ধানমন্ডির একটা ১৩ তালার বাসার
ছাদে বসে আছি।বাসার নাম
বলা যাবেনা।আমার হাতে ভদকার
বোতল।বোতলে ঠান্ডা পানি।একটু পর পর
সেখান থেকে পানীয় চুমুক দিচ্ছি আর
ছাদ থেকে ফায়ার ওয়ার্কস দেখছি।
আসলে দেখা যাচ্ছে না তবে একটু পর পর
পট্ পট্ শব্দ আর হৈ হুল্লোড়
শোনা যাচ্ছে।
আমার পাশে মজনু
মিয়া বসে বসে মনিপুরি মিষ্টি টানছে।
মনিপুরি মিষ্টির ব্যাপারটা আমার
জানা ছিল না।আমি যে বাসায় বাসায়
বেড়াতে এসেছি সে বাসার কেয়ার
টেকারের নাম মজনু মিয়া।আজ সকালেই
যখন
সিরিতে দেখা হলো উনি বললেন,ভাই
মনিপুরি মিষ্টি খাইবেন?
এমনি কাওরে সাদি না।
আজকে একটা বিশেষ দিন তো সেই
জন্যে।আজকে যে একটি বিশেষ দিন
সেটা আমারো জানা ছিল না।রাস্তায়
বের হয়ে মোড়ের ক্যাসেটের দোকানের
ওয়েফারে মুন্নি বদনাম গান
শুনে বুঝলাম।
মজনু মিয়ার বয়স ২৩ এর কম বেশি হবে।
টম ক্রুজ টাইপ চেহারা।উনার
কটকটে লাল ফোন সেটের স্পিকারে এখন
চুমকি চলছে একা পথে সঙ্গী হলে দোষ
কি তাতে,গান চলছে।যতবার উনার
দিকে চোখ পরছে মনে হচ্ছে টম ক্রুজ
মনিপুরি মিষ্টি খেতে খেতে চুমকি চলছ
শুনছেন।বিব্রতকর দৃশ্য।
আজ সকালে এই আত্বীয়ার বাসায় আসা।
আমি সোফায় বসে বসে স্কুবি ডুর ব্যাক টু
ব্যাক এপিসোড দেখছিলাম।এমন সময়
রান্নাঘর থেকে হৈ চৈ শুনতে পেলাম।
কাজের বুয়া নাকি ফিট হয়ে গেছে।
আমাকে একা রেখেই উনারা কাজের
বুয়াকে নিয়ে হাসপাতাল
রওনা দিলেন।আমি একা বাসায়
থাকতে পারি না।বাইপোলার
ডিসঅর্ডারের কারনে কষ্ট লাগা শুরু
হয়।তখন হাতের কাছে কিছু
একটা পেলে সুইসাইড করতে মন চায়।
আমার পকেটে ফেরার ভারা নেই তাই
সেই দুপূর থেকে ছাদে বসে আছি।
কিছুক্ষন আগে নিচে গিয়ে নিউ ইয়র
কেক বানিয়ে খেয়ে এসেছি।কেক ভাল
হয়েছে।এই কেক বানানোর জন্য এক কাপ
আটাতে চার চামচ
চিনি দিয়ে একটা ডিম দিতে হয়।
সাথে পরিমান মত পানি মিশিয়ে ফ্রাই
প্যানে তেল দিয়ে বসিয়ে দিতে হয়।
ব্যাস হয়ে যায় সুস্বাদু কেক।
এইমাত্র মজনু মিয়ার ফোনে ফোন
এসেছে।বুয়ার নাকি ক্যানসার
ধরা পরেছে।তারা আজ আসতে পারবেন
না।তারা ধারনা করেছিলেন
আমি চলে গেছি।আমার
সাথে খালুজানের কথা,
ওহ্ কাব্য!তুমি এখানে আর...
জী না,কোনো সমস্যা নেই।
মজনুকে বোলো ও তোমাকে শোবার
ঘর দেখিয়ে দিবে।আর কাব্য!
কি এমব্রেসিং বাট্ ও তোমার সাথে
একটু কথা বলতে চায়।
ও,দিন...
হ্যালো,ভাইজান!
কি ব্যারম বলেন তো!আপনার জন্য
কিছু রান্দা কইরা আসতে পারলাম না।
আমার রুমে টেরাংকের পিছনে টোস্ট
বিস্কিটের ডিব্বা আর মুড়ির ডিব্বা
আছে।খিদা লাগলে খাইয়া লন।
আমার খিদে লেগেছে কিন্তু কোনো মৃত্যু
পথযাত্রীর খাবার
খেতে ইচ্ছে করছে না।
আমি মজনু মিয়াকে বললাম নিচ
থেকে বালিশ কাথা এনে দিতে।
আমি ছাদে ঘুমাবো।মজনু মিয়া বালিশ
কাথা এনে দিলেন।
আমি বালিশে শুয়ে আকাশের
দিকে তাকিয়ে আছি।একটু একটু করে ভোর
ফুটতে শুরু করেছে।অনেকদিন
শরীরে ভোরের বাতাস লাগেনি।শেষ
যেদিন লেগেছে সে দিনটা মনে নেই।
মনে আছে আমি শীতের ভোরে রিকশায়
কোথাও যাচ্ছি।আমার
গায়ে কালো পান্জাবি,হাতে
চারটা টকটকে লাল গোলাপ।যতো রোদ
উঠছিলো গোলাপ গুলো
ততো ফুটছিলো।
তিলোত্তমা আমার জন্য
অপেক্ষা করছিলো ,রিকশা চলছিলো...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৮