্য একদল মুসলিম আবিসিনিয়া হিজরত করেছিলেন। নাজ্জাশি খ্রীষ্টান রাজা হওয়া স্বত্তেও তাদের আশ্রয় দেন, এবং পরবর্তীতে ইসলাম কবুল করেন। যখন নাজ্জাশি মারা যান, কেউ তার জানাজার নামাজ আদায় করেনি, তাই মোহাম্মদ (সাঃ) প্রথম ও শেষবারের মতো কারো জন্য গায়েবানা জানাজা আদায় করেন।

মসজিদে গামামা’র পাশেই ছোট এক গম্বুজ ও একটি মিনার বিশিষ্ট মসজিদে আবু বকর অবস্থিত। আবু বকর (রাঃ) খলিফা থাকাকালীন সময়ে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন।


মসজিদে আবু বকর

এবার মদীনা গিয়ে দেখলাম মসজিদে গামামা ও মসজিদে আবু বকরকে কেন্দ্র করে বসার জায়গা করা হয়েছে। অনেক প্রশস্ত জায়গা, দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন, অনেকে সেখানে বসে খাবার খাচ্ছেন।

এর একটু দূরেই, মসজিদে নববী’র কাছাকাছি মসজিদে আলী অবস্থিত। আলী (রাঃ) খলিফা থাকাকালীন সময়ে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন। কিন্তু মসজিদটি অন্য দুটি মসজিদের মতো উন্মুক্ত নয়। শিয়ারা মসজিদের কাছে গিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে বলে মসজিদটি ঘেরাও দিয়ে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে।


মসজিদে আলী

যোহরের নামাজ পড়ে আমরা হোটেল ছেড়ে দেই। দুপুরে মদীনার বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টে খেলাম। এদের রান্না অন্য এলাকার বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট হতে অনেক ভালো। ফিরোজ ভাই তখন এক লন্ড্রিতে তার তোপ (পাঞ্জাবি বিশেষ) ধুতে দেন। আমাদের ধারণা ছিল কিছু ভ্রমণ শেষে আবারতো মদীনা ফিরেই আসব, তখন তোপ নেয়া যাবে। কিন্তু তখন কি জানতাম এই তোপের জন্য কত পাহাড়/পর্বত অতিক্রম করতে হবে?

আমরা গাড়ীতে সবকিছু তুলে নিয়েছি। আমাদের গন্তব্য আল উলা যেখানে ছিল সালেহ (আঃ) ও সামুদ জাতির বসতী। কিন্তু তার আগে যাত্রাপথে মদীনার আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাইট ভিজিট করে যাব।

২ এপ্রিল, ২০১৭

(চলবে)




সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৩১
৪৫৬ বার পঠিত
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদ গাজীর ব্যান তুলে নিন/ ব্লগ কর্তৃপক্ষ ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩




আমি যদি গাজী’ ভাইয়ের যায়গায় হতাম জিবনেও সামু’তে লেখার জন্য ফিরে আসতাম না।
হয় বিকল্প কোন প্লাটফর্ম করে নিতাম নিজের জন্য। অথবা বাঁশের কেল্লার মত কোথাও লিখতাম।
নিচে ব্লগার মিররডডল-এর করা পুরো... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের উচিত তাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করা এবং বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।

লিখেছেন জ্যাকেল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা বরাবরই সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্য প্রকাশ, জনমতের প্রতিনিধিত্ব এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে যে, বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার সাজিদ কমেন্ট অফ রাখায় এখানে লিখছি (সাময়িক)

লিখেছেন মিরোরডডল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৫


সাজিদের বিদায় পোষ্ট দেখলাম, কমেন্ট সেকশন বন্ধ রাখায় ভাবলাম এখানেই লিখে যাই।

জানিনা কি বলবো, হয়তো এটাই দেখা বাকি ছিলো।
চলে যাবার কারণ জানিনা কিন্তু অনুমান করতে পারছি।
Man! you shouldn't leave.

ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭


আজকাল মানুষ চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এই কথা আরো বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কখনো বিদায় বলতে নাই

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



ব্লগে কিছুদিন ধরে অনিয়মিত হওয়ায় কখন কি ঘটে জানি না।
কিছুক্ষণ আগে মিররডলের একটা পোস্টে জানতে পারলাম , ব্লগার আমি সাজিদ ঘোষণা দিয়ে ব্লগ ছেড়েছেন । তার সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×