১ম পর্ব
১৬ জানুয়ারি ইউনিভার্সিটি হতে ১১টার দিকেই বাসায় চলে আসি। মোশতাক ভাই জানালেন সৌদি ছেলেটি চলে এসেছে। আমরা সবাই ১টার দিকে নীচে নেমে আসলাম। আলী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। অমায়িক একটি ছেলে। মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল। টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়েছে। অন্যান্য সৌদিদের মতো সাদা তোপ আর পাগড়ী পড়ে আসেনি। পোশাকের কারনে তাকে আরো আপন মনে হলো, ট্রাডিশনাল সৌদিদের সাথে হাসি তামাশা করতে সব সময় অস্বস্তি বোধ করি। কথায় কথায় জানতে পারলাম সে রিয়াদে পড়ালেখা করছে। আবহা বেড়াতে এসেছে, তার কাজিনের সাথে মোশতাক ভাইয়ের পরিচয়, সেই সূত্রে আমাদেকে ফারাসান ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে।
গত বছর সাঈদের সাথে বেশ ঘুরাঘুরি হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের সাথে নাজরানের দ্বিতীয় ভ্রমণে যায়নি। কচি ভাই এখন আবহায় সাঈদের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। মোশতাক ভাই কচি ভাইকে ফারাসান যাবার কথা বললেও তিনি তা পাত্তা দেননি। কচি ভাই ভাবতেও পারেননি যে মোশতাক ভাই ট্যুরটি এ্যারেঞ্জ করে ফেলতে পারবেন।
আমি গাড়ীতে উঠে সাঈদকে ফোন দিলাম। আমরা ফারাসান যাচ্ছি শুনে অবাক হল, এবং তাকে ব্যক্তিগতভাবে পূর্বেই না জানানোতে মন খারাপ করল। সে নাকি আমাদের সাথে যেত। আমি পড়েছি বিপদে! ট্যুর যেহেতু আমি এ্যারেঞ্জ করিনি, তাই কিভাবে অন্যদের আমন্ত্রণ করি। আর মোশতাক ভাই আমন্ত্রণ করলেও, অনেকেই ভরসা পায়নি।
ফারাসানের সৌন্দর্য্য
আমরা এগিয়ে চলছি। আলীর সাথে টুকটাক কথা চলছে। সে ড্রাইভ করছে, আর মোবাইল ফোনে কারো সাথে চ্যাট করছে। সৌদি ইয়াংরা হোয়াটস এ্যাপ, ভাইবার অথবা ট্যাংগো নামক এন্ড্রয়েড এ্যাপ্লিকেশনে বুদ হয়ে থাকে। সারাদিন বার্তা চালাচালি করে। গাড়ি এক্সিডেন্ট হবার এটা একটা বড় কারন। এত এত বাঁধার মাঝেও ছেলে মেয়েদের যোগাযোগ ঠিকই চলছে। আলী কিছুক্ষণ পরপর মুচকি হাসছে। বুঝলাম বার্তা চালাচালি ভালোই চলছে। তাকে না করতে পারলাম না, বরং আমরা রাস্তার দিকে তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে রাখলাম।
২ ঘন্টা পরে আমরা জিজান পৌছে গেলাম। ভ্যাপসা গরম লাগছিল। আবহা থাকি বলে আরবের আসল গরম টের পাইনা। কিন্তু যারা রিয়াদ, দাম্মামে থাকে তারা জানে মরুর আসল রূপ কেমন। রাতটা জিজানেই থাকতে হবে। সকালে জাহাজে উঠব। রাতের জন্য হোটেলে উঠে গেলাম।
রুমে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় সমুদ্র সৈকতে চলে যাই। গতরাত ছিল ভরা পূর্ণিমা। আজও বিশাল চাঁদটা জ্বলজ্বল করছিল। আমরা সমুদ্র পাড়ে বসলাম। অনেক সৌদি ফ্যামিলি বেড়াতে এসেছে, খাওয়া দাওয়া করছে। চারদিকে একটা উৎসব ভাব। মোশতাক ভাই বিশাল চাঁদটাকে নিয়ে ছবি তুলছেন। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দীবা কম করে হলেও ২০টি ছবি তুলল। কিন্তু তারপরও মোশতাক ভাইয়ের মনঃপুত হচ্ছে না। তিনি দীবাকে ছবি তোলার জ্ঞান দিতে লাগলেন। এভাবে নয়, ওভাবে- আরও ছবি তোলা হল, তারপরও তিনি দীবার উপর হতাশ।
আজ ছিল আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। ভরা জ্যোৎস্না রাতে জিজানের সমুদ্র সৈকতে বসে থাকব, গতকালও ভাবতে পারিনি। আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেবার জন্য সবাইকে ডিনার করালাম। সমুদ্রপাড়ে বসে গরম রুটি আর মাংসের স্বাদ নিতে কেমন তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০৬