১ম পর্ব
২য় পর্ব
তওয়াফ শেষে কাবার দড়জা বরাবর আশেপাশে জমজম কুপের চিহ্নটি খুঁজলাম। পেলাম না। একসময় মাতাফ এরিয়ার পাশেই জমজম কুপের মুখটি ছিল। কিন্তু ভীড় হাবার কারনে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়। জায়গাটিতে টাইলসের উপর "বির জমজম" (জমজম কুয়া) লিখে চিহ্নিত করা ছিল। অনেক খুঁজেও সেই চিহ্নটি পেলাম না। পরে জানতে পারি সেই চিহ্নটিও সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
(ছবি- ইন্টারনেট হতে)
জমজম কুপ নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা একটি লেখার দাবী রাখে। হয়তো ভবিষ্যতে সুযোগ হলে লেখা যাবে। জমজম পানির কারনেই মক্কায় মানুষের বসতি গড়ে উঠে। হাদিসে আছে, জমজমের পানি যে নিয়তে (নেক উদ্দেশ্যে) পান করা হয়, তা পূরণ হয়। জমজমের পানি শুধু তৃষ্ণাই দূর করে না, এর মধ্যে ক্ষুধা দূর করারও উপাদান আছে।
জমজম কুপের চিহ্ন না পেলেও আমি, আবু সাঈদ ভাই ও ফিরোজ ভাই কিছু দূরে গিয়ে সারি সারি করে কন্টেইনারের একটি হতে শীতল জমজমের পানি পান করলাম। হানিফ ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা সবাই একসাথে থাকলেও হানিফ ভাই কিভাবে যেন দলছুট হয়ে যান। তাকে আবার খুঁজে বের করতে হয়।
আমরা সবাই সাফা পাহাড়ের দিকে এগিয়ে যাই। ওমরার অংশ হিসাবে আমাদেরকে সাফা, মারওয়া'র মাঝখানে ৭ বার দৌড়াতে হবে। হাজেরা (আঃ) শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) এর জন্য পানির খোঁজে এই দুই পাহাড়ের মাঝে সাতবার আসা যাওয়া করেন। সাতবার দৌড়ানোর পরও কোনো পানি না পেয়ে তিনি আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। ফিরে এসে তিনি শিশু ইসমাইল (আঃ) এর পায়ের কাছে পানির ধারা দেখতে পান। তিনি পানিকে থামার নির্দেশ দিয়ে উচ্চস্বরে বলছিলেন ‘জমজম' অর্থাৎ থেমে যাও। হাজেরা (আঃ)'র উচ্চারিত সে শব্দেই এ কূপের নাম হয় ‘জমজম'। তিনি এই পানি পাথর দিয়ে বেধে দেন।
সাফা পাহাড় (ছবি- ইন্টারনেট হতে)
মারওয়া পাহাড় (ছবি- ইন্টারনেট হতে)
মারওয়া পাহাড়ের গেট দিয়ে বের হলে যে স্থানটি সেখানে খাদিজা (রাঃ) বাড়ী ছিল বলে ধারণা করা হয়। এখানেই মোহাম্মদ (সাঃ) বিয়ের পর হতে মদীনায় হিজরত পর্যন্ত বসবাস করেছিলেন। একটু অদূরেই একটি লাইব্রেরি। কতিথ আছে এখানেই মোহাম্মদ (সাঃ) জন্মগ্রহন করেন। লাইব্রেরিটির আশেপাশে অনেক দর্শনার্থী থাকে। শিরকের ভয়ে সৌদি সরকার এই স্থানগুলো সবার কাছে প্রকাশ করতে চায় না। তারপরও মানুষ কিভাবে যেন জেনে যায়।
খাদিজা (রাঃ) এর বাড়ীর সম্ভাব্য স্থান (ছবি- ইন্টারনেট হতে)
মোহাম্মদ (সাঃ) এর সম্ভাব্য জন্মস্থান (ছবি- ইন্টারনেট হতে)
আমরা ৪ জন মারওয়া পাহাড় হতে ক্লক টাওয়ারের দিকে এগিয়ে যাই। মসজিদের পাশ ঘেষেই একটি প্রাসাদ। সৌদি রয়্যাল ফ্যামিলির লোকেরা প্রাসাদটি ব্যবহার করে। প্রাসাদের পাদদেশে সাফা পাহাড়ের কাছাকাছি আবু জেহেলের বাসস্থান ছিল বলে অনেকে মনে করেন। তৎকালীন সময়ে আবু জেহেল ছিল ইসলামের প্রধানতম শত্রু। মোহাম্মদ (সাঃ) তাকে এই উম্মাহ'র ফেরাউন বলে অভিহিত করেছেন।
আবু জেহেলের সম্ভাব্য বাসস্থান (ছবি- ইন্টারনেট হতে)
রয়্যাল প্যালেসটি আবু কুবাইস পাহাড়ের উপর অবস্থিত। এই পাহাড়ের উপর হতেই মোহাম্মদ (সাঃ) চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন। এছাড়া এই পাহাড় সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানা যায়, তবে কতটুকো নির্ভরযোগ্য তা ভেরিফাই করতে পারিনি-
এটাই ছিল পৃথিবীতে আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট প্রথম পাহাড়। আদম (আঃ) এই পাহাড়ের পাথর দিয়েই প্রথম কাবা ঘর তৈরি করেন। অনেকে বলেন, এই পাহাড়ের পাদদেশেই আদম (আঃ) মৃত্যুবরণ করেন, এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। নুহ (আঃ) এর বন্যার সময় এই পাহাড়ের উপর হাজর আল আসোয়াদ নিরাপদের রাখা হয়। মোহাম্মদ (সাঃ) এই পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়েই মক্কাবাসীকে আল্লাহর দিকে আহবান করেন। পাহাড়টির উপর একসময় 'বিলাল মসজিদ' নামে একটি ছোট মসজিদ ছিল, এখন আর নেই। উমাইয়্যা শাসনামলে ৬৯১ সালে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এই পাহাড় হতেই আগুনের গোলা কাবার দিকে নিক্ষেপ করেন, যার পরিণতিতে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের মারা যান।
আবু কুবাইস পাহাড়, বর্তমানে রাজপ্রাসাদ
ঘটনাবহুল পাহাড়টিকে হাতের বামে রেখে আমরা চারজন সামনে এগিয়ে চলি।
(চলবে)