১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
সমুদ্রের মাঝ দিয়ে আমাদের জাহাজ এগিয়ে চলছে। রেড সি’র নীল জল হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কিন্তু মনে শান্তি নেই।
মোশতাক ভাই আলীর সাথে কথা বলতে পারলেন। আমরা আলীকে পরের জাহাজে রওনা হতে বললাম। জানতে পারলাম, গাড়ীর সংখ্যা বেশী হয়ে যাওয়ায় অনেকেই সময়মত জাহাজে গাড়ী তুলতে পারেনি। মাঝ সমূদ্রে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
জাহাজটি বেশ বড়ই বলতে হবে। মোটামুটি ৫০০ যাত্রী ও ৫০-৭০ টি গাড়ী অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। নীচ তলায় গাড়ী রাখার ব্যবস্থা আর উপরে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাহাজের সিটগুলি আরামদায়ক ছিল। আমি ছবি তোলার চেষ্টা করতেই কোথা থেকে এক সিকিউরিটি গার্ড এসে বাঁধা দিল। তাই কোন ছবি তুলতে পারলাম না। জাহাজের জানালা দিয়ে রেড সি’র নীল জল দেখতে দেখতে বাকী সময়টুকু পার করে দিলাম।
ফারাসানের পর্যটনের ক্ষেত্রটি এখন পর্যন্ত সৌদিদের মাঝেই সীমাবদ্ধ। প্রচার বিমুখতা, ভিন্ন কালচার, দূর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন কারন ফারাসানকে অগোচরেই রেখে দিয়েছে। তারপরও কালেভাদ্রে সৌদিতে অবস্থানকারী বিদেশীরা ফারাসান ঘুরে যান। সৌদি সরকার পর্যটনের গুরুত্ব অনুধাবন করে রেড সি’র উপর দিয়ে জিজান থেকে ফারাসান একটি সেতু তৈরির চিন্তা ভাবনা করছে। সেতু তৈরির সাথে সাথেই ফারাসান নিশ্চিতভাবে পর্যটকদের স্বর্গ বলে বিবেচিত হবে।
Hareed (Parrot-fish) Festival
প্রতি বছর এপ্রিল/মে মাসে ফারাসানে হারিদ উৎসব হয়। হারিদ মানে হচ্ছে Parrot-fish। রঙ্গীন ও দেখতে সুন্দর প্যারট ফিশগুলো এই সময়টাতে অগভীর পানিতে চলে আসে। মাছগুলোকে অগভীর পানিতে ঘেরাও দিয়ে উৎসবের সাথে ধরা হয়। যে সবচেয়ে বেশী মাছ ধরতে পারে, তাকে পুরুষ্কৃত করা হয়। প্রতি বছর এই সময়টার জন্যই এই এলাকার সৌদিরা অপেক্ষা করে।
Parrot-fish
হারিদ উৎসব
ঘন্টাখানেক পর আমরা ফারাসান দ্বীপে পৌছলাম। স্বচ্ছ নীল জল আমাদের আমন্ত্রণ জানাল। জাহাজ থেকে বের হতেই তীব্র আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। সেই সাথে তীব্র গরম তার অস্তিত্বের জানান দিল। আমরা জাহাজ অফিসের ভেতরেই পরবর্তী শিপের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম যেটাতে আলী আসবে। আমরা কয়েকবার বাহিরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি কোনভাবে সময়টা কাজে লাগানো যায় কিনা, চারপাশটা ঘুরা যায় কিনা- কিন্তু গাড়ী ছাড়া কোথাও যাওয়ার উপায় দেখলাম না। যে পাশটায় পোর্ট, তার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে খোলা প্রান্তর। এই আলো ঝলসানো তীব্র গরমে হাঁটার প্রশ্নই উঠে না।
বসে থাকতে থাকতে আমরা বিরক্ত। ২ ঘন্টা পর জাহাজ আসল, লেট করেছে। ঝাকড়া চুল নিয়ে আলী আমাদের সামনে গাড়ী নিয়ে হাজির হল। মুখে হাসি লেগেই আছে। আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। পোর্ট এলাকা থেকে বেরিয়ে গাড়ী থেকে নিশ্চল সমুদ্রের যে মায়াময় নীল রূপ দেখলাম, তা সারা জীবন সবার হৃদয় গহীনে আঁকা থাকবে।
ছবিঃ ইন্টারনেট
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫