১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
২য় পর্বে বলছিলাম- ওমরাহ করার পর গোসল শেষে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই। আসরের নামাজের কিছু আগে ঘুম ভাঙ্গে। হোটেলের পাশেই একটি ছোট মসজিদে নামাজ পড়ে নেই। গলি রাস্তার দু'পাশে সারি সারি হোটেল। হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরগুলোতে বিভিন্ন পন্যের দোকান। তসবি, জায়নামাজ, টুপি, আতর আর কমদামী গিফট আইটেমে সয়লাব। প্রায় সবাই হারাম শরীফে আসা যাওয়ার পথে দোকানগুলোতে ঢু মেরে যায়।
আমাদের সামনে হিলটন হোটেল। এই হোটেলের ৪র্থ তলায় একটি মসজিদ আছে। মসজিদটি আবু বকর (রাঃ) মসজিদ নামে পরিচিত। কেএফসি'র কিছুটা উপরে সিড়ির অংশেই সে জায়গা যেখানে আবু বকর (রাঃ) এর বাসস্থান ছিল। এখান হতেই মোহাম্মদ (সাঃ) হিজরত করেন। হিজরতের রাতে আবু বকর (রাঃ) দুটি উট নিয়ে মোহাম্মদ (সাঃ) এর অপেক্ষায় ছিলেন।
আমরা হিলটন হোটেলের ভেতরে ঢুকি। নীচের কয়েকটি তলা মার্কেট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন নামীদামী ব্র্যান্ডের শোরুম এখানে রয়েছে। আমি "হারামাইন' নামের একটি আতরের দোকানে যাই। এখানে দুবাই হতে আসা "আতর আল কাবা" ও "আতর আল আসোয়াদ" পাওয়া যায়। তাদের ভাষ্যমতে এই আতরদুটি কাবায় ও হাজর আল আসোয়াদে মাখা হয়। আমি মক্কায় গেলেই গিফটের জন্য আতর দুটি কিনি। মন মাতোয়ারা এই ঘ্রাণ যে কাউকেই মোহিত করবে। আতরের দোকানটিতে সিলেটি ভাইরা আছেন। আমি যখনই যাই, তারা আমাকে একটি আতর উপহার দেন।
হিলটন হোটেলের পেছনে একটি রাস্তা। রাস্তার অপরপাশে আরেকটি বড় হোটেল। কতিথ আছে এখানেই কোথাও ওসমান (রাঃ) এর বাসস্থান ছিল।
রাতে সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীকাল দুপুরে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা দেব। সকাল বেলায় সবাকিছু গাড়িতে তুলে হোটেল ছেড়ে দেই। মদীনা যাবার আগে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে নিতে হবে। আমি ম্যাপ নিয়ে বসলাম, কিভাবে সবগুলো স্থানকে পরপর কানেক্ট করা যায়।
মসজিদে জ্বিন ও মসজিদে সাজারাহ (গাছ) হারাম শরীফের খুব পাশেই আছে। কিন্তু মক্কার রাস্তাঘাট এত পেচালো যে জিপিএস ব্যবহার করেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকে। ফলে অনেক ঘুরতে হয়। দুই/তিনবার রাস্তা ভুল করে আমরা মসজিদে জ্বিনে পৌছি। মসজিদটি তখন বন্ধ ছিল। কয়েকটি ছবি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। অল্প দূরত্বেই মসজিদে সাজারাহ। মক্কায় গাড়ী পার্কিংয়ের ভয়াবহ সমস্যা। তাই বেশী সময় দিতে পারিনি।
মসজিদে জ্বিনের স্থানটিতেই মোহাম্মদ (সাঃ) জ্বিনদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন, কোরআন পাঠ করিয়ে শোনান। আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ (রাঃ) সে সময় সেখানে ছিলেন। মোহাম্মদ (সাঃ) পা দিয়ে মাটিতে একটি বৃত্ত তৈরি করে আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ (রাঃ)কে সেখানে অবস্থান করতে বলেন। অনেক সংখ্যায় জ্বিন এসেছিল। মোহাম্মদ (সাঃ) ফজর পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলেন।
অপরদিকে, মুশরিকদের ইসলামের দাওয়াত দিতে গেলে মুশরিকরা তা অস্বীকার করে। মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর নিকট অলৌকিক কিছুর জন্য দোয়া করেন যাতে মুশরিকরা বিশ্বাস স্থাপন করে। তারপর তিনি একটি গাছকে কাছে ডাকলে গাছটি মোহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে এসে সালাম প্রদান করে এবং ফিরে যায়। সেই জায়গাটিতেই মসজিদে সাজারাহ (গাছ) অবস্থিত।
মসজিদ দুটির পেছনেই মুয়াল্লা কবরস্থান। এটি মক্কার একটি ঐতিহাসিক কবরস্থান। নবী (সাঃ) এর অনেক আত্নীয় স্বজন এখানে কবরস্থ হয়েছেন। তাদের মাঝে- স্ত্রী খাদিজা (রাঃ), পুত্র কাশিম ও আব্দুল্লাহ, চাচা আবু তালিব ও দাদা আব্দুল মোত্তালিব অন্যতম।
ছবিঃ ইন্টারনেট হতে
সেখান হতে আমরা যাই তুয়া কুপের নিকট। এই কুপের পানি দিয়ে মোহাম্মদ (সাঃ) অযু করেছিলেন। কুয়াটি ঘেরাও দিয়ে রাখা আছে। ঘেরাও না দিলে এই কুয়ার পানি নিয়ে কিছু লোক বাড়াবাড়ি আচরণ দেখাত।
আবু সাঈদ ভাই গাড়ী ঘুরিয়ে চলেন মিনার দিকে। সেখানে খুঁজে ফিরব আরো কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন।
(চলবে)