১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
মদীনার দিকে এগিয়ে চলছি। আবহাওয়া অনেক ভাল, ঠান্ডা গরমের মাঝামাঝি। মরুভূমির মাঝ দিয়ে হাইওয়ে এগিয়ে চলেছে। এরচেয়েও রুক্ষতর পরিবেশে মোহাম্মদ (সাঃ) ও আবু বকর উটের পিঠে চড়ে ইয়াথরিবের দিকে রওনা হয়েছিলেন।
হাইওয়ের পাশে ৫০/১০০ কিমি দূরে দূরে পেট্রল স্টেশন আছে। পেট্রল স্টেশনগুলোতে মসজিদ, খাবার দোকান, মুদি দোকান প্রভৃতি প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা থাকে। এমনি একজায়গায় মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। সন্ধ্যার হিমেল হাওয়া এমনভাবে পরশ বুলিয়ে দিল যে, শরীরটা চাঙ্গা হয়ে উঠল। নামাজ শেষে পেট্রল স্টেশন থেকে যখন বের হচ্ছিলাম, একপাশে আল বাইক দেখতে পেলাম। আল বাইককে নিয়ে আলাদা পোস্ট দেয়া যাবে। আল বাইক হচ্ছে সৌদি আরবের সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চিকেন ব্রোস্টের’ দোকান। আল বাইকের চিকেন ব্রোস্ট খাওয়ার জন্য মানুষ দোকান খোলার ঘন্টা দুই আগে হতেই লাইন ধরে থাকে, মারামারি করে। এমন ক্রেজ ওয়েস্টার্ন দেশগুলোতে শুধু আইফোনের জন্য দেখা যায়।
অথচ মরুভূমির মাঝের এই ব্রাঞ্চটিতে কোন ভীড় নেই। চাইলেই আমরা মারামারি আর সময় অপচয় করা ছাড়াই ব্রোস্টের স্বাদ নিতে পারি। কিন্তু দুপুরের খাবারের রেশ এখনো কাটেনি। তাই সবাই “খাব কি, খাব না” এই দ্বিধায় ব্রোস্ট না খেয়েই আবারো মদীনার পথ ধরলাম।
রাত ৮ টায় মদীনা পৌছি। মদীনা আমার সবসময় ভালো লাগে। কেন যেন মনের মধ্যে প্রশান্তি বয়ে যায়। এর আবহাওয়া সব সময়ই আরামদায়ক। মসজিদে নববীর চারপাশ জুড়ে অনেক ফাঁকা জায়গা আছে। মক্কার মত বড় বড় টাওয়ারে এখনো আচ্ছাদিত হয়ে পড়েনি। মোহাম্মদ (সাঃ) নিজে মদীনার জন্য দোয়া করে গেছেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! মক্কার ন্যায় অথবা তার চেয়ে অধিক মদীনার মুহাব্বত আমাদের অন্তরে সৃষ্টি করুন। হে আল্লাহ আমাদের খাদ্যে ও উপাদানে বরকত দিন এবং তার আবহাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের উপযোগী করুন”।
হোটেলে উঠে গোসল করে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। মদীনার বাঙ্গালি এরিয়ায় অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। খাবার অনেক ভালো বানায়। এলাকাটা সবসময়ই জমজমাট থাকে। খুব ভোরে উঠতে হবে। মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে বাকী কবরস্থান জিয়ারতের ইচ্ছা আছে। রুমে ফিরে সবাই অতল ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
নবুয়্যাতের শেষ ১০টি বছর মোহাম্মদ (সাঃ) মদীনা কাটিয়েছেন। মদীনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্নাঙ্গ রাষ্ট্রব্যবস্থা। মদীনার রাস্তায় যখনি হাটছি, আমার চোখে ভেসে উঠে অনেক অনেক ইতিহাস। ১ বা ২ দিনের মদীনা অবস্থান কোনভাবেই এই ইতিহাসকে জানা ও উপলব্ধি করার জন্য যথেষ্ট নয়।
ফজরের নামাজের জন্য আমরা সবাই যখন মসজিদে নববীর দিকে যাচ্ছিলাম, আমি জানি কতকত ইতিহাস এই মসজিদের ভেতরে ঢাকা পড়ে আছে। কিছুকিছু তথ্য বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তার কিছুটা আজ খুঁজে ফিরব।
মসজিদের অনেকগুলো গেট রয়েছে। পুরনো গেটগুলোর নামকরণ প্রাচীন ইতিহাসকে স্মরণ করে করা হয়েছে। আবার আধুনিককালে মসজিদ সম্প্রসারণের ফলে নতুন গেটগুলো বর্তমানকালের বাদশাহদের নামেও হয়েছে।
আমরা কিং ফাহাদ গেট দিয়ে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করি। বাংলাদেশি এরিয়া হতে মসজিদে ঢুকতে চাইলে এই বড় গেটটি সামনে পড়ে। সুমধুর তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে নামাজ শেষ করলাম। আমার বন্ধুরা জানে আজ আমি মসজিদের ভেতরে কিছুটা সময় কাটাব। এই মসজিদের পুরনো অংশের প্রতিটি পিলারের একেকটি ইতিহাস রয়েছে।
প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিলাম “রিয়াদুল জান্নায়” ঢুকব। মোহাম্মদ (সাঃ) এর কবরস্থান (আগে বাসা ছিল) হতে পুরনো মিম্বার পর্যন্ত অংশটুকোকে রিয়াদুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগান বলা হয়। এটি “রওদা” হিসাবেও পরিচিত। মোহাম্মদ (সাঃ) নিজে এই জায়গাটিকে “জান্নাতের বাগান” বলেছেন। ২২ মিটার দীর্ঘ এবং ১৫ মিটার প্রশস্থ জায়গাটি ঘেরাও দেয়া থাকে এবং সবুজ কার্পেট দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। পার্থক্য করার জন্য মসজিদের অন্যান্য অংশ লাল রংয়ের কার্পেট দিয়ে মোড়ানো। সময়ে সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক ভেতরে প্রবেশ করে নামাজ পড়তে পারে।
রিয়াদুল জান্নাহ (ছবিঃ ইন্টারনেট)
যে ব্যক্তি মসজিদে নববী যিয়ারত করবেন তার জন্য রিয়াযুল/রিয়াদুল জান্নাতে দুই রাকাত নামায আদায় করা কিংবা যত রাকাত তিনি পারেন নামায পড়া বিধানসম্মত। যেহেতু এর ফযিলত সাব্যস্ত। নবী (সাঃ) বলেন: “আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝের স্থানটুকু- রাওদাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাহ (জান্নাতের এক টুকরা বাগান) এবং আমার হাউজ আমার মিম্বরের উপর রয়েছে।”
আমরা রিয়াদুল জান্নাহ’র নিকট পৌছে দেখলাম অনেক অনেক লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ভেতরে প্রবেশের জন্য । আমরা লাইনে দাঁড়ালে ২/৩ ঘন্টা লেগে যেতে পারে। আমি নিজে এখানে ২ বার প্রবেশ করে নামাজ পড়তে পেরেছিলাম। অন্যরাও পড়েছে। তাই আমরা ভেতরে না গিয়ে আশেপাশের প্রাচীন স্মারকের দিকে নজর দিলাম।
(চলবে)