১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
৭ম পর্ব
সকালে উঠেই চেক আউট করলাম। নাজমুল ভাইয়ের নিকট বিদায় নিয়ে সোজা টিকেট অফিসে চলে গেলাম। লাইনে অনেক অনেক লোক। একেক ফ্যামিলিতে ৫-১০ জন্য করে সদস্য। একজন মাত্র লোক টিকেট ইস্যু করছিল। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ১১টার সময় টিকেট মিলল। একটা সময় এতটাই বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছিল যে, মনে হয়েছে পুরো ফারাসান ট্যুরটি বুঝি বৃথা গেল। সকালে অনেক কিছু করার প্ল্যান ছিল, কিছু করা হলো না।
খুব ভোরে দ্বীপের একটি অংশে হরিণ দেখতে পাওয়া যায়, ভেবেছিলাম সেখানে যাব। দুটি দ্বীপের মাঝে একটি ব্রিজ আছে, সে জায়গাটা নাকি অবশ্যই ভ্রমণ করতে হয়। কিন্তু কিছুই হলো না। মাথা ব্যথা, ভারাক্রান্ত মন নিয়ে টিকেট অফিস থেকে বের হলাম। মনে হচ্ছিল আজকের দিনটা আমাদের জন্য নয়।
সকালের নাস্তা করা হয়নি। স্যান্ডউইচ দিয়ে নাস্তা সারলাম। আলীর মনে হয় রাতে ঠিক মত ঘুম হয়নি, কেমন যেন ঝিমুচ্ছিল। ফারসান থেকে বিদায় নেবার আগে আবার সমুদ্র দেখতে গেলাম। দীবা ও মোশতাক ভাই কিছু ছবি তুলল। আমার এতটাই বিষণ্ন লাগছিল যে, গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েই রইলাম। ওখানে মিনিট দশেক থেকে আমরা পোর্টে চলে যাই। ২ টায় জাহাজ রওনা হবে।
মোশতাক ভাই ছবি তোলায় ব্যস্ত
আজকের দিনটা যে আমাদের না, আবার তা প্রমাণিত হলো। ১ ঘন্টা লেট করে জাহাজ আসল। বসে থাকতে থাকতে আমরা সবাই ক্লান্ত, দুপুরে খাওয়াও হয়নি। আমি ও মোশতাক ভাই সিকিউরিটি এরিয়ার কাজ শেষ করে মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করছি। তাদের কোন দেখা নেই। ১০ মিনিট যায়, ২০ মিনিট- যেকোন সময় জাহাজ ছেড়ে দিবে। মোবাইল নেটওয়ার্ক এখানে বন্ধ আছে, তাই যোগাযোগও করতে পারছি না। আমরা দুজনেই টেনশনে পড়ে গেলাম। আধা ঘন্টা পরে তারা এল। জানা গেল, তাদের waiting টিকেট ছিল বিধায়, তাদের আসতে দিচ্ছিল না। অথচ একই ধরনের টিকেট দিয়ে আমরা চলে এসেছি।
ঘন্টা খানেকের ভ্রমণ শেষে আমরা জিজান পৌছলাম। প্রথমেই রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে নেই। জিজানের সমুদ্র পাড়ে বসে খাবার খাওয়াটা আগের রাতের মতো এত আনন্দময় হলো না। আসলে মনটাই (ব্রেইন) সব, মন ভারাক্রান্ত থাকলে- পৃথিবীর সেরা সুন্দরীও যদি আপনার পাশে বসে থাকে, সময়টা আপনি একটুও উপভোগ করবেন না।
আলী প্রচন্ড গতিতে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছে। দুপাশের মরুভুমিকে বোরিং মনে হচ্ছে। আলী হঠাৎ করেই গাড়ী রাস্তা থেকে নামিয়ে দিল। আমরা হচকিত হয়ে গেলাম। গাড়ী থেকে নামতেই এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখতে পেলাম। মরুর মাঝ দিয়ে বিপুল গর্জনে নদী বয়ে যাচ্ছে। দু’পাশে সবুজ গাছপালায় ভর্তি। নদীর স্রোত অনেক বেশী ছিল, বাংলাদেশের নদীর কাছে যদিও এটা তেমন কিছুই নয়। কিন্তু সৌদি মরুভুমির মাঝখানে এত বিপুল জলরাশির কথা কেইবা ভাবতে পারে। সারাদিনের এত এত ব্যর্থতার মাঝে বিকালটা মন ভালো করে দিল।
এটা একটা সিজনাল নদী। আশেপাশে ও আবহাতে বৃষ্টি হওয়ায় তার পানি পাহাড় গড়িয়ে এই নদীর সৃষ্টি করেছে। গত কয়েক দিন ধরেই আমাদের এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছিল।
অনেক সৌদি ফ্যামিলি সেখানে ছিল। তারা অনেকটা আয়োজন করেই সেখানে গিয়েছে। মাদুর বিছিয়ে চা/কফি পান করতে করতে তারা সময়টা উপভোগ করছিল। কিন্তু আমরা তা বেশীক্ষণ উপভোগ করতে পারলাম না। আলীর চিৎকারে দৌড়ে গাড়ীতে উঠলাম। মূল রাস্তা থেকে পাথুরে রাস্তা দিয়ে নদীর তীরে আসতে হয়েছে। ফলে গাড়ীর চাকা পাংচার হয়েছে। আশেপাশে ওয়ার্কশপ পাবার সম্ভাবনা কম। আলী সেই অবস্থাতেই গাড়ী ছুটাল। রাস্তার অন্যান্য গাড়ী আমাদের বারবার সংকেত দিচ্ছিল। কিন্তু আলী থামতে চায় না। চাকার সম্পূর্ণ বাতাস বের হবার আগেই সে কোন একটা ওয়ার্কশপে পৌছতে চায়। ভাগ্য ভালো, আমরা ১০ মিনিটের মাথাতেই একটি ওয়ার্কশপ পেয়ে গেলাম। সেখানে চাকা সারাই করে আবার আবহা’র পথে রওনা হলাম।
রাত ৯টায় ধুঁকতে ধুঁকতে আবহা পৌছালাম। শেষ হলো ফারাসানের মিশ্র অনুভূতির একটি ভ্রমণ।
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০১